কবে মুক্তি

প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৩ | ৯:২৩ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৩ | ৯:২৩ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 83 বার দেখা হয়েছে

কবে মুক্তি

পুরাণের একটি কাহিনী শোনা যায়। এক গরীব চাষী ছিলেন। তিনি বহু পরিশ্রম সত্ত্বেও সবসময় হরিনাম করতেন। কিছু দূরে এক পাহাড়ের গুহাতে এক তপস্বী ভগবানের ধ্যানে বসে থাকতেন। একদিন নারদ মুনিকে দর্শন পেয়ে চাষী তাঁকে প্রণাম জানিয়ে বললেন, হে মুনিবর! আমি করে এই দুঃসময় জন্য-মৃত্যুর বন্ধন থেকে রক্ষা পাবো। তপস্বীও নারদ মুনিকে একই প্রশ্ন করলেন। নারদ মুনি ভাষীকে ও তপস্বীকে এই কথা বললেন, “অপেক্ষা করো। আমি শ্রীভগবানের কাছ থেকে ফিরে এসে বলবো।” নারদ মুনি অদৃশ্য হলেন। কিছুদিন পরে তপস্বীর সামনে নারদ মুনি এসে পৌঁছলেন। তপস্বী তাঁকে বললেন, হে দেবর্ষি। আপনি ভগবান সম্পর্কে বলুন। আমার গতি পরিণতি কি সেই সম্পর্কেও দয়া করে বলুন নারদ মুনি বললেন, আমি গিয়ে দেখি, ভগবান একটি ছোট সূচের ছিদ্রের মধ্যে একটি বিশাল হাতীকে ঢুকাচ্ছেন আর বের করছেন। সেই কথা শুনে তপস্বী চিন্তা করলেন, এ একেবারে অসার কথা। কি করে ছোট সূঁচছিদ্রে বিশাল হাতীকে ঢোকানো সম্ভব হতে পারে? নাবাদ মুনি প্রশ্ন করলেন, হে তপস্বী, যে কথা বললাম, সেটি তোমার কি পছন্দ নয়। তপস্বী বললেন, না। হাতীর গায়ে সুচ ঢুকে আবার বেরিয়ে যেতে পারে। কিন্তু সূচের ছিদ্রে হাতা ঢুকে যাচ্ছে। আবার বেরিয়ে যাচ্ছে। এটা অলীক কথা নারদ মুনি আবার প্রশ্ন করলেন, তুমি এখন আর কি বলতে ভাণ্ডা তপস্বী বললেন, এই দুঃখময় জগৎ থেকে আমার মুক্তি কবে হবে?  নারদ বললেন, আরও দশ হাজার বছর তপস্যা করো, তারপর মুক্তি পাবে।

সেই কথা শুনে তপস্বী বিক্ষুব্ধ হয়ে বললেন, আরও দশ হাজার বছর। তবে না না, আমার মুক্তি চাই না। বহু বছর তাই করেও আমি বিফল। অতএব মুক্তির দরকার নেই । তারপর সেখানেই নারদ মুনির কাছে চাষী এসে পৌঁছে প্রণতি নিবেদন করলো এবং যথারীতি কুশলাদি জিজ্ঞেস করে ভগবান সম্পর্কে জানতে চাইল। নারদ মুনি বললেন, হে চাষীভাই, আমি গিয়ে দেখি, ভগৱান একটা ছোট সূচের ছিদ্রের মধ্যে একটি বিশাল হাতীকে ঢোকাচ্ছেন আর বের করছেন।

সেই কথা শুনে চাষী বললেন, শ্রীভগবানের আশ্চর্য লীলা! তিনি সবই পারেন। নারদ প্রশ্ন করলেন, তুমি আমার এই কথাটি বিশ্বাস করলে ? চাষী বললেন, বিশ্বাস না করার কি থাকতে পারে? একটি বিন্দু আকারের বটবীজের মধ্যে = বৃহৎ বটবৃক্ষ থাকে, একটি ক্ষুদ্র আগুনের – ফুলকিতেই বিশাল এলাকা ভস্মীভূত হয়ে যায়। = তাহলে একটি সূচের ছিদ্রে একটি হাতীর = প্রবেশ এমন কোন আশ্চর্য ব্যাপার নয় ।

-নারদ মুনি চাষীকে আবার প্রশ্ন করলেন, তুমি – এখন আর কি বলতে চাও? চাষী বললেন, হে দেবর্ষি, আমার মুক্তি কবে নারদ মুনি কাছের এক তেঁতুল গাছকে দেখিয়ে বললেন, এই গাছে যতগুলি পাতা আছে তত সহস্র বছর পরে তোমার মুক্তি হবে। ইসরল চাষী সেই কথা শুনে আনন্দে অভিভূত হয়ে বলতে লাগলেন, ও হো তাহলে আমি একদিন উদ্ধার হবো তো! আমি তো মনে করেছিলাম চিরকালই এই দুঃখময় জড় জগতে মামাকে পড়ে থাকতে হবে। শ্রীভগবান আমার কত কৃপাময়। হাতখন শ্রীনারদমুনি চাষীর হাত ধরে বললেন, অতোমার এই মুহূর্তেই সমস্ত বছর পূর্ণ হয়ে আলেগাছে। এখনই শ্রীবৈকুণ্ঠ জগতে চলো। আর তপস্বীকে নারদমুনি বললেন, তোমার জড় পেচালো বুদ্ধি ও বিশ্বাসহীনতার জন্য জড়জগৎ থেকে তোমার মুক্তির বহুবিলম্ব আছে। তুমি আরও অধিক কষ্ট ভোগ করো ।

চাষী চলে গেলো বৈকুণ্ঠধামে। তপস্বী পড়ে থাকলো কুন্ঠাময় জগতে ।

 হিতোপদেশ : যারা ভগবানের সমস্ত য ক্রিয়াকলাপ জড় বুদ্ধিতে পরিমাপ করে, জড় লি জগতের বন্ধন থেকে তাদের মুক্তিলাভ সুদূর পরাহত।


চৈতন্য সন্দেশ জানুয়ারি ২০১০ প্রকাশিত 

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।