ভাগবত মহাবিশ্ব তত্ত্ব

প্রকাশ: ১১ আগস্ট ২০২২ | ৭:৫৩ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ১১ আগস্ট ২০২২ | ৭:৫৩ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 254 বার দেখা হয়েছে

ভাগবত মহাবিশ্ব তত্ত্ব

মনোহর বেণুধারী দাস:
শ্রীমদ্ভাগবতের (২/১০/১) আলোচ্য বিষয়:

অত্র সর্গো বিসর্গশ্চ স্থানং পোষণমূতয়ঃ।
মন্বন্তরেশানুকথা নিরোধো মুক্তিরাশ্রয়ঃ॥

ভাগবতের আলোচ্য বিষয় ১০ টি। সর্গ, বিসর্গ, স্থানম্ং পোষনম্ং উতি ,মন্বন্তর, ঈশকথা, নিরোধ, মুক্তি এবং আশ্রয়। এই বিভাগে আমরা স্থানম্ং বিষয়টি ব্যাখ্যা করবো। ইস্‌কনের প্রতিষ্ঠাতা আচার্য শ্রীল প্রভুপাদের খুব ইচ্ছে ছিল, ইস্‌কনের ভক্তরা যাতে এই অংশ ভালভাবে অধ্যয়ন করে এবং উপলদ্ধি করার চেষ্টা করে। তিনি ১৯৭৬ সালে স্বরূপ দামোদর মহারাজকে পত্র লিখেছিলেন, ‘‘এখন আমাদের সকল পি এইচ ডি ডিগ্রি ধারীদের বৈদিক প্ল্যানেটোরিয়াম তৈরির জন্য একটি মডেল তৈরি করতে অবশ্যই সহযোগিতা করতে হবে এবং ভাগবতের পঞ্চম স্কন্ধ ভাল করে অধ্যয়ণ করতে হবে। বর্তমানে আমার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হচ্ছে, মহাবিশ^ ঠিক একটি বৃক্ষের মত, যার শিকড় উপরের দিকে রয়েছে। একটি বৃক্ষের যেমন শাখা এবং পাতা রয়েছে, সেই রকম ব্রহ্মাণ্ডও অনেক গ্রহের সমন্বয়ে গঠিত, যা বৃক্ষের পাতা ,ফল, ফুল ইত্যাদির মতো ব্রহ্মাণ্ড রূপ বৃক্ষে সংযোজিত রয়েছে। তাই আমাদের সকল পিএইচডি ডিগ্রি ধারীদের পঞ্চম স্কন্ধের বিশদ বিবরণ অধ্যায়ণ করতে হবে এবং ব্রহ্মাণ্ডের একটি মডেল তৈরি করতে হবে। যদি আমরা কিভাবে ঋতু পরিবর্তন হয়, কিভাবে গ্রহণ হয়, চাঁদের বিভিন্ন পর্যায়, কিভাবে দিন-রাত হয় তা যদি ব্যাখ্যা করতে পারি তাহলে এটা খুব শক্তিশালী প্রচার হবে।’’

স্বরূপ  দামোদরকে পত্র, ২ এপ্রিল, ১৯৭৬

শ্রীল প্রভুপাদের এই আদেশ পালনের জন্য তাঁর কিছু শিষ্য সহযোগীতা করার জন্য দৃঢ়ভাবে বিষয়টিকে গ্রহন করে। তারা গভীরভাবে পঞ্চম স্কন্ধ অধ্যয়ন করে, বহু গ্রন্থ প্রণয়ন করেন ও ভিডিও তৈরি করেন এবং চিত্র অঙ্কন করেন। যেমন Mysteries of The Sacred Universe – Richard L. Thompson, Vedic Cosmology – H H Davavir Goswami, Vedic Cosmos, Puranic Cosmolgy, Bhu-gola Tattva-Danavir Goswami.
উপরিউক্ত গ্রন্থের উপর ভিত্তি করে আমরা এই অংশে ধারাবাহিক প্রবন্ধ প্রকাশনা করব। প্রথমে আমরা এই ব্রহ্মাণ্ডের অনেক অংশের মধ্যে ভূমন্ডল নামক অংশটি বর্ণনা করব। এই ভূমন্ডলে প্রিয়ব্রত মহারাজ শাসন ভার গ্রহণ করার আগে এই ভূমণ্ডল সপ্ত দ্বীপ এবং সপ্ত সমুদ্রে বিভাজিত ছিল না। প্রিয়ব্রত মহারাজই এই ভূমন্ডলকে সপ্ত দ্বীপ এবং সপ্ত বর্ষে বিভক্ত করেন। যা ভাগবতের বিভিন্ন স্থানে বর্র্ণিত উদ্ধৃতি সহ নিম্নে প্রদত্ত হল।
“পরীক্ষিত মহারাজ শুকদেব গোস্বামীর নিকট প্রশ্ন করেছে, মহারাজ প্রিয়ব্রতের রথচক্রে যে সাতটি পরিখার সৃষ্টি হয়েছিল তার দ্বারা সপ্ত সমুদ্র রচিত হয়েছে। এই সাতটি সমুদ্রের ফলে ভূমন্ডল সপ্ত দ্বীপে বিভক্ত হয়েছে। এখন আমি এই সমস্ত দ্বীপ এবং সমুদ্র সমন্ধে বিস্তারিত জানতে চাই।

শ্রীমদ্ভাগবত ৫/১৬/২

“শুকদেব গোস্বামী উত্তর দিলেন, “হে রাজন, ভগবানের মায়াশক্তির বিস্তারের অন্ত নেই। এই জড়ৎ জগতে প্রকৃতির গুণের (সত্ত্বগুণ, রজগুন, এবং তমগুণ) রুপান্তর তবু ব্রহ্মার মতো দীর্ঘ আয়ু প্রাপ্ত হলেও তা পূর্ণরূপে বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয়। এই জড় জগতে কেউ পূর্ণ নয় এবং অপূর্ণ ব্যক্তি সতত চিন্তা করার পরেও এই ব্রহ্মান্ডের যথাযথ বর্ণনা করতে পারেনা। হে রাজন, তা সত্ত্বেও আমি কেবল ভূলোক আদি প্রধান প্রধান স্থান গুলির নাম, রূপ, পরিমাপ এবং লক্ষণ সমূহের উল্লেখ করে সেগুলির বর্ণনা করার চেষ্টা করবো।

শ্রীমদ্ভাগবত ৫/১৬/৪

এখন কথা হচ্ছে আমরা কৃষ্ণের লীলা শ্রবণ না করে কেন এই বিশ^-ব্রহ্মাণ্ডের আয়তন, পরিমাণ নিয়ে আলোচনা করব বা শ্রবণ করব যেখানে কোন রসালো তত্ত্ব নেই ? বা প্রশ্ন হতে পারে শ্রীল শুকদেব গোস্বামীর মতো উন্নত স্তরের ভক্তরা কেন এই নিরস বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে গেলেন? পরীক্ষিত মহারাজের মৃত্যুর জন্য মাত্র সাতদিন বাকি ছিল কিন্তু তিনি কেন বিশ^-ব্রহ্মাণ্ডের আয়তন, পরিমাণ শ্রবণ করতে গেলেন ? তার উত্তরে বলা হচ্ছে: জীবের মৌলিক নিবিষ্টতা দেখানো। যখন আমরা অন্যান্য বর্ষসমূহ আলোচনা করব তখন আমরা দেখবো সেখানকার অধিবাসীরা সবাই কোন না কোন ভাবে ভক্তিতে নিযুক্ত আছে, সেটা দেখে আমরা ভক্তিতে উৎসাহ পাই বা ভক্তিমূলক সেবা করতে উৎসাহী হই। কারণ যখন আমরা দেখব অন্যান্য বর্ষের অধিবাসীরাও ভক্তিতে নিযুক্ত রয়েছে, তখন আমরা যে সংখ্যা লঘু নই সেটা বুঝতে পারব। এই জগতে আমরা হয়তো সংখ্যালঘু কিন্তু অন্যন্যা বর্ষের সমস্ত অধিবাসীদের যদি আমরা সম্মিলিত ভাবে বিবেচনা করি তাহলে দেখবো আমরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ।
জড় জগতে সাধারণত কেউ আশ্চর্যজনক কিছু না দেখলে তার প্রতি নত স্বীকার করে না বা তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করেনা । এই স্থানম অংশ যখন আমরা অধ্যয়ন করব, তখন দেখব এই পৃথিবী ছাড়াও আরো কত বিশাল বিশাল স্থান রয়েছে। ভগবান তার অচিন্ত্য শক্তির দ্বারা বিশাল বিশাল গ্রহকে মহাশূন্যে ভাসিয়ে রেখেছেন। অধ্যয়ন করার পর আমরা ভগবানের অচিন্ত্য শক্তি সমন্ধে কিঞ্চিৎ উপলদ্ধি করতে পারব। ফলে আমরা ভগবানকে মূল্যায়ন করতে পারব। তাহলে ভগবানের প্রতি প্রপত্তি করতে আমাদের পক্ষে সহজ হবে।

চিন্ময় সম্বন্ধ

উপরিউক্ত ব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত আলোচনা শ্রীকৃষ্ণের সাথে সম্পর্কিত। শ্রীল রূপগোস্বামী ভক্তিরসামৃত (১/২/৩৫৩) গ্রন্থে বলেছেন, নির্বন্ধ-কৃষ্ণ-সমন্ধে- কৃষ্ণের সাথে সম্পর্কিত বিষয় সমূহও চিন্ময় ।

সারাংশ

ভূমন্ডলের বিভিন্ন স্থানের, বিস্তারিত বর্ণনা করা সম্ভব নয়। কারণ শুকদেব গোস্বামীর মত উন্নত ভক্ত যেখানে তিনি বলেছেন আমি প্রধান প্রধান বিষয় আলোচনা করব, বিস্তারিত আলোচনা সম্ভব নয়। ব্রহ্মাণ্ড সমন্ধে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে বায়ু পুরাণে। আগামী সংখ্যায় থাকবে, জম্বুদ্বীপের বর্ণনা।


মাসিক চৈতন্য সন্দেশ জুলাই ২০২২ হতে প্রকাশিত

 

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।