বিবাহ বিভ্রাট (শেষ পর্ব)

প্রকাশ: ৭ নভেম্বর ২০২১ | ১০:০১ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ৭ নভেম্বর ২০২১ | ১০:০১ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 281 বার দেখা হয়েছে

বিবাহ বিভ্রাট (শেষ পর্ব)

কিছু প্রশ্ন ও আশিবাদ অনুষ্ঠান প্রসঙ্গ

পাত্র/পাত্রী পছন্দের ক্ষেত্রে পূর্বেই বলা হয়েছিল জ্যেতিষবিদ্যার সহায়তার সাথে সাথে পারস্পরিক ব্যক্তিগত কিছু অনুসন্ধান করাও গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ কিছু প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন উত্থাপন করা আবশ্যিক। কেননা এ সমস্ত প্রশ্ন পরবর্তীতে একটি দীর্ঘস্থায়ী গৃহস্থ জীবনের দিকে পরিচালিত করে, নিম্নে সেই প্রশ্নগুলো প্রদত্ত হল। উল্লেখ্য এখানে শুধুমাত্র উল্লেখযোগ্য কিছু প্রশ্নের তালিকা প্রদান করা হলেও এগুলো ছাড়াও ব্যক্তিগত আরো কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করা যেতে পারে।

বিবাহ সংক্রান্ত

১। বিবাহ সম্পর্কে আপনার ধারণা কি?
২। বিবাহের ক্ষেত্রে আপনার প্রত্যাশা কি?
৩। কেন আপনি আমাকে পাত্র/পাত্রী হিসেবে পছন্দ করেছেন?
৪। কৃষ্ণভাবনাময় বিবাহের ক্ষেত্রে আপনার উপলব্ধি কি?
৫। পতি বা পত্নী হিসেবে আপনারে ভূমিকা কি হতে পারে?
৬। বিবাহের পর আপনি কি জনসমক্ষে নিজের স্নেহানুভূতি প্রকাশ করতে চান?
৭। বিবাহ পরবর্তী যেকোন ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে আপনার ভূমিকা কি হতে পারে?
৮। যদি পরিবারের অন্যন্য সদস্যবৃন্দ ভক্ত না হয় কিংবা ভিন্ন সংস্কৃতি মনা হয় তবে, তাদের সাথে কিরকম সম্পর্ক আপনি চান?
৯। যদি আপনার কোন নির্দিষ্ট গুরুদেব থাকে তবে বিবাহ পরবর্তী এ বিষয়ে আপনার ভূমিকা কি হওয়া উচিত?

পরিবারও বন্ধুবান্ধব সংক্রান্ত

১। পাত্রীর পরিবারের সাথে কি ধরনের সম্পর্ক বজায় রাখা আপনি প্রত্যাশা করেন?
২। ধরুন কোন কারণবশত আপনার পরিবারের সাথে আমার সম্পর্ক তিক্ত হল তবে এক্ষেত্রে আপনার করণীয় কি হওয়া উচিত?
৩। আপনার বিশেষ বন্ধুবান্ধব কারা? (অন্তত ৩ জন বন্ধুর নাম উল্লেখ করুন)
৪। কেন ওরা আপনার বিশেষ বন্ধু?
৫। বিবাহের পরে তাদের সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন হবে?
৬। আপনার কি কোন বিপরীত লিঙ্গের বন্ধু বা বান্ধবী আছে?

সম্পর্ক সংক্রান্ত

১। কেউ আপনার জন্য ভালো কিছু করলে আপনি কিভাবে অনুভূতি প্রকাশ করেন?
২। যদি আপনি কারো কাছে কোন ভুল করেন, তবে কিভাবে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন?
৩। যদি কেউ আপনার কাছে ভুল করেন তবে আপনি কিভাবে তার কাছ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা চান?
৪। কাউকে ক্ষমা করে দেওয়ার পূর্বে আপনি কত সময় নেন?
৫। আপনি কি গৃহে, জনসমক্ষে কিংবা পরিবারে কোন সময় অমার্জিত ভাষা ব্যবহার করেন?
৬। আপনার পরিবার ও বন্ধুজন কি অমার্জিত ভাষা ব্যবহার করে?
৭। কিভাবে আপনি আপনার ক্রোধ প্রকাশ করেন?
৮। আপনার পত্নী কিভাবে ক্রোধ প্রকাশ করুক বলে আপনি প্রত্যাশা করেন?
৯। আপনি ক্রোধান্বিত হলে কি করেন?
১০। মানসিক, বাচিক, আবেগগত ও শারিরীক নির্যাতন সম্পর্কে আপনার সংজ্ঞা বিশ্লেষন করুন।
১১। এরকম নির্যাতনের স্বীকার হলে আপনি কি করেন?

সন্তানাদি সংক্রান্ত

১। আপনার সর্বোচ্চ উপলব্ধি থেকে বলুন, আপনি কি সন্তান ধারন করতে সমর্থ?
২। আপনি কি বিবাহের প্রথম ২ বছরের মধ্যেই সন্তান নিতে চান? না চাইলে, কখন নিতে চান?
৩। আপনি কি এবৰ্শন বা গর্ভপাতে বিশ্বাসী?
৪। সন্তান প্রতিপালনের ক্ষেত্রে সর্বোত্তম পদ্ধতি কি ?
৫। সন্তানদের সুসংবদ্ধ শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে সর্বোত্তম পদ্ধতি কি?
৬। কিভাবে আপনি প্রতিপালিত হয়েছেন?
৭। কিভাবে আপনি একটি সুসংবদ্ধ জীবন প্রাপ্ত হয়েছেন?
৮। অভক্ত সহপাঠী/বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে আপনার সন্তানদের সম্পর্ক কি ধরনের হওয়া উচিত?
৯। দাদু-দিদার সাথে আপনার সন্তানদের সম্পর্ক কি ধরনের হওয়া উচিত?

লক্ষ্য

১। আপনার জীবনের লক্ষ্য গুলো কি?
২। নিকট ভবিষ্যতে ও দীর্ঘ সময় পর আপনি প্রাপ্ত হতে চান এমন তিনটি বিষয়ের কথা উল্লেখ করুন।
বিনোদন ও অবসর যাপন সংক্রান্ত:
১। অবসর সময়ে আপনি কি কি করেন?
২। আপনি কি বিনোদনের জন্য গৃহে অতিথিদের আগমন ভালোবাসেন?
৩। বন্ধুবান্ধব গৃহে আসলে তাদের সাথে আপনি কিরকম আচরণ প্রত্যাশা করেন।
৪। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন গৃহ সম্পর্কে আপনার ধারণা কি?
৫। আপনি কি গ্রন্থ অধ্যয়ন করেন?

স্বাস্থ্য

১। সুস্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ে আপনার উপলদ্ধি কি?

অর্থ

১। আপনার কাছে সম্পদের সংজ্ঞা কি?
২। কিভাবে আপনি অর্থ ব্যয় করেন?
৩। কিভাবে আপনি অর্থ কম খরচ করেন?
৪। আপনার বর্তমান অর্থ ব্যয়ের ধরন কি বিবাহের পর পরিবর্তন হবে বলে আপনি মনে করেন?
৫। বর্তমানে কি আপনার কোন ঋণ আছে? যদি থেকে থাকে তবে কিভাবে এর সমাধান করছেন?
৬। অর্থনৈতিক সমাধানের ক্ষেত্রে আপনি আপনার পত্নীর কাছে থেকে কি প্রত্যাশা করেন?
৭। মন্দিরের অনুষ্ঠানে নিয়মিত অনুদান দেওয়ার ব্যাপারটি আপনি কিভাবে দেখেন?
৮। আপনি কি চান আপনার পত্নী বাইরে চাকরী করুক?
৯। অর্থনৈতিক সাপোর্ট কাদেরকে আপনি প্রদান করে থাকেন?
১০। অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আপনার কি নিজস্ব কোন বাজেট রয়েছে? উপরোক্ত প্রশ্নগুলো উত্তর যদি পাত্র পাত্রীকে সন্তুষ্ট করে তবে তারা বিবাহের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে।

আশির্বাদ কতদিন হতে পারে?

আশিবাদের সময়টা একটু সামান্য দীর্ঘায়িত হলে বিবাহের জন্য পরিকল্পনা করা যায়। যখন একটি আশিবাদ ছয় সপ্তাহেরও বেশি পূর্বে হয় তবে সেক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রীর ঘন ঘন মেলামেশার ব্যাপারটি সীমাবদ্ধ করাটায় বুদ্ধিমানের কাছে, তা না হলে আশিবার্দ ও বিবাহের সময়ের মধ্যেই তাদের মধ্যে অবৈধ মৈথুনের সম্পর্কে ঝুঁকি থাকতে পারে। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য ছয় সপ্তাহের সময়টি ঐতিহ্যবাহী গৌড়ীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে আশির্বাদের জন্য সর্বোচ্চ সময় হিসেবে প্রচলিত। অর্থাৎ এর অধিক সময় ব্যয় করা উচিত নয়। আশির্বাদের সময় সব ধরনের শারিরীক সংস্পর্শ পরিহার করার বিষয়টিও উত্তম। উপরোক্ত নির্দেশনা বিশেষত তাদের জন্যই প্রযোজ্য যারা এখনও অত্যন্ত যুবক-যুবতী এবং পরস্পরের সাথে অন্তরঙ্গ মেলামেশাই হচ্ছে তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আশির্বাদের এই সময়ের পর উপযুক্ত জ্যেতিষবিদের সাথে আলোচনা করে বিবাহের সময় ও স্থান নির্ধারনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত। সুন্দর একটি বিবাহ কার্য সম্পন্ন করার জন্য পরিবার ও সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসা উচিত যাতে করে নব্য দম্পতির উপর কোন মানসিক চাপ না পড়ে সর্বোপরি তাদের পারমার্থিক ও জাগতিক একটি সুখী পরিবার জীবন লাভের জন্য সবার প্রার্থনা করা উচিত। হরেকৃষ্ণ !

লেখক পরিচিতি : শ্রীদেবী দাসী (ড: লক্ষ্মী দজক) বিবাহ ও পরিবারের উপর পি এইচ ডি লাভ করে এবং বর্তমানে একজন কনমালটেন্ট বিবাহ ও পরিবার থেরাপিষ্ট হিসেবে কাজ করছেন তিনি এমনকি একজন মেডিকেল প্র্যাকটিশনার হিসেবে সন্তান ও পরিবার নিয়ে আমেরিকায় কাজ করছেন বর্তমানে তিনি তার পতি নন্দ সুত দাসের সঙ্গে আমেরিকায় ইস্‌কনের নব তালবন কমিউনিটি ফার্মে বাস করছেন। 


 

নভেম্বর ২০১৮ মাসিক চৈতন্য-সন্দেশ
সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।