নিউ মায়াপুর মন্দির রক্ষায় ভক্তদের অবদান

প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৩ | ১:০০ অপরাহ্ণ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২৩ | ১:০০ অপরাহ্ণ

এই পোস্টটি 102 বার দেখা হয়েছে

নিউ মায়াপুর মন্দির রক্ষায় ভক্তদের অবদান

একবার ফ্রান্সে নিউ মায়াপুর মন্দিরে এক স্মৃতিচারণমূলক অনুষ্ঠানে শ্রীমৎ ভক্তিচারু স্বামী মহারাজ উক্ত নিউ মায়াপুর মন্দির রক্ষায় পরিব্রাজক স্বামী এবং অন্যান্য ভক্তদের অবদান তুুলে ধরেন-


একসময় নিউ মায়াপুর মন্দির এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। আমি এটি বিস্তারিতভাবে বলছি না কিন্তু সংক্ষিপ্তভাবে এটি বর্ণনা করছি- তখন সকল নেতৃস্থানীয় ভক্তরা সরকারের কুনজরে পড়েছিলেন। এর অর্থ হলো এ সমস্ত লোকেরা সমাজের জন্য এবং দেশের জন্য বিশ্বস্ত নয়, তাই সরকার এদের সাথে যেকোনো কিছুই করতে পারে। এমনকি তাদের যেকোনো কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে পারেন। এ কারণে নিউ মায়াপুর মন্দিরকে বাঁচানোর জন্য ইস্‌কন কোন কিছুই করতে পারবে না। সেজন্য এই মন্দির কে বাঁচানোর জন্য আমাদের একটি নতুন কোম্পানি খুলতে হবে যেটি নিলামে লড়বে। আপনারা হয়তো জানবেন যে, নিউ মায়াপুর মন্দির নিলামে উঠেছিল এবং আমরা ফ্রান্সে সব কিছু হারিয়েছিলাম। আমরা আমাদের স্থাপনা এবং আমাদের যে একটি রেস্টুরেন্ট ছিল, সেটিও হারিয়েছিলাম। যেহেতু আমাদের ব্যাংকে লোন ছিল, কিন্তু আমরা সেটি পরিশোধ করতে পারিনি। তাই ব্যাংক আদেশ দিয়েছে সেই সম্পত্তি তাদের কাছে হস্তান্তর করতে। তারা এটি নিলামে তুলে। এখন সম্পত্তিটি ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে নিলামে জয়ী হওয়ার জন্য ইস্‌কন কিছুই করতে পারবে না। কারণ যেহেতু এটি ইস্‌কনের সম্পত্তি ছিল এবং ইস্‌কন টাকা পরিশোধ করেনি এবং সেজন্য তারা এখানে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। তাই নিলামে লড়বার জন্য আমাদের অন্য আরেকটি কোম্পানি গঠন করতে হবে। আমরা সবাই ভাবছিলাম কি করা যায়? এ সময় প্রায় ৬২ বছর বয়সের এক ব্যক্তি আমাদের কাছে এলো। সে একসময় খুব অসুস্থ ছিল আর সাধারনত অসুস্থ থাকা অবস্থায় আমাদের বিছানায় শুয়ে থাকতে হয়। তাই লোকে সাধারণত বিভিন্ন ধরনের গল্প উপন্যাস ইত্যাদি পড়ে তাদের সময় অতিবাহিত করে। তাই লোকটি এভাবে বিভিন্ন বই পড়ছিল। একসময় তার টেবিলে একটি ভগবদ্গীতা দেখতে পেল। সে নিজেও বুঝতে পারলো না যে, সে গ্রন্থটি এখানে কে, কিভাবে আনলো। তারপর সে গ্রন্থটি পড়া শুরু করল। এই গ্রন্থ অধ্যয়ন করতে করতে তার খুবই ভালো লাগে। সে এই গ্রন্থের প্রশংসা করতে থাকে। এরপর যখন সে সুস্থ হয়ে ওঠে, তখন ঠিকানা দেখে সে ভক্তদের সাথে যোগাযোগ করতে আসে। সেসময় নিউ মায়াপুরে গৌর পূর্ণিমা অনুষ্ঠান হচ্ছিল। তখন অনেক ভক্ত একসাথে জড়ো হয়েছিল। তখন সে তাদেরকে দেখে খুবই আনন্দ অনুভব করে। এক সময় ভক্তদের সাথে কথা বলতে বলতে তাঁরা তাকে বলে যে, আমরা এখন অনেক কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। সে তাঁদের আশ্বাস দিয়ে বলল, “ঠিক আছে, সে তার সর্বোচ্চটুকু চেষ্টা করবে।”
তাই সে একটি কোম্পানি গঠন করল। সে তাদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা, উপদেশ প্রদান করার পাশাপাশি অনেক টাকা দিয়ে সহায়তা করেছিল। এরপর আমরা সেই সম্পত্তিটি ফিরে পাই। তখন আমি তাকে এখানে এসে থাকতে বললাম। সে বলল, তার ৯০ বছর বয়স্ক বৃদ্ধা মাতা রয়েছে, তাকে সেবা করতে হবে। তখন আমি বললাম, “আচ্ছা, তবে তোমার মাকেও এখানে নিয়ে এসো” তার মা অনেক সরল ও সাদাসিদে ছিলেন। আমি তাদের দুজনকে দীক্ষা দিয়েছিলাম। এমনকি তার মায়ের দীক্ষা তার আগেই হয়ে গিয়েছিল। তার মায়ের নাম দিয়েছিলাম সীতা দেবী দাসী। এর আগে আমরা সবাই খুবই ভয়ে ছিলাম, কারণ ব্যাংকের আদেশ পাওয়া মাত্রই তারা এসে যেখানে যা কিছু পেত সব কিছুই নিয়ে যেত। তারা জানত যে, আমাদের বিগ্রহের বস্ত্রলংকার আদি সমস্ত বস্তু খুবই দামী, তাই তারা এসব কিছু নিয়ে যেত।
এজন্য ভক্তরা আগে থেকে এসব মূল্যবান সামগ্রী অন্য আরেক জায়গায় সরিয়ে রেখেছিল। গাভী গুলোকেও অন্য জায়গায় সরিয়ে রেখেছিল। তো যাইহোক, যখন ভক্ত ভগবানের জন্য কিছু করে তখন ভগবান তাকে স্বীকৃতি দেন এবং তিনি ভক্তদের সম্মানিত করেন। আমি সেই ব্যক্তির নাম দিয়েছিলাম পার্থ সারথি দাস। এর কিছুদিন পর ব্যক্তিটি সন্ন্যাস গ্রহণ করে।
আপনারা সকলেই জানেন যে, ইস্‌কনে সন্ন্যাস দীক্ষা লাভ করা খুবই কঠিন। আমাদের সন্ন্যাস মিনিস্ট্রি খুবই কঠোর। সন্ন্যাস নেওয়ার জন্য অনেক কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়। কেউ বিশ্বের যেকোনো পরীক্ষায় পাস করতে পারে কিন্তু এই পরীক্ষায় পাস করা খুবই কঠিন। কিন্তু সেই ব্যক্তিটির আত্মবিশ্বাস খুবই প্রবল ছিল।
সন্ন্যাসের জন্য অবশ্যই ইংরেজি জানতে হবে। তাই সে ব্যক্তিটি ইংরেজি শিখেছিল। আপনি বুঝতে পারছেন, একজন ব্যক্তি ৬৫ বছর বয়সে পুনরায় লেখাপড়া শিখছে! আপনারা হয়তো জানেন, ফ্রান্সের অধিবাসীরা একমাত্র তাদের ভাষা ছাড়া আর কোন ভাষায় কথা বলতে চায় না, এমনকি তারা ইংরেজি জানলেও তারা এমন ভাব করে যেন তারা জানেই না।
অবশেষে পার্থসারথি সন্ন্যাস লাভ করেছে। সন্ন্যাস লাভ করার পরপরই সে খুব জোরালোভাবে প্রচার আরম্ভ করে দিল। সে সাউথ আফ্রিকা, ভারত, মরিশাস এছাড়াও অন্যান্য আরো অনেক জায়গায় প্রচার করেছিল। নিউ মায়াপুরের এই কঠিন পরিস্থিতিতে ইংল্যান্ডের একজন ভক্ত খুব সহায়তা করেছিলেন। তিনি সকলকে অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন, নিউ মায়াপুরকে রক্ষা করার জন্য তাঁর নাম গিরিধারী দাস। এছাড়াও আরো অনেক ভক্ত খুবই আন্তরিকতার সহিত নিউমায়াপুরকে সহায়তা করেছিলেন। প্রিয়ব্রত নামে আরেকজন খুবই ভালো ভক্ত নিউ মায়াপুরের ভক্তদের জন্য ডাল, চাল, চিনি, ঘি ইত্যাদি রন্ধন সামগ্রী ট্রাকে করে নিয়ে আসতেন। প্রিয়ব্রত মূলত একটি আর্ট গ্যালারির ম্যানেজার ছিলেন। তার অফিস মন্দির থেকে কাছে ছিল।
সে প্রতিদিন সকালে মন্দিরে আসত এবং ভগবানের দর্শন করত, গুরুপূজায় অংশ নিতো, ভাগবতম্ ক্লাসে অংশগ্রহণ করত এবং পরিশেষে সকল ভক্তদের কাছে প্রসাদ পরিবেশন করত। এরপর নিজে প্রসাদ পেয়ে তার কর্মক্ষেত্রে যেত। প্রিয়ব্রত স্যুট-টাই পরে তার অফিসে যেত। সে সাথে একটি বিয়ার রাখত। এ অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষই বিয়ারের প্রতি আসক্ত। তাই তাদের এর থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া খুবই কঠিন। তখন আমি তাকে বলেছিলাম, “তোমার উচিত বিয়ার ত্যাগ করা।” সে আমার কথা মতো এটি ত্যাগ করেছিল।
অবশেষে সে তার কর্মক্ষেত্র থেকে অবসর গ্রহণ করে আমার সাথে প্রচার কার্যক্রমে যুক্ত হয় এবং আমার সাথে বিভিন্ন জায়গায় পরিভ্রমণে যায়। আমি তাকে সাউথ আফ্রিকা নিয়ে যাই। সে সেখানে একটি মন্দিরে উপাধ্যক্ষ পদে যোগ দেয়। সেখানে তার রাধারানী দেবী দাসীর সাথে বিবাহ হয়। প্রিয়ব্রত ছিল খুবই ভালো ভক্ত। সে সর্বদা সেবায় অনুরক্ত ছিল, খুবই বিনীত ছিল। নিউ মায়াপুর মন্দির রক্ষার জন্য এসব ভক্তদের অবদান সর্বদা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রভুপাদ এদের বিশেষ কৃপা প্রদান করবেন।


 

মাসিক চৈতন্য সন্দেশ জানুয়ারি ২০২৩ হতে প্রকাশিত
সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।