এই পোস্টটি 248 বার দেখা হয়েছে
‘ভয়ে মরি মা কোথা, নেই কাছাকাছি, ঘুম ভেঙ্গে চেয়ে দেখি বিছানায় আছি’ । যূথীর লেখা কবিতার খাতা থেকে তার সবচেয়ে কাছের বন্ধু ছোট খালা ধরা গলায় পড়ছিলেন। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমান লাইব্রেরীর কি কি পড়া হয়েছে যূথীর, ক্লাসে কি নোট করতে বাকী– আরও কত কিছু! সে কর্মব্যস্ত যূথীর ঘরে এখন তালা । ভেতরে সব আগের মত আছে। টেবিলে রসায়নের নোটটা খোলা পড়ে আছে। শুধু চেনা বিছানায় যূথী নেই। গত পরশু নৌকা ভ্রমণে যাওয়া দশ বন্ধুর মধ্যে পাঁচজন ডুবে মারা গেছে, যূথী তাদের একজন। মিরপুরের পল্লবী এলাকার চুরমার করে দেয়। মামুনের মত অনেক মানুষেই বিচিত্র স্বপ্নে নিজেকে বিভোর রাখতে ভালোবাসে। আর স্বপ্নগুলো আদৌ কি পূরণ হবে কি হবে না তা নিয়ে ক’জনই বা ভাবে? যেমনটি ভাবেনি অঞ্জনা নামে সেই মেয়েটি। সেও একটি সুন্দর সংসারের স্বপ্ন দেখেছিল কিন্তু তার স্বপ্ন যে কতটা সফল হতে পারে তার রিপোর্টই ‘প্রথম আলোতে’ তুলে ধরা হয়েছিল ঠিক এভাবে, “২৩ বছর আগে প্রতিবেশী যুবকের প্রেমের প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় এসিড সন্ত্রাসের শিকার হন নরসিংদী সদর উপজেলার ছোট মাধবদী গ্রামের অঞ্জনা ঘোষ। জীবনের স্বপ্নগুলো তখনই ধূসর হয়ে যায় অঞ্জনা ও তার পরিবারের। তার পরও মেয়ের এসিডে পৌঁড়া মুখ স্বাভাবিক করতে সাধ্যমতো চেষ্টা করেন বাবা হিরা ঘোষ। কিন্তু লাভ হয়নি, একে একে শেষ হয় জমি জমা, সম্পদ। একদিন পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নেন হীরা ঘোষ। দ্বিতীয়বারের মতো অন্ধকার নেমে আসে অঞ্জনার জীবনে। তার বয়স এখন ৩৮ বছর। নিজের সংসার হয়নি। থাকেন বাবার বাড়ীতে মায়ের সঙ্গে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে অঞ্জনা বলেন, ‘ভাই, এ কষ্ট কাউকে বোঝানো যায় না। মাঝে মাঝে অসহ্য মনে হয়। মায়ের সংসারে নিজেকে উচ্ছিষ্টের মতো লাগে। ভগবানের কাছে শুধু নিজের মৃত্যু কামনা করি।” কতটা কষ্ট পেলে মানুষ বলতে পারে আমি মৃত্যু চাই? অঞ্জনা হয়ত নিজের জীবনের এ কলঙ্কময় বিপদ কখনো আশা করেনি। কিন্তু তবুও বিপদ এসেছিল। এইতো সেইদিন, চট্টগ্রামের ধণাঢ্য ব্যবসায়ীর ছেলে একটি স্বপ্নিল সুখের অন্বেষনে বিয়ের পিড়িতে বসেছিলেন। কিছুদিন পর নববিবাহিতা স্বামী-স্ত্রী শাহ আমানত সেতুর (নতুন ব্রীজ) উপর বেড়াতে গেলে, হঠাৎ স্ত্রীকে ব্রীজ থেকে নদীতে পড়ে যেতে দেখে, তাকে বাঁচাতে গিয়ে স্বামী নদীতে ঝাপ দেয়। কিন্তু স্ত্রী বেঁচে যায়, আর দুর্ভাগ্যক্রমে স্বামী নিহত হয়। মৃত্যু এসে তার সমস্ত পরিকল্পনা একটি বন্য হাতির সাজানো বাগানে তছনছ করার মতো নষ্ট করে দিয়ে যায়। আমাদের জীবনের এ পরিকল্পনা কতটাই বা নিয়ন্ত্রণাধীন? ‘টাইটানিক’ জাহাজও সুপরিকল্পিতভাবে তৈরি হয়েছিল। এমনকি খোদ কর্তৃপক্ষও দম্ভভরে ঘোষণা করেছিল “সৃষ্টিকর্তারও সাধ্য নেই এই জাহাজ ডুবানোর।” কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, প্রথম যাত্রাতেই জাহাজটি বরফখণ্ডের ধাক্কায় ডুবে গিয়ে অনেক প্রাণহানি ঘটিয়েছিল। অনেকেই তাদের নিজের জীবনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কিংবা নিজেকে আরেকটু নিরাপদ রাখার প্রয়াসে বিভিন্ন ধনাঢ্য দেশে যাওয়ার জন্য জীভে ঢোক গিলতে থাকে “কখন যাবো? কখন টাকা আয় করব… তারা ভাবে, প্রবাস জীবন কতই না আনন্দের। প্রবাসে গেলেও আপনার কপাল তথা বিপদও আপনার সঙ্গে যাচ্ছে। কথায় আছে, “যদি যাও বঙ্গে, কপালও যাবে সঙ্গে”। নিউইয়র্কে টুইন টাওয়ার হামলায় অনেক প্রবাসীও নিহত হয়েছিল। তারাও আমেরিকায় গিয়েছিল স্বপ্নীল সুখের অনুসন্ধানে কিন্তু সেখানেও তারা নিরাপদ ছিল না। সেখানে তারা মর্মান্তিকভাবে নিহত হয়েছিল । এইতো কিছুদিন আগে মালয়েশিয়ায় কর্মরত শ্রমিকেরা যখন গভীর রাতে একটি কক্ষে নিদ্রাযাপন করছিল তখন হঠাৎ শর্টসার্কিট থেকে সৃষ্ট আগুনে অনেক শ্রমিক জীবন্ত দগ্ধীভূত হয়েছিল। সুতরাং, যেখানেই যান বিপদ থাকছেই। তাছাড়া এইডস, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এর মত ভয়ংকর রোগের আক্রমণ তো রয়েছেই। হয়ত আপনিও কিছুক্ষণ পরে এরকম একটি রোগের শিকার হতে পারেন। এটা অস্বাভাবিক নয়। অনেক ব্যবসায়ী রাত-দিন পরিশ্রম করে তাদের ব্যবসাকে দাঁড় করায়, কিন্তু বিপদের এক ঘাতে কোন সন্ত্রাসী হামলা কিংবা ইন্ডাস্ট্রিতে আগুন লেগে কোটি কোটি টাকার সম্পদ পুড়ে যাওয়ার মত মর্মান্তিক ঘটনাও ঘটতে পারে। আর তারই ফলশ্রুতিতে এতদিনের পরিশ্রম বিপদের এক ঘাতেই তা সম্পূর্ণ অর্থহীন হয়ে পড়ে। তাই সবারই সতর্ক থাকা উচিত। হয়তো আর এক সেকেন্ড পড়েই আপনার জন্য একটি মহাবিপদ অপেক্ষা করছে। আপনি যতই নিরাপদে রাখুন নিজেকে কিন্তু ঠিক মুহুর্ত পড়েই হয়ত আপনার মহাবিপদ । আপনি কতটা প্রস্তুত? (চলবে)