এই পোস্টটি 944 বার দেখা হয়েছে
অতিথি: গত বিশ বছর যাবৎ আপনারা লক্ষ্য করে থাকতে পারেন যে, মানব সমাজ অতি দ্রুত অধঃপতনে চলে যাচ্ছে। এটিই কি কলিযুগের লক্ষণ?
শ্রীল প্রভুপাদ: হ্যাঁ। কলিযুগের প্রভাবেই এসব হচ্ছে। সব অধঃপতনে যাচ্ছে। তাই বলছি, একমাত্র কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলনের মাধ্যমেই আমরা মানুষকে তা থেকে রক্ষা করতে পারি। সকলকে না হলেও অনেকজনকে রক্ষা করা যাবে।
অতিথি: কৃষ্ণক্তদের মাধ্যমে এই কলিযুগকে বদলে ফেলা যাবে?
শ্রীল প্রভুপাদ: হ্যাঁ, কেন যাবে না? এক সত্যযুগে পরিবর্তিত করে ফেলা যাবে। ঠিক যেমন আমাদের শরীর বদলায়, ঋতু বদলায়, তেমনি এই অবস্থাও বদলে যাবে।
রেবতীনন্দন: শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর আবির্ভাবের ফলেই অস্থায়ী পরিবর্তন হবে। তাই তো? মাঝে মাঝেই এমন একটি প্রশ্ন, বিশেষ করে ভক্তদের মাঝে জেগে ওঠে যাতে বলা হয় যে, গুরুদেব যখন সন্তুষ্ট হন, ভক্তের তখন প্রগতি লাভ হয়। তবে কখনও কখনও গুরুদেব হয়তো অনেক দূরে চলে গিয়েছিলেন। তিনি হয়তো লস এঞ্জলসে রয়েছেন। আর কেউ হামবুর্গের মন্দিরে বসে ভাবছেন যে, “এখন কিভাবে গুরুদেবকে সন্তুষ্ট করতে পারি?”
শ্রীল প্রভুপাদ: কেবল তাঁর আদেশ মেনে চলতে হবে। গুরুদেব তার বাণীর মাধ্যমে তো প্রতিনিয়তই তোমার সঙ্গে রয়েছেন। ঠিক যেমন আমার গুরুদেব আমার সঙ্গে সাক্ষাতভাবে বিরাজ করছেন না বটে কিন্তু তাঁর বাণীর মাধ্যমে আমি তার সঙ্গলাভ করছি।
রেবতীনন্দন: আর শ্রীকৃষ্ণ তা জানছেন, অতএব, আমরা উন্নতি করছি। তিনি আমাদের হৃদয়ে বিরাজ করছেন। তিনি জানেন, আমরা কি করছি। তাই তিনি দেখতে পাচ্ছেন ‘‘ঐতো সে আমার শুদ্ধভক্তের সেবা করছে” তখনই তার উন্নতি লাভ হচ্ছে।
শ্রীল প্রভুপাদ: হ্যাঁ, গুরুদেব তেমনই। শ্রীকৃষ্ণ সীমাবদ্ধ নন। এটি কোন জড় জাগতিক ব্যাপার নয়। শ্রীকৃষ্ণ ও গুরুদেবের সঙ্গে তুমি যেকোন পরিস্থিতিতেই সঙ্গ করতে পার। অবশ্য যদি তুমি দুটি বিষয়ে অভিলাষ কর। ঠিক যেমন শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে আমরা এই মুহুর্তেই সঙ্গলাভ করতে পারি যদি আমরা ‘শ্রীমদ্ভগবদগীতা যথাযথ’ গ্রন্থখানি গ্রহন করি। তিনি ভগবদ্গীতা থেকে অভিন্ন। নামরূপে কলিকালে কৃষ্ণ অবতার। শ্রীকৃষ্ণ এই যুগে তাঁর নামের মাধ্যমে অবতার হয়ে এসেছেন। তাই তুমি কৃষ্ণনামের সঙ্গ করলে তৎক্ষণাৎ তোমার শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গ লাভ হবে।
ধনঞ্জয়: আর তাঁর ভক্তদেরও সঙ্গলাভও হবে
শ্রীল প্রভুপাদ: হ্যাঁ।
অতিথি: আমি জানতে চাইছি, শ্রীকৃষ্ণ কি চান যে, আমরা একটি পারমার্থিক নাম গ্রহন করি?
রেবতীনন্দন: ইনি জানতে চাইছেন, আপনার কাছ থেকে আমরা যে একটি পারমার্থিক নাম গ্রহন করি এটিও কি শ্রীকৃষ্ণের ইচ্ছা?
শ্রীল প্রভুপাদ: হ্যাঁ।
রেবতীনন্দন: গুরুদেব যদি সেই নাম দিয়ে থাকেন তবে তা শ্রীকৃষ্ণেরই ইচ্ছা। প্রকৃতপক্ষে, শ্রীল প্রভুপাদ আমাকে একবার বুঝিয়ে বলেছিলেন যে, প্রতিটি ভক্তেরই একটি অনন্য সম্বন্ধ রয়েছে শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে। যে সম্বন্ধ ইতিমধ্যেই গড়ে উঠেছে। সেই সম্বন্ধ রয়েছেই। কোন সময়ে ঐ সম্বন্ধ শ্রীকৃষ্ণের স্বরূপ সম্পর্কিত হতেও পারে। একমাত্র সেই সম্বন্ধই সত্য যে, আমরা শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণেরই ভক্ত। তাই আমাদের নামও হতে হবে শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণ সম্পর্কিত এবং সেগুলো শ্রীকৃষ্ণেরই নাম। যেমন, আমরা কাউকে ডাকছি বিধান চন্দ্র দাস।
শ্রীল প্রভুপাদ: দাস কথাটি সবসময় থাকছে।
রেবতীনন্দন: কিন্তু বিধান চন্দ্র দাস বলার সঙ্গে সঙ্গে আমি বুঝতে পারছি যে, শ্রীকৃষ্ণেরই নাম উচ্চারণ করছি। অতএব, আমাদের নাম সেই একই উদ্দেশ্য সাধন করছে। সবসময়ে শ্রীকৃষ্ণ স্মরণ হচ্ছে। তবে আমাদের চরম লক্ষ্য হবে চিৎ জগতের কোন না কোনখানে শ্রীকৃষ্ণের কোনও রূপের সঙ্গলাভ। এটি যে নামের সঙ্গে অভিন্ন হতে হবে, তা নয়।
শ্রীল প্রভুপাদ: না, সে অভিন্ন নয়, তবে নামটি অভিন্ন। আর আমরা হলাম তার ‘দাস’।
রেবতীনন্দন:ঠিক তাই। ঠিক যেমন আমার নাম রেবতীনন্দন দাস। আর সেটি হল শ্রীবলরাম প্রভুর নাম।
শ্রীল প্রভুপাদ: হ্যাঁ শ্রীকৃষ্ণের নামের সঙ্গে রেবতীনন্দনের নাম অভিন্ন। আমরা সকলেই রেবতীনন্দন দাস।
রেবতীনন্দন: হ্যাঁ তাই। সেটি সুস্পষ্ট। তবে অতিথি মহোদয় জানতে চাইছেন, এর অর্থ কি এই যে, আমি যখন চিদাকাশে অবস্থান করি, আমি তখন প্রত্যক্ষভাবে শ্রীবলরামের দাস হই?
শ্রীল প্রভুপাদ: হ্যাঁ, ঠিক তাই।
রেবতীনন্দন: কিন্তু একবার আমি যখন আপনাকে প্রশ্ন করছিলাম আমরা সবাই কি শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণের ভক্ত? আপনি বলেছিলেন, হ্যাঁ, তবে আমরা শ্রীশ্রী লক্ষ্মী-নারায়ণ কিংবা শ্রীশ্রী রামচন্দ্র ও সীতাদেবীর ভক্ত হতে পারি।
শ্রীল প্রভুপাদ: তাঁরা কেউই শ্রীকৃষ্ণ থেকে ভিন্ন নন। রেবতীনন্দনও শ্রীকৃষ্ণ। হরে কৃষ্ণ।