ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মাধুর্যমণ্ডিত লীলাবিলাসের একটি অংশ হল বৃন্দাবন । আর বৃন্দাবনেই অবস্থিত যমুনা নদীর সঙ্গে জড়িত রয়েছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অতীত লীলাবিলাসের পটভূমি । ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাবের পরই গোকুলে হস্তান্তর করা তাও সম্পন্ন হয়েছে এ যমুনা নদীর মাধ্যমেই। গোপসখাদের সঙ্গে কালীয় নাঘ দমন লীলা কিংবা গোপীকাদের সঙ্গে অনুপম সব লীলাবিলাসের জন্য যমুনা নদী এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। অথচ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য পূণ্যতীর্থভূমি বৃন্দাবনের স্বাভাবিক প্রকৃতিকে পরিবর্তন করে কিছু নগরায়ন উন্নয়নকারী এর ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিকে বিলুপ্তির দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তার একটি অংশ হল যমুনা নদীর উপর সমালোচিত একটি সেতু তৈরির প্রক্রিয়া। ধারণা করা হচ্ছে, যদি সেতুটি তৈরি করা হয় তবে যমুনা নদীর স্বাভাবিক রূপ বিলুপ্ত হতে পারে এমনকি বৃন্দাবনের স্বাভাবিক প্রকৃতিও হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। পরিবেশ বিজ্ঞানীরাও এ বিষয়ে একমত এবং তারাও এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ ইস্কন তাই যমুনা নদীকে নগরায়নের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রথমবারের মত সম্প্রতি ৬টি মহাদেশের ইস্কন ভক্তরা সম্মিলিতভাবে হরিনাম কীর্তন উদ্যাপন করে। উদ্দেশ্য একটাই। ভগবানের কাছে প্রার্থনা যাতে করে যমুনা নদীর কোন ক্ষতি না হয়। এশিয়া, আফ্রিকা, নর্থ আমেরিকা, সাউথ আমেরিকা, ইউরোপ এবং অস্ট্রেলিয়ার ইসকন ভক্তরা ১২৮টি স্থানে যমুনা নদীর জন্য কীর্তন করে। কোথাও পুরো ২৪ ঘন্টা কোথাও ১২ ঘন্টা বা তার চেয়েও কম সময় নিয়ে এ হরিনাম কীর্তন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এ মহৎ উদ্যোগটির আয়োজন করেছে ইসকন কুলি মেলা সংস্থার সদস্যবৃন্দরা। এখানে কয়েকটি দেশ কিভাবে এ মহৎ উদ্যোগটি উদ্যাপন করেছিল তার চুম্বক অংশ তুলে ধরা হল।
কেশী ঘাট, বৃন্দাবন, ভারত : ইস্কন প্রতিষ্ঠাতা ও আচার্য্য শ্রীল প্রভুপাদকে হাতির পিঠে চড়িয়ে কেশী ঘাট কুম্ভ মেলা। ক্যাম্পে আনা হয় এক শোভাযাত্রা সহকারে। ভক্তদের সঙ্গে সর্বস্তরের লোকেরা যমুনা নদীর জন্য প্রার্থনায় মিলিত হওয়া ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। ফুলের পাপড়ি এবং সবচেয়ে বড় ঘিয়ের প্রদীপটি যমুনা নদীর জলে নিবেদন করা হয়। একটানা ২৪ ঘন্টার কীর্তনে অংশগ্রহণ করেন আয়ন্দ দাস নামে এক ভক্ত। উক্ত কীর্তনে সবাই ভগবানের কাছে প্রার্থনা জানায় ।
সান ফ্রান্সিসকো, ক্যালিফোর্নিয়া, ইউ.এ. : ঐদিন নর্থ আমেরিকায় সানফ্রান্সিসকোর ওপেন সিক্রেট বুক স্টোরে সর্বস্তরের লোকদের সঙ্গে জড়ো হয়েছিল মন্দিরের সমস্ত ভক্তরা। যেখানে অগ্নিদেব দাস, মায়াপুরি এবং জয় উত্তম তাদের সুমধুর কণ্ঠে হরিনাম কীর্তন করে। ১৫ শতাব্দীতে রূপ গোস্বামী রচিত ‘যমুনাষ্টকম পাঠ, হাইতির লোকদের উদ্দেশ্যে রাধা জপ উৎসর্গ, জয় উত্তালের বৃন্দাবনে তার তীর্থ ভ্রমনের গল্প, কথন এবং নৃত্য কীর্তনের মধ্য দিয়ে মায়াপুরী কীর্তন এক অন্যতম আকর্ষন ছিল। সমস্ত ভক্তরা ভগবানের কাছে প্রার্থনা জানায় যে, অচিরেই এ মৃত নদী আবার তার পুরনো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাক ।
মস্কো, রাশিয়া : মস্কোর বৈদিক কালচার কেন্দ্রে ২৫০ জনেরও বেশি লোকের উপস্থিত টানা আট ঘন্টা হরিনাম কীর্তন করা হয়। উৎসবের ভক্তরা বলেন, “আমাদের নন স্টপ কীর্তন খুবই শক্তিশালী আমরা বিশ্বের অন্যান্য বৈষ্ণবদের সঙ্গে প্রার্থনায় মিলিত হয়েছি আমরা যমুনা দেবীর ধ্যান করি এবং আন্তরিকভাবে প্রার্থনা জানায়, যেন এটি তার স্বাভাবিক রূপে ফিরে পায়। নিউইয়র্ক সিটি, ইউ. এস. এ ঃ গৌর বাণী সংস্থার উদ্যোগে লোয়ার ইস্ট সাইডের একটি মন্দিরে ১২ ঘন্টার কীর্তন অনুষ্ঠিত হয়। তাদেরও সবার একটাই দাবী “যমুনা নদী হল একটি দিব্য নদী, যেটি এই পৃথিবীতে অবস্থান করছে। তাই এ নদীকে বাঁচাতে সাহায্যের প্রয়োজন। এখানেও গৌর বাণীর কীর্তন পরিচালনাকারীরা একের পর এক তাদের সুমধুর কণ্ঠে কীর্তন পরিবেশন করেন।
লন্ডন, ইংল্যান্ড :লন্ডনের বিখ্যাত রাধাকৃষ্ণ মন্দিরে ভক্তিবেদান্ত মেনর ক্লাব এবং সোহো স্ট্রটিস জগন্নাথ ঈশ্বর প্রেম ইউথ গ্রুপ এর মিলিত সমস্বরে একইভাবে নেচে গেয়ে হরিনাম কীর্তন অনুষ্ঠান উদ্যাপিত হয় এভাবে বেলজিয়ামের রাধাদেশে একটানা ২৪ ঘন্টা কীর্তন করা হয়। বৃন্দাবনের সান্দিপনি মুনি স্কুল, আর্জেন্টিনা, জার্মানীসহ বিশ্বের ৬টি মহাদেশের ইসকন মন্দিরে ভক্তরা ঐ দিনটি হরিনাম কীর্তনের মাধ্যমে ভগবানের কাছে প্রার্থনা নিবেদন করে। তাই আপনাদের কাছে অনুরোধ রইল আপনারাও যমুনা নদীকে রক্ষা করতে ভগবানের কাছে প্রার্থনা করুন তাতে মাতা যমুনা দেবীও খুবই সন্তুষ্ট হবেন । হরেকৃষ্ণ।
Hare Krishna Thanks For Reading