এই পোস্টটি 286 বার দেখা হয়েছে
মথুরা এবং বৃন্দাবন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দিব্য লীলাবিলাস স্থান। মথুরা হতে ১৫ কি.মি. দূরে বৃন্দাবন অবস্থিত। এখানে রাধাকৃষ্ণের প্রায় ৫০০০ এরও বেশি মন্দির রয়েছে। এই স্থানটি বৃন্দাদেবী বা তুলসী দেবীর লীলাবেষ্টিত স্থান। তাই এই পবিত্র স্থানটির নামকরণ করা হয়েছে বৃন্দাবন। এছাড়া ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দিব্য লীলা বিলাস স্থান হওয়ার কারণে এটি ব্রজভূমি হিসেবেওপরিচিত।
বঙ্কু বিহারী মন্দিরঃ বঙ্কু শব্দের অর্থ হচ্ছে “ত্রিভঙ্গ” এবং বিহারী মানে “পরম ভোক্তা” বঙ্কু বিহারী হচ্ছেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং। বঙ্কু বিহারী বিগ্রহ আবিস্কার করেন স্বামী হরিদাস, বৃন্দাবনের নিধুবন হতে। স্বামী হরিদাস হচ্ছেন ষড় গোস্বামীর সমকালীন সময়ের নিম্বাক বা রুদ্র সম্প্রদায় একজন পরম বৈষ্ণব ভক্ত। তিনি মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত করেন ১৮৬৪ সালে।বঙ্কুবিহারীঃ এই মন্দিরে প্রথমদিকে শুধুমাত্র ভগবান বঙ্কু বিহারীজী পুজিত হতেন। পরবর্তীতে রাধারাণীর বিগ্রহ স্থাপন করা হয়। উৎসবঃ এটি একটি ঐশ্বর্যময় মন্দির। বিশেষ করে, ঝুলন যাত্রার ১ম ও ২য় দিনে বঙ্কুবিহারীকে রূপার প্লেট দ্বারা সজ্জিত দোলনায় এবং ৩য় দিনে ভগবানকে সোনার দোলনায় (হিন্দোল) দোলানো হয়। বছরে শুধুমাত্র একবার শরৎকালে পূর্ণিমায় ভগবান বাঁশি হাতে নেন এবং বিশেষ মুকুট পরে থাকেন। বহু বিহারীকে চারজন গোপীসহ পূর্ণদর্শন করতে পারা যায় ফাল্গুন মাসের সর্বশেষ ৫টি দিনের উৎসবে।
মন্দিরের বিশেষ দিকঃ এই মন্দিরেরবিগ্রহগুলো সকাল টার পূর্বে ঘুম থেকে উঠেন না। ভগবান বন্ধু বিহারী সকাল ৯ টায় ঘুম থেকে উঠেন এ জন্যই যে তিনি অনেক রাত পর্যন্ত খেলাধুলা করার জন্য জেগে থাকেন। এছাড়া বছরের শুধুমাত্র একটি দিন মঙ্গল আরতী হয়ে থাকে। সেটি জন্মাষ্ঠমীর দিন।বঙ্কু বিহারীর চরণ কমল দর্শন করা যায় বছরে শুধুএকবার “অক্ষয় তৃতীয়া”র দিন। বিগ্রহ দর্শনের সময় হচ্ছে সকাল ১০টা হতে ১২.৩০ মিনিট এবং সন্ধ্যা ৬ টা হতে ৯ টা পর্যন্ত। তাও প্রতিবার দর্শনের সময় কয়েক সেকেন্ড পূর্ণ হতে না হতেই মন্দিরের পর্দা টানিয়ে দেয়া হয়। এখানে ভগবানকে এক নুহুত্ব ও দর্শনকে মহাসৌভাগ্য বলে মনে করা হয়। বন্ধু বিহারী বাদ্য শঙ্খ পছন্দ করেন না। তাই মন্দিরে সেগুলো বাজানো হয় না। বঙ্কু বিহারীজীর চোখের উজ্জ্বলতা এতই বেশি যে, যেকেউ যদি বেশ কিছু সময় তাকিয়ে থাকেন তবে তিনি অবচেতন হয়ে পড়বেন।
বঙ্কু বিহারীর অপ্রাকৃত লীলাঃ একদিন বঙ্কু বিহারীর সেবক হরিদাস বাইরে ভিক্ষা করতে গেলেন ভগবানের ভোগের সামগ্রী সংগ্রহের জন্য। সেই সময় এক মাতাজী এসে ভগবানকে প্রণাম করলেন। এরপর তিনি ভগবানকে কাতর স্বরে বললেন, ‘হে ভগবান, আমি গাভীর দুধ দিয়ে ছানা, দধি, মাখন, পায়েস, মিষ্টান্ন, ক্ষীর, ননী, সন্দেশ তৈরী করেছি। কিন্তু আমার কোন সন্তানাদি নেই। এই সব খাবার গ্রহণ করার কেউ নেই। তুমি তো বৃন্দাবনের গোপাল, ব্রজবাসীদের মনের বাসনা পূর্ণ কর। আমার অভিলাষ তোমার জন্য তৈরীকৃত খাবার যদি তুমি গ্রহণ কর, তাহলে আমি অত্যন্ত প্রীত হব। এই বলে প্রণাম শেষ করে উঠতে না উঠতেই তিনি দেখলেন যে, স্বয়ং বঙ্কু বিহারী শিশুরূপে তার আঁচল ধরে আছেন এবং বলছেন “তাড়াতাড়ি চলো আমার সময় খুব কম, আমাকে আবার তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে কেননা ঐ বুড়োটা আবার এসে পড়বে।” গোপালের স্বশরীরের সান্নিধ্য পেয়ে মাতাজী আনন্দে আত্মহারা হলেন। এরপর বঙ্কু বিহারী মাতাজীর হাত ধরে তার গৃহে উপস্থিত হলেন। এবং বলছেন “দাও, তাড়াতাড়ি খাবার দাও, আমার খুব খিদে পেয়েছে। আবার দেরী করলে ঐ বুড়োটার পিটুনি খেতে হবে।” এরপর মাতাজীর তৈরীকৃত সমস্ত প্রকারের খাদ্য সামগ্রী গোপালের সামনে অর্পণ করলেন। এর পর গোপাল তাড়াহুড়ো করে কিছু খাচ্ছে কিছু মুখ দিয়ে গড়িয়ে বক্ষদেশ ভিজে যাচ্ছে। খাবার শেষ না করেই তাড়াহুড়ো করে হাত মুখ না ধুয়েই যেতে যেতে বন্ধু বিহারী বলতে লাগল আমি যাচ্ছি পরে আবার আসব।” ঐ দিকে হরিদাস মন্দিরে প্রবেশ করে দেখলেন যে, তাঁর আরাধ্য বঙ্কু বিহারী বিগ্রহ মন্দিরের বেদীতে নেই। তারপর তিনি অনেক খোঁজাখুজি করলেন এবং শেষমেষ রেগে গিয়ে একটি লাঠি হাতে মন্দিরের সামনে বসে পড়লেন।এরপর বঙ্কু বিহারী আস্তে আস্তে মুখ কাচুমাচু করতে করতে, ভীষণ ভয়ে ভিত হয়ে মন্দিরে প্রবেশ করতে না করতেই, হরিদাস কড়াসুরে বললেন, “এতক্ষণ কোথায় ছিলে? চারিদিকে তোমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছি।” হাতে লাঠি দেখে ভয়ে চোখ টলমল করতে করতে গোপাল বলছেন “দুপুরে এক মাতা এসেছিল। তিনি আমাকে প্রণাম করে বলেছেন যে, তাঁর কোন ছেলেমেয়ে নেই।” তখন হরিদাস বললেন, “ছেলেমেয়ে নেই তাতে কি হয়েছে।”বঙ্কু বিহারী (গোপাল) = নীচু স্বরে বললেন, “তেমন কিছু হয়নি, আমার খুব ক্ষিদে লেগেছে তো, তাই মাতার আর্তনাদে সাড়া না দিয়ে পারলাম না।” তখন রেগে হরিদাস বললেন, “আমি তোমার জন্য এই বুড়ো বয়সে সারাদিন ভিক্ষা করে চাল, ডাল সংগ্রহ করি, এবং নিজের হাতে রান্না করে তোমাকে খাওয়াই। আর তুমি আমাকে না বলে যেখানে সেখানে যখন তখন চলে যাও। যাও মন্দিরে যাও। আজ থেকে জেনে রাখ, তোমাকে আর কেউ প্রণাম করে প্রার্থনা শেষ করার সময় পাবে না। তার আগেই মন্দিরের পর্দা টেনে দেওয়া হবে। এবার দেখি তুমি কিভাবে মন্দির থেকে বের হও।” সেই থেকে আজ অবধী উক্ত মন্দিরে এই প্রথা প্রচলিত রয়েছে। বঙ্কু বিহারীর এই দিব্য লীলা আজ অবধী ভক্তবৃন্দদের আনন্দিত ও রোমাঞ্চিত করে যাচ্ছে।