এই পোস্টটি 277 বার দেখা হয়েছে
আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইস্কন) প্রতিষ্ঠাতা-আচার্য
কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ
১৯৭৬ সালের ২ জুলাই ওয়াশিংটন ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ ও তাঁর কতিপয় শিষ্যের সঙ্গে কথোপকথনের অংশ বিশেষ
বৃষাকপি : কর্মীরা বলে যে, “ইন্দ্রিয় সন্তুষ্টি করলে কি হয়?” তারা বলতে চায় যে ইন্দ্রিয় সন্তুষ্টি খুব ভালো ব্যাপার।”
শ্রীল প্রভুপাদ : তুমি যদি ব্যাপারটি চালিয়ে যেতে পারো, তবে খুব ভালো কথা। কিন্তু সেইসব মূর্খেরা বোঝে না যে, তুমি সেটি চালিয়ে যেতে পারো না। “খুব ভালো, তুমি এখন রাষ্ট্রপতি হয়েছ,” কিন্তু কেন তোমাকে বিতাড়িত করা হলো? উম্? এখন নিক্সন সম্বন্ধে কি বলা হবে? তিনি রাষ্ট্রপতি ছিলেন, এখন তাকে পদচ্যুত করা হয়েছে, তাহলে এখন তার অবস্থানটি কি? তিনি ভাবেননি যে, “আমার পদ থেকে যে কোনো মুহূর্তে বিতাড়িত করা হতে পারে। তবে আমার ইন্দ্রিয় সন্তুষ্টির মূল্যটি কি?” তিনি তার ইন্দ্রিয়ের সন্তুষ্ট করছিলেন। তার যেমন ইচ্ছে তেমন করেছিলেন। কিন্তু কেন তিনি বিতাড়িত হয়েছেন, এখন তিনি কি কি করতে পারেন? এই জলজ্যান্ত প্রমাণটিকে গ্রহণ কর। রাষ্ট্রপতি পদ থেকে বিতাড়িত হতে কেই বা আর চায়? কিন্তু কেন তাকে বিতাড়িত হতে হলো। তিনি বেঁচে আছেন। অথচ তিনি সেই পদে নেই। এই যে ক্রুশ্চেভ, তিনিও এখন আর সেই পদে নেই। কেন তারা ভাবে না যে, যে কোনো মুহূর্তে আমরা পদ থেকে বিতাড়িত হতে পারি? এবং তারা বিতাড়িত হতে বাধ্য হয় কেন?
বৃষাকপি : কেন তারা সেটা ভাবে না, শ্রীল প্রভুপাদ?
শ্রীল প্রভুপাদ : সেটাই তাদের মূর্খতা। হরিশৌরি : এটা কি তাদের অতিরিক্ত পাপের জন্য? অত্যধিক পাপের ফলে তারা ভাবতে পারে না যে, কোনো দিব্য প্রভাব রয়েছে?
শ্রীল প্রভুপাদ : হ্যাঁ। এ বিষয়ে তাদের কোনো শিক্ষা নেই, ফলে তারা মূর্খ। তারা শিশুদের মতো। একটি শিশু খেলাধূলা করে, সে উপভোগ করছে, কিন্তু সে জানে না যে তাকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে, তাকে বড় হতে হবে, তাকে একজন যুবক হতে হবে।
সে যদি শিক্ষিত না হয় তাহলে তাকে কষ্ট ভোগ করতে হবে। কিন্তু সে সেটা জানে না। সে শুধু খেলে। সেটাই তার কাছে সব। তার পিতা বলবে “ওহে আমার পুত্র, তুমি পড়াশুনা কর।” সে উত্তর দেবে, “না, আমি খেলতে ভালবাসি।” তেমনই এইসব মানুষেরা হচ্ছে দায়িত্বজ্ঞানহীন শিশুসুলভ মূর্খ। পশুরা এরকম করে। ঋষভদেব বলছেন, “না, না, না। এই জীবন এই সকল উদ্দেশ্য সাধনের জন্য নয়। নায়ং দেহো দেহভাজং নৃলোকে কষ্টান কামানহতে বিড়ভূজাং যে। কেবলমাত্র ইন্দ্রিয় সন্তুষ্টির জন্যই এত কষ্ট। ঠিক শূকর-কুকুরের মতো। এটা মনুষ্য জীবন নয়। তপো দিব্যং পুত্রকা যেন সত্ত্বম্। তোমার অস্তিত্বকে শুদ্ধ করার জন্য কেবল অনুশীলন কর। তোমার অস্তিত্বটি শুদ্ধ নয়। তোমাকে একটি অবস্থার মধ্যে রাখা হয়েছে। তুমি যদি সেটা পছন্দ কর, তবে ঠিক আছে। কিন্তু যেহেতু তুমি শুদ্ধ নও, তাই যে কোনো মুহূর্তে তোমাকে ছুঁড়ে ফেলা হবে। তখন তুমি কিছুই করতে পারবে না। প্রকৃতে ক্রিয়মানানি। তুমি তোমার অবস্থানের বা পদের জন্য খুবই গর্বিত কিন্তু যখন তোমাকে ছুঁড়ে ফেলা হবে তখন তুমি কিছুই করতে পারবে না। অহঙ্কার বিমূঢ়াত্মা কর্তাহম্ ইতি মন্যতে। সে হচ্ছে মূর্খ। সে ভাবছে “আমিই সব। আমি এই রাষ্ট্রপতি পদে আমার ইচ্ছানুযায়ী থেকে যেতে পারি।” কিন্তু সেটি প্রকৃত অবস্থা নয়। সেটি মূৰ্খতা, সেটি শিশুসুলভতা। সে জানে না তার অবস্থাটি কি। কিন্তু সে একটি অবস্থা বা পদ চাইছে। তার মানে তার জন্য একটি ভালো অবস্থান রয়েছে, কিন্তু সেটি এখানে নেই। সেটি সে জানে না। সকলেই ভালো অবস্থানের জন্য লালায়িত, কিন্তু কোথায় সেই ভালো অবস্থান সেটি তারা জানে না। প্রত্যেকেই জলের জন্য হাহাকার করছে, কিন্তু তারা মরুভূমিতে জল খুঁজে বেড়াচ্ছে। অবস্থানটি এরকম। একেই বলে পশুবাদীতা। পশুরা মরুভূমিতে জল খুঁজে বেড়ায় কিন্তু মানুষ জানে জল কোথায় পাওয়া যাবে। মানুষ জানে, না, “এটি জল নয় এটি আলেয়া।” জল রয়েছে, সেটি বাস্তব, কিন্তু এখানে নেই। এটিই হল মানুষের বৈশিষ্ট্য। সে জানে এটি জলের প্রতিফলন, আলেয়া। তেমনই ভালো অবস্থানটি রয়েছে, কিন্তু সেটি এখানে নেই। এখানে এই জড় জগতে যা রয়েছে সেটি সেই ভালো অবস্থানের প্রতিফলন মাত্র। সেটি সে হৃদয়ঙ্গম করতে পারে না। তবে প্রকৃত জল কোথায় রয়েছে? কোথা থেকে এই প্রতিফলন আসছে, সেটি সে জানে না। সে মিথ্যার বশবর্তী হয়ে ভাবছে “এখানেই সবকিছু রয়েছে। বড় বড় বৈজ্ঞানিকেরা মনে করছে কেবলমাত্র এই গ্রহেই জীবন রয়েছে আর সবগ্রহ ফাঁকা পড়ে রয়েছে?”
বৃষাকপি : হ্যাঁ, শ্রীল প্রভুপাদ, তারা সেরকমই মনে করে।
শ্রীল প্রভুপাদ : তারা হচ্ছে মূর্খ। তাদের এই সাধারণ জ্ঞানটিও নেই যে, গ্রহ সমষ্টির মধ্যে পৃথিবীও একটি গ্রহ মাত্র। যদি এই পৃথিবীটা প্রাণ ও সমস্ত কিছু দ্বারা পূর্ণ থাকে তবে অন্যান্য গ্রহগুলি কেন ফাঁকা পড়ে থাকবে? যদি সেখানে বালি আর পাথর থাকে, তবে অন্যান্য সমস্ত কিছু থাকবে না কেন? এখানেও বালি আর পাথর এবং অন্যান্য বস্তুও রয়েছে। কিন্তু ঐসব মূর্খরা শুধু মনে করে যে অন্যান্য গ্রহগুলি সব বালি আর পাথরে ভর্তি, আর কিছু নেই। এভাবে তারা বিভ্রান্ত করছে। এর কারণ কি? এই গ্রহটি জীবন দ্বারা পূর্ণ আর অন্য গ্রহগুলি ফাঁকা পড়ে আছে ঠিক আছে, না হয় বুঝলাম সেগুলি ফাঁকা পড়ে আছে। তবে তোমরা যাও সেখানে গিয়ে বসতি স্থাপন কর। তখন তারা বলছে সেটি সম্ভব নয়। তবে কেন তুমি সেখানে যাবার চেষ্টা করছ? এখন এসবই চলছে।