কেন খেলাধুলা এত জনপ্রিয়?

প্রকাশ: ৯ এপ্রিল ২০২৩ | ১১:৪৬ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ৯ এপ্রিল ২০২৩ | ১১:৪৬ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 146 বার দেখা হয়েছে

কেন খেলাধুলা এত জনপ্রিয়?

কৃষ্ণ সর্বদাই ক্রীড়ামগ্ন কিন্তু যখনই আমরা তার অনুকরণ করতে যাই , তখন আমরা পরাজিত হই

সার্বভৌম দাস


এখন চলছে ফুটবল বিশ্বকাপের মহারণ। সমগ্রবিশ্ব এখন নির্বাক চোখে তাকিয়ে আছে টেলিভিশনের দিকে। চারদিকে চলছে গুঞ্জন, আলোচনা, পতাকা উত্তোলন, হার-জিত পর্যালোচনা আরো কত কি! ফিফার মতে, সর্বশেষ ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপ আয়োজনে মোট খরচ হয়েছিল ১৫ বিলিয়ন ডলার (১,২৮০,০৮৫,০০০,০০০ টাকা)! ভাবা যায় এই বিপুল পরিমাণ অর্থ শুধুমাত্র খেলার জন্য খরচ করা হয়েছিল। এই অর্থ যদি মানুষের দারিদ্রতা নিরসনে ব্যয় করা হত, তবে কী না হত!
আমেরিকায় রয়েছে আরেক ধরনের জনপ্রিয় প্রফেশনাল ফুটবল । যখন ২০১৭ সালে হিউস্টনে সুপার বোল খেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছিল, তখন আমরা কয়েকজন ভক্ত ডাউনটাউনে শ্রীল প্রভুপাদের গ্রন্থ বিতরণ করতে চেয়েছিলাম। আমরা সাহসিকতার সাথে ক্রীড়া উন্মাদনায় রত জনগণের মাঝে গ্রন্থ বিতরণের চেষ্টা করছিলাম । কিছু গ্রন্থ বিতরণ করা সম্ভব হল, কিন্তু সেটি সংখ্যায় তেমন বেশি না। তবে আমাদের এই অভিজ্ঞতার ফলে আমরা সুস্পষ্টভাবে উপলব্ধি করলাম যে, এই জড় ক্রীড়ায় রয়েছে একটি শক্তিশালী সম্মোহন শক্তি। বাস্তবিকপক্ষে, প্রতি বছর ছয়শ বিলিয়ন ডলারের অধিক অর্থ ব্যয় হয় ক্রীড়া শিল্পে, আর ক্রীড়ামোদী ফ্যানদের ব্যক্তিগত খরচের কথা বাদই দিলাম ।
কেন খেলাধুলা এত জনপ্রিয়? বৈষ্ণব শিক্ষা অনুসারে, এই পৃথিবীর সবকিছুই এমনকি ক্রীড়াপ্রবৃত্তিও হল চিন্ময় জগতের বিশেষত সর্বাকর্ষক পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অপ্রাকৃত কর্মের বিকৃত প্রতিফলন। দুর্ভাগ্যবশতঃ, এই জড়জগতে খেলাধুলা আকর্ষণীয় বলে মনে হয়, কিন্তু এই আকর্ষণ হল মায়ার বিভ্রম। আমরা এখানে কখনোই প্রকৃত আনন্দ লাভ করতে পারব না। সর্বোচ্চ আমরা মরুভূমিতে মরীচিকার মত বিকৃত কোন উপস্থাপনা থেকে রস লাভের ব্যর্থ চেষ্টা করতে পারি ।
যখনই ক্রীড়ার উৎপত্তির দিকে আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করি অর্থাৎ যেই খেলায় আমরা সর্বোচ্চ পবিত্র আনন্দ লাভ করতে পারি, সেখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হলেন সেই আদি ক্রীড়ার প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন বিজয়ী। অবাঞ্ছিত অনুরাগী হিসেবে আমরা শ্রীমদ্ভাগবত (১০/১৮/১৯) এ পাই-“ক্রীড়ারসজ্ঞ কৃষ্ণ তখন গোপবালকগণকে একত্রে আহ্বান করে বললেন- “হে গোপবালকগণ! চল, এখন আমরা নিজেদের দুটি সমান দলে ভাগ করে নিয়ে খেলা করি।’ রবীন্দ্র স্বরূপ দাস ব্যাখ্যা করেছেন ভগবানের খেলা হল অপ্রাকৃত ও পবিত্র, কিন্তু আমাদের খেলা হল জড়দূষণে জর্জরিত।
“ভগবান ক্রীড়ারত: এই অপ্রাকৃত কার্যাবলীর সংস্কৃত অর্থ হল ‘প্রকৃতপক্ষে লীলা’। ভগবান আমাদের অভাবনীয় শক্তিমত্তার দ্বারা অবতরিত হয়ে (যদিও এই অবতরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য থাকে) ক্রীড়ায় মত্ত হন। ঠিক যেমন মৎস্য অবতার, তিনি জলপ্লাবনের তরঙ্গে ক্রীড়ারত ছিলেন। এরপর বরাহ অবতারে তিনি একটি যুদ্ধক্রীড়া উপভোগ করেন। তাঁর সকল অবতারেই দেখা যায় তিনি একটি কার্য সাধনের পাশাপাশি একজন খেলোয়াড়ের ভূমিকা পালন করেন। ভগবানের লীলার অর্থ হল অপ্রাকৃত কার্যকলাপ, এটি অনুকরণীয় নয়। সকল মানুষের কার্যসমূহ সাধিত হয় মূলত অনুকরণের মাধ্যমে, বিশেষত আমাদের মধ্যে থাকা কোন বিষয়ের অভাব পূরণের অভিলাষে । কিন্তু ভগবানের সবকিছুই রয়েছে। তার কোন কিছু অর্জন কিংবা হারানোর নেই।” (সূত্র: ব্যাক টু গডহেড, মে ১৯৮৫)
শ্রীমদ্ভাগতের ১০ম স্কন্ধে বর্ণিত হয়েছে কিভাবে কৃষ্ণ ও বলরাম, কংসের ভয়ানক মল্লযোদ্ধা চাণুর, মুষ্টিক, কুট, শাল্ব এবং তোশলের সাথে যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছিলেন। শ্ৰীমদ্ভাগবত (১০/৪৪/২৯) নং শ্লোকের অনুবাদ: “অতঃপর কৃষ্ণ ও বলরাম সমবয়স্ক গোপবালক সখাদের আহ্বান করে তাঁদের সঙ্গে মিলিত হয়ে নৃত্য ও ক্রীড়া করলেন, আর তখন তাঁদের নূপুর বাদিত বাদ্যযন্ত্রের মতো ধ্বনিত হচ্ছিল।” এই শ্লোকের তাৎপর্যে শ্রীল প্রভুপাদ বলেছেন, “আজকাল আমরা দেখতে পাই যে, কোন মুষ্টিযুদ্ধ খেলার প্রতিদ্বন্দ্বিতার সময় যেই না কেউ বিজয়ী হল, অমনি সেই বিজয়ী মুষ্টিযোদ্ধার সকল বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনেরা মুষ্টিযুদ্ধের মঞ্চে ছুটে এসে তাকে অভিনন্দিত করে এবং কখনও কখনও বিজয়ী প্রতিদ্বন্দ্বী মহানন্দে নৃত্যও করে। ঠিক সেইভাবেই তাঁদের বন্ধু ও আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে তাঁদের জয়ী হওয়াকে উদ্‌্যাপিত করে কৃষ্ণ ও বলরাম নৃত্য করেছিলেন।”

চৈতন্য সন্দেশ অ্যাপ ডাউনলোড করুন :https://play.google.com/store/apps/details?id=com.differentcoder.csbtg


বৈদিক শাস্ত্রসমূহে আমরা দেখি কিভাবে কৃষ্ণ ক্রীড়া আমোদে কালীয়া নামক বিষাক্ত সর্পের ফণার উপর নৃত্য করেছিলেন, আর এই ক্রীড়ার ফলে সেই দানবীয় সাপ বিনীত ও পবিত্র হয়েছিল। শ্রীমদ্ভাগবত (২/৭/৩৪-৩৫) বলা হয়েছে, কৃষ্ণ যখন কোন শত্রুভাবাপন্ন কাউকে হত্যা করেন যদি তা কোন মানুষ যেমন অসুররাজ কংস হোক কিংবা ষাড় দানব অরিষ্টাসুরও হয় তথাপিও, “এইভাবে নিহত হওয়ার ফলে এই সমস্ত অসুরেরা নির্বিশেষ ব্রহ্মজ্যোতি প্রাপ্ত হবে অথবা বৈকুণ্ঠলোকে ভগবানের স্বীয় ধাম প্রাপ্ত হবে ।”
সুতরাং, আমরা দেখতে পাই, ভগবানের সমস্ত ক্রীড়ালীলায় রয়েছে চিন্ময় সুবিধা এবং সকলের জন্য আশীর্বাদ, এমনকি যারা আমি কিংবা আপনার দর্শক হিসেবে সেইসব ক্রীড়ার কথা পঠন কিংবা শ্রবণ করি আমাদের মঙ্গল সাধিত হয়। কিন্তু এই জড়জগতে যারা ভগবানের সেই ক্রীড়ালীলাকে অনুকরণ করতে চাইবেন তারা প্রকৃতির আইনের অধীনে জড়িয়ে পড়বেন । উদাহরণস্বরূপ, কৃষ্ণ ব্যতীত কোন জাগতিক মানুষ যদি ষাড় লড়ায়ে কোন ষাড়কে হত্যা করে তবে তাঁর ফলাফল হিসেবে সেই ষাড় ও ষাড় লড়াই পরিচালকের জীবনে দুর্গতি নেমে আসে। কেননা তারা সেইসব দর্শক যারা সেই হত্যা ক্রীড়া দর্শন করেছেন সকলেই কর্মের বন্ধনে জড়িত হয়ে পড়েন, যার কারণে তাদের ভবিষ্যতে কৃতকর্মের ফল ভোগ করতে হবে। আরেকটি সমস্যা হচ্ছে আমরা যেসমস্ত ক্রীড়াবিদদের প্রশংসা করছি কিংবা নিজেদের আইডল হিসেবে বিবেচনা করছি তারা কেউই কৃষ্ণভক্ত নয় এবং তাই তারা স্ফীত তৃপ্তি লাভ করেন তা যথাযথ নয়। যেমন, আমেরিকান ফুটবলের একজন জনপ্রিয় খেলোয়াড় ও জে. সিম্পসন তার অ্যাথলেটিক স্কিলের জন্য লক্ষ লক্ষ ফ্যানদের কাছে দেবতুল্যরূপে পরিগণিত হতেন কিন্তু তিনি একসময় তিনি হত্যার আসামী হয়ে জেলে যান এবং সেখানেও আরেকটি অপরাধ করেন এবং এখন আর তাকে হিরো বলে মনে করা হয় না। বিভিন্ন খেলার তথাকথিত ঈশ্বরদের অধিকাংশই ডোপিং, প্রতারণা, ধর্ষণ, মদ্যপান এমনকি নরহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত। এই প্রকারে ক্রীড়াবিদরা আমাদের বিনোদন দিতে পারে কিন্তু তারা আমাদের জড়বন্ধন থেকে মুক্ত করতে পারে না । কৃষ্ণ ভগবদ্‌গীতায় (৮/১৫) অর্জুনকে বলেছেন- দুঃখালয়ম্ অশাশ্বতম্ – দুঃখপূর্ণ নশ্বর সংসার। তাই সকল চেষ্টা করেও আমরা এখানে প্রকৃতপক্ষে বিজয়ী হতে পারি না এবং এমনকি বিজয়ী হলেও সেই কষ্টার্জিত বিজয়ের ফল বেশিদিন ভোগ করতে পারি না ।

সময় অপচয়

একজন অনুকম্পাশীল বৈষ্ণব হিসেবে শ্রীল প্রভুপাদ ছিলেন পর-দুঃখে-দুঃখী । তাই তিনি জীবের দুর্দশা দেখে অসুখী হলেন। ডালাসে একবার প্রাতঃভ্রমণের সময় তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “দেখ তারা শুধুমাত্র বলটিকে বারংবার আঘাত করার মাধ্যমে কিভাবে সময় অপচয় করছে।” খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারক বিলি গ্রাহাম একবার খেলার নিরর্থকতা উল্লেখ করতে গিয়ে তামাশা করে বলেন, “শুধুমাত্র গলফ (ক্রীড়া) ময়দান ছাড়া ঈশ্বর প্রত্যেক স্থানে আমার প্রার্থনার উত্তর প্রদান করেছে।”
যে সমস্ত অতি সৌভাগ্যবান জীব মনুষ্যদেহ লাভ করেছেন তাদের উদ্দেশ্যে শ্রীল প্রভুপাদ বলেছেন, জাগতিক ক্রীড়াসমূহ হল শুধুমাত্র মূল্যবান সময়ের অপচয় ও ইন্দ্রিয় তৃপ্তির মাধ্যমে আনন্দ লাভের এক ব্যর্থ প্রচেষ্ঠা মাত্র ।
তিনি শ্রীমদ্ভাগবতে (১/১/১০, তাৎপর্য) লিখেছেন, “এই কলিযুগে মানুষ কেবল বিভিন্ন রাজনৈতিক সংস্থা এবং দলের শিকারই হচ্ছে না, ইন্দ্রিয়-তৃপ্তির বিভিন্ন রকমের প্রলোভনের দ্বারাও বিপথগামী হচ্ছে। যেমন সিনেমা, অনর্থক খেলাধুলা, জুয়া, ক্লাব, জড় জাগতিক গ্রন্থাগার, অসৎ সঙ্গ, ধুমপান, আসব পান, প্রতারণা, চুরি, বাটপাড়ি ইত্যাদি।”
অবশ্যই ক্রীড়া অনুশীলন আমাদের বিনোদনের সাথে সাথে শরীরচর্চার সুযোগ প্রদান করে কিন্তু ঐকান্তিক ভক্তগণ জানেন- জাগতিক ক্রীড়া এমনকি দর্শক হিসেবে ক্রীড়া উপভোগও সূক্ষ্ম কিংবা স্থূলভাবে দূষণীয় । তাছাড়া অধিকাংশ দর্শক  সহযোগে অনুষ্ঠিত ক্রীড়াসমূহ বিপুল পরিমাণ বিক্রম ও পাপবৃত্তিতে চালিত করে সকলকে কেননা এর পেছনে একটি অবৈধ অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য জড়িত থাকে।
যেহেতু এই জড় জগতের ক্রীড়া হল চিন্ময় জগতের কৃষ্ণ থেকে আসা ক্রীড়ার বিকৃত প্রতিরূপ তাই স্বাভাবিকভাবেই এটি আমাদের আকর্ষণ করতে পারে। কিন্তু আমাদের অবশ্যই জানতে হবে এটি মায়াদেবীর বিধ্বংসী অস্ত্রসমূহের মধ্যে একটি অস্ত্র, যার দ্বারা আমরা সহজেই ঘায়েল হতে পারি।
যদি আমরা এই জাগতিক ক্রীড়াসমূহকে একটি নৈমিত্তিক সৌন্দর্য, উদ্দীপনা, বীরত্ব, উত্তেজনা, স্বতঃস্ফূর্ততা, নাটক, সৃজনশীল, দৃঢ়তা, অসাধারণ টিমওয়ার্ক কিংবা উজ্জল কৌশলরূপে দেখি তবে পেলে, মোহাম্মদ আলী, মাইকেল ফিলিপস, উসাইন বোল্ট, শচীন টেন্ডুলকার কিংবা মেসির সেই দক্ষতা, রণকৌশল ও শক্তিমত্তার উৎস কোথায়? আমরা জানি (ভগবদ্গীতায় ১০/৪১) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, “ঐশ্বর্যযুক্ত, শ্রী-সম্পন্ন ও বল- প্রভাবাদির আধিক্যযুক্ত যত বস্তু আছে, সে সবই আমার তেজাংশসম্ভূত বলে জানবে।” ও “আমি মানুষের পৌরুষ (মানুষের সকল ক্ষমতা)” ভগবান শ্রীকৃষ্ণ চান না আমরা তাঁর শক্তির বিকৃত এক ঝলকমাত্র দর্শনে মোহিত হয়ে জাগতিক স্টেডিয়াম অথবা টিভি স্ক্রিনে তাকিয়ে থেকে অযথা কালক্ষেপন করি । তিনি চান আমরা যেন তাঁর পরম অভ্যুয়ম তথা নিত্য চিন্ময় লোক লাভ করি। শ্রীল প্রভুপাদের ভাষ্য : “সেই পদম্ অব্যয়ম্ বা নিত্য জগতে সেই যেতে পারে, যে নির্মানমোহ অর্থাৎ যে মোহমুক্ত হতে পেরেছে। এর অর্থ কি? এই জড় জগতে সকলেই কিছু না কিছু হতে চায়। কেউ চায় রাজা হতে, কেউ চায় প্রধানমন্ত্রী হতে, কেউ চায় ঐশ্বর্যশালী হতে, এভাবেই সকলেই কিছু না কিছু হতে চায় । যতক্ষণ না আমরা আধিপত্য করার এই বাসনাকে সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগ করতে পারছি, ততক্ষণ আমরা জড় বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে ভগবানের আলয় সনাতন ধামে ফিরে যেতে পারব না। সেই ভগবৎ-ধাম, যা সনাতন, সেখানে কেবল তাঁরাই যেতে পারেন, যাঁরা জড় জগতের ভোগ-বাসনার দ্বারা লালায়িত নন, যাঁরা ভগবানের সেবায় নিজেদের সর্বতোভাবে নিয়োজিত করেছেন। কেউ এভাবে অধিষ্ঠিত হলে তিনি অনায়াসে পরম ধামে উপনীত হন ।

মিথ্যা উপাধি

আমাদের ইতোমধ্যে বহু উপাধি রয়েছে: পুরুষ কিংবা নারী, আমেরিকান কিংবা রাশিয়ান, কালো কিংবা সাদা, হিন্দু, খ্রিস্টান, ইহুদী, মুসলিম। আমাদের কি আরো বহু প্রকারের উপাধি দরকার আছে? এই প্রকারের কৃত্রিম, জাগতিক আত্মগত ধারণা মানুষে মানুষে বিভক্তির বিস্তার করে আমাদের কিংকর্তব্যবিমূঢ় করছে, আমাদের প্রকৃত চিন্ময় পরিচয় বিস্মৃতিতে সহায়তা করছে। তাই এই বিপদজনক জড় জগত থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য আমাদের অবশ্যই এইধরণের মিথ্যা উপাধি দূর করতে হবে। স্পষ্টত যদি আমরা চিন্ময় জগতে ভগবান কৃষ্ণের সাথে তাঁর সখাদের সাথে চিন্ময় ক্রীড়া উপভোগ করতে চাই তবে আমাদের জাগতিক প্রকৃতি উপভোগের বাসনা পরিত্যাগ করতে হবে।
জড় ক্রীড়ার সাথে নিজের পরিচয় জড়ানোর অর্থ হল আরো অপ্রয়োজনীয়, কৃত্রিম জড় উপাধিতে নিজেকে আবদ্ধ করা। আমরা অত্যন্ত গর্বের সাথে প্রিয় ক্রীড়াদলের লোগো সম্বলিত টি-শার্ট পরিধান করি। যদিও এই সমস্ত দলসমূহের অনেকের রয়েছে কল্পিত নাম, কেউ কেউ উপযুক্তভাবেই রেখেছে কোন প্রাণীর নামে তাদের নাম এবং এদেরকেই আমরা আমাদের হিরোরূপে বিবেচনা করি!

প্রকৃত হিরো

শ্রীমদ্ভাগবত (৪/২৫/২৫) এর তাৎপর্যে শ্রীল প্রভুপাদ বলেছেন, “জড়-জাগতিক কার্যকলাপ হচ্ছে ভ্রান্ত বীরত্বপূর্ণ কার্যকলাপ, কিন্তু জড় ইন্দ্রিয়গুলিকে জড় সুখভোগ থেকে বিরত করাই হচ্ছে প্রকৃত বীরত্ব।” ১৯৭৫ সালে গ্রন্থবিতরণকারী এক ভক্তকে প্রেরিত এক চিঠিতে শ্রীল প্রভুপাদ স্মরণ করিয়ে দেন যে, কারো ইন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রণের আরো চাইতে অধিক বীরত্বপূর্ণ কার্য হল সেই ইন্দ্রিয়সমূহ ব্যবহার করে পারমার্থিক জ্ঞান বিতরণ। “যুদ্ধের সময়, একজন সাধারণ রাখাল বালক কিংবা করণীকও তাঁর অনবদ্য অবদানের জন্য তৎক্ষণাৎ দেশের হিরোতে পরিণত হয়। ঠিক সেভাবে কৃষ্ণ তৎক্ষণাৎ কৃষ্ণভাবনাময় একজন প্রচারককে স্বীকৃতি দেন যিনি তাঁর বাণী প্রচারের জন্য সকল প্রকারের ঝুঁকি গ্রহণ করেন। বৈশাসিক দাস তার “আওয়ার ফ্যামিলি বিজনেস” গ্রন্থে একজন প্রকৃত হিরো- একজন প্রকৃত বিজয়ী সম্পর্কে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি হলেন সকল সদিচ্ছার অগ্রদূত, তিনি হলেন ভগবানের এমন এক সেবক যিনি সকল মায়ার ক্রীড়ার ঊর্ধ্বে অবস্থান করে মানুষকে কৃষ্ণভাবনা প্রদান করতে পারেন বিশেষত মানুষকে শ্রীল প্রভুপাদের গ্রন্থ বিতরণ করেন। এই গ্রন্থসমূহে রয়েছে এক আশ্চর্যকর অলৌকিক শক্তি যা যেকোন পাপী ক্রীড়াবিদ কিংবা আপনি, আমি অথবা জগতের যে কেউ জেল, মন্দির, গৃহ, বন তা সে যেই স্থানেই অবস্থান করুক না কেন তাকে বিজয়ী কিংবা উদ্ধার করতে সক্ষম। প্রত্যেক জীবনচক্রে মায়ার বিরতিহীন খেলায় আমাদের অসীম উদ্বেগ সমাপ্ত হতে পারে যদি আমরা কোনদিন প্রকৃত খেলায় অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হই। তা হল পরম ক্রীড়াবিদ পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সাথে মুখোমুখি ক্রীড়ায় অংশগ্রহণ ।
লেখক পরিচিতি: সার্বভৌম দাস, শ্রীমৎ তমাল কৃষ্ণ গোস্বামীর একজন শিষ্য যিনি হিউস্টন, টেক্সাসে অবস্থান করছেন। তিনি এখানে কৃষ্ণভাবনামৃত শিক্ষা দান ও বিভিন্ন লেখনী প্রকল্পে নিয়োজিত আছেন।

 

ব্যাক টু গডহেড জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০১৮ হতে প্রকাশিত

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।