প্রকাশ: ১ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ১০:০৭ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ১ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ১০:০৭ পূর্বাহ্ণ
এই পোস্টটি 565 বার দেখা হয়েছে
আমি শুনেছি যে, ইন্দ্রদ্যুম্ন মহারাজ সকল গ্রন্থ প্রচারকদের কীভাবে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে এই বৈদিক সাহিত্যের নির্যাস স্বরূপ শ্রীমদ্ভাগবত এবং ভগবদগীতার মাহাত্ম্য পরম দুর্লভ, কেননা পরমেশ্বর ভগবান তাঁর শিক্ষা এবং তাঁর লীলার মধ্যে সর্বদা বিরাজ করেন। এই পৃথিবীতে সকলেই অনিত্যের পিছনে ছুটছে এবং শ্রীমদ্ভাগবত আমাদের শিক্ষা দিচ্ছে যে, আমরা কেবল ইন্দ্রিয়তর্পনের জন্য আমাদের জীবনকে যেন অতিবাহিত না করি। আমরা দেখতে পাই যে এই জগতের সকলেই ইন্দ্রিয়ভোগকেই তাদের জীবনের পরম লক্ষ্য রূপে স্থির করেছে। রাজনীতিবিদেরা তাই তাদের ভোটারদেরকে ইন্দ্রিয় তর্পণের সর্বোত্তম পন্থা প্রদান করার আশ্বাস দেয়, কিন্তু পরিশেষে কেউই তৃপ্তি পায় না। তাই তারা একের পর অন্য রাজনৈতিক দল কে নির্বাচিত করে।
প্রকৃত সত্য হচ্ছে আমরা চিন্ময় আত্মা। প্রকৃত বিষয়টি হচ্ছে আমরা সবাই চিন্ময় সত্তা, যেমন জলে একটি মাছ- যেখানে জল হচ্ছে তার প্রকৃত আলয়। বর্তমানে আমরা জলের বাইরে থাকা মাছের মতো, আমাদের প্রকৃত পারমার্থিক আলয়ে ফেরা প্রয়োজন। এবং আমরা সেই প্রকৃত আলয়ের সন্ধান পেতে পারি শ্রীমদ্ভাগবতের পাতায় পাতায়। শ্রীমদ্ভাগবতে বলা হয়েছে যে, এটিই হল একটি পাপীর জীবনে প্রকৃত পরিবর্তনের আন্দোলন। তাই জনসাধারণকে ভগবদ্ধামে ফিরে যেতে সাহায্য করার এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ- তাদেরকে শ্রীমদ্ভাগবত পড়তে অনুপ্রাণিত করা এবং শ্রীমদ্ভাগবত সর্বত্র প্রচারের মাধ্যমে। প্রকৃতপক্ষে এই মহামারী সকলকে এটি খুব ভালোভাবে বুঝিয়েছে যে এই জড়জগত মোটেও থাকার জন্য কোন উপযুক্ত স্থান নয়। আমাদের তাই আমাদের প্রকৃত আলয় ভগবদ্ধামে ফিরে যাওয়া উচিৎ। সেখানেই আমাদের প্রকৃত স্থিতি। সেখানে জন্ম, মৃত্যু, জরা কিংবা ব্যাধি নেই।
আমি একবার শান্তিপুরে অদ্বৈত আচার্য ধামে গিয়েছিলাম। সেখানে অদ্বৈত আচার্যের মন্দিরের প্রধান পুরোহিত আমাকে দেখিয়েছিলেন কীভাবে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু গোবিন্দ দ্বাদশীর দিনে সেখানে প্রসাদ গ্রহণ করেছেন। এবং বলা হয়েছে যে সেই স্থানে গোবিন্দ দ্বাদশীর দিনে যে ব্যক্তি কৃষ্ণ প্রসাদ পাবেন, তিনি গোবিন্দ ভক্তি প্রাপ্ত হবেন। তো সেই সেবাইত প্রতিপন্ন করেছেন যে, সেই স্থানে মহাপ্রভুর কৃপায় কেবল প্রসাদ পাবার মাধ্যমেই একজন কৃষ্ণভক্তি লাভ করতে পারবেন। একই ভাবে শ্রীমদ্ভাগবতে প্রতিপন্ন করা হয়েছে যে, এই মহিমান্বিত ভাদ্র পূর্ণিমায় কোন ব্যক্তি শ্রীমদ্ভাগবতকে শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মাধ্যমে কিংবা শ্রীমদ্ভাগবত প্রচার করার মাধ্যমেই পরম গতি প্রাপ্ত হবে- তার প্রকৃত আলয়ে প্রত্যাবর্তন করতে পারবে। কী চমৎকার প্রস্তাব! তাই এটি একটি মহান সুযোগ। এ সুযোগ এড়াবার নয়। তাই এই ভাদ্র পূর্ণিমায় কোনো না কোনোভাবে এখন ভক্তসকলের দৃষ্টি শ্রীমদ্ভাগবতের প্রতি নিবদ্ধ। তাই এই বিশেষ তিথিতে আমি সকল ভক্ত- যারা শ্রীমদ্ভাগবত এর প্রতি মনোনিবেশ করেছেন, তাদেরকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আপনারা ব্যাসদেবের কৃপাশীর্বাদ লাভ করেছেন, আপনারা শ্রীল প্রভুপাদের কৃপা লাভ করেছেন।
শ্রীমদ্ভাগবত প্রচার করতে এটি বিতরণ করুন। কৃষ্ণের সেবা করার জন্য এবং কৃষ্ণকে ভালোবাসার জন্য আমাদের একটি লক্ষ্য থাকা উচিত। আমাদের যেহেতু জড় ইন্দ্রিয় রয়েছে, কিছু সময় আমাদের ইন্দ্রিয় সুখী হবে, কিছু সময় দুঃখী হবে। এ জড়জগতে মূলত দুঃখই রয়েছে। কৃষ্ণ এই জড়জগতকে বলেছেন ‘দুঃখালয়ম অশাশ্বতম’। তো আমরা অনেক উপায়ে চেষ্টা করেছি কিভাবে এই জড়জগত থেকে বেরিয়ে আসা যায়। যেমনটি এখানে বলা হয়েছে ‘গোলোকের পথে যাত্রা।’ এটি একটি সহজ এবং দ্রুত উপায় – শ্রীমদ্ভাগবতকে শ্রদ্ধা করুন এবং অন্যকে একটি কপি বিতরণ করুন। এমনকি প্রাচীনযুগে এই ভাগবত তালপাতায় লেখা থাকত। তো শ্রীনিবাস আচার্য গদাধর প্রভুর কাছ থেকে ভাগবত শিক্ষা লাভ করতে গিয়েছিল এবং গদাধর প্রভু দেখালেন যে, তাঁর পুরো ভাগবতের অক্ষর চোখের জলে মুছে গিয়েছিল যা পড়া যাচ্ছিল না। তখন তাঁকে নবদ্বীপে ফিরে যেতে হয়েছিল ভাগবতের আরেকটি হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপি আনার জন্য। সেসময়ে ভাগবত বিতরণ করা অত্যন্ত কঠিন ছিল। ১৮০০০ শ্লোক সমন্বিত ভাগবতের পাণ্ডুলিপি আনতে হতো।
তো এখন বিবিটিকে ধন্যবাদ। এখন আমাদের ভাগবত রয়েছে খুবই সুবিধাজনক আকারে এবং খুবই অল্প মূল্যে। এখন কাউকে হস্তলিখিত কপি ধার করতে হয় না। যেমনটা ইন্দ্রদ্যুম্ন মহারাজ এবং অন্যরা বলেছেন যে, শ্রীল প্রভুপাদের তাৎপর্যগুলি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর কৃপারত্নকে ধারণ করে। তো শ্রীমদ্ভাগবত এই সময়ে বিতরণের একটি ভাল সুযোগ আছে। আমি বিবিটি ও সমস্ত গ্রন্থ বিতরণকারীদের ধন্যবাদ জানাতে চাই শ্রীমদ্ভাগবতের এই গুহ্য জ্ঞান পেতে সাহায্য করার জন্য এবং জাগতিক লোকেদের মাঝে এটি ছড়িয়ে দেয়ার জন্য। তো এই সুযোটি গ্রহণ করুন যেখানে আমরা শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর লীলা এবং শিক্ষা পড়তে পারি। বারংবার তিনি সকলকে শিক্ষা দিচ্ছেন কৃষ্ণের শিক্ষা অধ্যয়ন করতে।
শ্রীমদ্ভাগবত হলো কৃষ্ণের অবতারদের এবং স্বয়ং কৃষ্ণের নিজের শিক্ষা। ১ম স্কন্ধে প্রায় ২৬জন অবতারের তালিকা আছে। এটি জানায় যে, কৃষ্ণ হলেন স্বয়ং ভগবান। তাই আমরা কৃষ্ণকে আরাধনা করার, পরম সত্য সম্বন্ধে পরম জ্ঞান লাভের এই সুযোগটি গ্রহণ করি। হরে কৃষ্ণ।
– শ্রীল জয়পতাকা স্বামী গুরু মহারাজ
২৮শে আগস্ট ২০২০
শ্রীধাম মায়াপুর, ভারত