এই পোস্টটি 287 বার দেখা হয়েছে
হাসির পর
রবিন উইলিয়ামস এর আত্মহত্যা
কৌতুক বা রম্যরসের অনেক শো বা-নাটক-সিনেমা মানুষকে ক্ষণস্থায়ী আনন্দের খোড়াক দেয়। কিন্তু সেগুলো কি প্রকৃত আনন্দ ?
চৈতন্য চরণ দাস
অস্কার পুরষ্কার লাভ করা হলিউড অভিনেতা এবং বিশিষ্ট কমেডিয়ান রবিন উইলিয়ামস্ এর বেদনাদায়ক আত্মহত্যা সমগ্র বিনোদন জগৎকে প্রচণ্ড ধাক্কা দিয়েছে। বিষয়ীদের সংস্পর্শ বারংবার হতাশায় ভোগায়, ছুরির আঘাতের নিষ্ফল প্রচেষ্টা থেকে শুরু করে অবশেষে বেল্ট এর সহায়তায় তিনি আত্মহত্যা করেন।
আনন্দ এবং কৌতুকরসের সংমিশ্রন
মানসিক হতাশা যে কাউকে দগ্ধ করতে পারে, এমনকি তা সম্পদশালী এবং বিখ্যাত ব্যক্তিদের বেলায়ও প্রযোজ্য। পৃথিবীর সর্বাধিক প্রাচুর্য এবং সম্পদ থাকা সত্ত্বেও আমেরিকাতে এন্টি ডিপ্রেশন এর ঔষধগুলো হচ্ছে তৃতীয় সর্বাধিক বিক্রিত ঔষধ। এখানে একটি প্রকৃত বিষয় হল, এই হতাশার আগুন অপ্রমত্তভাবে একজন কমেডিয়ানকেও (যিনি অভিনয়ের মাধ্যমে মানুষকে হাস্যরস দেন) দগ্ধ করতে পারে। এটি আমাদেরকে আনন্দ এবং বেদনার মধ্যে পার্থক্যের বিষয়ে ভাবতে বাধ্য করে। সাধারণত যেহেতু কমেডিয়ানরা আমাদেরকে হাসায়, আমরা স্বভাবতই ভাবি যে, তারা খুবই সুখী ব্যক্তি। যারা আনন্দের উৎস তারা নিশ্চয়ই নিজেরাই আনন্দিত থাকেন, তাই নয় কি?
কিন্তু তা নয়। কৌতুকরস সৃষ্টি হলো যে কারো এমন একটি ক্ষমতা যা প্রাকৃতিক ভাবে আসে এবং অনুশীলনের দ্বারা বৃদ্ধি পায়। কৌতুকরস সৃষ্টিতে দক্ষতা হল অন্য যে কোনো বুদ্ধিনির্ভর দক্ষতা যেমন গণিত শাস্ত্রে বা লিখনীতে দক্ষ হওয়ার মতই। যেমন ধরা যাক কারো শারীরিক দক্ষতা যেমন স্কেটিং কিংবা সঙ্গীতে রয়েছে। এই ধরনের দক্ষ ব্যক্তিগণ সর্বদাই আমাদেরকে তাদের ক্রিয়াকলাপ দ্বারা মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখেন। তা সত্ত্বেও আমরা অবগত যে, একজন ভালো সংগীতজ্ঞ যে একজন সুখী ব্যক্তি হবেন, তা নয়। সুখ বা আনন্দ হচ্ছে একটি ভিন্নতর খেলার মতো। গান গাওয়ার ক্ষমতা এবং সুখী হওয়ার ক্ষমতার মধ্যে পার্থক্য আমাদের পক্ষে সহজে নির্ণয়যোগ্য হলেও কৌতুকরসের ক্ষমতা এবং সুখী হওয়ার ক্ষমতার মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে, তা আমাদের বোধগম্য নাও হতে পারে।
কৌতুকরসবোধ এবং আনন্দের মধ্যে পার্থক্যের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হলেও তার অর্থ এই নয় যে, কৌতুকরসকে মন্দ বলা হচ্ছে। কৌতুকরস যে আমাদের শুষ্ক জীবনে একটি মসলাদার অনুভূতি নিয়ে আসতে পারে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমাদের বেগবান এবং মানসিক চাপগ্রস্থ জীবনে কৌতুকরস কাজের গতি বাড়াতে সাহায্য করে। বিভিন্ন বিখ্যাত কমেডি শোগুলো কৌতুকের মাধ্যমে মানব জীবনের বোঝা লঘুকরণে সহায়তা করে। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমাদের সংস্কৃতি কি কৌতুককে বেশী গুরুত্ব দিচ্ছে?
কৌতুকরস নিয়ে বিখ্যাত রিডার্স ডাইজেস্ট দাবি করছে “হাস্যরস হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট ঔষধ।”
সত্যি কি তাই? তাহলে কেন এই ঔষধ একজন কমেডিয়ানকে গভীর হতাশা থেকে মুক্ত করতে সক্ষম হলো না?
এছাড়াও আরেকটি বিষয় হলো, হাস্যরসকে ঔষধ হিসেবে বিজ্ঞাপনে বলা হলেও এটি মূলত একটি পীড়া এবং অন্তশূন্যতা। যখন আমাদের মাঝে শূন্যতা বিরাজ করে, তখন প্রকৃত আনন্দের অনুপস্থিতি ঢাকার জন্য আমরা হাস্যরসকে মুখোশ হিসেবে ব্যবহার করি। এটি আমাদের হৃদয়ের জন্য একটি ঔষধ না হয়ে হৃদপিণ্ডের মাঝে ছিদ্র ঢাকার মতো ব্যাথানাশক ঔষধ হিসেবে কাজ করে মাত্র।
হতাশায় নিমজ্জিত হওয়া
আমাদের সংস্কৃতিতে একটি বিষয় নির্ধারিত যে, যখনই আমাদের দক্ষতা, প্রগতি এবং জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায় তখনই আমাদেরকে হতাশার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হয় এবং অবশেষে যুদ্ধে পরাজয় বরণ করার মাধ্যমে বিনাশকে বরণ করতে হয়।
এই জড়বাদী জনপ্রিয় সংস্কৃতি তথাকথিত বিষয়ের আনন্দ দানের প্রতিজ্ঞা করে সর্বদাই আমাদের মগ্ন রাখে তাতে। আমরাও মোহিত হয়ে সাফল্য সিঁড়ির শীর্ষে পৌছানোর জন্য আকাঙ্ক্ষার ক্রীতদাসে পরিণত হই। আমাদের প্রচেষ্টাও অধঃগামী হতে থাকে। যদিও আমরা কখনো কখনো অতি অল্প সৌভাগ্যবানদের মতো উচ্চস্থানে পৌছাই তবুও আমরা এই সাফল্যকে চরমে অবিশ্বাস্যভাবে হতাশার মূল কারণরূপে দর্শন করি। যারা উচ্চ থেকে উচ্চতরে পৌছায় তারা মর্মান্তিকভাবে স্বল্পজীবন লাভ করতে দেখা যায়। রমরমা কোনো কিছুর শীঘ্রই পতন হয়, নবীনতার আকর্ষণ একসময় শুষ্ক হয়ে যায় এবং চাকচিক্য হয়ে যায় বিরক্তিকর। জন রাসকিন দারুন বলেছেন “আমাদের অবস্থানের উন্নতি নতুন নতুন গ্লানির কারণ।”
যখন জড় বিষয় লাভ সত্ত্বেও হৃদয়ের অভ্যন্তরে শূন্যতা বিরাজ করে এবং বেশিরভাগ সময় যখন আমাদের ইপ্সিত বিষয় লাভ করতে ব্যর্থ হই, তখন এই সংস্কৃতি আমাদের অপরিসীম গ্লানি উপশমে কি সাহায্য করছে?
মন্দ আসক্তির আনুকূল্য
এই সংস্কৃতি হতাশা দূর করার জন্য আমাদের তামাক, অ্যালকোহল অথবা মদ গ্রহণের জন্য অনুপ্রাণিত করে এবং তৎক্ষণাৎ হতাশা থেকে পরিত্রাণের প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু এই ত্রাণ বেশী দীর্ঘস্থায়ী নয়, বরং এই নেশাগুলো আমাদের চরম আসক্তি না হওয়া পর্যন্ত বার বার দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে। এমনকি এ থেকে মুক্ত হওয়ার পন্থাটিও অনেক সময় ফাঁদ বা বিপদের কারণ হতে পারে। যে বিষয়কে আমাদের দুঃখ নিবৃত্তির কারণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে, সেটিই দুর্দশার কারণ হয়ে দাড়াচ্ছে।
কেন এই মারাত্মক দুদর্শা?
কেননা এই দুদর্শায় পতিত হওয়ার কারণ আমরা নিজেরাই। আমরা সজ্ঞানে এবং ইচ্ছাবশত এই প্রকার আসক্তির বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়ছি।
যখনই আমরা আত্মবিধ্বংসী আসক্তিতে নিমগ্ন হয়ে পড়ি, তখন আমাদের সমাদরও কমতে থাকে। আমরা এই সত্যকে হজম করতে পারি না যে, এই আসক্তির ছলনা সম্পর্কে উপলব্ধির জন্য আমাদের যথাযথ বুদ্ধিমত্তা নেই। বাস্তবিকভাবে আরেকটি বিষয় আমাদের দুর্বল করে দেয় যে, বন্ধন থেকে মুক্তির জন্য আত্ম আধিপত্য বা ক্ষমতা নেই। যখনই আমাদের কদর কমতে থাকে তখনই আমরা হতাশার গভীর সমুদ্রে নিমজ্জিত হই।
প্রাণরসায়ন থেকে চেতনার ঊর্ধ্বে
সন্দেহ নেই, হতাশা হচ্ছে একটি চিকিৎসাবিষয়ক ব্যাধি যার যথাযথ চিকিৎসা জরুরি। কিছু ঔষধ হতাশা নিবারণে সামান্য সফলতা পেলেও তা অতি নগণ্য। ডাক্তার ও লেখক সিদ্ধার্থ মুখার্জী নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত Post Prozac Nation নামক প্রবন্ধে স্নায়ুযন্ত্রের চিকিৎসার সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেছেন, -“আমরা শুধুমাত্র কেমিক্যাল মিশিয়ে এবং বৈদ্যুতিক সার্কিট স্পার্ক করে ভাবছি, হয়তোবা আমরা মস্তিষ্কের গঠন এবং তাদের কার্যপ্রণালী বুঝতে সক্ষম হচ্ছি। আসলে তা নয়।
কিন্তু এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো আবেগ। চেতনা হল জড় বিষয়ের ঊর্ধ্বের বিষয়। চেতনা হলো আভ্যন্তরীণ জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অজড় বিষয়। এজন্যই নোবেল বিজয়ী স্নায়ুতন্ত্রবিদ জন ইকলেস বলেন, “মস্তিষ্ক হল চেতনার বার্তাবাহক।”
স্নায়ুজীববিদ্যা মতে হতাশা কমানো হল অতিরঞ্জক এবং বিপদগামী। ঠিক যেমন প্রকৃত আনন্দ বিলুপ্ত হয়ে শুধুমাত্র হাস্যরসে পরিণত হওয়াও দুঃখের কারণ। বিশদভাবে বলতে গেলে, চেতনার অনুপস্থিতি হল একটি ড্রাইভার বিহীন গাড়ির মত। মস্তিষ্কই আমি নই, এটি প্রকৃত আমি’র একটি যানবাহন স্বরূপ। চেতনার উৎস আত্মাই মস্তিষ্কের রসায়নের উৎস।
বেশি হতাশার কারণ
কারণ বহু হতে পারে। কিন্তু প্রধান বিষয়টি হল জীবনের মানে এবং জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে অজ্ঞানতা। এই জড়বাদী সংস্কৃতি আমাদেরকে অজড় বিষয়াবলী তথা জীবনের অর্থ সম্পর্কে জানতে বাধাগ্রস্ত করে। কিন্তু এই জড় আনন্দ যারা অর্জন করে তারা কি পূর্ণতা অনুভব করতে পারে? আর বহু জন যারা এই আনন্দ অর্জন করতে পারে না তাদের কি হয়? এটি আমাদের হতাশার দিকে ধাবিত করে এবং ধীরে ধীরে আমাদের জীবনের প্রকৃত অর্থ ও উদ্দেশ্য থেকে আমাদের বিরত রাখে।
পারমার্থিক উদ্দেশ্য সাধনের শক্তি
ড. ভিক্টর ফ্রানকাউল তার গ্রন্থ Mens search for meaning এ ব্যাখ্যা করেছেন জীবনের উদ্দেশ্য এবং অর্থ সম্পর্কে অবগত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা। যারা তাদের জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবগত আছেন তারা যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সক্ষম।
আমরা সাধারণত তত্ত্বীয় বিষয়াদি নিয়ে ভাবি, কিন্তু জীবনের কি কোনো ব্যবহারিক অর্থ কিংবা উদ্দেশ্য রয়েছে সেটা নিয়ে ভাবি না।
পারমার্থিক উচ্চতর জ্ঞান আমাদের শিক্ষা দিচ্ছে আমাদের সর্বোত্তম উদ্দেশ্য হচ্ছে, ভগবানের প্রতি ভালোবাসা এবং সকল জীবের সাথে ভগবানের সম্বন্ধ বুঝতে পারা। যখন আমরা ভগবানকে ভালোবাসার চেষ্টা করি তখন সর্বোত্তম সন্তুষ্টি লাভ করি এবং অন্যের জন্য ভালো কিছু করতে পারি।
হতাশা এবং আত্মহত্যা থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য ওপরে যে পন্থা বলা হয়েছে তা মূলত আধুনিক বিজ্ঞান অস্বীকার করে থাকে। তবে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে প্রকাশিত Handbook of Religion and health গ্রন্থে প্রায় ২ হাজারটি গবেষণাকর্ম দ্বারা বোঝানো হয়েছে যে, আমরা ধর্মীয় অনুশীলনের মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি লাভ করতে পারি। এছাড়াও ঐ গবেষণা কর্ম অনুসারে ধার্মিক ব্যক্তি অধার্মিকের চাইতে কম হতাশায় ভোগেন।
অবশ্যই ধর্ম বলতে উচ্চতর উপলব্ধি এবং আভ্যন্তরীণ রূপান্তরকে নির্দেশ করে। এই উপলব্ধি এবং রূপান্তরের জন্য বৈদিক জ্ঞান ও ঐতিহ্য প্রদান করছে সুগভীর দর্শন এবং যোগ সাধনার শক্তি। বৈদিক সাহিত্যের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ ভগবদ্গীতা অনুসারে আমরা সকলেই মূলত আত্মা।
আমাদের অবশ্যই জীবনকে পূর্ণতা দান করার জন্য সৌন্দর্য এবং আনন্দের উৎস পরমাত্মা তথা পরমেশ্বর ভগবানের সাথে আমাদের সম্পর্ক সম্বন্ধ অবগত হতে হবে ।
যোগের মাধ্যমে আমরা ভগবানের শক্তির সাথে সম্বন্ধযুক্ত হতে পারি যা আমাদের নিত্যকর্মে প্রেরণা দান করে। যদি আমরা যোগের মাধ্যমে আমাদের আভ্যন্তরীণ সত্ত্বাকে পরিশুদ্ধ করতে পারি তবে আমরা স্বর্ণোজ্জ্বল জ্ঞান এবং জীবনের অর্থ খুঁজে পাব। এই ধরনের পারমার্থিক স্থিতি আমাদের সকল হতাশা এবং আসক্তি দূর করতে পারে। বাস্তবেই ইতোমধ্যে হাজারো ব্যক্তি এভাবে স্বাধীনতা ও পূর্ণতা লাভ করেছেন এবং আরো অনেকে ভক্তিযোগ সাধনার মাধ্যমে পারমার্থিক শক্তির অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন।
বৈদিক সাহিত্যের ভক্তিমূলক সর্বোত্তম শাস্ত্র শ্রীমদ্ভাগবতে বর্ণিত হয়েছে মহান শাস্ত্র প্রণেতা ব্যাসদেবের কথা। তিনি সাহিত্যিক হিসেবে ছিলেন সুপারস্টার। কিন্তু তাঁর দক্ষতা এবং উৎকর্ষতা থাকা সত্ত্বেও তিনি নিজেকে অপূর্ণ অনুভব করেন।
প্রশান্তি লাভের জন্য তিনি কি করলেন?
তিনি তাঁর বাহ্যিক এবং আভ্যন্তরীন সত্ত্বার পরিবর্তন আনলেন, অভ্যন্তরে অন্তঃদর্শন এবং বহির্ভাগে তার পারমার্থিক গুরুদেব নারদমুনির পরামর্শ গ্রহণ করলেন। অন্তদর্শন এবং বহিদর্শন উভয়ের দ্বারা তিনি উপলব্ধি করতে পারলেন যে, তিনি জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য সাধনে অর্থাৎ ভগবানের গুণকীর্তনে তাঁর মেধাকে ব্যবহার করেননি। পরবর্তীতে বিশদভাবে এবং বিশুদ্ধ চিত্তে ভগবানের মহিমা বর্ণিত করেন যার পরিণতি হল মহিমান্বিত শাস্ত্র শ্রীমদ্ভাগবত। এভাবে আমরা অন্তঃদর্শন ও বহিদর্শনের মাধ্যমে আমাদের জীবনের উচ্চতর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে জানব এবং জীবনকে পূর্ণতা দিতে পারব।
জড় সাফল্য আমাদের জন্য ক্ষতিকর নয় যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের অভ্যন্তরের পূর্ণতার পথে সেটি কাঁটা হয়ে দাড়ায়। যতক্ষণ পর্যন্ত না জড়াসক্তি আমাদের জীবনকে নীরস না করছে ততক্ষণ পর্যন্ত সঠিক উপলব্ধি করা দুস্কর। যখন আমরা উপলব্ধি করি যে, কৌতুকরস আমাদের জীবনের সবকিছু নয় আমরা জীবনকে অর্থবহ এবং উদ্দেশ্য পূর্ণরূপে দেখতে চাই তখন সেই জীবনের হাস্যরস অধিক স্থায়ী হবে। সেই অর্থ ও উদ্দেশ্য ছাড়া অনস্ক্রিন বা অফস্ক্রিন উভয়ে উপভোগ করা কৌতুকরস শুধুমাত্র একটি দেখানো বিষয়ে পরিণত হবে। কৌতুকরসের পরেও একটি জীবন রয়েছে তা যেমন দর্শকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তেমনি অভিনেতাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সেই জীবন হয়তো পুষ্পশয্যা নাও হতে পারে, কিন্তু মিডিয়া এই বাস্তবতাকে সামনে নিয়ে আসে না। যখনই এই ধরনের ট্রাজেডি ঘটে, তখনই এ থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।
এখন যেহেতু আমরা রবিন উইলিয়ামস এর আত্মার শান্তি কামনা এবং সমবেদনা জ্ঞাপন করছি, তাই হয়তোবা এখন সময় এসেছে আমাদের পারমার্থিক জীবনের অর্থ এবং জীবনের লক্ষ্য সম্বন্ধে গভীর অনুসন্ধানের পথে যাত্রা শুরু করার।
চৈতন্যচরণ দাস শ্রীমৎ রাধানাথ স্বামী মহারাজের একজন শিষ্য। তিনি ইলেক্ট্রনিক ও টেলিকমিউনিকেশনের ওপর উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন এবং পুনে মন্দিরে ব্রহ্মচারীরূপে শ্রীকৃষ্ণের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। তিনি এ পর্যন্ত আটটি গ্রন্থ লিখেছেন।
জানুয়ারী-মার্চ ২০১৫ ব্যাক টু গডহেড