বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রামায়ণের প্রামাণিক অস্তিত্ব

প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২২ | ৭:৪০ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২২ | ৭:৪০ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 286 বার দেখা হয়েছে

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রামায়ণের প্রামাণিক অস্তিত্ব

গত ১৪ই এপ্রিল বিশ্বব্যাপী মহাসমারোহে ইসকন মন্দিগুলোতে উক্ত উৎসব উপলক্ষে উদ্‌যাপিত হল রাম নবমী উৎসব। এই শুভ তিথিতে ভগবান শ্রীরামচন্দ্র এই ধরাধামে অবতীর্ণ হন। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের ইসকন মন্দিগুলোতে উক্ত উৎসব উপলক্ষে  বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ভগবান রামচন্দ্র যদিও এই ভারতবর্ষে অবতীর্ণ হয়েছিলেন কিন্তু, ভারতবাসীদের অবহেলা এবং পশ্চিমাভাবাদর্শের অনুকরণে নাস্তিকতার আগ্রাসনের কবলে পড়ে অনেক ভারতীয়ও ভগবান রাম চন্দ্রের আবির্ভাব বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করেন। কিন্তু আশার কথা, রামায়ণ সম্পর্কে সম্প্রতি প্রমাণিত অনেক জোড়ালো নিদর্শন নাস্তিকবাদীদের মস্তক অবনত করতে বাধ্য করেছে। বর্তমানে বিভিন্ন স্থানে রামায়ণের ঘটনা বিজড়িত স্থানগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র প্রাচ্যেই নয় পাশ্চাত্যদেশের অনেক ঐতিহাসিকও রামায়ণের বাস্তবতাকে তুলে এনেছেন বইয়ের পাতায়। ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল শ্রী রাজাজী রামায়ণ নিয়ে গ্রন্থ লিখেছিলেন। এছাড়া ইংরেজ ধর্মতত্ত্ববিদ স্যার উইলিয়াম জোন্স, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলিফ লুজেনড্রফ –

রামায়ণের প্রামাণিক অস্তিত্ব

মিশিগ্যান বিশ্ববিদ্যালয়ের জো ব্রারখালটার, লুরি সিয়ার, স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ের এল.স্মিথ সহ অনেক ঐতিহাসিক প্রচুর গবেষণা করে গ্রন্থাদি লিখে রামায়ণের বাস্তবভিত্তি প্রদর্শন করেছেন। ভগবান রামচন্দ্রের স্মৃতি বিজড়িত তীর্থস্থানগুলো ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়াসহ প্রভৃতি দেশে ছড়িয়ে রয়েছে যার সারসংক্ষেপ নিম্নে উপস্থাপন করা হল :

নেপালঃ রামচন্দ্র জন্ম গ্রহণ করেন অযোধ্যায় এবং সীতাদেবীকে বিবাহ করেন মিথিলায় যা বর্তমান নেপালে অবস্থিত। মিথিলার নিকটে সিতমারি নামক স্থানে সীতাদেবী লাঙ্গল কর্ষণের মাধ্যমে আবির্ভূত হয়েছিলেন। যেখানে এখনো জানকি কুন্ড রয়েছে যা সীতাদেবীর পিতা জনক রাজা স্থাপন করেন।

ইন্দোনেশিয়াঃ মধ্যজাভার যোগাবার্তায় পরবানন মন্দির নবম শতাব্দীতে তৈরী করা হয়েছে, যা রামায়ণের পূর্ব স্মৃতি বিজড়িত অষ্টম অথবা নবম শতাব্দীতে ভারতের সংস্কৃত ভাষায় রচিত রামায়ণ, জাবানিজ ভাষায় পুনঃলিখিত হয়, যার নাম ছিল রামায়ণ কাকাউন। উৎসব উদযাপন উপলক্ষে প্রাচীন ঐতিহ্য অনুযায়ী সারাদেশ ব্যাপি এখনও পুতুল নাচ, নৃত্যকীর্ত্তন, রামায়ণ পাঠ করা হয়। ইন্দোনেশিয়ায় সন্তান জন্মদানের পরই অনুষ্ঠিত উৎসবকে মাচপাঠ বলে। এই অনুষ্ঠানটি হিন্দু ধর্মসহ অন্যধর্মাবলম্বীদের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়, এই অনুষ্ঠানে গেল বারে সবার মাঝে একজন রামায়ণের ঘটনা বর্ণনা করেন। সকল ধর্ম বিশ্বাসী নির্বিশেষে পুত্রসন্তান রামের মত তেজস্বী এবং কন্যা সন্তান সীতার মতো পতিব্রতা ও সহনশীল হওয়ার আশা করেন।

শ্রীলঙ্কায় রামায়ণ (ডাটা- শ্রীলঙ্কা ট্যুরিজম মন্ত্রণালয়)ঃ ‘রামায়ণ’ এর বহু স্মৃতিবিজড়িত স্থান শ্রীলঙ্কায় এখনও বর্তমান স্ত হওয়ার পূর্বে প্রায় ২০০০ বছর আগে ৫৪৪ খ্রিষ্ট পূর্বে সংস্কৃত ভাষায় রামায়ণ প্রচলিত ছিল। ইতিহাস খ্যাত রাজা রাম এবং তার প্রিয় সহধর্মিনী সীতা দেবী এবং সীতা অপহরণকারী রাবণ, যিনি লঙ্কার রাক্ষস রাজা হিসেবে সবার কাছেই সুপরিচিত। যখন রাবণ সীতাকে হরণ করল তখন থেকেই রাম-রাবণের মধ্যে এক ভয়ঙ্কর যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল। এই যুদ্ধ অনেকটা গ্রীক-ট্রইয়ের যুদ্ধের মত যা রাণী হেলেনকে অপহরণ করার ফলে সংঘটিত হয়েছিল। কথিত আছে যে বিজয়া পূর্ব সময়ে রাবণ শ্রীলঙ্কার নাগ এবং যক্ষদের এক বিশাল সংখ্যক জনগণকে শাসন করত। আরো উল্লেখ্য যে, বিশ কোটি বছর পূর্বে ভৌগলিক অবস্থান অনুযায়ী শ্রীলঙ্কা ভারত, মদগেসকার, অস্ট্রেলিয়া এবং এন্টাটিকার সাথে সংযুক্ত ছিল যাদেরকে একত্রে গভাওয়ানা পুঞ্জ বলা হত ভূমিকম্প, মহাসাগরের স্রোতপ্রবাহ, বাতাসের গতি প্রভৃতি প্রাকৃতিক কারণে ভূ- পৃষ্টের এসব স্থানগুলো একটি পুঞ্জ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বিভিন্ন দেশে রূপান্তরিত হয়। ভৌগোলিক পরিবর্তনের সময় পুঞ্জীভূত দেশটির (মহাদেশের চেয়ে বৃহৎ) বিভিন্ন ক্ষেত্র বিভিন্ন দিকে ঘুরে যায় এবং রূপ নেই মহাদেশ এবং দেশে। হিমালয় পর্বত উত্থিত হওয়ার ফলে ভারত উপমহাদেশ দক্ষিণ হতে উত্তর দিকে সরে আসে। শ্রীলঙ্কা দেশপুঞ্জ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে লম্বা দ্বীপে পরিণত হয়। রামায়ণ অনুসারে এই ঘটনাগুলি সংঘটিত হয়েছিল শুধুমাত্র রাবণের বিভিন্ন অপকর্মের কারণে, যদিও আধুনিক বিজ্ঞানীদের মতে তা ঘটেছিল ভূমিকম্পের কারণে।

ভারত হতে উত্তর-পশ্চিমের বিস্তৃত উপকুল ও উত্তর-দক্ষিণ দিকে সহজে যাতায়াত করতে পারাটা প্রমাণ করে যে, ভারত উপমহাদেশ পূর্বে অন্যান্য দ্বীপ বা দেশের সাথে সংযুক্ত ছিল এবং বর্তমান যুগের জন্য এটি একটি বড় প্রমাণ। কুন্ডরীমালা শহর যেটি বর্তমানে গালফ উপসাগরের নিকটে পক প্রণালীর নিচে নিমজ্জিত অবস্থায় রয়েছে। ঐ শহরের অধিবাসীরা বিজয়া পূর্ব সময়ে যাতায়াতের জন্য উত্তর- দক্ষিণ দিকের এই রাস্তাটি ব্যবহার করত। হিমালয়ের পাদদেশে সিলভান বনের মধ্যে রাম-সীতার মাধুর্য্যমন্ডিত লীলাবিলাসের বিঘ্ন ঘটিয়ে রাবণ যখন সীতাকে অপহরণ করেছিল তখন হনুমান সীতাকে উদ্ধারের জন্য খুব সম্ভবত: এই রাস্তাটাই ব্যবহার করেছিল। এই রাস্তাটি একটি প্রবাল প্রাচীরের সাথে সংযুক্ত হয়ে পরবর্তীতে  একটি পাহাড়ে রূপ নেয়। এটিই সেই

পাহাড় যেখানে রাম তাঁর বিশাল বানর সৈন্য দল নিয়ে অবস্থান করেছিলেন এবং লঙ্কা যুদ্ধে যাওয়ার পূর্বে পাঞাড়টি মহাদেবের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেছিলেন। রামায়ণ অনুসারে হনুমান যখন একমাস সময় ধরে সমুদ্রের উপর সেতু তৈরী করছিলেন তখন হাজার হাজার কাঁঠবিড়ালী তাঁকে সাহায্য ন করেছিল। হনুমান যখন রাম নাম চিহ্নিত পাথরখন্ড জলে নিক্ষেপ করছিল তখন অনুযায়ী ছোট কাঁঠবিড়ালীরাও তাদের সামর্থ্য ■ ছোট পাথর জলে নিক্ষেপ করছিল। রাম চন্দ্র এই সেবায় সন্তুষ্ঠ হয়ে স্নেহবশতঃ তাদের পিঠের উপর ডোরা দাগ অঙ্কন করে দিয়েছিলেন। সমুদ্র সৈকত ধরে দক্ষিণ দিকে গেলে রামায়ণের সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থান চোখে পড়ে যেগুলোর মধ্যে ‘রুমশালা কান্ড’ পর্বত অন্যতম। একটি রৌদ্র উজ্জ্বল দিনে রুমশালা পর্বতের চার পাশের প্রাকৃতিক পরিবেশ ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে যে কেউ সহজেই রুমশালা পর্বতকে আশেপাশের পর্বতগুলোর চেযে আলাদাভাবে চিহ্নিত করতে পারে। কেননা এই পর্বতে এমন অনেক ভেষজ উদ্ভিদ পাওয়া যায় যা, তার নিকটস্থ পর্বতগুলোতে পাওয়া যায় না। ইতিহাস মতে, যখন রামের ভাই লক্ষণ যুদ্ধে আহত হয়েছিল, তখন রাম
হনুমানকে হিমালয় পর্বত থেকে ওষধি গুল্ম নিয়ে আসতে নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু হনুমান ঐ ঔষধি গুল্মের নাম ভুলে যাওয়াতে ঐ পর্বতটি বহন করে নিয়ে এসেছিল যেটা ঔষধি বৃক্ষের জন্য সুপরিচিত। তার বহন করা পর্বতটি এখানে রাখা হয়েছিল এবং এবং শ্রীলঙ্কা ট্যুরিজম মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে এটাই হল সেই পর্বত। এখনও এ রুমশালা কান্ডে বিভিন্ন ধরনের ঔষধি বৃক্ষে ভরপুর আছে। উত্তর-পূর্ব উপকুলে একটি দূর্গ ছিল যেটি বর্তমানে সমুদ্র গর্ভে নিমজ্জিত অবস্থায় রয়েছে। মাঝে মাঝে ভাটার সময় ঐ দূর্গের উপরের কিছু অংশ দেখা যায়। শ্রীলঙ্কা ট্যুরিজম মনে করে এ দূর্গে রাবণ সীতাকে আটকে রেখেছিল। এই দূর্গটি রাবণ কোটে অবস্থিত রাবণ কোট হচ্ছে লঙ্কার রাজধানী যেখানে বসে রাবণ লঙ্কা শাসন করতেন। রামায়নে উল্লেখিত আছে যে, যখন হনুমান সীতাদেবীর সন্ধ্যানে লঙ্কায় এসেছিলেন তখন লঙ্কাবাসীরা হনুমানের লেজে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। সেই আগুন দ্বারা হনুমান লঙ্কার অনেক প্রাসাদ গাছ পুড়িয়ে দিয়েছিল। সম্প্রতি শ্রীলঙ্কা ট্যুরিজম সেই পুড়ে যাওয়া স্থানগুলো আবিস্কার করেছেন। (চিত্র-২) যখন রাম তার বিশ্বাল সৈন্য দল নিয়ে লঙ্কায় প্রবেশ করছিল, তখন রাবণ সীতাদেবীকে অশক কানন নাম স্থান থেকে সরিয়ে এলা নামক গুহায় লুকিয়ে রেখেছিল। গুহাটি সমুদ্র পৃষ্ট হতে ৪.৫০০ ফুট উপরে ইউভা নামক জায়গায় অবস্থিত। এই গুহার নিকটে একটি জরণা আছে যা হতে জল পতিত হওয়ার দৃশ্য অতি মনোরম শ্রীলঙ্কার ট্যুরিজম ঐ স্থানটিতে একটি প্রগৈতিহাসিক পাথর আবিস্কার করেছে। ধারণা করা হচ্ছে সীতাদেবী তার বন্ধি দশায় এই পাথরটিতে বসেই স্নান করতেন। রাবরে বাসস্থান ছিল। ওয়েলিমাডার নিকটে মালিগাওয়া টেনায়। এটা এখন একটি ফসলের জমি কিন্তু এখনও এখানে পুরাতন পাথরের কারুকাজ, ইট এবং গ্র্যানেট পাথর দেখতে পাওয়া যায়। রাম এবং রাবণের মধ্যকার ভয়ংকর যুদ্ধটি ইউভাতে সংঘটিত হয়েছিল। এই এলাকায় রামের আগ্নেয়াস্ত্রের আঘাতে খসে পড়া প্রস্থর খন্ডে সৃষ্ট গর্তের কিছু নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায়। যেখানে শ্রীরাম শ্রীলংকা ছাড়ার আগে সীতাকে নিয়ে থেমেছিল সেই স্থানে বালিয়াড়ির উপর একটি মন্দির রয়েছে যেটা গনকামধন পাহাড় নামে পরিচিত। এখানে একটি স্বর্ণের বস্তু রয়েছে যা প্রভু রাম দান করেছিলেন। যখন এই স্থানগুলো আরো সুসজ্জিত ও শান্তিপূর্ণ রূপে গড়ে তোলা হবে তখন দর্শনার্থীরা এসব গুরুত্বপূর্ণ এবং রোমাঞ্চকর পবিত্র স্থানগুলো দর্শন করে পারমার্থিকভাবে আরো অগ্রসর হবে এতে কোন সংশয় নেই।

রামায়ণের প্রামাণিক নিদর্শন সমূহ :

রাম পাথরঃ লঙ্কায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে শ্রীরামচন্দ্র এই পাথর দিয়ে সেতু নির্মাণ করেছিলেন। এই পাথরটি কখনো জলে ডুবে না। তামিলনাড়ু প্রদেশের রামেশ্বরম মন্দিরে এরকম কিছু পাথর সংরক্ষিত রয়েছে। (চিত্র-৩)

রুমসালা পর্বতঃ শ্রীলঙ্কায় একমাত্র ভেষজ উদ্ভিদে পরিপূর্ণ। পর্বত। হনুমান এই পর্বতটি এক হাতে আকাশ পথে উড়িয়ে এনেছিল।

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।