হিংসা কি সর্বদা পাপ?

প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২৩ | ১০:৩৯ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২৩ | ১০:৩৯ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 76 বার দেখা হয়েছে

হিংসা কি সর্বদা পাপ?

কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ
আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের প্রতিষ্ঠাতা-আচার্য


অহো বত মহৎ পাপং কর্তুং ব্যবসিতা বয়ম্ ।
যদ্ রাজ্যসুখলোভেন হন্তুং স্বজনমুদ্যতাঃ ॥

‘হায়! কী আশ্চর্যের বিষয় যে, আমরা রাজ্যসুখের লোভে স্বজনদের হত্যা করতে উদ্যত হয়ে মহাপাপ করতে সংকল্পবদ্ধ হয়েছি।’

শ্রীমদ্ভগবদ্‌গীতা ১/৪৪

অর্জুন এখানে ভাবছেন যে, তার ব্যক্তিগত সুখসম্ভোগ, রাজ্যসুখ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ঘটনাটি তা নয়। এই যুদ্ধ অর্জুনের সন্তোষের জন্য নয়, শ্রীকৃষ্ণের নিজ সন্তোষ বিধানের জন্য তাঁর দ্বারা সংঘটিত হয়েছে। এই হলো সাধারণ কর্ম এবং ভক্তিমূলক সেবার মধ্যে পার্থক্য। বাহ্যিক দৃষ্টিতে ভক্তিমূলক সেবা এবং সাধারণ কর্মে কোন ভেদ না থাকলেও এই দুইয়ের ভিতর বিস্তর পার্থক্য রয়েছে।

সমগ্র জগত এক পরিবার

লোকদের মধ্যে প্রায়ই এই ভুল ধারণা থাকে যে, মহাভারত একটি সাধারণ যুদ্ধ ছিল। কিন্তু তা নয়। এটি শ্রীকৃষ্ণের দ্বারা তাঁর উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সংঘটিত হয়েছিল। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল পরিত্রাণায় সাধুনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্ (গীতা ৪/৮)। তিনি এই গ্রহে, এই বিশ্বে শুধুমাত্র ধর্মীয় জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্যকে প্রতিষ্ঠা করা এবং যারা জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্যের বিরোধিতা করে তাদের বিনাশ করার জন্যই অবতীর্ণ হয়েছিলেন।
এখানে স্বজনম্ কথার অর্থ জ্ঞাতি কুটুম্ব। জ্ঞাতি কুটুম্ব কথায় অর্থ শুধুমাত্র আমার ভ্রাতা, ভগিনী, পিতা বা পিতৃব্য নয়-আমার প্রত্যক্ষ আত্মীয়স্বজন। স্বজনম্ অর্থাৎ সকল জীবাত্মা, কারণ ভগবান সকলের পিতা, সকল ধর্মেই একথা ঘোষিত হয়েছে। ভগবদ্‌গীতায় (১৪/8) কৃষ্ণ স্বয়ং ঘোষণা করছেন, অহং বীজপ্রদঃ পিতাঃ ‘আমি বীজ প্রদানকারী পিতা । অহং সর্বস্য প্রভবো মত্তঃ সর্বং প্রবর্ততে (গীতা ১০/৮) সমস্ত কিছুই তাঁর থেকে এসেছে। সুতরাং শ্রীকৃষ্ণের কোন ভক্ত কখনও কোন জীবাত্মার ক্ষতিসাধন করে না । এই হলো কৃষ্ণভাবনামৃত ।
এই হলো একজন প্রকৃত শিক্ষিত পণ্ডিতের দৃষ্টিভঙ্গী। তিনি সমদর্শিনঃ সবাইকে সমদৃষ্টিতে দেখেন। যেমন কৃষ্ণ সকলকে সমদৃষ্টিতে দেখেন, তাঁর ভক্তও সকলকে সমদৃষ্টিতে দেখেন। তিনি সকলকেই একই পরিবারের সদস্য, স্বজন বলে মনে করেন। সেই জীবাত্মা কোন্ দেহে অবস্থান করছেন তিনি সেটি বিচার করেন না।

বিদ্যাবিনয়সম্পন্নে ব্রাহ্মণে গবি হস্তিনি ।
শুনি চৈব শ্বপাকে চ পণ্ডিতাঃ সমদর্শিনঃ ।।

‘জ্ঞানবান পণ্ডিতেরা বিদ্যা-বিনয়সম্পন্ন ব্ৰাহ্মণ, গাভী, হস্তী, কুকুর ও চণ্ডাল সকলের প্রতি সমদর্শী হন।’ (গীতা ৫/১৮) অবশ্যই বাহ্যিক দৃষ্টিভঙ্গীতে আমি একজন ব্রাহ্মণ এবং একটি কুকুরের সঙ্গে সম ব্যবহার করব না। সেটি বাহ্যিক আচরণ। কিন্তু অন্তর্নিহিতভাবে আমাদের অবগত থাকা উচিত যে, ব্রাহ্মণ এবং কুকুরের মধ্যে একই আত্মা অবস্থান করছে। একেই বলা হয় ব্রহ্মজ্ঞান অথবা আত্মতত্ত্বজ্ঞান । যখন কেউ ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করে তখন সকলের প্রতি সে সমদর্শী হয়।

ব্রহ্মভূতঃ প্রসন্নাত্মা ন শোচতি ন কাঙ্ক্ষতি।
সমঃ সর্বেষু ভূতেষু মদ্ভক্তিং লভতে পরাশ্।।

(গীতা ১৮/৫৪)

অর্জুন এখানে বলছেন, অহো বত মহৎ পাপং । মহৎ পাপং অর্থাৎ একটি মহাপাপ। আত্মেন্দ্রিয় প্রীতি সাধনের জন্য, রসনেন্দ্রিয় অথবা অন্য যে কোন কারণেই হোক কাউকে হত্যা করাকে মহাপাপরূপে গণ্য করা হয়, কারণ সকলেই আমাদের স্বজন। একজন প্রকৃত শিক্ষিত ব্যক্তি ভাবেন, “নিম্ন শ্রেণীর প্রাণীরাও আমাদের পরিবারের সদস্য। যদি আমি আমার তৃপ্তির উদ্দেশ্যে তাদের হত্যা করি তাহলে সেটি পাপ।’ দুর্ভাগ্যবশতঃ বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ এই হত্যালীলাতে উৎসাহ প্রদান করছে। এই সব পাপ কর্ম করে কিভাবে তারা সুখে জীবন ধারণ করতে পারে?

ঠিক এবং ভুল-কিভাবে নির্ধারণ হবে

অর্জুন এখন ভাবছেন, ‘রাজ্য লাভের জন্য এবং ইন্দ্রিয় তৃপ্তির জন্য, আমি আমার জ্ঞাতিদের হত্যা করতে যাচ্ছি। এটি মহাপাপ।’ এটি সত্য। যদি কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুধুমাত্র অর্জুনের ইন্দ্রিয় তৃপ্তি সাধনের জন্য সংঘটিত হতো তাহলে এটি অবশ্যই মহাপাপ হতো। প্রকৃতপক্ষে এটি অর্জুনের সন্তোষ সাধনের জন্য নয়; কৃষ্ণের সন্তোষ সাধনের জন্য সংঘটিত হয়েছিল। একজন কর্মী তার নিজের সন্তোষ সাধনের জন্য কর্ম করেন। কিন্তু একজন ভক্ত কৃষ্ণের সন্তোষ সাধনের জন্য কর্ম করেন। বাহ্যিকভাবে দুটি কর্মই একই রকম দেখায় কিন্তু এখানে এক বিশাল পার্থক্য বিদ্যমান। উপসংহার হলো এই যে, যদি আমরা আত্মেন্দ্রিয় তৃপ্তির জন্য কর্ম করি তা হলে সেটি মহাপাপ। কিন্তু একই কর্ম যদি আমরা কৃষ্ণের প্রীতিবাঞ্ছা পূরণের জন্য করি তাহলে সেটি পারমার্থিক প্রগতি। এটিই হচ্ছে পার্থক্য। কৃষ্ণের প্রীতিবাঞ্ছা পূরণ হেতু কর্ম মুক্তির পথ উন্মোচন করে, গৃহে অর্থাৎ ভগবৎধামে ফিরে যেতে সাহায্য করে। তোমার চেতনাকে পরিবর্তন করতে হবে। তুমি কি করছো? কার জন্য করছো? নিজের জন্য না কৃষ্ণের জন্য? এই হচ্ছে কৃষ্ণভাবনামৃত। সেটিই হলো জীবনের শুদ্ধিকরণ, তুমি যেই হও না কেন, তুমি যা-ই কর না কেন, এটি কোন বিষয় নয়। শ্রীমদ্ভাগবতে এর সত্যতা বর্ণনা করা আছেঃ

অতঃ পুস্তিদ্বিজশ্রেষ্ঠা বর্ণাশ্রমবিভাগশঃ ।
স্বনুষ্ঠিতস্য ধর্মস্য সংসিদ্ধিহরিতোষণম্॥

(ভা: ১/২/১৩)

হরিতোষণম্ অর্থাৎ ভগবানের সন্তুষ্টি বিধান। এই হলো শুদ্ধিকরণ। তুমি কি করছো সেটি বিষয় নয়। ‘তুমি যা-ই কর না কেন’ এর অর্থ তোমার যে কোন অর্থহীন কর্ম গ্রহণযোগ্য হবে না। বর্ণাশ্রম বিভাগশঃ। বৈদিক সভ্যতা অনুসারে বর্ণ বিভাজন রয়েছে ঃ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র। তাই বর্ণাশ্রম ধর্ম অনুযায়ী কর্ম করা উচিত। সুতরাং এটিকে বর্ণাশ্রম বলা হয়-ইতিমধ্যেই বর্ণ অনুযায়ী কর্ম তালিকা দেওয়া রয়েছে। যখন কেউ কৃষ্ণের প্রীতিবাঞ্ছা পূরনের জন্য তার বর্ণাশ্রম অনুযায়ী কর্ম করে, সেটিই জীবনের পূর্ণতা। তুমি শূদ্র কি তুমি ব্রাহ্মণ সেটি বিষয়বস্তু নয়। কিন্তু যদি তুমি কৃষ্ণের প্রীতিসাধনের জন্য নিজ বর্ণ অনুযায়ী কর্ম কর তবেই তোমার জীবন পূর্ণ। সেটিই কাম্য। সমগ্র মানব সভ্যতাই এই নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। বিভাজন অবশ্যম্ভাবী। বর্ণ অনুযায়ী বিভাজন রয়েছে। তাদের নিজেদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে কর্ম করা উচিত। প্রত্যেকেই ব্রাহ্মণ নয়। ব্রাহ্মণ অর্থাৎ বুদ্ধিমান ব্যক্তি। সুতরাং আমাদের বুদ্ধিমান ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা উচিত। যারা ব্যবসা বুদ্ধিতে চতুর তাদের বৈশ্য হওয়ার শিক্ষা প্রদান করা উচিত। একই কথা শূদ্রদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। প্রত্যেককে কৃষ্ণের সন্তোষ সাধনের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত। স্বনুষ্ঠিতস্য ধর্মস্য সংসিদ্ধিহরিতোষণম্ । কৃষ্ণের শিষ্য অর্জুন প্রকৃত পক্ষে যোদ্ধা, তাই তার স্বভাব হচ্ছে যুদ্ধেরত হওয়া। যেহেতু সে একজন ভক্ত সে সঠিক ভাবেই চিন্তা করছে, ‘আমার আত্মেন্দ্রিয় তৃপ্তি সাধনের জন্য আমি আমার জ্ঞাতিদের হত্যা করতে যাচ্ছি? ওহ! কি ভীষণ মহাপাপ আমি করতে যাচ্ছি।’ কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কৃষ্ণ কখনো তাঁর ভক্তকে পাপ কর্মে নিয়োজিত করেন না। না, সেটি কৃষ্ণের উদ্দেশ্য কখনোই নয়। আপাতদৃষ্টিতে এটি মনে হতে পারে যে, কৃষ্ণ অর্জুনকে পাপ কর্মে নিয়োজিত করছেন, কিন্তু এটি পাপকার্য নয়। কৃষ্ণ যা করান, তা কখনোই পাপ নয়; সেটি চিন্ময়, সেটি পরম শুদ্ধ কর্ম। মহামূর্খেরা যারা কৃষ্ণকে জানতে পারে না তারা বলে কৃষ্ণ অনৈতিক কর্ম করছে, তারা জানে না কৃষ্ণ কি? কৃষ্ণের কর্ম কি? তারা তর্ক করে ‘কেন কৃষ্ণ গোপীদের সঙ্গে নৃত্য করছেন, যারা অপরের পত্নী বা ভগ্নী? এটি পাপ।’ এর কারণ তারা কৃষ্ণের অবস্থান সম্বন্ধে অবগত নয়। কৃষ্ণ যে কোন কর্ম করতে পারেন। তেজীয় সং ন দোষায়ঃ’ ঐশ্বরিক শক্তিমান নিয়ন্তাদের কার্যকলাপের মধ্যে আমরা আপাত দৃষ্টিতে সমাজনীতির দুঃসাহসিক ব্যতিক্রম লক্ষ্য করলেও তাতে তাঁদের মর্যাদা ক্ষুন্ন হয় না, কারণ তারা আগুনের মতোই সর্বভূক হলেও নির্দোষ হয়ে থাকেন। উদাহরণস্বরূপ, সূর্য খুবই শক্তিশালী। সে সমুদ্রের জলকে বাষ্পে পরিণত করে এমন কি মূত্র এবং নর্দমার মতো কুস্থানের জলকেও বাষ্পে পরিণত করে। কিন্তু এর ফলে সূর্য কি কলুষিত হয়? না। বরং সূর্য তার শোধনকারী প্রকৃতির দ্বারা স্থানটিকে শোধন করে। অনুরূপভাবে কৃষ্ণের স্বভাব শোধনকারী। কৃষ্ণের কাছে কেউ শুদ্ধ অথবা নৈতিক উদ্দেশ্যে না এলেও সে পরিশোধিত হয়ে যায়। কিন্তু কৃষ্ণ কোন অশুদ্ধতা দ্বারা কলুষিত হন না । কৃষ্ণকে অনৈতিক বলার আগে এই বিজ্ঞানটিকে সকলের অনুধাবন করা উচিত। সেই জন্য ভগবদ্‌গীতায় ৭/৩ শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন,

মনুষ্যাণাং সহস্রেষু কশ্চিদ যততি সিদ্ধয়ে ।
যততামপি সিদ্ধানাং কশ্চিন্নাং বেত্তি তত্ত্বতঃ ।।

‘হাজার হাজার মানুষের মধ্যে কদাচিৎ কোন একজন সিদ্ধি লাভের জন্য যত্ন করেন আর সেই প্রকার যত্নশীল সিদ্ধদের মধ্যে কদাচিৎ একজন আমাকে অর্থাৎ আমার ভগবৎ-স্বরূপকে তত্ত্বত অবগত হন।’
সুতরাং কৃষ্ণ অনৈতিক নন। তিনি অর্জুনকে স্বজন হত্যার মতো পাপ কর্মে নিয়োজিত করছেন না। কৃষ্ণ তাকে তাঁর সেবায় নিয়োজিত করেছেন । যখন অর্জুন অনুধাবন করেন, ‘এই যুদ্ধ আমার প্রীতিসাধনের জন্য নয়, কৃষ্ণের প্রীতিসাধনের জন্য সংঘটিত হচ্ছে,’ তখন তিনি যুদ্ধ করতে সম্মত হন, কারণ তিনি একজন ভক্ত। করিষ্যে বচনং তব (গীতা ১৮/৭৩) হ্যাঁ আমি এখন কর্ম করব।’

স্বার্থপরতা এবং স্বার্থশূণ্যতা

আত্নোন্দ্রিয় প্রীতিবাঞ্ছা তারে বলি ‘কাম’। কাম অর্থাৎ লালসা, যা নিজ ইন্দ্রিয় তৃপ্তির অভিলাষ । অপরপক্ষে, কৃষ্ণেন্দ্রিয় প্রীতিবাঞ্ছা ধরে ‘প্রেম’ নাম। “ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সন্তোষ বিধানের অভিলাষ হলো প্রেম।’ প্রকৃতপক্ষে একই কর্ম, কিন্তু একটি স্বার্থপরতা আর অপরটি কৃষ্ণের জন্য। সুতরাং কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলনের অর্থ হলো আমরা সঠিক তত্ত্বাবধানে কৃষ্ণের জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত। আমরা খেয়ালখুশী মতো কিছু করে ভাবতে পারি না ‘আমি এটি কৃষ্ণের জন্য করছি।’ এখানে অন্য বিপদ আছে। সেই জন্য আমাদের আধ্যাত্মিক গুরুর তত্ত্বাবধানে থাকা প্রয়োজন । গুরু কৃষ্ণ প্রসাদে (চৈ.চ. মধ্য ১৯/১৫১)ঃ তোমাকে কৃষ্ণ এবং শুরু উভয়ের কৃপা প্রার্থনা করতে হবে, এটা ভাবলে চলবে না যে, তুমি এতটাই অগ্রসর হয়ে গিয়েছো যে কৃষ্ণের সঙ্গে তোমার প্রত্যক্ষ যোগ সাধন হতে পারে এবং তুমি যা-ই করছ তা সকলেই চিন্ময়। না, অবশ্যই তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে। শুরুর নির্দেশ অনুযায়ী চলতে হবে ।

সাবধানতার সঙ্গে জ্ঞানের উৎস নির্ধারণ করা উচিত

এই জ্ঞান অবশ্যই পরম্পরা ধারার মাধ্যমে প্রাপ্ত হতে হবে। এবং পরম্পরাপ্রাপ্তমিমং রাজর্ষয়ো বিদুঃ (গীতা ৪/২)। সুতরাং শুধুমাত্র শিক্ষাগত যোগ্যতা দ্বারা, জ্ঞানের দ্বারা একজন কখনোই ভগবদ্‌গীতা অনুধাবন করতে সক্ষম হবে না। ভগবদ্‌গীতায় বলা হয়েছে, ভক্তোহসি মে সখা চেতি (গীতা ৪/৩): ভক্ত না হয়ে তুমি কখনোই গীতা অনুধাবন করতে সক্ষম হবে না। সেই জন্য সনাতন গোস্বামী আমাদের কোন অবৈষ্ণব ব্যক্তির কাছে কৃষ্ণকথা শ্রবণ করতে নিষেধ করেছেন। অবৈষ্ণব-মুখেদ্‌গীর্ণ পূতং হরিকথামৃতং শ্রবণং নৈব কর্তব্যং ।।
প্রথমত : আমাদের দেখতে হবে কে কৃষ্ণকথা বলেছেন। তিনি কি কৃষ্ণভক্ত? তিনি বৈষ্ণব অথবা বৈষ্ণব নন? যদি না হন তা হলে অবিলম্বে পরিত্যাগ করা উচিত ‘ওহ! আমরা তোমার কাছ থেকে শুনতে চাই না।’ কিন্তু লোকে জানে না। যেহেতু তারা যে কোন মূর্খের কাছে ভগবদ্গীতা শ্রবণ করে তাই তারা এই দর্শন সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারে না। সর্পোচ্ছিষ্টং যথা পয়ঃ সর্পের দ্বারা উচ্ছিষ্ট হলে দুগ্ধ বা মন বিষাক্ত হয়ে যায়। সেইরূপে অবৈষ্ণবের মুখ নিঃসৃত কৃষ্ণকথাও বিষাক্ত। সেই জন্য কৃষ্ণের ভক্ত নন এমন কোন অবৈষ্ণবের কাছে ভগবদ্‌গীতা বা কৃষ্ণকথা শ্রবণ নিষিদ্ধ। পরিত্রাণায় সাধূনাম্‌ বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্ । (গীতা ৪/৮), কৃষ্ণ অর্জুনকে তাঁর উদ্দেশ্য পূরণের জন্য যুদ্ধে নিয়োজিত করছেন। অর্জুনের নিজের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য নয়, কৃষ্ণের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য কর্ম করছেন।


 

ব্যাক টু গডহেড অক্টোবর – ডিসেম্বর ২০১৮ হতে প্রকাশিত

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।