জানা জানায় ভগবদগীতা

প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮ | ১:২৩ অপরাহ্ণ আপডেট: ২১ মে ২০১৯ | ৭:১৬ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 1897 বার দেখা হয়েছে

জানা জানায় ভগবদগীতা

গীতাজয়ন্তী (আপডেট) মঙ্গলবারের নির্বাচিত বিষয় এই তিথিতেই পরম পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা বীর অর্জুনকে ৫১৫৩ (৩১৪০খ্রীঃপূঃ নভেম্বর ০২ তারিখ শুক্রবার) বছর আগে কুরুক্ষেত্র (৬০ কিঃমিঃ) নামক স্থানে ভগবদ্গীতার জ্ঞান দান করেছিলেন । তাই এই মহিমা মণ্ডিত তিথিকে গীতা জয়ন্তী তিথি বলা হয় ।

গীতা সর্ম্পকে কিছু বহিরঙ্গা জ্ঞান

১। গীতা হচ্ছে সমস্ত শাস্ত্রের সারতিসার এমন কি গীতায় এমন কিছু আছে যা অন্যান্য কোন শাস্ত্রে পাওয়া যায় না । যেমন – ৫ম পুরুষার্থ

২। মহাভারতের ভীষ্মপর্বের ২৫ থেকে ৪২ নং অধ্যায়ের এই ১৮ টি অধ্যায় হল ভগবদগীতা বা গীতোপনিষদ ।

৩। গীতায় আছে ৭০০ শ্লোক (কেউ বলে ৭৪৫ শ্লোক) আছে । তার মধ্যে ধৃতরাষ্ট্র বলেন ১টি শ্লোক, সঞ্জয় বলেন ৪০টি শ্লোক, অর্জুন বলেন ৮৫টি শ্লোক, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন ৫৭৪টি শ্লোক । আর পুরো গীতায় ৯৫৮০ টি সংস্কৃত শব্দ আছে ।

৪। গীতার ১৮টি অধ্যায়ের মধ্যে প্রথম ৬টি অধ্যায়কে বলে কর্মষটক, মাঝখানের ৬টি অধ্যায়কে বলে ভক্তিষটক, আর বাকি ৬টি অধ্যায়কে বলে জ্ঞানষটক । এর মধ্যে ভক্তিষটক হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ । আর ভক্তিষটকের মধ্যে ৯ম অধ্যায় হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ আর ৯ম অধ্যায়ের মধ্যে ৩৪ নং শ্লোক সর্বশ্রেষ্ঠ।

৫। গীতা পড়লে ৫টি জিনিষ সর্ম্পকে জানা যায়– ঈশ্বর, জীব, প্রকৃতি, কাল ও কর্ম । ৬। যদিও গীতার জ্ঞান ৫০০০ বছর আগে বলেছিল কিন্তু ভগবান চতুর্থ অধ্যায় বলেছেন এই জ্ঞান তিনি এর আগেও বলেছেন, মহাভারতের শান্তিপর্বে (৩৪৮/৫২-৫২) গীতার ইতিহাস উল্লেখ আছে । তার মানে গীতা প্রথমে বলা হয় ১২,০৪,০০,০০০ বছর আগে, মানব সমাজে এই জ্ঞান প্রায় ২০,০০,০০০ বছর ধরে বর্তমান, কিন্তু কালের বিবর্তনে তা হারিয়ে গেলে পুনরায় আবার তা অর্জুনকে দেন ।

৭। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে মাত্র ৪০ মিনিটে এই গীতার জ্ঞান দেন ।

৮। গীতার মাহাত্ম্য অনেকে করে গেছেন তার মধ্যে শ্রীশঙ্করাচার্য, স্কন্দপুরাণ থেকে শ্রীলব্যাসদেব, শ্রীবৈষ্ণবীয় তন্ত্রসারে গীতামাহাত্ম্য আর আছে পদ্মপুরাণে দেবাদিদেব শিবকর্তৃক ১৮টি অধ্যায়ের মাহাত্ম্য বর্ণনা করেছেন ।

৯। গীতাতে অর্জুনের ২০টি নাম আর কৃষ্ণের ৩৩টি নামের উল্লেখ করা হয়েছে । ১০। গীতাতে মাং এবং মামেব কথাটি বেশি আছে, যোগ শব্দটি আছে ৭৮ বার, যোগী আছে ২৮ বার আর যুক্ত আছে ৪৯ বার ।

১১। গীতার ২য় অধ্যায়কে বলা হয় গীতার সারাংশ ।

১২। ভগবান যখন বিশ্বরূপ দেখান তখন কাল থেমে যায় ।

১৩। ভগবান শুধু যুদ্ধের আগেই গীতা বলেনি ১৮ দিন যুদ্ধের মাঝখানেও গীতা বলেছে ।

১৪। গীতায় অর্জুন ১৬টি প্রশ্ন করে আর কৃষ্ণ তা ৫৭৪টি শ্লোকের মাধ্যমে উত্তর দেন ।

১৫। পুরো গীতার সারমর্ম মাত্র ৪টি শ্লোকে বর্ণনা করা হয়েছে, ১০ অধ্যায়ের ৮ থেকে ১১ নং শ্লোক ।

১৬। পুরো গীতায় অর্জুন ৪৫ নামে কৃষ্ণকে সম্বোধন করছেন, আর কৃষ্ণ অর্জুনকে ২১টি নামে সম্বোধন করেছেন ।

১৭। গীতার ৫ম অধ্যায় ১৩ থেকে ১৬ নং শ্লোকে তিনজন কর্তার কথা বলা হয়েছে । ১৮। গীতায় ৩টি গুণ, ৩টি দুঃখ আর ৪টি আমাদের প্রধান সমস্যার কথা বলেছে । ১৯। ত্রিশ্লোকী গীতার জ্ঞান: যা বেদ ও বেদান্তের সার, ১৫ অধ্যায়ের ১৬ থেকে ১৮ নং শ্লোক ।

২০। গীতায় ২৬টি গুণের কথা বলা হয়েছে আর ৬টি আসুরিক প্রবৃত্তির কথা বলা হয়েছে ।

২১। নরকের ৩টি দ্বারের কথা বলা হয়েছে (কাম, ক্রোধ ও লোভ)

২২। গীতার ১৮ অধ্যায় ব্রাহ্মণের ৯টি গুণ, ক্ষত্রিয়ের ৭টি গুণ, বৈশ্যের ৩টি গুণ আর শুদ্রের ১টি গুণের কথা বলা হয়েছে ।

২৩। ৩টি কর্মের প্রেরণা আর ৩টি কর্মের আশ্রয়ের কথা বলা আছে ।

২৪। বেদান্ত শাস্ত্রের সিদ্ধান্ত অনুসারে কর্মসমূহের সিদ্ধির উদ্দেশ্যে ৫টি নির্দিষ্ট কারনের কথা বলা হয়েছে ।

২৫। গুণ অনুসারে ৩ প্রকারের ত্যাগের কথা বলা হয়েছে ।

২৬। ৩ প্রকারের আহার, যজ্ঞ, তপস্যা, শ্রদ্ধা, পূজা ও দানের কথা বলা হয়েছে । ২৭। ২টি স্বভাবের জীবের কথা বলা হয়েছে ।

২৮। ২ প্রকার জীবের কথা বলা হয়েছে ।

২৯। ১৮টি আত্মজ্ঞানের সাধনার গুণের কথা বলা হয়েছে ।

৩০। ব্রক্ষ্ম উপলব্ধির ৫টি স্তরের কথা বলা হয়েছে ।

৩১। ভক্তদের ৩৬ টি গুণের কথা বলা হয়েছে ।

৩২। গীতায় ২৫ জন সৃষ্টের কথা বলা হয়েছে যারা স্থাবর, জঙ্গম ও সমস্ত প্রজাদের সৃষ্টি করেছেন ।

৩৩। গীতায় নারীর ৭টি গুণের কথা বলা হয়েছে ।

৩৪। ৪ প্রকার সুকৃতিবান ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে । আর ৪ প্রকার দুষ্কৃতিবানের কথা বলা হয়েছে ।

৩৫। জড়া প্রকৃতির ৮টি উপাদানের কথা বলা হয়েছে । (সংক্ষিপ্ত) ভগবদ্গীতা সম্পর্কিত জ্ঞাতব্য বিষয়সমূহ

# ভগবদ্গীতা কী?  যথার্থ ভগবদতত্ত্ববিজ্ঞান, কারণ পরমেশ্বর ভগবান স্বয়ং তা ব্যক্ত করেছেন।  সমস্ত বৈদিক শাস্ত্রের সারাতিসার, মুকুটমনিস্বরূপ।  সমস্ত বৈদিক সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ উপনিষদ, যার অপর নাম “গীতোপনিষদ”  স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুখনিঃসৃত বাণী, তাই তা অপৌরুষেয়।  মহাভারতের সারাংশ ভীষ্মপর্বের ২৫-৪২ অধ্যায়।  সমগ্র মানবজাতি তথা জীবকুলের পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান (Complete Manual Guide)।  এর দ্বারা মানুষ নিজেকে ও পরমেশ্বর ভগবানকে যথাযথভাবে জানতে পারে।

# ভগবদ্গীতার বিশেষত্ব  অন্য শাস্ত্রে যা আছে তার সবই শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় আছে, তদুপরি অন্য শাস্ত্রের কোথাও যা নেই, তাও এতে আছে।

# গীতা অধ্যায়নের উদ্দেশ্য  জগজ্জীবন ও ভগবান সম্বন্ধে যথার্থ জ্ঞান লাভ করা।  গীতার জ্ঞান উপলব্ধিপূর্বক ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ইচ্ছা ও নির্দেশ অনুসারে জীবনকে পরিচালিত করা।  সকল বদ্ধজীবকে গীতার জ্ঞান দানপূর্বক তাদের সঠিক পথে পরিচালিত করা।

# ভগবদ্গীতার বিষয়বস্তু  ৫টি মূল বিষয় – ঈশ্বর, জীব, প্রকৃতি, কাল ও কর্ম।  পূর্ণাঙ্গ জ্ঞানের আধার – গুহ্য, গুহ্যতর ও গুহ্যতম জ্ঞানের আধার।

# ভগবদ্গীতা পাঠের যোগ্যতা  তত্ত্বজ্ঞ সদ্‌গুরুর শরণাগত হওয়া (গীতা ২/৭)  যথার্থ পরম্পরায় যুক্ত গুরুদেবের শরণাগত হয়ে তাঁর সেবার পাশাপাশি বিনয়ের সাথে তত্ত্বজিজ্ঞেস করা (গীতা ৪/৩৪)  সম্পূর্ণরূপে পাপমুক্ত হওয়ার চেষ্টা করা (গীতা ৩/৩)  ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ভক্ত হওয়া (গীতা ৪/৩)  শ্রদ্ধাবান, তৎপর ও সংযত হওয়া (গীতা ৪/৩৯)  সম্পূর্ণরূপে নিমৎসর হওয়া (গীতা ৯/১)

# কোন ভাব নিয়ে ভগবদ্গীতা পাঠ করা উচিত
 অর্জুন যেভাবে গীতার মর্ম উপলব্ধি করেছিলেন, ঠিক সে দৃষ্টিভঙ্গি ও মনোভাব নিয়ে সকলেরই গীতা পাঠ করা উচিত। তবেই গীতার যথার্থ মর্ম উপলব্ধি করা সম্ভব (গীতার তাৎপর্য ১/১)
 ঠিক যেমন আমরা আমাদের ইচ্ছামতো ঔষধ খেতে পারি না, অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ এবং সংশ্লিষ্ট নির্দেশিকা মেনে তা খেতে হয়। তেমনি ভগবদ্গীতার জ্ঞানও ভগবদ্গীতার বক্তা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অথবা তাঁর সুযোগ্য প্রতিনিধির নির্দেশ অনুসারে অধ্যয়ন ও ব্যক্তজীবনে প্রয়োগ করতে হয়।

# ভগবদ্গীতা পাঠের ফল
 সমস্ত বৈদিক জ্ঞানসহ জগতের সমস্ত তত্ত্ব জানা হয়ে যায়; আর কোনো তত্ত্ব জানার বাকি থাকে না (গীতা ৭/২ ও ৪)
 সম্পূর্ণভাবে মোহমুক্ত হওয়া যায় (গীতা ১৮/৭২-৭৩)
 পাপ ও পূণ্য উভয় প্রকার কর্ম থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত হওয়া যায় (গীতা ৪/৩৬-৩৭, গীতা ২)
 সংসারবন্ধন থেকে মুক্ত হওয়া যায় (গীতা ৯/১-২)
 সৃষ্টিকালে পুনরায় জন্মগ্রহন করতে হবে না এবং প্রলয়কালে ব্যথিত হতে হবে না (গীতা ১৪/২ ও ৫)
 ভগবানের নিত্যধাম লাভ করে নিত্য চিন্ময় আনন্দ লাভ করা যায় (গীতা ৪/৯)

# নিয়মিত গীতা পাঠ করলে – যিনি নিয়মিত গীতা অধ্যয়ন করেন, তাঁর সেই জ্ঞানযজ্ঞের দ্বারা আমি পূজিত হই (গীতা ১৮/৭০)

# নিয়মিত শ্রবণ করলে – কেউ যদি শ্রদ্ধাবনত চিত্তে নিয়মিত গীতা শ্রবণ করেন, তবে তিনি পাপমুক্ত হয়ে পুণ্যকর্মকারীদের শুভলোক প্রাপ্ত হন (গীতা ১৮/৭১)।

# গীতাজ্ঞান কাউকে দান বা প্রচার করলে কী লাভ? ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং বলেছেন-
 যিনি আমার ভক্তদের মধ্যে এ পরম গোপনীয় গীতাবাক্য উপদেশ দান করেন, তিনি অবশ্যই পরাভক্তি লাভ করে নিঃসন্দেহে আমার কাছে ফিরে আসবেন। (গীতা ১৮/৬৮)
 এ পৃথিবীতে মানুষের মধ্যে তাঁর মতো আমার অধিক প্রিয়কারী আর কেউ নেই এবং তাঁর চেয়ে আমার প্রিয়তর কেউ হবে না (গীতা ১৮/৬৯)

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।