ত্রিকালের উজ্জ্বল নক্ষত্র শ্রীমদ্ভাগবতম

প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৪ | ৬:৫৩ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৪ | ৬:৫৩ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 56 বার দেখা হয়েছে

ত্রিকালের উজ্জ্বল নক্ষত্র শ্রীমদ্ভাগবতম

শ্রীমৎ জয়পতাকা স্বামী মহারাজ


তদিদং গ্রাহয়ামাস সুতমাত্মবতাং বরম্।
সর্ববেদেতিহাসানাং সারং সারং সমুদ্ধৃতম্ ॥

অর্থাৎ, শ্রীল ব্যাসদেব সমস্ত বৈদিক শাস্ত্র এবং এই ব্রহ্মান্ডের ইতিহাসের সারতত্ত্ব আহরণ করার পর সমস্ত আত্মজ্ঞানীদের মুকুটমণিস্বরূপ তাঁর পুত্রকে তা দান করেছিলেন। শ্রীমদ্ভাগবতম- ১/৩/৪১

শ্রীমদ্ভাগবতম হচ্ছে ভগবানের পূজনীয় শাস্ত্র অবতার। পূর্ব ভারতে শ্রীমদ্ভাগবতম পূজনীয়, উড়িষ্যায় ভাগবতম তুঙ্গে রয়েছে, তারা সেখানে ভাগবতের পূজা করে, আসামেও ভাগবতমের প্রচার রয়েছে। তারা ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করে এবং ভাগবতের পূজা করে। বিশেষভাবে ভাদ্রপূর্ণিমার দিন আমরা ভাগবতমের আরাধনা ও পূজা করে থাকি। ভাগবতে ব্রহ্মাণ্ডের ইতিহাসের কিছু কিছু বর্ণনা রয়েছে। এই সমস্ত ইতিহাস অন্যান্য গ্রহের হতে পারে তাই মানুষেরা মনে করে যে এগুলো সত্য নয়। সেখানে অন্য পরিস্থিতি থাকতে পারে। আমাদের অভিজ্ঞতা নেই কিন্তু এভাবে বিচার করা যেতে পারে। এই কথা ব্যাসদেব তাঁর পুত্র শুকদেব গোস্বামীকে বলেছিলেন এবং শুকদেব গোস্বামী তা গ্রহণ করেছিলেন। সেই জন্য আমাদের এটিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে গ্রহণ করা উচিত এবং কোনো কাল্পনিক সাহিত্য বা কাল্পনিক লেখা বলে মনে করা উচিত নয়। পরীক্ষিৎ মহারাজ তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিলেন এটি শ্রবণ করার জন্য। যাতে আমরা সকলে উনার ভাগবতম শ্রবণ থেকে আমাদের জীবনকে সার্থক করতে পারি। শ্রীমদ্ভাগবতম এমন একটি শাস্ত্র যা প্রত্যেকেরই অধ্যয়ন করা উচিত।

প্রশ্ন ১: উপরের অনুচ্ছেদটি থেকে ভাগবত সম্বন্ধে শ্রীল জয়পতাকা স্বামী মহারাজের মনোভাব অনুধাবন করুন এবং শিষ্য হিসেবে আপনার করণীয় কি? তা লিখুন।

আমি গতকাল সকালে এবং রাতে মনে করছিলাম যে, প্রভুপাদ চেয়েছিলেন সবাই অর্থাৎ তাঁর শিষ্য, উপশিষ্য, প্রশিষ্য তাঁর গ্রন্থ অধ্যয়ন করবেন এবং তিনি ভক্তিশাস্ত্রী, ভক্তিবৈভব, ভক্তিবেদান্ত পদ্ধতি তৈরী করেছেন। সুতরাং সকল ভক্তগণের এই গ্রন্থাবলী অধ্যয়ন করা উচিত এবং এই সকল উপাধি অর্জন করা উচিত।

প্রশ্ন ২: শ্রীল প্রভুপাদ প্রকৃতপক্ষে তাঁর ভবিষ্যৎ অনুগামীদের কাছ থেকে কি আশা করেছিলেন?

অতুলকৃষ্ণ দাস দক্ষিণ ভারতের নেতৃবৃন্দদের বলেছেন যে, তাদের এই কোর্সটি সম্পন্ন করতে হবে না কিন্তু তাদের এই পরীক্ষায় পাশ করতে হবে। আমরা অত্যন্ত ভাগ্যবান যে, মায়াপুরে আমরা এই কোর্স শিখতে পারছি এবং পরীক্ষা দিতে পারি। এই নবদ্বীপ ধাম আগে শিক্ষার একটি বিশেষ স্থান ছিল। সকলে যাতে প্রভুপাদের গ্রন্থ অধ্যয়ন করে সেটা আমি চিন্তা করছিলাম।

মায়াপুর শ্রীল প্রভুপাদের গ্রন্থ অধ্যয়নের জন্য একটি বিশেষ স্থান হওয়া উচিত। তার কারণ হচ্ছে কেউ যদি ব্রাহ্মণ দীক্ষা নিতে চায় তাহলে তার ভক্তিশাস্ত্রী অর্জন করা উচিত এবং কমপক্ষে ভাগবতমের প্রথম তিনটি স্কন্দ অধ্যয়ন করা উচিত। অনেক শিষ্যরা অনুরোধ করে আমি এত পড়াশোনা করতে পারি না, আমার মনে থাকে না, আমি ভুলে যাই। আমার মনে পড়ে, একসময় শ্রীল প্রভুপাদ বিভিন্ন মন্দিরের প্রেসিডেন্টদের, সেক্রেটারিদের স্বীকৃতি প্রদান করছিলেন।

তিনি ভাবলেন যে, এরা তো সবরকমের স্বীকৃতি পাচ্ছে কিন্তু অন্যান্য সেবকদের ব্যাপারটি কী? পূজারীদের কী হবে, যারা সংকীর্তন করে তাদের কী হবে, রাধুনীদের কী হবে, যুব প্রচারকদের কি হবে, মহিলারা আছে, যারা বিভিন্ন সেবায় অত্যন্ত সুদক্ষ তাদের কী হবে? প্রভুপাদ চিন্তা করছিলেন, যারা দক্ষ তারা সবাই যেন একটা পদবী পায় বা একটি স্বীকৃতি লাভ করতে পারে এবং তাদের অন্যদের শিক্ষা দান করা উচিত। এই নয় যে তারা দাম্ভিক হয়ে যাবে।

এটা হচ্ছে যাতে তারা অপরকে শেখাতে পারে। আমি ভাবছিলাম, এটি ছিল শ্রীল প্রভুপাদের ইচ্ছা। অতএব আমাদের এটিকে প্রতিষ্ঠা করা উচিত। আমি জানি না এটি সম্পূর্ণ ইসকন বা সম্পূর্ণ জিবিসি এটিকে সমর্থন করবে কিনা, অন্তত মায়াপুরে আমরা এটি করতে পারি অথবা আমার পরিমন্ডলে আমি করতে পারি। যেমন, শুকদেব গোস্বামী মহামুনিরূপে স্বীকৃত হয়েছিলেন। তাঁকে এইভাবে গ্রহণ করা হত যে তিনি সারতিসার গ্রহণ করেছিলেন এবং তিনি তা পরীক্ষিৎ মহারাজকে প্রদান করেছিলেন। সেই জ্ঞান আমাদের কাছে পাওয়া যাচ্ছে।

এটি অমূল্য একটি সম্পদ। আমাদের ভাগবত বারংবার পাঠ করা উচিত। আমি ভাগবত অনেকবার পাঠ করেছি এবং আমি এখন আবার পাঠ করছি। এখন আমি নতুন নতুন জিনিস পাচ্ছি। আমার মনে পড়ে কিভাবে ধৃতরাষ্ট্র বিদুর থেকে নির্দেশনা পেয়ে অবসর গ্রহণ করেছিলেন এবং অষ্টাঙ্গযোগের অগ্নিতে আহুতি দিয়েছিলেন।

কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ যখন ধরাধাম থেকে চলে যান তখন অর্জুন কিভাবে বিরহের মধ্যে ছিলেন এবং যুধিষ্টির মহারাজ এটিকে কিভাবে গ্রহণ করেছিলেন। আমি বিভ্রান্ত শব্দটি ব্যবহার করব না, আমি বলব বিরহে ছিলেন। আমার মনে পড়ছে, কিভাবে যুধিষ্টির মহারাজ পরীক্ষিৎ মহারাজকে সমস্ত পৃথিবীর শাসনভার অর্পণ করেছিলেন, তিনি তাঁর রাজসিংহাসন ত্যাগ করে সাধারণ পোশাক পরিধান করেছিলেন। তাঁকে দেখে পথচারীর মতো, পথের ভিখারীর মতো লাগছিল।

কেউ তাঁকে চিনতে পারে নি এবং এভাবে হেঁটে হেঁটে হিমালয়ের দিকে চলে গেছেন। তিনি সমস্ত রকমের আসক্তি থেকে নিজেকে ছিন্ন করেছিলেন এবং তিনি এইভাবে হিমালয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন। এভাবে নিজেকে তৈরী করার মাধ্যমে কিভাবে ভগবানের কাছে ফিরে যাওয়া যাবে!

শ্রীল প্রভুপাদ তাৎপর্যে উল্লেখ করেছেন, আজকালকার রাজনীতিবিদরা চিন্তা করছেন যে, কিভাবে ৯০ বছর বয়সেও সেই আসন আড়ে ধরে রাখতে পারবে। কারণ তারা সেটা পরিত্যাগ করতে চাই না। যুধিষ্ঠির মহারাজ ছিলেন সারা পৃথিবীর সম্রাট কিন্তু তিনি সবকিছুই পরিত্যাগ করেছিলেন। এই কলিযুগে আমাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেকোনো একটি আশ্রমে থাকতে।

মানুষেরা অতটা পুণ্যবান নয়। পূর্ববর্তী যুগে মানুষ ভাবত কিভাবে তাদের মানব জীবন সার্থক করবে। এভাবে গ্রন্থ অধ্যয়ন করলে আমরা বুঝতে পারব যে, ভক্তিযোগ অবলম্বনের মাধ্যমে আমাদের মানব জীবন সার্থক করা উচিত।

আমি ভাবছিলাম প্রত্যেক ভক্তের, প্রত্যেক শিষ্যের ভক্তিযোগের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছানো উচিত। আমরা হলাম আত্মা এবং আমাদের কর্তব্য হচ্ছে ভগবানের সেবায় নিযুক্ত হওয়া। এইভাবে শ্রীমদ্ভাগবতম অধ্যয়ন করে তা সেটা আমাদের জীবনে প্রয়োগ করা উচিত এটাই আমাদের জীবনের লক্ষ্য।


মাসিক চৈতন্য সন্দেশ আগস্ট ২০২২ হতে প্রকাশিত

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।