এই পোস্টটি 1047 বার দেখা হয়েছে
জায়তীর্থ চরণ দাস : ১২ এপ্রিল ১৯৭৪ সালে ভারতে এক প্রাতঃভ্রমণের সময় শ্রীল ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ এবং এক ভারতীয় ব্যক্তির সাথে কথোপকথন হচ্ছিল। শ্রীল প্রভুপাদ-“ আমি অনেক কিছুই দর্শন করিনি, তার মানে কি সেগুলোর অস্তিত্ব নেই? আপনি একজন বিজ্ঞানী হিসেবে গবেষণা করছেন, কিন্তু আপনি তা দর্শন করেন নি।’’ ভারতীয় ভদ্রলোক-“আমি অনেক ভূতের গল্প শুনেছি কিন্তু..।“ শ্রীল প্রভুপাদ বলেন, “না না সেগুলো কোন গল্প না। আমরা ভাগবত থেকে শ্রবণ করি, এটিই হচ্ছে যথার্থ উৎস।আমরা কো জড় জ্ঞানী ও তথাকথিত পণ্ডিতদের কাছ থেকে শ্রবণ করি না। আমরা স্বয়ং ব্যাসদেবের কাছ ছেকে শ্রবণ করছি।” …ভারতীয় ব্যক্তি,“ কিন্ত আমার ৮০ বছরের জীবনে ভূতের অস্তিত্বসূচক কোন অভিজ্ঞতা হয়নি।” শ্রীল প্রভুপাদ, -“না , আপনার সব অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়নি। আপনার অভিজ্ঞতাই সবকিছু নয়। আমাদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে পারমার্থিক কর্তৃপক্ষকে মানতে চাই না। এখানে ব্যাসদেব সমস্ত জ্ঞানের অধিকর্তা এবং ভাগবত হচ্ছে পরিপূর্ণ জ্ঞানের অভিজ্ঞতা। আমরা সেখানে থেকে শ্রবণ করছি। আমাদের ভূতের অভিজ্ঞতা না হলেও ! ভূত হচ্ছে একটি জীব যাদের কোন জড়দেহ নেই। যখন কেউ অত্যধিক পাপকার্য করে থাকে তারা জড়দেহ লাভ করতে পারে না। সে মন, বুদ্ধি ও অহংকারে নির্মিত একটি সূক্ষ্ম দেহে অবস্থান করে। এটিই হচ্ছে ভূতের জীবন। যেহেতু তাদের কোন জড়দেহ নেই, তাই কেউ তাদের দেখতে পায় না কিন্তু তারা বিভিন্ন কিছু প্রদর্শন করতে সক্ষম । এটিই ভূতের জীবন। দেখা বা না দেখা কোন বিষয় নেই । তাই আমরা বেদান্ত সূত্র এবং শাস্ত্রচক্ষু দ্বারা দর্শন করতে পারি।
বৈদিক শাস্ত্রসমূহে আমরা বিভিন্ন স্থানে ভূতের অবস্থিতির ঘটনা পাই। শ্রীমদ্ভাগবতে দক্ষের ঘটনা রয়েছে এবং চৈতন্য চরিতামৃতে রয়েছে ছোট হরিদাসের গল্প। ভগবদ্গীতায় বলা হয়েছে যারা ভূতের উপাসনা করে তারা ভূতলোকে গমন করে। শ্রীল প্রভুপাদ একসময় জন লেননের বাড়িতে থাকার সময় সেখানের এক ভূতকে মুক্ত করেছিলেন। চার সম্প্রদায়ের আচার্যগণও জীবনে ভূতের অবস্থিতির কথা বলেছিলেন। শ্রীপাদ রামানুচার্যের স্ত্রী একবার ভূতের আক্রমনের শিকার হয়েছিলেন, রামানুচার্য তাকে সেই অবস্থা থেকে মুক্ত করেছিলেন। শ্রীপাদ মধ্বাচার্যেরপিতা মাতা এবং তাদের একদল ব্রহ্মরাক্ষস ভূতের আক্রমণোর শিকার হয়েছিলেন যখনা তারা ছোট বাসুদেবকে ( মধ্বাচার্য) নিয়ে অনন্তসন মন্দির থেকে আসছিলেন তখন মধ্বাচার্যের বয়স ছিল মাত্র ২ সপ্তাহ। মধ্বাচার্যের এক অনুসারী শ্রীপাদ বদরাজ তীর্থ স্বামী মহারাজের একজন শিষ্য সেবক ছিলেন একজন শক্তিশালি ভূত যার নাম ছিল ভূতরাজ। ভূতরাজকে দিয়ে তিনি মায়াবাদীদের পরাজিত করতেন, যারা তাকে ভূতের আক্রমণ করার চেষ্টা করত। রাঘবেন্দ্র তীর্থ তার কমণ্ডুলুর জল ছিটিয়ে দিয়ে তাকে সেই দুরাবস্থা থেকে মুক্তি দেন। বাযু পুরাণে বিশদভাবে ভূতের বর্ণনা দেওয়া আছে। এছাড়াও অন্যান্য পুরাণ যেমন-গরুড় পুরাণে চারটি অধ্যায়ে বিশদভাবে বর্ণনা দেওয়া আছে। এতএব এটি স্পষ্ট যে, বৈদিক শাস্ত্র মতে ভূত বা অদৃশ্য জীবসত্তার অস্তিত্ব রয়েছে।
বর্তমানে আধুনিক বিজ্ঞানও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ভূতের অস্তিত্ব বিশ্বাস করে থাকে। তাইতো সমগ্রবিশ্বে এবং সব ধর্মে ভূত হতে মুক্ত হওয়ার পন্থার জন্য বহু গবেষণা এবং পদ্ধতি তৈরির প্রচেষ্টা চলছে। পাশ্চাত্য দেশে প্যারানরমাল ইনভেস্টিগেশন নামক বহু গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে। এখন প্রশ্ন হল কখন একজন মানুষ ভূতের দেহ লাভ করে। উত্তর হল মৃত্যুর পর। অবশ্যই সেই মৃত্যু যদি স্বাভাবিক মৃত্যু না হয়ে দূর্ঘটনা বা আত্মহত্যা জনিত হয় তবে সে ভূতের দেহ লাভ করবে (গরুড় পুরাণ)। যেহেতু মানুষ জড় জগতের প্রতি, তার পরিবার সমাজের প্রতি আকর্ষিত তাই মায়ার কারণে ভূতেুরে অবস্থা প্রাপ্ত হয়েও তারা সেই আকর্ষনে আবদ্ধ থাকে।
এবার আমরা জানব ভূতেরা সাধারাণত কোন্ কোন্ স্থানে বেশি থাকে বা থাকতে পারে এ ধরনোর স্থানগুলো কি কি?
শ্মশান/গোরস্থান: এই সমস্ত এলাকা যত বেশি পুরাতন হবে সেখানে তত বেশি ভূত বা প্রেতাত্মাদের অবস্থিতি বেশি পরিলক্ষিত হবে। তার কারণ হল সেই সূক্ষ্মদেহ প্রাপ্ত আত্মাগুলো তাদের মনুষ্যদেহের প্রতি অতি আকর্ষিত বলে তারা এসকল স্থানে বেশি অবস্থান গ্রহণ করে।
ঐতিহাসিক স্থান:অনেক পুরাতন ঐতিহাসিক দালান, ইমারত রয়েছে যেখানে বহু বছর যাবৎ অনেকেই বসবাস করেন এবং সেখানে বেশি প্রেতাত্মার সন্ধান পাওয়া যায়। কেননা এসকল স্থানে অনেক আবেগময় স্মৃতি বা ঘটনা সংগঠিত হয়ে থাকে।
এছাড়াও কোন গণহত্যা হয়েছে এমন কোন স্থানে সেখানে হত্যাকৃত মানুষদের আত্মাদের উপস্থিতি থাকতে পারে। এরকম বিভিন্ন পুরাতন হোটেল, বোডিং হাউস, স্কুল, থিয়েটার, যুদ্ধক্ষেত্রে ভূতের উপস্থিতি থাকতে পারে কেননা এখানে কোন না কোন সময় অনেতিক কর্মকাণ্ড ঘটে থাকে।
(আগামি সংখ্যায় থাকবে ভূত আক্রান্ত ব্যক্তির বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং ভূত থেকে নিজেকে রক্ষার নানা কৌশল।) হরে কৃষ্ণ।
(মাসিক চৈতন্য সন্দেশ জুন মাসে ২০১২ সালে প্রকাশিত)