এই পোস্টটি 1005 বার দেখা হয়েছে
১৯৬৮ সালের ১২ই মার্চ আমেরিকায় সান ফ্রান্সিসকো শহরের বেতারকেন্দ্র থেকে প্রচারিত সাক্ষাৎকার থেকে সংকলিত
প্রশ্নকর্ত্রী : স্বামীজী, আমি জানতে ইচ্ছা করি কেমনভাবে আপনি ভারত থেকে নিউইয়র্কে, আর মেক্সিকোতে এতদূর পথ আসার জন্য খরচের টাকা পেলেন কোথা হতে কে বা কারা টাকা দিয়েছে আপনাকে?
শ্রীল প্রভুপাদ : একটা জাহাজ কোম্পনীতে আমি বিনা ভাড়ার যাত্রী হয়ে এসেছিলাম।
প্রশ্নকর্ত্রী : সেই ভাড়াটা কে দিয়েছে?
শ্রীল প্রভুপাদ : আহা, বিনা ভাড়ায়, ভাড়া দেবার কোন প্রশ্নই ছিল না। জাহাজ কোম্পানী বিনা খরচে তাদের জাহাজে আমাকে নিয়ে এসেছে।
প্রশ্নকর্ত্রী : আপনার খাওয়ার ব্যবস্থা কিভাবে হয়েছিল?
শ্রীল প্রভুপাদ : যখন আমি এখানে এলাম, তখন একখানি পরিচয়পত্র সঙ্গে এনেছিলাম। তাই আমাকে এখানে যাঁরা থাকতে দিয়েছিলেন, তাঁরাই আমার খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন।
প্রশ্নকর্ত্রী : হেইট-অ্যাসবেরীর মতো একটা জায়গায় কেন আপনাদের মন্দির বানাতে গেলেন?
শ্রীল প্রভুপাদ : আমাদের যাকে বলে ঐ মন্দিরটা?
প্রশ্নকর্ত্রী : আপনারা যাকে বলেন মন্দির, ঐটা। ওটা কেন যে আপনারা হেইট-অ্যাসবেরীর মতো জায়গায় বসালেন, তাই জানতে চাইছি।
সাক্ষাতকারী : সবচেয়ে সস্তায় যে জায়গাটা আপনারা পেয়ে গেছেন।
শ্রীল প্রভুপাদ : ওখানটা বিশেষ করে হিপিদের এলাকা বলেই বেছে নেওয়া হয়নি, তবে আমাদের ছেলেরা ঐ এলাকাটাতেই একটা সস্তা ঘর খুঁজে পেয়েছিল। তাই তারা ঐ জায়গাটাতেই বসে গেছে।
সাক্ষাতকারী : আসলে, হিপিরাতো কেউই আপনাদের ধর্ম সংগঠনে যোগ দিতও না, যেহেতেু ওরা ড্রাগে অভ্যস্ত……..
শ্রীল প্রভুপাদ : হ্যাঁ, আমাদের জীবনধারা হিপিদের থেকে একেবারে অন্য ধরনের। কারণ হিপি যারা, তারা তো যৌনতা আর নেশাভাঙে জর্জরিত, আর ঐসব ব্যাপার আমাদের মন্দিরে একেবারেই নিষিদ্ধ।
সাক্ষাতকারী : আপনারা বিবাহ অনুষ্ঠান করেন?
শ্রীল প্রভুপাদ : হ্যাঁ
সাক্ষাতকারী : কি রকম আপনাদের বিবাহ অনুষ্ঠান?
শ্রীল প্রভুপাদ : ঐ একই হরেকৃষ্ণ মন্ত্র উচ্চারণ।
সাক্ষাতকারী : ওটা কি এদেশে আইনসিদ্ধ বিবাহ অনুষ্ঠান বলে মানা হয়?
শ্রীল প্রভুপাদ : হ্যাঁ, আমাদের সংঘ তো নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মসম্বন্ধীয় আইন অনুসারে বিধিবদ্ধ সংস্থা।
সাক্ষাতকারী : শ্রোতাবন্ধুরা, কে-জি-ও বেতারতরঙ্গ মাধ্যমে আপনারা এখন শ্রীল ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।
শ্রোতা : সম্প্রতি আমি বোস্টনের আশ্রম থেকে মিস্ প্রুডেনসের একখানি সুন্দর চিঠি পেয়েছি-তিনি মিস ফ্যারোর ভগ্নী….শুনছেন?
শ্রীল প্রভুপাদ : ওটা আমাদের চিঠি নয়।
সাক্ষাতকারী : না, ওটা বোস্টনের জন্য কোনও সম্প্রদায়ের চিঠি। ঐ মহিলা স্বামীজীর সংঘের কেউ নন।
শ্রোতা : ও, আচ্ছা, আচ্ছা।
জনৈক ভক্ত : উনি বুঝি যোগী মহর্ষির সাথে আমাদের গোলমাল করে ফেলেছেন।
সাক্ষাতকারী : হ্যাঁ, ঠিক তাই….। আচ্ছা, আপনাদের সঙ্গে এখানে এই স্টুডিওর মধ্যে সকলে মিলে একটু হরেকৃষ্ণ জপকীর্তন করতে পারা যায় না? করা যাবে? আরও মাইক্রোফোন লাগবে কি? ঐসব বাজনা আপনারা আনেননি?
ভক্ত : আমাদের হাতে তালি বাজাতে পারি।
সাক্ষাতকারী : সকলে মাইকের কাছে এগিয়ে আসুন। বেশ, ঠিক আছে। (প্রভুপাদ এবং ভক্তবৃন্দ হাতে তালি বাজিয়ে এক সাথে কয়েক মিনিট হরে কৃষ্ণ কীর্তন করে শোনালেন, প্রভুপাদ প্রেমধ্বনি দিলেন।)
সাক্ষাতকারী : এভাবে তাহলে আপনাদের উৎসব অনুষ্ঠানে শুরু হয়?
শ্রীল প্রভুপাদ : অনুষ্ঠানের শেষে ঐরকম হয়…..
সাক্ষাতকারী : শেষে।
শ্রীল প্রভুপাদ : ভক্তদের ধন্যবাদ জানানো হয়।
সাক্ষাতকারী : বেশ,আপনাদের ধন্যবাদ। শ্রোতাবন্ধু, আপনারা স্বামীজীর সাথে কিছু কথা বলতে চান?
শ্রোতা : আমি শুধু স্বামীজীকে প্রশ্ন করতে চাই, তাঁর শিক্ষায় কর্মের স্থান কোথায়? আর, ভগবান সম্পর্কে তাঁর যে ধারণা, তা কি কোন মঙ্গলময় সত্তার? আর তাই সেটা কি রোগব্যাধি সারিয়ে তোলার মধ্যে দিয়েই প্রতিফলিত হয়?
সাক্ষাতকারী : বেশ, ঠিক আছে। কর্ম কি আপনাদের ধর্মের মধ্যে পড়ছে?
শ্রীল প্রভুপাদ : হ্যাঁ, কর্ম রয়েছে। কর্ম মানে কাজ, ফলাশ্রয়ী কাজ। যেমন কাজ করেন, যেমন বীজ বুনেন, তেমন ফল পান। ঠিক যেমন কিছু পয়সা রোজগারের জন্য আপনি খাটছেন। খাটনির পয়সা পেলেন। ঠিক তেমনই, এই জড় জগতে আমাদের কাজকর্মের ফল লাভ করি। ভাল কাজের জন্য ভাল ফল লাভ হয়। আর মন্দ কাজের জন্য হয় শাস্তি। এটাই হল কর্মের নিয়মবিধি।
প্রশ্নকর্তা : আর একটি রয়েছে। ‘‘আপনি কি মনে করেন ভগবান মঙ্গলময়”?
শ্রীল প্রভুপাদ : হ্যাঁ নিশ্চয়ই। (ভক্তবৃন্দেও হাসি)
সাক্ষাতকারী : আপনাদের সকলকেই ধন্যবাদ। হরেকৃষ্ণ।
(মাসিক চৈতন্য সন্দেশ জুলাই ২০০৯ সালে প্রকাশিত)