এই পোস্টটি 138 বার দেখা হয়েছে
সেদিন এরিবানের উদ্দেশ্যে চলতে চলতে গাড়িতে সেনিকের সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল । অবশেষে আমরা একটি নয়তলা বিল্ডিংয়ের সামনে এসে উপস্থিত হই। সেনিক তখন মৃদু হেসে নৃত্যরত চোখে আমার দিকে তাকাল এবং বলল, “তাহলে, তুমি কি প্রস্তুত পারমার্থিক জগতে প্রবেশ করার জন্য? আমি বললাম আমার দরকার নেই পারমার্থিক জগতে প্রবেশের জন্য কেননা ইতোমধ্যেই আমি পারমার্থিক জগতে রয়েছি” এর মানে হল আমি আমার কিছুক্ষন আগের ধুমপানের কারণে এক ধরনের ভাবে অধিষ্ঠিত ছিলাম। আমরা দু’জন ৯ম ফ্লোরে গিয়ে থামলাম। একটা অ্যাপার্টমেন্ট থেকে করতাল, হারমোনিয়াম এবং মদৃঙ্গের আওয়াজ ভেসে আসছিল । বাইরে অনেক জোড়া জুতার সারি। সেনিক বাইরে থেকে কলিং বেল চাপলে, যথারীতি অনেক সতর্কতার সাথে দরজা খুলে আমাদের ভিতরে ঢুকানো হল। ঠিক তখন কতিপয় ভক্ত তাদের সম্মুখে একটি চিত্রপটের দিকে দু’হাত উঁচু করে নাচছিল। কিছুক্ষন পরে সেই চিত্রপটের সম্মুখে তারা প্রণতি নিবেদন করেছিল । পরবর্তীতে আমি জানতে পেরেছিলাম ঐ চিত্রপটের ছবিটি হল ‘কৃষ্ণ’ যেটি আমি কিছু সংস্কৃতি থেকে ভারতীয় কিছু জেনেছিলাম । কিছু খাদ্য হিন্দু ভগবানকে নিবেদন করার পর এটি যে প্রসাদ হয় সেটি আমি সেনিক এবং আত্মানন্দ নামে আরেক ভক্তের নিকট থেকে শুনেছিলাম। তারা আমাকে বুঝিয়েছিল যে ভগবানকে কোন কিছু নিবেদন করা হলে তার মধ্যে ভগবান প্রবেশ করে। তখন সেটি আর এ জগতের কোন দ্রব্য বলে বিবেচিত হয় না, সেটি তখন চিন্ময় দ্রব্য হয়ে উঠে। এরপর আবারো কীর্তন শুরু হলে আমার হৃদয় কেমন জানি দোলা দিয়ে উঠল। আমি ‘কীর্তন’ শব্দটিও প্রথম শুনেছিলাম । আমি দেখেছিলাম কিভাবে ভক্তরা কেউ পরম আবেগে চোখ বন্ধ করে কয়েকটি শব্দ গাইছিল । শব্দসমূহ ছিল ‘হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে”। তাদের সাথে সেটি গাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম এবং পরম সন্তুষ্টি অনুভব করছিলাম । কিছুক্ষণ পর এ শান্ত এবং পবিত্র পরিবেশ ওলটপালট হয়ে গেল যখন তৎকালীন KGB এর সৈন্যরা দরজা নক করছিল চটজলধি দরজা খোলার জন্য। তখন ভক্তরা যে যার মতো ছোটাছুটি করে সমস্ত বই খাতা, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং বিগ্রহ আড়াল করার চেষ্টা করতে লাগল। এদিকে KGB এর লোকেরা রীতিমত দরজা ভাঙার মত অবস্থা শুরু করল। সবাই তখন নিশ্চুপ। এখনই দরজা খোলা হবে। সেই মুহুর্তে সেনিক আমাকে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল আমার কাছে কানো ড্রাগস বা মারিজোনা জাতীয় কিছু আছে এবং যদি থেকে থাকে তবে তা ফেলে দেয়ার জন্য। কেননা KGB’র লোকেরা এমনিতেই ক্ষেপা। তাদের ধারণা ইসকন এই সংস্থাটি প্রকৃতপক্ষে আমেরিকার একটি চালাকি। এ সংস্থার লোকেরা আমেরিকার গোয়েন্দা হয়ে কাজ করছে এবং রাশিয়ায় কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচারের অন্যতম কর্ণধার হরিকেষ স্বামী তিনিও একজন পা আমেরিকান তাই তাদের মনে ধারণা জন্মেছিল। নয় এ সংস্থার লোকেরা আসলে আমেরিকান দিন গোয়েন্দা ছাড়া আর কিছুই নয়। এমনিতেই তারা খুঁত বের করার চেষ্টা করছে তার উপর যদি এখানে কারো কাছ থেকে ড্রাগসের সন্ধান পায় তবে এরা আমাদের গ্রেফতার করার সুযোগ পাবে এবং বাইরে প্রচার করবে হরেকৃষ্ণ ভক্তরা ড্রাগসের নেশায় আসক্ত হয়ে যতসব লোক দেখানো কাজ করে। তারা বিভিন্ন অবৈধ কর্মে জড়িত। সেনিকের কাছ থেকে তা শুনে আমি বাথরুমে গিয়ে আমার লুকানো কিছু মারিজোনা ফেলে দিতে কং চাইলে আমার মন বাধা দেয়। কেননা খুব কষ্ট করে এ মারিজোনা ক্রয় করেছিলাম। তাই কা কষ্টের প্রিয় মারিজোনা (এক প্রকার নেশা দ্রব্য) ফেলে দিতে ইচ্ছে করেছিল না। তাই কিছু মুখে ঢুকিয়ে দিলাম এবং বাকিগুলো ফেলে দিয়ে বাথরুমের দিয়ে দিলাম। এরপর যা হল তা ছিল সত্যিই ভয়াবহ কেননা আর্মি সৈন্যরা ঘরের ভিতর ঢুকেই সব তছনছ করে। কিছু খুঁত খোঁজার চেষ্টা করছিল। তারা ভক্তদের গালমন্দ করছিল। তাদের একজন প্রসাদের পাত্র থেকে প্রসাদ পেয়ে বলাবলি করছিল “এ খাবারগুলো তো খুবই সুস্বাদু। `আমি জীবনে এরকম সুস্বাধু খাবার খাইনি। এত সুস্বাধু কিভাবে হয়।” সরকারি সৈনারা কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে চলে যাওয়ার সময় ভক্তদের কয়েকজন বাধা দিলে তারা তাদের ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। এভাবে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির পরিসমাপ্তি ঘটে। এরপর ভক্তরা আবার স্বাভাবিক হয়ে সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে সবাই মিলে প্রসাদ পায়। ঐ KGB এর সৈন্যের মত আমিও প্রসাদের প্রতি লোভী হয়ে যাই। কেননা তা ছিল আমার জন্যেও পরম সুস্বাধুজনক খাদ্য এবং আমি আরো পেতে চাইছিলাম কিন্তু অন্যান্য ভক্তদের কম হবে বলে জোড় করিনি। পরদিন সকালে আমাকে জীবনের প্রথমবারের মত না চাইলেও খুব ভোরে উঠতে হয়েছিল কেননা ভক্তদের মহামন্ত্র কীর্তন এবং প্রসাদের লোভ আমাকে তা করতে বাধ্য করেছিল। যদিও এর জন্যে আমাকে অনেক ভক্তই চাপাচাপি করে। পরে বাথরুমে স্নান করতে গিয়ে এক অদ্ভুত কাণ্ড ঘটে। বাথরুমে দুটো ট্যাপ ছিল। শুধুমাত্র যেটি গরম জলের ট্যাপ তার উপরে লেখা ছিল ‘মায়া’। আমি তখন দরজার বাইরে অপেক্ষমান ভক্তদের জিজ্ঞেস করলাম এর অর্থ কি? তখন দরজার ওপাড় থেকে ভক্তদের হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছিল। ভক্তরা তখন জবাব দিল, গরম জলে স্নান করা পারমার্থবাদীদের জন্য উপযুক্ত নয়। তাই ঠাণ্ডা জলে স্নান করার বিধি নিয়ম রয়েছে যা পারমার্থিক উন্নতিতে সহায়ক। এরপর আয়নার সামনে দাঁড়ালে আয়নার উপর লেখা ছিল “তুমি এই শরীর নও, তুমি চিয় আত্মা’। যাই হোক আমি জীবনে প্রথমবারের মত হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডার মধ্যে হিমশীতল ঠা জলে স্নান করলাম। যদিও বাসায় আমার ঘুম থেকে উঠতে দুপুর গড়াতো আর ঠাণ্ডা জলে স্নান করাতো চিন্তাই করা যেতো না। তাই স্বভাব বিরুদ্ধ একটি ভিন্ন ধরনের কাজ করার পর মনে হল আমি আসলেই পূর্বের চেয়ে আরো সতেজ বোধ করছি।
আগামী সংখ্যায় জ্যাজিক তার পুরনো বন্ধুর সঙ্গে কিভাবে দু’পক্ষের পরিবারের নানারকম বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও হরেকৃষ্ণ আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল এবং জ্যাজিকের সঙ্গে স্যাকোর ভুল বোঝাবুঝি নিয়ে রোমাঞ্চকর কাহিনীগুলো তুলে ধরা হবে।
হরেকৃষ্ণ।
চৈতন্য সন্দেশ অ্যাপ ডাউনলোড করুন :https://play.google.com/store/apps/details?id=com.differentcoder.csbtg
Hare Krishna Thanks For Reading