ভগবানের পুষ্যাভিষেক

প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০২৪ | ৯:৩০ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২৪ | ৯:৩০ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 59 বার দেখা হয়েছে

ভগবানের পুষ্যাভিষেক

পুষ্যাভিষেক বা পুষ্প অভিষেক কি ?

পৌষ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে অনুষ্ঠেয় শ্রীশ্রী রাধা-কৃষ্ণের অভিষেক অনুষ্ঠান। পুষ্যা নক্ষত্রে এই অভিষেক হয়েছিল তাই পুষ্যাভিষেক। এইদিন নানা রঙ্গের ফুল দিয়ে শ্রী শ্রী রাধামাধবকে অনেক আড়ম্বরপূর্ণভাবে অভিষেক করে বলে অনেকে পুষ্পাভিষেকও বলে।

  • ব্রজলীলায় এইদিন ব্রজগোপীগণ পরম আদরে শ্রীশ্রীরাধা-শ্যামসুন্দরকে বহুবিধ বনফুল দিয়ে সাজিয়েছিলেন।
  • রাধা-কৃষ্ণের নিত্য চিন্ময় সেবা সুখ বৃদ্ধিই ব্রজ গােপীকাদের একমাত্র মনোবাঞ্ছা। যুগল স্বরূপের আনন্দ বর্ধনই তাদের প্রাত্যহিক কর্ম। ব্রজগোপীরা এইদিন ব্রজেশ্বরী রাধারাণী ও প্রাণনাথ শ্যামসুন্দরকে নানা রং ও গন্ধের পুষ্প ও মাল্য দিয়ে এত পরিমাণ সাজিয়েছিলেন যেন, তারা তাদের নিজের সৌন্দর্যকেই ভুলে যান।
  • স্কন্ধ পুরাণ অনুসারে পুষ্যাভিষেক যাত্রা মূলত শ্রীপুরী জগন্নাথ মন্দিরের দ্বাদশ যাত্রার একটি, এই তিথিতে শ্রীদারুব্রহ্মের বিজয় বিগ্রহ শ্রীমদনমোহনের বিশেষ অভিষেক, শৃঙ্গারাদি হয়ে থাকে, সে থেকেই পুষ্যাভিষেক অনুষ্ঠান হয়ে আসছে। এখন সেটাকে কেন্দ্র করেই শ্রীশ্রীরাধা-মাধবের এদিনে পুষ্প শৃঙ্গার ও অভিষেকাদি হয়ে থাকে।
  • কৃষ্ণ যখন কোন অসুরকে নিধন করতেন তখন কৃষ্ণের বন্ধুরা পুষ্প বৃষ্টি করে তাঁকে স্বাগত জানাতেন।
  • গোপীগণ রাসলীলায়ও পুষ্প বৃষ্টি করে শ্রীশ্রী রাধা-শ্যামসুন্দরের আনন্দ বর্ধন করেছেন।
  • দ্বারকায়ও শ্রীকৃষ্ণকে পুষ্প বৃষ্টি করে দ্বারকাবাসীরা স্বাগত জানিয়েছেন।
  • অযোধ্যার নাগরিকগণও ভগবান শ্রী রামচন্দ্রকে পুষ্পবৃষ্টি করে অযোধ্যাতে স্বাগত জানিয়েছিলেন।
  • মাতঙ্গ ঋষি মাতা শবরীকে বলেছিলেন একদিন ভগবান রামচন্দ্র তার আশ্রমে আসবেন। সেই থেকে মাতা শবরী দিনের পর দিন বছরের পর বছর প্রতিদিন নতুন নতুন পুষ্প দিয়ে আশ্রমের রাস্তা সজ্জিত করেছেন ভগবানের আসার প্রতীক্ষায়।

কিভাবে উদযাপন করবেন ?

শ্ৰীমদ্ভগবদগীতায় বলা হয়েছে-

পত্রং পুষ্পং ফলং তুয়ং…

শ্রীল প্রভুপাদ বলেছেন, আপনি যখন ভক্তি ও প্রীতি সহকারে ভগবানকে একটি পুষ্প নিবেদন করবেন তখন আপনি অনুভব করতে পারবেন ভগবান আপনার নিবেদিত পুষ্প গ্রহণ করেছেন এবং শ্রীবিগ্রহের হাস্যোজ্জল মুখমণ্ডলে আপনি দর্শন করতে পারবেন।

পুষ্প অভিষেক হচ্ছে বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের উৎসব। এই দিন পুষ্প, অলংকার ও বস্ত্র দিয়ে শ্রীশ্রী রাধা-মাধবের শ্রীবিগ্রহকে সুন্দরভাবে সজ্জিত করা হয়। হরিভক্তিবিলাস অনুসারে এই দিন শ্রীবিগ্রহগণকে ঘি দিয়ে অভিষেক করানো উচিত।

প্রত্যেকটি ইসকন মন্দিরে ঐ দিন বিভিন্ন রং এর ফুল দিয়ে ভগবানকে সাজানো হয়, পুষ্প মাল্য প্রদান করা হয় ও অসংখ্য ভক্তবৃন্দের উপস্থিতিতে পুষ্প অভিষেক করানো হয় এবং কীর্তনমেলার আয়োজন করা হয়।

আপনিও নিজগৃহে শ্রীশ্রী রাধা-মাধবকে পুষ্প দিয়ে সাজাতে পারেন ও পুষ্প অভিষেক করতে পারেন। সারাদিন যে কোনো সময় হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন করার মধ্য দিয়ে।

আনন্দময় পুষ্যাভিষেক!!!

শ্রীল প্রভুপাদ একবার এই উৎসবটির এইভাবে বর্ণনা দিয়েছিলেন: “কৃষ্ণ গোপীদের কাছে তাঁদের হাতের এক পুতুলের মতো ছিলেন। তো, একদিন গোপীরা স্থির করলেন যে, আজ তাঁরা কৃষ্ণকে সাজাবেন। পুষ্যাভিষেক মানে হল বিগ্রহগণকে পুষ্প, অলঙ্কার, বস্ত্র দিয়ে প্রচুর পরিমাণে সাজানো। এরপর বিলাসবহুল প্রসাদ ভোজের আয়োজন এবং রাস্তা দিয়ে একটি শোভাযাত্রা হওয়া উচিত, তাহলে সকল মানুষেরা দেখতে পারবে যে কৃষ্ণকে কত সুন্দর দেখাচ্ছে।”

চিন্ময় জগতে গোপীরা কৃষ্ণ ও বলরামকে পালক, ফল, পাতা ও ফুল দিয়ে সাজায়। কুসুম সরোবরের কাছে পুষ্পবনে অনেক বাগান রয়েছে, শ্রীমতী রাধারাণী কৃষ্ণের সাথে যখন রাধাকুণ্ডে সাক্ষাৎ করেন, তখন তাঁকে যে চমৎকার পুষ্পমাল্যটি নিবেদন করেন সেটি তৈরি করার জন্য প্রতিদিন দুপুরের একটু আগে ওই বনগুলি থেকে পুষ্প সংগ্রহ করেন।

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।