এই পোস্টটি 214 বার দেখা হয়েছে
একবার শ্রীজগন্নাথ রঘুর কাছে এলেন এবং তাঁকে রাজার বাগান থেকে কাঁঠাল চুরি করতে তাঁর সঙ্গে যেতে বললেন। রঘু বলল, “তুমি কেন কাঁঠাল চুরি করতে চাও? তোমার যদি কাঁঠাল খাবার ইচ্ছা হয়, আমাকে বল-আমি তোমার জন্য সুন্দর একটি কাঁঠাল এনে দেব।” বালকরূপী জগন্নাথ বললেন, “এইভাবেই আমি আমার ভক্তের কাছ থেকে সবকিছু নিয়ে থাকি। বস্তুত, আমার সবকিছুই আছে। মা যশোদা আমাকে কত ননী-মাখন খাওয়াতো, আমাকে আনন্দ দিত। কিন্তু তবুও আমি অন্যদের বাড়ীতে মাখন চুরি করতে যেতাম। চুরি করা দ্রব্য ভোজনে বিশেষ আনন্দ আছে। আজ তোমাকে আমি উপলব্ধি করাব চুরি করা কি আনন্দের। আমার সঙ্গে এসো।”
নিরুপায় হয়ে রঘু প্রভুর প্রস্তাবে সম্মত হল এবং তাঁর সঙ্গ নিল। তাঁরা উভয়ে চুপিসারে রাজার বাগানে প্রবেশ করলেন। জগন্নাথ রঘুকে বললেন, “তুমি গাছে চড়বে। আমি মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকব। তুমি সবচেয়ে সুন্দর ও বড় কাঁঠালটি পাড়বে এবং মাটিতে ফেলবে। আমি এখানে দাঁড়িয়ে থাকব। তারপর আমরা উভয়ে কাঁঠাল নিয়ে পালাব।” রঘু যথাযথভাবে প্রভুর নির্দেশ অনুসরণ করল। রঘু কাঁঠাল গাছে উঠে সবচেয়ে বড় ও ভাল কাঁঠালটি খুঁজে বের করল এবং সেটা পাড়ল। “জগন্নাথ”, চাপাস্বরে রঘু জগন্নাথকে ডাকল। “তুমি কি তৈরী? জগন্নাথ উত্তর দিলেন, “হ্যাঁ, আমি তৈরী, নীচে ফেল!” রঘু কাঁঠাল নীচে ফেলল-জগন্নাথ সেটা ধরবেন ভেবে। কিন্তু কোথায় জগন্নাথ! তিনি ইতিমধ্যেই বাগান থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। কাঁঠাল ধরার জন্য কেউই সেখানে ছিল না। সশব্দে কাঁঠালটি মাটিতে পড়ে ফেটে চৌচির হল । যখন রাজার বাগানের মালী ঐ শব্দ শুনল, সে বুঝতে পারল যে, কেউ বাগানে ঢুকে কাঁঠাল চুরি করছে। তৎক্ষণাৎ সে দৌড়ে গাছটির কাছে গেল এবং একটি বড় কাঁঠাল ফেটে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখল, কিন্তু আশেপাশে কাউকে দেখতে পেল না। যখন সে উপরে তাকাল তখন দেখল যে রঘু দাস গাছে বসে আছে। মালী তৎক্ষণাৎ রাজার কাছে ছুটে গিয়ে তাঁকে বলল যে রঘু দাস তাঁর বাগান থেকে কাঁঠাল চুরি করছে। “সে এখনো গাছের ডালে বসে রয়েছে!” সে উত্তেজিত স্বরে রাজাকে বলল । রাজা বিশ্বাস করতে পারলেন না যে, রঘু তাঁর বাগানে গিয়ে কাঁঠাল চুরি করবে। সুতরাং রাজা তাঁর মন্ত্রীদের সাথে নিয়ে মালীর নির্দেশিত স্থানে গেলেন। তিনি রঘু দাসকে গাছে চড়ে থাকতে এবং নীচে কাঁঠাল পড়ে থাকতে দেখে আশ্চর্য হলেন। রাজার অনুরোধে রঘু গাছ থেকে নেমে এল। রাজা রঘুকে জিজ্ঞাসা করলেন, “প্রভু, তোমার যদি কাঁঠাল খাওয়ার ইচ্ছা হয়ে থাকে, তাহলে গভীর রাত্রে আমার বাগানে এসে গাছে চড়ার কি প্রয়োজন ছিল? তুমি আমাকে একবার বলতে পারতে। আমি কাঁঠাল পাড়ার ব্যবস্থা করে তোমার বাড়ীতে পাঠিয়ে দিতাম!” রঘু তখন প্রভু জগন্নাথ কিভাবে তাঁকে ঠকিয়েছে-সব বৃত্তান্ত বলল। প্রত্যেকেই প্রভুর রম্য এই লীলা শুনে খুব আনন্দ পেল এবং সকলেই হাসতে লাগল। তাঁরা রঘুর মহত্ত্বের জন্য তাঁর গুণগান করলেন। এইভাবে সখ্যরসে প্রভু জগন্নাথ রঘুর সঙ্গে অনেক লীলা করেছিলেন।
হিতোপদেশ
ভগবান যে সব লীলা করেন তা ভক্তদের আনন্দ বিধানের জন্য। সুতরাং ভগবান যদি চুরি লীলাও প্রকাশ করেন তা আপাত দৃষ্টিতে জড়জাগতিক অজ্ঞ লোকদের কাছে ঘৃণ্য কোন কর্ম মনে হতে পারে । কিন্তু ভগবানের এ চুরি লীলাও ভক্তদের খুবই আনন্দ বিধান করে। তাই বলে তাকে অনুসরণ করে আমরাও চুরি করা শুরু করব তা নয়। ভগবান চুরি করলে শাস্তি পাবে না কিন্তু আমরা চুরি করলে পুলিশের মার খেতে হবে।