হাজার হাজার বছর ধরে এই ভারতীয় উপমহাদেশসহ বর্তমানে। সমগ্র বিশ্বে রাম সীতা উপাখ্যান তথা “রামায়ণ” খুবই সমাদৃত ও আলোচিত বিষয়। কিছুদিন পূর্বে হলিউড “রামায়ণ-দি এপিক” নামক মুভি তৈরি করে। একটি আদর্শ রাষ্ট্র পরিচালনার সকল নিয়মনীতি তথা আদর্শ সমাজ ব্যবস্থা গঠনের শিক্ষা আমরা রামায়নে পাই। এছাড়াও রামায়নে ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের দিব্য লীলাবিলাসের কাহিনী লিখিত আছে যা এই উপমহাদেশে নিত্যপাঠ্য হিসেবে স্বীকৃত। যদিও রামায়ণ নিছক কোন কল্পকাহিনী বা উপদেশমূলক গল্প নয় বরং এর বাস্তবতা রয়েছে। তবুও পাশ্চাত্য ভাবধারার বিজ্ঞানীদের মনে প্রশ্ন জাগে সত্যিই কি রামায়নের বিভিন্ন ঘটনাগুলোর বাস্তব অস্তিত্ব ছিল? সাম্প্রতিক সময়ে রামায়ন টেইল এ্যাকুয়েটিভ কমিটি’ শ্রীলংকায় এবং “আর্কোয়োলোজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া’ অযোধ্যার রামায়নের সত্যতা নিরূপনে বিবিধ খননকার্য পরিচালিত করে। ধারাবাহিক দুই পর্বের এই আয়োজনে চেতনা সন্দেশ’ এর পাঠকগণ সেই সকল বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে পারবেন পুলস্থ মুনীর পুত্র বিশ্রবাস মুনীর ঔরসে শ্রী কৈকবীর গর্ভে রামায়নের খলনায়ক রাবণের জন্ম হয়। রাবণের ভাই-বোনদের নাম কুবের, বিভীষন, কৃষ্ণবর্ণ, মাহি রাবণ, হেমা, খারা, দূষণ এবং সুপর্না লক্ষণ, রাবণের বোন সুপনখার নাক কেটে ফেলেন এবং এই ঘটনার সূত্র ধরেই পরবর্তীতে রাম-রাবণ মহাযুদ্ধ সাধিত হয়। রামায়নের বর্ণনা অনুসারে দেখা যায় যে, রাম-রাবণ যুদ্ধে অনেক উন্নত প্রযুক্তি অস্ত্র শস্ত্র ও বোমা ব্যবহৃত হয়েছিল। তখন এত উন্নত অস্ত্র শস্ত্র ও নিউক্লিয় বোমা ছিল যে তা দিয়ে সমগ্র পৃথিবী নিমিষেই ধ্বংস করা যেত। ১৯৪৪ সালে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসিকাতে নিউক্লিয় বোমার বিধ্বংসী কার্যকলাপ লক্ষ্য করে বিজ্ঞানীদের টনক নড়ে। রামায়ণের বিখ্যাত যুদ্ধের সত্যতা পাওয়া গেছে ‘মহেঞ্জোদারোতে খননকার্য সমাপনের মাধ্যমে। গত শতকে মহেঞ্জাদারো শহর খনন করার সময় কতগুলো প্রাচীন কঙ্কাল আবিষ্কৃত হয়। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় এই যে, কঙ্কালগুলোতে তেজস্ক্রিয়তার পরিমাণ এত বেশি যে, তা বর্তমান হিরোশিমা নাগাসিকার তেজস্ক্রিয়তাকেও হার মানায়। এছাড়া ভারত, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ফ্রান্স, তুর্কি এবং পৃথিবীর বহু দেশে কাঁচসদৃশ পাথরের প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। রামায়ণে উল্লেখ আছে যে, বিকট বিস্ফোরণের মাধ্যমে তৎকালীন পাথরগুলো কাঁচসদৃশ পাথরে পরিণত হয়েছিল।
ডঃ সূর্য গণোশেকর বিখ্যাত ঐতিহাসিক রিভিরা নামক সংবাদপত্রের একটি আর্টিক্যালে লিখেছিলেন যে, শক্তিশালী রাজা রাবণের রাজত্ব বর্তমান শ্রীলংকা, দক্ষিণ আমেরিকা, দক্ষিণ ইউরোপ, হিমালয়ের হিন্দুকুশ পর্বত এবং মাদাগাস্কারের কয়েক রাজ্যে অবস্থিত ছিল। রামায়ণ মতে রাবণের রাজত্ব ২৫টি প্রদেশ এবং ৪ লক্ষ সড়ক সহযোগে বিস্তৃত ছিল। কিন্তু বর্তমান সুনামিসদৃশ জলের তান্ডবে রাবণ রাজত্ব সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছিল। বিজ্ঞানীদের মতে, বর্তমান শ্রীলংকায় রাবণ রাজত্বের আর মাত্র ২টি অংশ বিদ্যমান রয়েছে
পরিশেষে মন্তব্য করেন যে “এই স্থানটির নৃতত্ত্ব এবং ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে যা রামায়ণ সংশ্লিষ্ট। রাজা রাবণ এই স্থানে একটি ইমারত নির্মাণ করেছিলেন যা বর্তমানে সমুদ্রগর্ভে দর্শন করা যায়।” এখন এই স্থানে গবেষণাকর্ম চলছে এবং সেখানে সাধারণের গমনাগমন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
১৮৯৩ সালে এইচ.সি.পি বেল নামক ইংরেজ আর্কিওলজিস্ট শ্রীলংকার আর্কিওলজিক্যাল স্থানগুলো পরিদর্শন করেন। তিনি সেখানকার মাটি ও পাথর পরীক্ষা করেন এবং তার লিখিত গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে, পাথরগুলো এবং মাটির গুণাগুণ পরীক্ষা করে তিনি ঐতিহাসিক যুদ্ধ এবং প্রাচীন ধ্বংসাবশেষের প্রমাণ পেয়েছেন। ঐতিহাসিকগণ রাবণ সংশ্লিষ্ট বহু গুহার অস্তিত্বের খবর পেয়েছেন শ্রীলংকায়, তেসাগিরিয়া এবং অনুরাধাপুরা নামক দুইটি গুহা রামায়ণ সংশ্লিষ্ট বলে প্রমাণ মিলেছে। রামায়ন ট্রেইল কমিটি এই জায়গাগুলোতে খননকার্য সমাপন করে বহু প্রাচীন শাস্ত্র শিলা, পাথরে খোদাই লেখা আবিষ্কার করেছেন। রাবণের স্বয়ং লিখিত বহু গ্রন্থ আবিষ্কৃত হয়েছে।
অর্ধেক ব্রাহ্মণ ও অর্ধেক রাক্ষস বংশোদ্ভূত মহাবলশালী রাবণ একজন বৈদিক শাস্ত্রবিদ ও মহাজ্ঞানী ছিলেন। রাবণ লিখিত যে সকল গ্রন্থ পাওয়া গেছে সেগুলো হল ‘সামবেদ’, ‘নদীপ্রকাশ’, ‘কুমারতন্ত্র’, ‘উদ্দেশ্য তন্ত্র’, ‘প্রকরুথা কামধেনু’, ‘শিবধনদাওয়া স্তোত্র’ ও আয়ুর্বেদীয় গ্রন্থ ‘অর্ক প্রকাশ। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে রাবণের দক্ষতার প্রমাণ মিলেছে তার গ্রন্থগুলোতে। এছাড়া রাবণ একজন স্থপতিও ছিলেন। তিনি ‘বরুণী’ নামক যন্ত্র তৈরি করেন। তাকে বিদ্যা শিরোমনিও বলা হত কেননা তিনি ‘সিন্ধুরাম’ নামক ঔষধ তৈরি করেছিলেন। এ সংখ্যা ৪র্থ পাতায় রামায়ণ সংশ্লিষ্ট কিছু চিত্রভিত্তিক প্রমাণ উপাস্থাপন করা হয়েছে। আগামী সংখ্যায় রামায়ণ সংশ্লিষ্ট আরো চমকপ্রদ তথ্য উপস্থাপন করা হবে। হরেকৃষ্ণ।
Hare Krishna Thanks For Reading