এই পোস্টটি 187 বার দেখা হয়েছে
যেকোনো কার্যে সাফল্যের চাবিকাঠি হলো সঠিক পরিকল্পনা এবং তার বাস্তবায়ন। জপের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা দেখেছি একজন ব্যক্তি তার পছন্দের পেশাতে পারদর্শিতা বা সাফল্য তখনই অর্জন করে যখন সে সাফল্যের জন্য এক সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে ধৈর্য সহকারে তা পালন এবং বাস্তবায়িত করে।
যেমন: কেউ যদি ডাক্তার হতে চায়, তাকে একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনার মধ্যেই থাকতে হবে। পড়াশোনার ক্ষেত্রে খামখেয়ালি বা অলসতা করলে, সে সফল হতে পারবে না। সাধারণত দৈনন্দিন জীবনে আমাদের একটি পরিকল্পনা থাকে যে, কি পড়বো, সকালে কোথায় প্রসাদ পাবো, কি প্রসাদ পাবো, কোথায় যাবো, ইত্যাদি। যদি এই ছোটখাটো জিনিসের জন্য আমাদের পরিকল্পনার দরকার হয়, তাহলে এই জড় বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়ার যে সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা ভগবানের এই দিব্যনাম জপ, তার জন্য যে এক সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়ন করা কত জরুরি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ঠিক যেমন একজন প্রকৃত চাষী বীজ বপনের পূর্বে তার জমিটিকে চাষের উপযুক্ত করে তোলে, ঠিক তেমনই ভক্ত জপ করতে বসার পূর্বে তার দেহ, মন এবং হৃদয় যথার্থরূপে প্রস্তুত করে। চাষী যদি জমিটিকে উপযুক্ত না করে বীজ রোপণ করে, তার যথার্থ ফল সে পাবে না। তদ্রূপ ভক্ত যদি তার চেতনাকে যথার্থরূপে তৈরি না করে তবে সে জপের সময় পূর্ণ মনোযোগ সহকারে জপ করতে সমর্থ হবে না। আমরা হরিনাম জপকে কতটা গুরুত্বের সহিত গ্রহণ করি তা দৃশ্যমান হবে আমাদের পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়নের মাধ্যমে। পরিকল্পনা মানেই হচ্ছে পূর্ব থেকে প্রস্তুতি নেওয়া। আজকের জপের প্রস্তুতি আগের দিন রাত থেকে নিতে হবে। আমরা যদি শুধু ইচ্ছা প্রকাশ করি ভালো জপ করার জন্য, এই ইচ্ছা বা আশা যথেষ্ট নয়। এই আশাকে বাস্তবায়ন করার জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ দরকার এবং সেই পরিকল্পনামাফিক চলার ফলেই আমরা ভালো জপে অগ্রগতি লাভ করতে পারি।
অভ্যাস
বাংলায় একটি অত্যন্ত প্রচলিত কথা আছে, “মানুষ অভ্যাসের দাস”। ভালো অভ্যাসের দ্বারা একজন ব্যক্তি অসাধ্য সাধন করতে পারে। অপরদিকে, বদভ্যাসের কারণে একজন ব্যক্তি অধঃপতিত হয়।
আমরা কোন অভ্যাসে অভ্যস্ত হচ্ছি এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা যদি ভালো অভ্যাসের দ্বারা অভ্যস্ত হই তবে খুব সহজেই ভগবদ্ভক্তিতে অগ্রগতি লাভ করতে পারি। যেমন-বৈষ্ণব সেবা, বৈষ্ণব অপরাধ থেকে দূরে থাকা, পূর্ণ মনোযোগ সহকারে জপ করা, সৎ জীবন যাপন করা প্রভৃতি। এসবই খুব ভালো অভ্যাস।
অন্যদিকে, সচেতনভাবে অন্যের দোষ দর্শন করা, অমনোযোগী হয়ে জপ করা প্রভৃতির মাধ্যমে যে বদভ্যাস গড়ে ওঠে, তার দ্বারা আমরা অধঃপতিত হই। ভগবদ্গীতায় ভগবান কৃষ্ণ বলেছেন, “অভ্যাসেন তু কৌন্তেয় বৈরাগ্যেণ চ গৃহ্নতে”, অর্থ্যাৎ, অভ্যাসের দ্বারা একজন ব্যক্তি এমনকি মনকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
এর থেকে বোঝা যায়, আমাদের ভক্তি জীবনে ভালো অভ্যাসে অভ্যস্ত হওয়া কত জরুরি। জপ প্রসঙ্গে কিছু ভালো অভ্যাস ও বদভ্যাস রয়েছে। আমাদের জপের সময় যেন আমরা কেবল ভালো অভ্যাসেই অভ্যস্ত হই এবং বদভ্যাস থেকে যেন সচেতনভাবে দূরে থাকি।
জপের কিছু ভালো অভ্যাসের উদাহরণ:
১) জপের জন্য সঠিক পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নেওয়া।
২) সকাল সকাল ১৬ মালা জপ শেষ করা।
৩) জপের সময় পূর্ণ মনোযোগ সহকারে উচ্চারণ ও শ্রবণ করা।
জপের কিছু বদভ্যাস হলো:
১) জপের জন্য কোন পরিকল্পনা না থাকা।
২) সারাদিনে মধ্যে ১৬ মালা জপ করা।
৩) অমনোযোগী জপ করা।
৪) জপের সময় অন্যান্য কাজ করা, যেমন- মোবাইল দেখা, কথা বলা ইত্যাদি।
জপের সময় কেউ যদি ভালো অভ্যাসের দ্বারা অভ্যস্ত হয় তবেই অপ্রাকৃত আনন্দ লাভ করা যায়। কিন্তু কেউ যদি বদভ্যাসে অভ্যস্ত হয়ে জপ করতে থাকে তবে সে কোনো অপ্রাকৃত আনন্দ পায় না এবং ধীরে ধীরে ভক্তি জীবনে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ে।
তাই, আমাদের অত্যন্ত সচেতনভাবে চেষ্টা করতে হবে জপের ভালো অভ্যাসে অভ্যস্ত হতে। খারাপ অভ্যাস সহজে চলে যায় না। শ্রীল প্রভুপাদ বলেন, “জপের ফল হচ্ছে আরো বেশি সংখ্যায় জপ।” কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কেমন জপ? অমনোযোগী জপের ফলে আরো বেশি অমনোযোগী জপ হয় এবং এভাবে বেশিদিন চললে সেটিই অভ্যাসে পরিণত হয়। তখন মনে হবে এটিই স্বাভাবিক। কিন্তু অমনোযোগী জপে আনন্দ থাকে না। তাই জপ আমাদের জীবনে অগ্রাধিকার পায় না। ষোল মালা জপ শেষ করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। অবহেলার দরুন তা ফেলে রাখা হয়। কিন্তু ভালো জপের মাধ্যমে আরো বেশি ভালো জপ করা যায়। যার মাধ্যমে অপ্রাকৃত আনন্দ উপলব্ধি হয়। ভালোভাবে ষোল মালা জপ করা মানে আমরা আমাদেরকে সবচাইতে মূল্যবান উপহার দিচ্ছি। আমাদের ভালো অভ্যাস এবং বদভ্যাস বিষয়ে সচেতন থাকা দরকার। ভালো জপ অভ্যাসের মাধ্যমে আমরা কৃষ্ণের নিকটে আসতে পারি এবং জপের বদভ্যাসের কারণে আমরা কৃষ্ণের কাছ থেকে দূরে সরে যেতে পারি।