এই পোস্টটি 319 বার দেখা হয়েছে
মাধব স্মুলেন: যুক্তরাজ্যে কোভিড-১৯ এ প্রায় ১.৫ মিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত হয় এবং মৃত্যুবরণ করে প্রায় ৫৫ হাজার মানুষ। এতে সরকার নভেম্বর মাসে দ্বিতীয় বারের মত লকডাউন ঘোষণা করেন, যা ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী করা হয়। যদিও তিনস্তর বিশিষ্ট বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এই কঠিন সময়ে “ইস্কন ফুড ফর লাইফ” এর সেবকবৃন্দ পরস্পর একত্রিত হয়েছে এবং তাদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে চলছে। লন্ডনে প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার বাক্স কৃষ্ণ প্রসাদ বিতরণ করছে এবং দেশটিতে আরো প্রায় ১৪টি কেন্দ্রে ২০০ ভক্ত এই কার্যক্রম পরিচালনা করছে। মহামারী শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩,৬৯,৫০০ বাক্স কৃষ্ণপ্রসাদ বিতরণ করেছে। চলতে থাকলে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে ১০ মিলিয়ন বক্স কৃষ্ণপ্রসাদ বিতরণের প্রত্যাশা করা হচ্ছে। লন্ডনের হলবন শহরে প্রসাদ রন্ধন করার জন্য একটি রান্না ঘর নিমার্ণ করা হয় যা “কৃষ্ণপ্রসাদ” নামে পরিচিত। “কৃষ্ণপ্রসাদ” রান্নাঘরে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের জন্য প্রসাদ প্রস্তুত করতে সক্ষম। এই কার্যক্রমে যুক্তরাজ্য সরকার ও বিভিন্ন রকব্যাণ্ড প্রতিষ্ঠান সহায়তা প্রদান করছে। প্রায় ৪০ জন সেবকসহ কিছু ব্যবসায়ী (যাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ) সবজি কাটা, ধৌত করা, রান্না ও প্রসাদ সরবরাহ করার কাজে অংশগ্রহণ করছে। এই কার্যক্রমের পরিচালক পরশুরাম দাস বলেন, আমরা যথাস্থানে গাড়ি পার্কিং করে নিদিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে প্রসাদের বক্স বিতরণ করি। সেবকগণ মাস্ক, গ্লাভস ও হেয়ারনেট পরিধান করে প্রসাদ বিতরণ সেবায় অংশগ্রহণ করে এবং স্থানটিকে সর্বদা জীবাণুমুক্ত রাখা হয়। সকাল ৮টা হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত কার্যক্রম চলতে থাকে, সাথে সাথে রান্না ও প্যাকেটিং এর জন্য প্রতিদিন তিনটি শিফট থাকে। দিনে দুইবার প্রসাদ বিতরণ করা হয়। ভাত, সবজি, পাকোড়া, বিভিন্ন প্রকার সবজি ও ফলমূলের সমন্বয়ে প্রসাদ বক্স তৈরি করে “ফুড ফর অল” তাদের নিজস্ব কার্যালয় থেকে নির্দিষ্ট সময়ে বেরিয়ে যায়। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা তাদের ডে সেন্টার থেকে কার্যক্রম চালিয়ে যায়। স্বেচ্ছাসেবকগণ সাইকেল চালিয়ে প্রবীণ, গৃহহীন ও দুস্থদের মাঝে কৃষ্ণপ্রসাদ বিতরণ করে।
পরশুরাম দাস বলেন, যে সকল শিশুরা সকালের খাবার গ্রহণ করে না এবং স্কুলগুলোও আর বিতরণ করছে না, আমরা তাদের মাঝে প্রসাদ বিতরণ অব্যাহত রেখেছি কেননা; এমন শিশুদের সংখ্যা অনেক। “ফুড ফর অল” বিশেষ দিনগুলোতে ইস্কন ভক্তদের জন্য রান্না করছে এবং প্রসাদ ঘরে ঘরে পৌঁঁছে দিয়েছে যা এই লকডাউনের সময় প্রশংসিত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এ মাসের শুরুর দিকে গোবর্ধন পূজায় আমরা পনির সবজি, ভাত, পাকোড়া, শিকন্দ, আম-বাদাম আচার, কেকসহ তৈরিকৃত প্রসাদ এই অঞ্চলের ভক্তবৃন্দদের মাঝে প্রায় ৫০০ বাক্স প্রসাদ বিতরণ করেছি এবং দামোদর মাসের সমাপ্তি দিনে “প্রভুপাদ গ্রন্থ ম্যারাথন” ও ভোজের আয়োজন করা হয়। সকলে সুস্বাদু প্রসাদ লাভ করে আনন্দিত হন।
চ্যানেল-৪-এর এক সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে একজন মহিলা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, “আমি প্রায় ২৮ দিন কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে ভেবেছিলাম হয়ত মারা যাব। এই হরেকৃষ্ণ ভক্তরা আমাকে প্রতিদিন দুপুরে প্রসাদ দিয়ে আসত। এরা দাতব্য না হলে আমি এখানে বসে থাকতাম না।”
যুক্তরাজ্যের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ইস্কনের এই কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। রানীর প্রতিনিধি, লর্ড লেফটেন্যান্ট স্যার কেনেথ ওলিশা, পরশুরাম দাসের কাছে কৃতজ্ঞস্বরূপ এক পত্রে বলেন, “লন্ডন আজ ভাগ্যক্রমে ‘ইস্কন ফুড ফর অল’ নামে এমন প্রতিষ্ঠানকে পাশে পেয়েছিল।”
ওলিশা, পশুরামকে প্রদত্ত চিঠিতে বলেন, “এই মহান শহরে রাণীর প্রতিনিধি হিসাবে কোভিড-১৯ সংকট সময়ে আপনাদের কার্যক্রমে আমি মুগ্ধ, বিশেষ করে প্রতিদিন ৫,০০০ বাক্স খাবার বিতরণ করা।”
পরিশেষে তিনি বলেন, “আপনাকে ধন্যবাদ, লন্ডনকে আপনার সাথে ভাগ করে নিতে পেরে আমি খুব গর্বিত।”
মাসিক চৈতন্য সন্দেশ, জানুয়ারি ২০২১ সংখ্যা