২০১২ পৃথিবী ধ্বংসের বছর!

প্রকাশ: ২০ জুন ২০১৮ | ১১:৩০ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ২০ জুন ২০১৮ | ১১:৩০ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 1022 বার দেখা হয়েছে

২০১২ পৃথিবী ধ্বংসের বছর!

মাধব দাস: হঠাৎ দুলে উঠবে পৃথিবী। বদলে যাবে আহ্নিক গতি। ঘুরতে শুরু করবে উল্টো দিকে। উত্তর মেরু চলে যাবে দক্ষিণ মেরুতে। পশ্চিম দিকে অস্ত নয়, উদয় হবে সূর্যের! নড়তে শুরু করবে মহাদেশীয় প্লেটগুলো। ফুঁসে উঠবে মৃত, সুপ্ত, অর্ধসুপ্ত-সব আগ্নেয়গিরি। দেখা দেবে প্রবল জলোচ্ছ্বাস। বেড়ে যাবে সূর্যের উত্তাপ; উত্তাপ বাড়বে পৃথিবীরও। গলিত লাভার মত গলে যেতে শুরু করবে পৃথিবীর ভূখন্ড। পৃথিবীকে লক্ষ্য করে ধেয়ে আসবে এক গ্রহ-‘নিবারু’। ২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বর, পৃথিবীর ভাগ্যললাটে লেখা একটাই শব্দ-মৃত্যু! ওই দিনই ধ্বংস হয়ে যাবে আমাদের মায়-ভালোবাসা, লোভ-ঘৃণা, পাপ-পুণ্যের এই নীল-সবুজ পৃথিবী! পৃথিবী ধ্বংসের পূর্বাভাস নতুন নয়। নতুন হলো, আবারও এমন একটা গুঞ্জন পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়া। এবার মূলত দুটো কল্পিত ধারণার ওপর ভিত্তি করে পৃথিবীর শেষ দিন ঘোষণা করা হয়েছে। ২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বর শেষ হয়ে যাচ্ছে মায়া বর্ষপঞ্জির। ২৫০ থেকে ৯০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে মেক্সিকো ও মধ্য আমেরিকার বিশাল অঞ্চলজুড়ে বিকাশ লাভ করেছিল এই মায়া সভ্যতা। এই সভ্যতার আরও অনেক নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে এর কয়েক হাজার বছর ধরে চলা বর্ষপঞ্জি। দক্ষিণ আমেরিকায় ইউরোপীয় উপনিবেশ স্থাপনের আগে এই বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করত এ অঞ্চলের মানুষ। পরে গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জি চালু হয়। সেই বিখ্যাত মেসোঅ্যামেরিকান লং কাউন্ট ক্যালেন্ডার পাঁচ হাজার ১২৫ বছরের বৃত্ত শেষ করছে এ বছরের ২১ ডিসেম্বর। এর থেকে রটে গেছে, ২০১২ সালের এই ২১ ডিসেম্বর আসলে পৃথিবীরও শেষ দিন। এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে সুমেরীয়দের আবিস্কৃত গ্রহ নিবিরু আর পৃথিবীর কক্ষপথ এই রেখায় চলে আসার তত্ত্ব। এ দুই গ্রহের মুখোমুখি সংঘর্ষ হবে; পুরোপুরি না হলেও পৃথিবীর একটা অংশ ছুঁয়ে যাবে। তাছাড়া নিবিরু পৃথিবীর কাছাকাছি চলে আসার ফলে দুই গ্রহের মাধ্যকর্ষণ শক্তির ঘাত- প্রতিঘাত পৃথিবীর গতিতেও এনে দেবে পরিবর্তন। কেউ কেউ প্রমাণ হিসেবে নাসার একটি পূর্বাভাসকেও ব্যবহার করছে। যেখানে বলা হচ্ছে, ২০১২ সালে সূর্য তুলনামূলকভাবে বেশি উত্তপ্ত থাকবে। এ সময় ‘সোলার ফ্লেয়ার’ বা সূর্যের মধ্যে বিস্ফোরণের পরিমাণ বেড়ে যাবে। হুট করে পৃথিবী ধ্বংসের এই গুজবকে আরও উসকে দিয়েছে ২০০৯ সালে মুক্তি পাওয়া ২০১২ নামের একটি ছবি। যেখানে দেখানো হয়েছে, সূর্যের উত্তাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর কেন্দ্রের উত্তাপও ভয়ংকরভাবে বেড়ে যাচ্ছে। এর ফলে গলে যাচ্ছে পৃথিবীর ভূখন্ড। পৃথিবীতে আর ভূখন্ড বলে কিছু থাকছে না। পুরো পৃথিবী তলিয়ে যাচ্ছে পানির নিচে। ওই ছবির প্রচার-প্রচারণায় মায়া বর্ষপঞ্জির শেষ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি ব্যবহার করা হয়েছে জোরালোভাবে। এখনই প্রতিনি হাজার হাজার মানুষ নাসার কাছে এ বিষয়ে জানতে চেয়ে চিঠি পাঠাচ্ছে। কেউ কেউ এমনও মন্তব্য করেছেন, ওই বিভীষিকা শুরুর আগেই তাঁরা সপরিবারে ্আত্মহত্যা করবেন! ভেবে দেখুন অবস্থাটা। এ বিষয়ের উপর বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল ইস্‌কনের তিনজন বিখ্যাত বৈদিক জ্যোতিষবিদকে। যারা হলেন হংসবতার দাস যিনি ফ্লোরিডার ওসালোতে বৈদিক কালচারাল ফেলোশীপ অর্গানাইজেশন পরিচালনা করেন। ফ্লোরিডার আলুয়া নিবাসী নলিনি কান্ত দাস যিনি বিখ্যাত How to read your horoscope  এবং The Divine path of precdiction এবং দুর্যোধন গৌর দাস যার আসল নিবাস যুক্তরাষ্ট্রে হলেও সম্প্রতি তিনি আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে বাস করেন। তারা সবাই প্রায় ৩৫ বছর যাবৎ বৈদিক জ্যোতিষবিদ্যা অনুশীলন করেছেন। যাদের অনেক ভবিষ্যৎবাণী বিশ্বে সফল।
প্রশ্ন: অনেকে বলছে মায়ান দিনপঞ্জী অনুসারে এ বছরের ২১ ডিসেম্বর পৃথিবী ধ্বংস হবে। অনেকে বলছে এ বছরে পৃথিবী ধ্বংস হবে। অনেকে আবার বলছে এ বছরে পৃথিবী ধ্বংস না হলে চেতনার এক ইতিবাচক স্থানান্তর ঘটবে। বৈদিক দৃষ্টিকোণ এ বিষয়গুলো কিভাবে দেখেন?
উত্তর: হংস অবতার: পন্ডিত এবং ইতিহাসবিদরা এখন একমত যে, মায়ান দিনপঞ্জী ডিসেম্বরে শেষ নয় বরং এটি একটি যুগের অবসান হবে।
দুর্যোধন গুরু: বৈদিক জ্যোতির্বিদ চেতনার স্থানান্তরের বিষয়টি সম্পর্কে কিংবা পৃথিবী যে এ বছরেই ধ্বংস হবে সে সম্পর্কে কিছুই উল্লেখ নেই।
প্রশ্ন: যদি কোনটায় না হয়ে থাকে তবে এই বছরটিকে বৈদিক জ্যোতির্বিদ্যা অনুসারে কিভাবে যেতে পারে?
নলিনী কান্ত: শনি গ্রহ আগামী আড়াই বছরের মধ্যে আরো শক্তিশালী হচ্ছে যার অর্থ লোকদের চেতনার উন্নয়ন নয় বরং তমগুনের আধিক্য বেড়ে যাবে। শনি (শুক্র গ্রহ) এবং বৃহস্পতি (দেবগুরু) উভয়ই শুক্র গ্রহের নিদর্শন হবে। শুক্রের নিদর্শনে শনি খুবই শক্তিশালী কারণ তিনি এবং শুক্র হল খুবই অন্তরঙ্গজন। আবার বৃহস্পতি শুক্র এর শক্র এবং তারা একে অপরের সাথে ঝগড়া করবে। যার ফলে বৃহস্পতির দিব্য প্রকৃতির মধ্যে অধিক ইন্দ্রিয়জাত প্রভাব দ্বারা বশীভূত হবে এবং সেটি হবে বিশেষত মে ২০১২ এবং জুন ২০১৩ সালের মধ্যে।
হংস অবতার: একটি চাইনিজ অভিশপ্ত কথা রয়েছে “May you live in interesting times.” এ বছরটি অনেকটা সেরকমই। গ্রহগুলোর গতিবিধি থেকে বোঝ যাচ্ছে এগুলোর প্রভাবে পৃথিবীতে সংঘর্ষের সৃষ্টি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ মঙ্গল গ্রহ, যুদ্ধের গ্রহ জুন পযর্ন্ত সিংহ রাশিতে। আবার গ্রীষ্ম এবং শরৎকালে। মঙ্গল এবং শনি গ্রহের মাধ্যমে প্রাকৃতিক দুর্যোগ. ভূমিকম্প এবং শক্তিশালী ঝড়ের ইঙ্গিত বহন করে।
দুর্যোধন গুরু: আমি হংস অবতারের সাথে একমত যে, এই বছরটিতে বিভিন্ন অরাজকতা ইত্যাদি স্বাভাবিকভাবে সংঘটিত হতে পারে। ষাট বছরের জুপিটারিয়ান চক্র অনুসারে ২০১২ কে বলা হয় নন্দন বছর যার মানে হল অধিকাংশই সুখ ও আনন্দের একটি বছর।
প্রশ্ন: আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এই বছরের নভেম্বর মাসে। এই সম্পর্কে আগাম কোন ভবিষ্যতবাণী দিতে পারেন?
হংস অবতার: রিপাবলিকান প্রার্থী কে হবে সেটি ঘোষণার আগ পর্যন্ত কে জিতবে সেই ভবিষ্যতবাণী আমি দেব না তবে আমি বলব বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার দিকেই সাফল্য বেশ শক্তিশালী। তাকে হারানোটা খুব একটা সহজ হবে না।
দুর্যোধন গুরু: নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আরো ৬ মাস রয়েছে ওবামা এখন শনি বৃহস্পতি সময়কালের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন এবং অবশেষে প্রথমবারের মত গত চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভাল সময়টা আসছে।
নলিনী কান্ত: এপিল পর্যন্ত আমি ভবিষ্যতবাণী করব না কে জিততে যাচ্ছে? কিন্তু এটুকু বলব যদি ওবামার প্রতিদ্বন্ধী রিপাবলিকান প্রার্থী মিট রোমনি হয় তবে তখন একটা ভাল যুদ্ধ হবে। কেননা মিটের হরস্কোপও অনেকটা শক্তিশালী।
প্রশ্ন: ২০০৮ সালে অর্থনীতির পতনের পর থেকে আজও তার ধারা অব্যাহত রয়েছে। ২০১২ সালে অর্থনীতি পরিস্থিতি কিরকম হবে?
নলিনী: যদি ওবামা ২০১২ সালে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচনে জিতে তবে আমেরিকার অর্থনীতির কিছুটা উন্নতি হবে। ২০১২ এর জুলাই থেকে ওবামার অধিকতর ভাল সময় আসছে। গ্রহের গতিবিধি অনুসারে দরিদ্র এবং শ্রম শ্রেণীর মানুষদের সাহায্য করার বা সেবা করার আরো অধিক সুযোগ আসছে। যদি ওবামা জিতে তবে পরবর্তী ছয় বছর তার খুব ভাল একটা অবস্থানে যাওয়ার সুযোগ আছে।
হংস অবতার: এই বছর জুপিটার মানে বৃহস্পতি আধিপত্য থাকবে তাই সারাবিশ্বে ব্যাংকিং এবং কারেন্সির ক্ষেত্রে কিছু সমস্যার মুখোমুখি হবে। রিয়েলে এস্টেটেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সমস্যার ধারা অব্যাহত থাকবে।
দুর্যোধন গুরু: গত আড়াই বছরে যখন শনি কন্যা রাশিতে ছিল তখন অনেক দুঃখদুর্দশা নেমে এসেছিল। অনেকে চাকরি হারিয়েছিল, শ্রমিক আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। এখন নভেম্বর থেকে শনির এ ধারার পরিবর্তন হতে যাচ্ছে প্রতিটির ক্ষেত্রে একই স্বচ্ছতা, ন্যায়বিচার, সমদর্শিতার একটি প্রতিচ্ছবি দেখা যাবে। পরবর্তী তিন বছর অর্থাৎ নভেম্বর ১৫, ২০১১ থেকে নভেম্বর ২, ২০১৪ পর্যন্ত এমন সময় আসছে যে, সম্ভবত বৈপ্লবিক আন্দোলনগুলো সফল হবে। আগামী সংখ্যায় পারমার্থিক প্রেক্ষাপটে এ বছরটি কেমন যাবে? এবং আমাদের উপর গ্রহ নক্ষত্রগুলোর প্রভাব কিরকম পড়বে এবং এর প্রতিকার কিভাবে করা যায় এ সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে। হরে কৃষ্ণ।

(মাসিক চৈতন্য ফেব্রুয়ারী ২০১২ সালে প্রকাশিত)

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।