এই পোস্টটি 421 বার দেখা হয়েছে
অন্তঃসার শূন্য শিক্ষা
সেদিন সংবাদ পত্রে দেখলাম, প্রধান শিক্ষকের মদের বোতল লুকানোর দায়ে ছাত্রদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে ঘটনাটি ঘটেছে মেদিনীপুরে। ব্যাপারটি জেনে বড়ই খারাপ লাগল। ছাত্ররা তাহলে মহা অপরাধ করেছে! এ ব্যাপারে কি বলা যাবে, তার ভাষা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
আজকের দিনে শিশুদের জ্ঞান হতে না হতেই স্কুলে পাঠানো হচ্ছে। বইপত্র অনেক সময় এত বেশী যে, তা সেই শিশুদের পক্ষে বহন করা মুশকিল। তারপরও লেখাপড়া চলতে থাকে জীবনের মাঝ বয়স পর্যন্ত। কোন কোন বিষয়ে এত লেখাপড়া করতে হয় যে, তাদের ক্লাস শুরু হয় সকাল আটটায় এবং শেষ হয় বিকাল চারটায়। টিউশন ফি আকাশ ছোঁয়া। সাধারণ মানুষের কল্পনার বাইরে। তা ছাড়াও কোচিং, গাইডিং, টিউশন ইত্যাদি করতে ছাত্রের মাতা-পিতার ঘাম ছুটে। এরপরে তারা কোন একটা চাকুরী পাবে। তারও মেধার পরীক্ষা, সে এক অভাবনীয় বিষয়। ছাত্রকে কি না জানতে হয়! সিনেমায় কে কি ধরনের অভিনয় করে, ক্রিকেটে কে, কি করে, পৃথিবীর কোন কোণায় কে, কবে, কী করেছিল….ইত্যাদি ইত্যাদি। যদিও এই সমস্ত পরিশ্রমের কতটুকুই আমাদের ব্যবহারিক জীবনে প্রকৃতই ব্যবহৃত হয়, তা বিচার্য বিষয়।
এই সমস্ত বিষয়ে শিক্ষা লাভ করলেও, তাদের কীভাবে আদর্শ নাগরিক হতে হয়, কীভাবে আদর্শ পতি হতে হয় বা পত্নী হতে হয়, আদর্শ ভাই, বোন, বন্ধু বা আত্মীয় হতে হয়,- এ সম্বন্ধে কোন শিক্ষা দেওয়া হয় না। শ্রীমদ্ভাগবতে (৫/৫/১৮) ভগবান বলেন- অর্থাৎ, “যিনি তাঁর আশ্রিত জনকে সমুপস্থিত মৃত্যুরূপ সংসার মার্গ থেকে উদ্ধার করতে না পারেন, তাঁর গুরু, পিতা, পতি, জননী অথবা পূজ্য দেবতা হওয়া উচিত নয়।”
তারা উন্নত শিক্ষা না পাওয়ার ফলে ভবিষ্যতে কিভাবে আর পাঁচ জনের সঙ্গে চলতে হয়, চরিত্র গঠন করতে হয়, সেই শিক্ষা পায় না। ফলে মাতা-পিতার অশান্তি, স্বামীর অশান্তি, স্ত্রীর অশান্তি, আর সন্তানাদিরও অশান্তি। যেটুকু আদর্শবাদ বা শালীনতা এখন পর্যন্ত দেখা যায়, তা হচ্ছে অতীতের শিক্ষা অথবা কোন ধর্মীয় বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা থেকে তারা পেয়ে থাকে। অন্যথায় মা-বাবা আতঙ্কে ভোগেন। প্রত্যেকেরই জীবনে যথার্থ সুখ বা শান্তি প্রায় নেই বললেই চলে।
বৈদিক ধারায় কিন্তু, তা নয়। রামায়ণ, মহাভারত, বিষ্ণুপুরাণ ইত্যাদি শাস্ত্রে যে সমস্ত শিক্ষা দেওয়া হয়, তা কতই না শিক্ষা মূলক! ভরতের চরিত্র, কীভাবে আদর্শ পত্নী বা মাতা হতে হয়, কীভাবে আদর্শ সন্তান উৎপাদন ও পালন করতে হয়,…এই সমস্ত বিষয়ে বহু শিক্ষণীয় বিষয় আমরা পেতে পারি। আজকাল বৈদিক শিক্ষা মানুষকে দেওয়া হয় না। কি শেখানো হচ্ছে? জানি-না শিক্ষকেরাও এ সম্বন্ধে সচেতন কি না। অন্যথায় স্কুলে শিক্ষক কিভাবে মদের বোতল নিয়ে আসেন? নিজে নষ্ট, আর সকলকেও নষ্ট করার জন্য। আর এই সমস্ত নষ্টবুদ্ধি মানুষগুলো শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক নামক পদগুলি দখল করে থাকেন। কী শেখাবেন? অন্তঃসার শূণ্য শিক্ষা। আজ পর্যন্ত যেটুকু শিক্ষা বর্তমান, অদূর ভবিষ্যতে তা আরও কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে কে জানে? হ্যাঁ, আজকাল যেই শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। যা পশুরাও অনায়াসে করে থাকে, সেই বিষয় এখন মানুষের জন্য বিদ্যালয়ে শিক্ষণীয়। অর্থাৎ মানুষ এখন এতই দিশেহারা যে, কীভাবে সুষ্ঠু জীবন যাপন করতে হয়, তাও জানে না।
আগের দিনে মানুষ এত অল্প বয়সে লেখাপড়া না করেও যেটুকু জীবনে প্রয়োজন তা শিখতেন আর তা দিয়ে তাঁরা সাহিত্য, সংস্কৃতি, আদর্শ, নীতিবোধ সর্বোপরি; জীবনের মূল্যবোধ তাঁরা শিখতেন। কৃষি, গো-রক্ষা, বাণিজ্য, ইত্যাদি তখনও ছিল, আর তা ছিল যথেষ্ট সন্তোষজনক।
তাই সেই ধরনের আদর্শ শিক্ষাই আমাদের মানব জীবনকে যথার্থ সুখ-শান্তি ও আনন্দ দিতে পারে, বর্তমানের অন্তঃসার শূণ্য শিক্ষা নয়।
মাসিক চৈতন্য সন্দেশ, জানুয়ারি ২০২১ সংখ্যা