এই পোস্টটি 124 বার দেখা হয়েছে

বৈদিক শাস্ত্রে চুরাশি লক্ষ রকমের জীব প্রজাতির কথা বলা হয়েছে। অ্যামিবা থেকে শুরু করে বৃক্ষ, লতা, কৃমিকীট, পতঙ্গ, সরীসৃপ পশু-পাখি ও মানুষ ইত্যাদি। চেতনার বিকাশ অনুসারে কর্মফলে জীব এই চুরাশি লক্ষ দেহে ভ্রমন করে থাকে। নয় লক্ষ রকমের জলজ প্রাণী রয়েছে। গাছপালা আদি স্থাবর ২০ লক্ষ, ১০ লক্ষ রকমের পাখি, কৃমিকীট আদি ১১ লক্ষ, ৩০ লক্ষ প্রজাতির পশু এবং মানুষ রয়েছে ৪ লক্ষ রকমের। দেখা যাচ্ছে, মানব প্রজাতির সংখ্যা সব চাইতে কম। কিন্তু তা হলেও মানব জীবনকে সর্বশ্রেষ্ঠ বলা হয়। কেননা মানুষের চেতনা উন্নত। মানুষ তা উন্নত চেতনার বিকাশ সাধন করে ভগবানকে জানার মাধ্যমে নিজেকে ভগবদ্ধামে উন্নীত করতে পারে। ধর্মই মানুষকে শ্রেষ্ঠতা প্রদান করে। কেবল আহার-নিদ্রা, ভয়-মৈথুন মানব জীবনের উদ্দেশ্য নয়। মানব জীবনের উদ্দেশ্য হচ্ছে ধর্ম আচরণ করা। ধর্মবিহীন মানব জীবন পশু জীবনের সমতুল্য। একটি কুকুর আহার করে মানুষও তা করে, একটি কুকুর নিদ্রা যায় মানুষও নিদ্রা যায়, কুকুর বংশবিস্তার বা আত্মরক্ষা করে মানুষও করে। তাহলে পার্থক্য কোথায়? কুকুরও জীব, তবে সে ধর্ম সম্বন্ধে জানতে আগ্রহী নয়। এটিই হচ্ছে মানুষের সাথে পশুর পার্থক্য। পশু কখনই ধর্ম সম্বন্ধে জানতে আগ্রহী নয়।
সুতরাং মানুষ যখন ধর্ম সম্বন্ধে নিস্পৃহ হয়ে পড়ে তখন তারা পশু ছাড়া আর কিছু নয়। সেরকম সমাজে ঝগড়া-বিবাদ সর্বদা লেগে থাকবে। সেখানে সুখ-শান্তি আনন্দ লাভের আশা আকাশকুসুম। মানুষ এখন এতো অসুখী কেন? কারণ ধর্ম লোপ পেয়েছে। মানুষ ধর্মকে অবহেলা করছে। এটিই মূল কারণ। অবশ্য অনেক সময় ধর্ম ব্যবস্থার অপব্যবহারের ফলে মানুষ ধর্মের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে ধর্মকে বাদ দিতে হবে। যথার্থ ধর্মকে অবলম্বন করতে হবে। এমন নয়, কিছু তথাকথিত (ভন্ড) ধর্ম অবলম্বনকারী সঠিকভাবে ধর্ম আচরণ করেনি বলে ধর্মকে বাদ দিতে হবে। চোখে ছানি পড়ার ফলে দেখতে যদি অসুবিধা হয় তাহলে কি আমি চোখটা উপড়ে ফেলবো? না, সেটি বুদ্ধিমানের কাজ নয়। চোখের ছানিটি কেটে বাদ দিতে হবে।
চৈতন্য সন্দেশ অ্যাপ ডাউনলোড করুন :https://play.google.com/store/apps/details?id=com.differentcoder.csbtg
ধর্ম সম্বন্ধে অজ্ঞতার ফলেই মানুষ ধর্মের অপব্যবহার করে। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, ধর্ম কি? ধর্ম ত্ব সাক্ষাৎ ভগবৎ প্রণীতম্– “ধর্মের পথ স্বয়ং ভগবান প্রদর্শিত পন্থা।” এককথায় ধর্ম মানে হচ্ছে ভগবানের নির্দেশ। আর যারা ভগবানের নির্দেশ মেনে চলে তারাই প্রকৃত ধার্মিক। যেমন, আইন মানে হচ্ছে রাষ্ট্রের নির্দেশ। সৎ নাগরিকের কর্তব্য হচ্ছে রাষ্ট্রের আইন মেনে চলা। না হলে, সে দুর্বৃত্তে পরিণত হবে। আর রাষ্ট্র যদি না থাকে তাহলে আইন থাকবে কেমন করে? যদি ভগবান না থাকেন, ভগবান সম্পর্কে কোনো ধারণা যদি না থাকে, যদি ভগবানের নির্দেশ সম্বন্ধে কোনো ধারণা না থাকে তাহলে ধর্মের অনুশীলন হবে কি করে? রাষ্ট্রে যখন আইন থাকে না তখন সমাজ দুর্বৃত্তে ভরে ওঠে। তেমনি যথার্থ ধর্মের অজ্ঞতার ফলে মানুষ মনগড়া ধর্মমত তৈরী করে বিভ্রান্ত হয়। বৈদিক শাস্ত্র ধর্ম সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা প্রদান করে। তাই মনগড়া ধর্মমত সৃষ্টি না করে শুধুমাত্র ভগবানের নির্দেশ পালন করা উচিত। পরমেশ্বর ভগবানের প্রসঙ্গে এ জগতের সবচাইতে বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন সুদক্ষ ইঞ্জিনিয়ার ভগবদ্ভক্ত ব্রহ্মা বলেছেন-
- ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ।
- অনাদিরাদির্গোবিন্দ সর্বকারণকারণম্ ॥
পরমেশ্বর ভগবান হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ, গোবিন্দ। তিনি হচ্ছেন সর্বকারণের পরম কারণ। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভগবদগীতায় তাঁর নির্দেশ প্রদান করে গেছেন– মন্মনা ভব মস্তক্ত মদ্যাজী মাম নমঙ্কুরু।
মামৈবৈষ্যসি সত্যৎ তে প্রতিজানে প্রিয়োহসি মে “তুমি আমাতে চিত্ত স্থির করো, আমার ভক্ত হও, আমার পূজা করো এবং আমাকে নমস্কার করো। তুমি আমার অত্যন্ত প্রিয়। আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে, এভাবে তুমি আমাকে প্রাপ্ত হবে এবং সুখী হবে।” (ভঃ গীতা ১৮/৬৫)
সব সময় চিন্তা করতে থাকুন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ’ আমার প্রভু। সেই চিন্তা সব সময় মনের মধ্যে প্রবাহিত থাকা চাই। শুধুমাত্র শ্রীকৃষ্ণ বিষয়ে শ্রবণ করুন, শ্রীকৃষ্ণ নাম জপ করুন, কোন না কোন ভাবে শ্রীকৃষ্ণ সেবায় যুক্ত থাকা প্রয়োজন। এটিই শ্রীকৃষ্ণের নির্দেশ। তাহলে আমরা সুখী হবো। ধর্মের অবক্ষয় থেকে মানব সমাজকে মুক্ত করতে এ যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ দার্শনিক শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদের অত্যন্ত সহজ-সরল বিজ্ঞানভিত্তিক প্রাঞ্জল তাৎপর্য সমন্বিত শ্ৰীমদ্ভগবদ্গীতা, শ্রীমদ্ভাগবত ইত্যাদি অপ্রাকৃত গ্রন্থাবলী অনুশীলন মানব সমাজে ব্যাপকভাবে হওয়া জরুরী। এইসকল দিব্য গ্রন্থাবলী পাঠ করার মাধ্যমে ও কলিযুগের যুগধর্ম হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তনের মাধ্যমে আমরা সহজেই প্রকৃত ধর্ম সম্পর্কে অবগত হতে পারব। মহাজনো যেন গতঃ স পন্থা– “মহান পুরুষদের প্রদর্শিত পথেই আমাদের অনুগমন করা উচিত। তাহলে মানব সমাজকে পশুসমাজে রূপান্তরিত হওয়ার সমূহ বিপদ থেকে রক্ষা করা যাবে। তা না হলে ধর্মবিহীন সমাজ উত্তরোত্তর আরও ভয়ানক বিভীষিকাময় হয়ে উঠবে।
চৈতন্য সন্দেশ অ্যাপ ডাউনলোড করুন :https://play.google.com/store/apps/details?id=com.differentcoder.csbtg
Hare Krishna Thanks For Reading
মাসিক চৈতন্য সন্দেশ ফেব্রুয়ারী ২০০৮ হতে প্রকাশিত