এই পোস্টটি 290 বার দেখা হয়েছে
হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত নেপাল অত্যন্ত মনোরম স্থান। নেপালের রাজধানী কাঠমুন্ডু থেকে ১২০ কি. মি. দক্ষিণ পূর্ব পার্শ্বে জনকপুর অবস্থিত। এই ‘জনকপুর’ হচ্ছে প্রাচীন “মিথিলা” রাজ্যের রাজধানী। -এখানেই ভগবান রামচন্দ্রের পত্নী সীতা দেবী জন্মগ্রহণ করেন। সীতা দেবীর পিতা রাজা জনক ত্রেতাযুগে মিথিলা রাজ্যের রাজা ছিলেন। ‘রামায়ন’ অনুসারে ভগবান রামচন্দ্র ও ভাই লক্ষণ তাদের শুরুদেব বিশ্বামিত্র মুনি এখানে ‘রাজা জনক’ কর্তৃক এক স্বয়ংবর অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। রাজা জনক ভগবান শিবের আশীর্বাদে এক হরধনু প্রাপ্ত হয়েছিলেন। তিনি রাজা জনককে বলেছিলেন যে, যিনি এই হরধনু ভাঙ্গতে পারবেন তিনি অবশ্যই পরমেশ্বর ভগবানের অবতার এবং লক্ষ্মীদেবী স্বরূপা সীতাদেবী তাকেই পতিরূপে গ্রহন করবেন। সেই অনুষ্ঠানে রাবণসহ তৎকালীন বহু শক্তিশালী রাজা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু কেউই হরধনুকে ভাঙ্গতে পারলেন না। কিন্তু ভগবান ব্রামচন্দ্র অতি সহজেই সেই হরধনুকে ভেঙ্গে তিন অংশে ভাগ করলেন। এভাবেই বর্তমান জনকপুর ধামে ভগবান রামচন্দ্র এবং মাতা সীতাদেবীর বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিল।
তীর্থস্থান দর্শনঃ রাজা জনকের নামানুসারে এই স্থনের নাম জনকপুর। জনকপুরসহ সমগ্র নেপালের দর্শনীয় স্থান হচ্ছে রাম জানকী মন্দির। সীতাদেবীর অপর নাম জানকী। ১৯১১ সালে এই বিখ্যাত মন্দিরটি নির্মাণ করেন মধ্য ভারতের তিকমার্গ নামক এলাকার রাণী বৃষভানু কুনওয়ার। এই মন্দিরটি বিভিন্ন শৈল্পিক মার্বেল দিয়ে তৈরি এবং সম্পূর্ণ নির্মাণ খরচ ছিল তৎকালীন সময়ে প্রায় “নয় লক্ষ মন্দির” নামেও খ্যাত। শাস্ত্র মতে এই স্থানেই রাজা জনক শিবধনুর পূজা করতেন। ১৬৫৭ সালে এই মন্দিরের প্রাঙ্গণে মাতা সীতার এক স্বর্ণের বিগ্রহ পাওয়া গিয়েছিল। এখনও এই মন্দির রাজা জনকের এক ভাঙ্গা মূর্তি ও অন্যান্য বিগ্রহ রয়েছে। এখানে ৬০টি কক্ষ রয়েছে যা কাঁচ এবং চিত্রকলায় সজ্জিত। জানকী মন্দির থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে ধনুষা নামক স্থান অবস্থিত। কথিত আছে যে, রামচন্দ্র যখন হরধনু ভেঙ্গেছিলেন তখন ধনুর এক টুকরা অংশ এই স্থানে পতিত হয়। জনকপুরের সবচেয়ে পুরাতন মন্দির হচ্ছে রাম মন্দির। প্রতি বছর রাম নবমী উৎসবে এখানে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় এক লক্ষ লোকের সমাগম হয়। এখানে ২টি
বিখ্যাত সরোবর রয়েছে যা ধনুষ সরোবর এবং গঙ্গা সরোবর নামে পরিচিত। এখানের অপর বিখ্যাত মন্দির হল রামসীতা বিবাহ মন্দির। কথিত আছে যে, এই স্থানেই ভগবান রামচন্দ্র এবং সীতাদেবীর বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিল। প্রতি বছর বিবাহ পঞ্চমীতে (নভেম্বর মাসে) -এখানে স্বারম্বরভাবে মহোৎসব পালন করা হয়।
জনকপুর ছাড়াও সমগ্র নেপাল জুড়ে রামায়নের বিভিন্ন ঘটনার স্মৃতিতে সমুজ্জ্বল বহু তীর্থস্থান রয়েছে। পরবর্তীতে সেই সকল তীর্থস্থানের মহিমা উপস্থাপন করা হবে। প্রিয় পাঠক ভক্তগণ আমাদের এই দুর্লভ মানবজীবনের সার্থক করার প্রয়াসে আর দেরী না করে এখনই এই দুর্লভ তীর্থস্থান দর্শন করার প্রস্তুতি নিন।
চৈতন্য সন্দেশ অক্টোবর-২০০৯ প্রকাশিত