এই পোস্টটি 342 বার দেখা হয়েছে
আজ শুভ মহালয়া, দেবী পক্ষের সূচনা। মাতা দূর্গা এবছর আসছেন ঘোটকে (ঘোড়ায়) চড়ে এবং গমন করবেন দোলনায়। এইখানে অনেক অজানা তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি, কৃপা করে মনোযোগ সহকারে পড়ুন করুন:-
ওম সর্বমঙ্গলা মঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থসাধিকে
শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরী নারায়ণি নমোহস্তুতে ॥
ঐশ্বর্য্যপূর্ণ দক্ষরাজের নন্দিনী এবং বৈষ্ণবশ্রেষ্ঠ দেবাদিদেব ভোলানাথের ঘরণী (পত্মী) হচ্ছেন দুর্গাদেবী, যিনি হরি সহায়িনী তথা হরিভক্তি প্রদায়িনী।
শ্রীচন্ডি গ্রন্থের ৫/৭ বলা হয়েছে, “দেবীং বিষ্ণুমায়াং” অর্থাৎ ভগবান বিষ্ণুর মায়া শক্তি হচ্ছেন দূর্গাদেবী। আবার, দূর্গা শব্দটি দূর্গাবিশিষ্টা। দূর্গ শব্দের অর্থ কারাগৃহ। এই কারাগারসদৃশ জড়-জগতের যিনি কর্তা তিনিই হচ্ছেন দূর্গাদেবী।
অন্যদিকে, দেবী পার্বতী দেবতাদের অনুরোধে দুর্গম নামক এক অসুরকে বধ করেছিলেন বলে তাঁর নাম দুর্গা। বলা বাহুল্য, দূর্গম হল হিরণাক্ষপুত্র রুরুর বংশধর।
?অন্যান্য নামঃ চন্ডিকা, অম্বিকা, বৈষ্ণবী, মহিষাসুর-সংহারিণী, নারায়ণী, মহামায়া, কাত্যায়নী, জগদ্ধাত্রী, গন্ধেশ্বরী, বনদূর্গা ইত্যাদি।
দেবী দূর্গার অনেকগুলো হাত রয়েছে। দূর্গাদেবীর রয়েছে অষ্টাদর্শভুজা, দর্শভুজা, অষ্টভুজা ও চর্তুভুজারূপ। তবে দর্শভুজা রূপটিই বেশি জনপ্রিয়। কারণ এই দশভুজা রূপেই মহিষাসুর নামে এক অসুরকে সংহার করেছিলেন।
?ঘটনার বিবরণঃ মার্কন্ডেয়চন্ডীতে বর্ণিত কাহিনী অনুসারে, মহিষাসুরের প্রবল বিক্রমে দেবতারা স্বর্গ থেকে লাঞ্ছিত ও অত্যাচারিত হয়ে সেখান থেকে বিতারিত হন। পুরো ঘটনা তাঁরা জানান দেবাদিদেব মহাদেব, ভগবান বিষ্ণু এবং সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মাকে। তবে ব্রহ্মার বরে যেহেতু রম্ভাসুরের পুত্র মহিষাসুর সকল পুরুষের অবধ্য, সেই কারণে দেবতারা সিদ্ধান্ত নিলেন মহিষাসুরকে বধ করার জন্য প্রত্যেক দেবতা তাঁদের নিজ নিজ তেজ ত্যাগ করে একটি নারীমূতি সৃষ্টি করবেন।
?উৎপত্তির উৎসঃ সেই ধারাবাহিকতায় মহাদেবের তেজে মুখ, যমের তেজে চুল, বিষ্ণুর তেজে বাহু, চন্দ্রের তেজে স্তন, ইন্দ্রের তেজে কটিদেশ, বরুণের তেজে জঙ্ঘা ও উরু, পৃথিবীর তেজে নিতম্ব, ব্রহ্মার তেজে পদযুগল, সূর্যের তেজে পায়ের আঙ্গুল, বসুগণের তেজে হাতের আঙ্গুল, কুবেরর তেজে নাসিকা, প্রজাপ্রতির তেজে দাঁত, অগ্নির তেজে ত্রিনয়ন, সন্ধ্যার তেজে ভ্রু, বায়ুর তেজে কান এবং অন্যান্য দেবতাদের তেজে শিবারূপী দূর্গার সৃষ্টি হল।
তারপর দেবতারা দূর্গাদেবীকে একে একে বস্ত্র, পোশাক ও অস্ত্র দান করলেন….
?দিব্য অস্ত্রঃ দেবাদিদেব মহাদেব দেবী দূর্গাকে দিলেন শূল, ভগবান বিষ্ণু দিলেন চক্র, বরুণের কাছ থেকে পেলেন শঙ্খ, তারপর অগ্নির কাছ থেকে শক্তি, বায়ুর কাছ থেকে ধনু ও বাণপূর্ণ তূণীর, ইন্দ্রের কাছ থেকে বজ্র, ঐরাবতের কাছ থেকে ঘন্টা, যমের কাছ থেকে কালদন্ড, ব্রহ্মের কাছ থেকে অক্ষমালা ও কমন্ডল, সূর্যের কাছ থেকে রশ্নি, কালখক্ষ ও নির্মল চর্ম, ক্ষিরোদ সাগর দিলেন অক্ষয়বস্ত্রসহ বিভিন্ন অলঙ্কার ও আভরণ। বিশ্বকর্মা দিলেন পরশুসহ নানাবিধ অস্ত্র, অভেদ্য কবচমালা, হিমালয় দিলেন সিংহ, কুবের দিলেন অমৃতের পানপাত্র এবং শেষনাগ দিলেন নাগহার। এভাবে তিনি হয়ে উঠলেন দেবতাদের সম্মলিত শক্তির প্রতিরূপ।
?জানা অবশ্যঃ দেবী দূর্গা কুড়ি প্রকার দিব্য অস্ত্রে সজ্জিত। তাঁর ডান পাশে রয়েছে শূল, খক্ষ, শঙ্খ, চক্র, বাণ, শক্তি, বজ্র, অভয়, ডমরু এবং ছাতা এবং বাম পাশে নাগপাশ, খেটক, পরশু, অঙ্কুশ, ধনুক, ঘন্টা, পতাকা, গদা, আয়না এবং মুগর বিদ্যমান।
অতঃপর, দিব্য অস্ত্রে সজ্জিত দেবী দূর্গা এবং মহিষাসুরের মাঝে যুদ্ধ শুরু হয়। মহিষাসুরের সঙ্গে ৯ দিন ৯ রাত যুদ্ধ করার পর দশম দিনে তার বিরুদ্ধে জয়লাভ করেন দূর্গাদেবী।
শ্রীশ্রীচন্ডীর কাহিনী অনুসারে, আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশীতে দেবী দূর্গা আবির্ভূতা হন এবং শুল্কা দশমীতে মহিষাসুরকে বধ করেন। মূলত বিজয়া দশমী সেই বিজয়কেই চিহ্নিত করে।
এখন আসি, দূর্গাপূজা সম্পর্কিত নানা বিষয়ে….
দূর্গাপূজা মূলত শক্তির অধিষ্ঠাত্রী পার্বতীদেবীর দুর্গা রূপের উপাসনার উৎসব। দূর্গাপূজার প্রচলন সর্বপ্রথম হয় সত্যযুগে। সত্যযুগের রাজা সুরথ এবং বৈশ্য সমাধি কর্তৃক বসন্ত ঋতুতে প্রথম দূর্গোৎসব শুরু হয়েছিল। (মার্কন্ডেয়চন্ডী)
?সময়কালঃ সাধারণত বছরে দু’বার দূর্গোৎসবের প্রথা রয়েছে। আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষে শারদীয়া এবং চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে বাসন্তী দূর্গাপূজা।
?বাংলায় প্রথমঃ জনশ্রুতি আছে, রাজশাহীর তাহিরপুরের রাজা কংসনারায়ণ প্রথম মহাআড়ম্বরে শারদীয়া দূর্গাপূজার সূচনা করেছিলেন।
?পূজোর তিথিঃ সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠদিন তথা দেবীপক্ষী থেকে দশমী পর্যন্ত হয়ে থাকে এই দূর্গোৎসব। তবে অষ্টমী তিথিতে এক কুমারী মেয়েকে মাতৃরূপে পূজা করা হয়, একে কুমারীপূজা বলে। তবে পূর্ববর্তী অমাবস্যার দিন এই দেবীপক্ষের সূচনা হয়, একে “মহালয়া” বলা হয়ে থাকে আর পূর্ণিমার দিনটিকে লক্ষ্মী পূজার দিন হিসেবে গণ্য করা হয়।
?চূড়ান্ত সিদ্ধান্তঃ ভগবদ্গীতায় চর্তুথ অধ্যায়ের দ্বাদশ শ্লোকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন-
[ কাঙ্ক্ষন্ত: কর্মণাং সিদ্ধিং যজন্ত ইহ দেবতা ]
অর্থাৎ, সকাম কর্মের সিদ্ধি লাভের জন্য লোকেরা বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা করে থাকে। বলা বাহুল্য, সকাম কর্মের ফল খুব তাড়াতাড়ি লাভ হয় তবে মনে রাখবেন সেটা ক্ষণস্থায়ী।
ব্যক্তিগত_উপলব্ধিঃ আমরা যদি জড় কামনা-বাসনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যেই কেবল দেবদেবীর পূজা করে থাকি, তবে সেটা নিশ্চক কপটতা ছাড়া আর কিছুই নয়। আমরা বিভিন্ন দেব-দেবীর কাছে অবশ্যই একটা জিনিসই চাইব সেটা হলো-“তাঁরা যেন আমাদের কৃষ্ণভক্তি বা কৃষ্ণপ্রীতি দান করেন।”