এই পোস্টটি 392 বার দেখা হয়েছে
আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের প্রতিষ্ঠাতা-আচার্য কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ
প্রকৃত বিশ্বাস এবং দৃঢ় বিশ্বাস কী?
ভগবানের প্রতি ভক্তদের দৃঢ়বিশ্বাস
ধৈর্য ও দৃঢ় বিশ্বাস
দৃঢ় বিশ্বাস গড়ে তোলা
“ঐকান্তিক ভক্ত যদি ভগবান অথবা তাঁর অর্চাবিগ্রহের সেবা করেন, তাহলে তাঁর সমস্ত কার্য সফল হবে, কারণ ভগবান তাঁর ঐকান্তিক ভাব অবগত হতে পারেন। এইভাবে ভক্ত যদি পূর্ণ বিশ্বাস সহকারে বিধিপূর্বক ভগবদ্ভক্তি সম্পাদন করতে থাকেন, তাহলে তিনি অবশ্যই সাফল্য লাভ করবেন।”
(শ্রীমদ্ভাগবত ৪/৩০/২৯ তাৎপর্য)
“অতএব, একজন ভক্তের উচিত পূর্ণ শক্তি, সহনশীলতা ও দৃঢ়বিশ্বাস সহকারে ভক্তিমূলক সেবা সম্পাদন করা। তার নির্ধারিত কর্তব্য সম্পাদন করা উচিত, হৃদয়ে পবিত্র হওয়া উচিত এবং ভক্তদের সান্নিধ্যে সেবা করা উচিত। এ ছয়টি গুণ ভক্তকে সফলতার পথে পরিচালিত করবে।”
(ভাগবতের পূর্ণ জ্যোতি, অধ্যায় ৪৩)
অতএব, এই দৃঢ় বিশ্বাস থাকতে হবে যে, “যেহেতু আমি আদর্শ পদ্ধতি অনুসরণ করছি, তাই আমার পারমার্থিক জীবন সত্যিকার অর্থে সিদ্ধ হবেই।” আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস থাকতে হবে। এই হল ব্যাপার। উৎসাহাৎ, প্রথমে উৎসাহ; এরপর ধৈর্য এবং তারপর দৃঢ় বিশ্বাস, নিশ্চয়াৎ।
(ভগবদ্গীতা প্রবচন ২/৪৬-৪৭, নিউইয়র্ক, ২৮ মার্চ ১৯৬৬)
ভুলপথে দৃঢ় বিশ্বাস
“পণ্ডিতেরা বলেছেন-মন স্বভাবতই অত্যন্ত চঞ্চল, তাই তার সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করা উচিত নয়। মনের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করলে, যে কোনো মুহূর্তে তা আমাদের প্রতারণা করতে পারে। দেবাদিদেব মহাদেবও ভগবানের মোহিনী মূর্তি দেখে বিচলিত হয়েছিলেন এবং সৌভরি মুনি যোগসিদ্ধির অতি উন্নতাবস্থা থেকে অধঃপতিত হয়েছিলেন।”
(শ্রীমদ্ভাগবত ৫/৬/৩ তাৎপর্য )
দৃঢ় বিশ্বাসের বিশ্বাসঘাতকতা যে ব্যক্তি পূর্ণ বিশ্বাসে আশ্রয় গ্রহণকারী মানুষ অথবা পশুর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করে, সে মহাপাপী। যেহেতু বর্তমান সময়ে সরকার এই প্রকার বিশ্বাসঘাতকদের দণ্ড দিচ্ছে না, তাই সমগ্র মানব সমাজ ভয়ঙ্করভাবে কলুষিত হয়ে গেছে।
(শ্রীমদ্ভাগবত ৬/২/৫-৬ তাৎপর্য)
দৃঢ়বিশ্বাসের লক্ষণ
“শ্রদ্ধাবান অর্থাৎ বাস্তব বস্তু নিত্য সত্য পরমার্থ কৃষ্ণে সুদৃঢ় নিশ্চয়াত্মক বিশ্বাস বিশিষ্ট ব্যক্তিই কেবল ভক্তির অধিকারী। ভক্তির মাত্রা অনুসারে উত্তম, মধ্যম এবং কনিষ্ঠ এই তিন প্রকার ভক্ত রয়েছেন।” (শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত মধ্য ২২/৬৪ তাৎপর্য)
“শ্রীঅদ্বৈত আচার্যের শাস্ত্র সিদ্ধান্তে সম্পূর্ণ বিশ্বাস ছিল এবং তাই তিনি সামাজিক প্রথার পরোয়া করেননি। তেমনই কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলন, একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন যা সামাজিক রীতি নীতির পরোয়া করে না। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু ও শ্রীঅদ্বৈত আচার্য প্রভুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে, আমরা পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তের মানুষকে ভগবদ্ভক্তে পরিণত করতে পারি এবং যখন সে বৈষ্ণবোচিত আচরণ করার ফলে যথাযথ যোগ্যতা অর্জন করে, তখন তাকে যথার্থ ব্রাহ্মণ বলে স্বীকৃতি দিতে পারি । (চৈ.চ অন্ত্য ৩/২২১ তাৎপর্য)
“ভগবান কখনও পক্ষপাতিত্ব করেন না। সকলেই ভগবানের সন্তান, তাই একজনকে উপেক্ষা করে ভগবান অপর সন্তানকে কীভাবে অনুগ্রহ করবেন? কখনও সম্ভব নয়। কিন্তু মানবকুল বৈষম্যমূলক আচরণ করে। আমরা লিখি, “in God we trust” “আমরা ভগবদ্বিশ্বাসী”। কিন্তু ভগবদ্বিশ্বাসী জীবের সমভাবে কৃপালু ও দয়াপরায়ণ হতে হবে। এটিই ভগবদ্ভাবনা”। (কুন্তিদেবীর শিক্ষা, শ্লোক ১১, তাৎপর্য)
“ভক্ত চিন্তা করেন : অবশ্য রক্ষিবে কৃষ্ণ— শ্রীকৃষ্ণ নিশ্চয় আমাকে রক্ষা করবেন ও শুদ্ধ কৃষ্ণভক্তি লাভে কৃপা করবেন। একেই বলে দৃঢ় নিশ্চয়তা বা দৃঢ় বিশ্বাস।…… যে ভগবৎ সেবা ছাড়া অন্য পথকে অনুসরণ করার প্রয়াস করে, তার চিত্ত-চাঞ্চল্য ব্যতীত অন্য কিছু লাভ হয় না। ভগবৎ সেবাই জীবের জীবন ও প্রাণ। ভগবৎ ভজনই জীবের লক্ষ্য।” (উপদেশামৃত, শ্লোক ৩, তাৎপর্য)
জ্ঞানের মাধ্যমে প্রত্যাবর্তন
বিশ্বাস করাটা খুবই ভাল, কিন্তু ভগবান সম্বন্ধে বিজ্ঞানসম্মত জ্ঞান ছাড়া সেই বিশ্বাস স্থায়ী হবে না। কেউ জানতে পারে যে, তার একজন বাবা রয়েছে, কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত না সে জানছে যে, কে তার বাবা, ততক্ষণ তার জ্ঞান অপূর্ণ থেকে যায় । ভগবান সম্বন্ধীয় সেই বিজ্ঞান শিক্ষার খুবই অভাব ৷
আমেরিকানরা বলছে যে, তারা ভগবানে বিশ্বাসী ( In God we trust)। কিন্তু ভগবৎতত্ত্ব ব্যতীত এই যে বিশ্বাস, তা মিথ্যা ছাড়া আর কিছু নয়। প্রথমে ভগবৎ-তত্ত্ববিজ্ঞানটিতে ঐকান্তিকভাবে গ্রহণ কর। তারপর ভগবানের ওপর তোমার বিশ্বাস তুমি আরোপ কর। তারা জানে না ভগবান কে, কিন্তু আমরা জানি। আমরাই প্রকৃতপক্ষে ভগবানে বিশ্বাস করি।
বিশ্বাস গড়ে তোলার ফল
এই সবই কৃষ্ণের অর্থ । যখন তিনি আমাদের অত্যন্ত আস্থাবান ও বিশ্বাসী হিসেবে দেখেন, তখন খরচ করার জন্য তিনি তাঁর অর্থ প্রদান করেন। শুধু কৃষ্ণের কাছে প্রার্থনা কর যে, তুমি যেন তাঁরই কৃপাই তাঁর প্রতি সুন্দরভাবে সেবা সম্পাদন করতে সমর্থ হও।” (সুভদ্রাকে পত্র, ৮ জুলাই ১৯৬৯, লস্ এঞ্জেলেস্)
ত্রৈমাসিক ব্যাক টু গডহেড, জানুয়ারী – মার্চ ২০১৪