এই পোস্টটি 227 বার দেখা হয়েছে
এই দেশে যে হারে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দিন দিন বেড়ে চলেছে,
এর পিছনে বিকৃত মানসিকতা আর বেপরোয়া জীবনযাপনই দায়ী।
নিকুঞ্জ বিলাসিনী দেবী দাসী
এই বছর মার্চের প্রথম দিকের কোনো দিন, আমি ডাক্তারের দর্শনপ্রার্থী হয়ে অপেক্ষা করছিলাম। অপেক্ষমান কক্ষে হঠা९ টেলিভিশনের লাউড স্পিকারে শুনতে পেয়ে দেখি সকল রোগীরাও কান খাড়া করে সেই কথাগুলোকে শোনার চেষ্টা করছে। তারপর দেখি তাদের মুখগুলো যেন বিবর্ণ হয়ে গেল। তখন বুঝতে পারলাম এটি ছিল ‘অস্কার পিস্টোরিয়াস’র জামিনের শুনানি। যে মানুষটি কিছু দিন ধরে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের শিরোনামে আছেন। কিন্তু বিধি বাম এবার পৃথিবীর দ্রুততম প্যারাঅলিম্পিয়ান দৌড়বিদ হিসেবে নন বরং তার বান্ধবী রেবা স্টিংকেম্প’কে হত্যার অপরাধে। এই জঘন্য খবরটি দক্ষিণ আফ্রিকাসহ সারা বিশ্বে নিন্দার ঝড় তুলে। যিনি অলিম্পিকে স্বর্ণ জয়ী, শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তির অনুপ্রেরণা ছিলেন, শারীরিক অক্ষমতাকে পিছনে ফেলে জীবনে সফলতা অর্জনে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, আর কিনা তিনি সকল বর্ণের মানুষের হৃদয় ভেঙ্গেছেন, দ্বিধা দ্বন্দের মধ্যে ফেলে দিয়েছেন তার অনুসারীদের, বিশেষ করে “আফ্রিকানা ডাচ বংশের সাদা বর্ণের মানুষ” যারা তার বিশেষ অনুসারী। ওয়েটিং রুমে আফ্রিকানা’ বর্ণের উপস্থিত রোগীরা খুবই শঙ্কিত ও বিব্রতকর অবস্থায় ছিলেন কারণ তারা এই মানুষটাকে নিয়ে খুবই গর্ব করতেন।
যে মহিলাটি ঠিক আমার বিপরীতে বসেছিলেন তিনি হঠাৎ উচ্চস্বরে বলতে লাগলেন “তুমি কি মনে করো? সে কি করে ভাবতে পারে বাথরুমে একজন চোরই ছিল এবং এমনকি প্রকৃতপক্ষে কে ছিল সেটা না জেনে দরজার ভেতর থেকে ৪টি গুলি করে।” অন্যরোগীরা, সব আড়ি পেতে শুনে অবিশ্বাসের সহিত মহিলাটির দিকে তাকিয়ে রইল এবং আমি অনুভব করলাম তাদের নজর হয়তো এবার আমার দিক ফিরতে পারে ভেবে আমি চুপ করে থাকি। কোন প্রমাণ ছাড়া এই ধরনের মন্তব্য করা সত্যিই দুঃসাহসিক যদিও এটি জনসাধারনের মধ্যে আলোচনা সৃষ্টি করে। “কোনো প্রমাণ ছাড়া তার (পিস্টোরিয়াসের) পক্ষপাতিত্ব করা একটি সমালোচনামূলক হতে পারে।” একজন বৃদ্ধ বললেন। “এই দেশে যে হারে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দিন দিন বেড়ে চলেছে, এর পিছনে বিকৃত মানসিকতা আর বেপরোয়া জীবনযাপনই দায়ী তাছাড়াও অনেকে নিজেদের প্রতিরক্ষার জন্য সঙ্গে অস্ত্র রাখছে।”
হতাশা ও দূর্দশাগ্রস্থ রোগীদের চেহারা দেখে মনে হচ্ছিল, তারা যে শারীরিক কষ্ট নিয়ে ডাক্তারের কাছে আসছে তার চেয়ে বেশি যন্ত্রণা সাম্প্রতিক কালে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো থেকে পাচ্ছিল।
আমি বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করতে গিয়ে শ্রীমদ্ভাগবত ১০/১৪/৫৮ শ্লোকটিতে ভগবানের প্রতি ব্রহ্মার স্তবটি মনে করলাম যেখানে তিনি বললেন পদং পদং যদ্ বিপদাং। অর্থাৎ এই জড় জগতে প্রতিটি পদে পদে বিপদ।” এবং শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় ১২/৭ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই জড় জগতের ব্যাখ্যা দিয়েছেন এইভাবে মৃত্যুসংসারসাগরাৎ। অর্থাৎ জন্মমৃত্যুর সমুদ্র। শ্রীল প্রভুপাদ তাৎপর্যে বলেন, “এই জগৎটি, জড় অস্তিত্বের জন্য কসাইখানা। যেভাবে পশুরা আসন্ন বিপদ সম্পর্কে না ভেবে কসাইখানায় স্বস্তিতে অবস্থান করে, ঠিক তেমনি আমরাও নানা বিপর্যয়পূর্ণ অবস্থায় জীবন উপভোগ করতে ব্যস্ত থাকি।” প্রভুপাদ প্রায়ই একটি বাংলা ভজন থেকে উদ্ধৃতি দিতেন “জীবনের সুখী হওয়ার বাসনা পূরণ করতে গিয়ে, আমরা এই ঘর (দেহ) তৈরি করি। কিন্তু দূর্ভাগ্যক্রমে এই দেহটিকে আমরা না চাওয়া সত্ত্বেও আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে, দেহের সাথে সাথে আমাদের বাসনা গুলোও পুড়ে ভস্মীভূত হবে। যদি আমরা এমন কোন বস্তুর জন্য সময় ও শক্তি বিনিয়োগ করি যা পরিশেষে সব ছাই হয়ে যাবে, তাহলে আমরা কেন মানসিক স্তরে অবস্থান করছি? আমরা ক্ষণস্থায়ী সুখের আশায় নানাভাবে বিভ্রান্ত হচ্ছি, যেখানে প্রতি পদক্ষেপই কণ্টকময়, আমরা চাইলেও এর আঘাত থেকে বাঁচতে পারবো না। ‘ইতিবাচক চিন্তন’ যেখানে আমাদের সাফল্য লাভের অন্যতম পন্থা সেখানে তাও হতাশাপূর্ণ হতে পারে।
ভ্রমপ্রবণ আশ্রয়
ডাক্তার দেখতে এসে একটি লম্বা সময় ধরে অপেক্ষার পালা চলছে। ঘণ্টার আওয়াজ ক্রমান্বয়ে কানে প্রবশে করছে। রোগীরা এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিষয়ে নিজেদের প্রাসঙ্গিক মন্তব্য করে চলেছেন এবং দেশে বিভিন্ন বিষয়ে তাদের অসন্তুষ্টি। অস্কার পিস্টোরিয়াসের তদন্ত, দেশের জুডিশিয়াল সিস্টেমকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। আমি বুঝতে পারি, সকলেই জীবনের নিরাপত্তা চায়। বৈদিক শাস্ত্র নিশ্চিত করে যে, কোনো ভৌতিক জগতের (ভ্রম প্রবণ) মানুষের ওপর বিশ্বাস করতে পারি না এবং আমরা আশাও করতে পারি না যে তারা আমাদের নিরাপত্তা দিবে। বৈদিক সময়ে, আধ্যাত্মিক জ্ঞান সম্পন্ন ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়রা কর্তৃক পরিচালিত হতেন আর তারা প্রজাদের সুরক্ষা প্রদান করতেন। তারা যে কেবল নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতেন তাই নয় বরং জীবনের পরম উদ্দেশ্য সাধনে আধ্যাত্মিকতার নির্দেশনা দিতেন। মানুষের পরম সুরক্ষা ও নির্দেশনা প্রদানকারী স্বয়ং ভগবানের আশ্রয় গ্রহণ করতেন। এইভাবে মানুষ একে অন্যের প্রতি অসীম ভালবাসা ও সম্মানের এক নিবিড় সম্পর্কে আবদ্ধ থাকত, তারা জানতেন তারা সবাই ভগবানের পরিবারের অংশ।
শ্রীমৎ ইন্দ্রদ্যুম্ন স্বামী মহারাজ একদা বলেছিলেন, “আমরা যেন নৈতিক মূল্যবোধ ধরে রাখি।” দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতির উপস্থিতিতে, ‘কাজুলু নাতাল রাজ্যের রাজা এবং আরো বিশিষ্ট নেতারাও জোর দিয়ে বলেন, ভগবান এক আর আমরা যে যার মত তাকে ডাকি।
বিশ্ব ভাতৃত্বের চেতনায় তিনি বলেন, ‘সামাজিক সঙ্গতি অর্জনের জন্য প্রয়োজনে আমাদের বিভিন্ন ধর্মের পার্থক্যগুলিকেও উপেক্ষা করে যেতে হবে, তাই এটি উপলব্ধি করা খুবই জরুরি। অন্যভাবে বলতে গেলে, আমাদের প্রত্যেককে অবশ্যই আধ্যাত্মিক স্তরে উন্নীত হতে এটি অনুধাবন করতে হবে যে, আমরা ভগবানের বিশ্ব পরিবারের সদস্য। পরিবারের কথা বলতে গেলে একটি প্রবাদ মনে পড়ে ‘রক্ত জলের চেয়ে ঘন’। পারিবারিক সম্প্রীতি খুবই শক্ত হবে, যদি আমরা একমত হই যে, ভগবান আমাদের পরম পিতা আর আমরা তার অনুগত সন্তান তবে আমাদের সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে।
বৈদিক শাস্ত্রে বলা আছে, যদি আমরা অভিজ্ঞ ধার্মিক ব্যক্তিদের নির্দেশনা অনুযায়ী ভগবানের সকল আইন মেনে সবাইকে সমান দৃষ্টিতে দেখি তবেই আমরা প্রশান্তি ও ঐক্যতার আশা করতে পারি। ভগবানের নির্দেশনাগুলো নিরাপত্তা বেষ্টনীর মতো যা আমাদেরকে পাপপূর্ণজীবন থেকে নিরাপদে রাখে। যখনই আমি এই সব নিয়ে ভাবছিলাম, আমার বিপরীতে বসা মহিলাটি বললেন, ‘এটি অবিশ্বাস্য, আজকাল খবরের কাগজ পড়াটা বিরক্তিকর। গাড়ি চুরি, ধর্ষন, খুন-হত্যা এই নিয়েই যেন সাজানো হয় সংবাদপত্র। বৈদিক শাস্ত্রে এ সম্পর্কে যা বলা হয় তা কিভাবে মহিলাটিকে বুঝাবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। তবুও তাকে বললাম সাবলীলভাবে, মানুষের কাম, ক্রোধ, লোভ এসবের কারণ। এসবই মানুষকে ধাবিত করছে ইন্দ্রিয় সুখভোগের জন্য কিন্তু তারা বুঝে না এসব করতে গিয়ে আরো বেশি দুঃখ পাচ্ছে। কিন্তু তারা চাইলে খুব সহজে এসব থেকে বের হয়ে আসতে পারে’- তিনি মাঝে যোগ করলেন। “আহ, তবে দীর্ঘ সময়ের জন্য নয়’ আমি বললাম। ‘সবাইকে পাপের ফল ভোগ করতে হয়। যেমন কর্ম তেমন ফল। এটি কর্মফলের নিয়ম। কেউ কখনো খারাপ কর্মের প্রতিক্রিয়া থেকে ছাড় পায় না। এই জন্মে করুক বা পরের জন্মে করুক। মহিলাটি একমত হয়ে মাথা নাড়লেন ফলে আমি আরো বেশি বলার সুযোগ পেলাম। “এইসময় আমরা শুধুমাত্র ভগবানের ওপর নির্ভর করতে পারি আর দেখি তিনি আমাদের নিশ্চয় কিছু শিক্ষা দিচ্ছেন। যদি আমরা আধ্যাত্মিক চেতনা ও মূল্যবোধ নিয়ে জীবনযাপন করতে পারি তবে আর কখনো কাম, ক্রোধ ও লোভ দ্বারা প্রভাবিত হবো না।
হ্যাঁ, তিনি সম্মত হয়ে আরো বলেন, “যীশু বলেছেন, তুমি প্রতিবেশীকেও নিজের মতো ভালবাসো।”
কিছুক্ষণ পর তিনি বললেন, “দক্ষিণ আফ্রিকা কত সুন্দর দেশ। উষ্ণ, সুন্দর আবহাওয়া, বন্ধুত্বপূর্ণ জনগণ, নানা সংস্কৃতি, একটি পুর্ণাঙ্গ দেশ, যদি এই দেশে সন্ত্রাস না থাকত তাহলে দেশটি স্বয়ংসম্পূর্ণ হতো”।
কোথাও পরিপূর্ণতা নেই
আমি এটা জেনে হাসলাম যে, এই জড় জগতে পৃথিবীর কোথাও স্থায়ী শান্তি নেই। যেখানেই থাকি না আমরা হতাশা ও নানা সমস্যায় জর্জরিত, ছায়ার মধ্যে এটি সর্বদা লুকায়িত আছে। জন্ম, মৃত্যু, জরা ও ব্যাধি সকলের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। মায়া শক্তির প্রভাবে বাস্তবতা আমাদের কাছ লুকায়িত থাকে এবং আমরা চিরকাল বাঁচব আর ইন্দ্রিয় ভোগ করতে থাকবো। এই সিন্ধান্তেই মশগুল থাকি। বাস্তবতা হলো আমরা চিন্ময় শরীর। আর প্রকৃত প্রেম শুধুমাত্র ভগবানের সাথে প্রেমময় সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমেই পেতে পারি। এটাই একমাত্র চিরস্থায়ী বস্তু যা আমাদের সাথে চিরকাল থাকবে আর সব কিছুর অস্তিত্ব একদিন বিলীন হয়ে যাবে।
মায়া শক্তি প্রভাবে বাস্তবতা আমাদের কাছে লুকায়িত থাকে এবং আমরা চিরকাল বাঁচব আর ইন্দ্রিয় ভোগ করতে থাকবো। এই সিন্ধান্তেই মশগুল থাকি। বাস্তবতা হল আমরা চিন্ময় শরীর আর প্রকৃত প্রেম শুধুমাত্র ভগবানের সাথে প্রেমময় সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমেই পেতে পারি। এটাই একমাত্র চিরস্থায়ী বস্তু যা আমাদের সাথে চিরকাল থাকবে আর সব কিছুর অস্তিত্ব একদিন বিলীন হয়ে যাবে ।
তার মানে এই নয় যে, এই জড় জগৎ মূল্যহীন। এটি একটি মহৎ উদ্দেশ্যে তৈরি সেটি হলো, যেন আমরা জড়বাসনা ত্যাগ করে ভগবানের কাছে আত্মসমর্পণ করি। দেখতে মনে হবে যেন কৃষ্ণ নিজ হাতে আমাদের নতুন রুপে তৈরি করছে এবং জীবনের নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের শিক্ষা দেন আমরা যেন কৃষ্ণের প্রতি আরো বেশি অগ্রসর হই। আমাদের আরো মনে রাখতে হবে যে, এই কষ্টের কারণে আমাদের জড়জগৎ, তা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হবে আর এজন্য আমাদের উচিত মায়ার হাত থেকে মুক্তি পেতে কৃষ্ণের শরণাপন্ন হওয়া। চৈতন্য মহাপ্রভু চৈ.চ. মধ্য ২২/৩১ কৃষ্ণকে সূর্যকিরণের সাথে আর মায়াকে অন্ধকারের সাথে তুলনা করেছেন।
যেখানে আলো আছে সেখানে মায়ার কোনো স্থান নেই। যত শীঘ্রই আমরা কৃষ্ণভাবনামৃত হবো, মুহূর্তেই অন্ধকার রূপী মায়ার প্রভাব বিলিন হয়ে যাবে।
হরেকৃষ্ণ মন্দির ও কেন্দ্রসমূহ আধ্যাত্মিক সূর্যকিরণের মতো, যা মানুষকে তার প্রকৃত চিন্ময় স্বরূপ সম্পর্কে, কৃষ্ণের সাথে আমাদের সম্পর্ক ও আমাদের দুঃখের কারণগুলো কিভাবে বিনষ্ট করে তা থেকে রেহাই পাওয়া যায় তা সম্পর্কে শিক্ষা দেয়। সর্বোপরি সেই সব মানুষকে আশা ও আশ্রয় দিয়ে থাকে যারা নিজেদের নিয়ে বিভ্রান্ত ও দিশেহারা হয়ে পড়ে। বিভিন্ন আধ্যাত্মিক অনুশীলন যেমন- হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ, প্রবচন শ্রবণ, প্রসাদ বিতরণ, বিভিন্ন উৎসবে অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা নিজেদের পরিশুদ্ধ করে তুলতে পারি। যখন হৃদয়ের পরিবর্তন হবে তখনই ঐক্য, প্রশান্তি, সৌহার্দ, ভ্রাতৃত্ব ও সন্ত্রাসমুক্ত পৃথিবী গড়া সম্ভব হবে।
যখন আমি ডাক্তারের সাথে কথা বলছিলাম তখন লাউড স্পিকারে বিচারকের কণ্ঠ শুনতে পেলাম। তিনি বলেছিলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষের জন্য অস্কার পিস্টোরিয়াসের মামলাটি ছিল সতর্কবার্তা। যার মাধ্যমে সমগ্র দেশ তথা বিশ্ব জগতের বাস্তবতা দেখতে পাবে। আমি আবার ব্রহ্মাজীর একটি কথা স্মরণ করলাম যা শ্রীল প্রভুপাদ প্রায়ই উদ্ধৃতি দিতেন, যদি কেউ সর্বতোভাবে ভগবানের চরণে আশ্রয় গ্রহণ করে, যিনি জগতের সমস্ত জীবের তথ্য সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডের একমাত্র আশ্রয়, যিনি মুর নামক দানবের হন্তা মুরারী নামে ভক্তগণের কাছে বন্দিত তবে এই ভবসমুদ্র তার কাছে গো-স্পদ তুল্য হবে। সে অনায়াসে এই ভবসমুদ্র অতিক্রম করে যাবে। অন্তিমে সে বৈকুণ্ঠে গমন করবে, যেখানে কোনো কুণ্ঠা নেই, নেই প্রতি পদে পদে বিপদ।
প্রশান্ত মনে আমি ডাক্তারের চেম্বার হতে বেরিয়ে এসে অনুধাবন করলাম “জীবন অতি ক্ষুদ্র, কিন্তু জীবনের প্রতি পদে পদে বিপদ। আমাদের যে বিষয়টির ওপর সর্বোচ্চ জোর দেওয়া উচিত তা হলো, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যিনি সকলের বন্ধু ও পরম সুহৃদ তার সাথে প্রেমময় সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে প্রতি পদক্ষেপে বিপদসঙ্কুল জড় জগৎ হতে মুক্ত হয়ে আমাদের নিত্য আলয়ে ফিরে গিয়ে তার সাথে মিলিত হওয়া।
লেখিকা পরিচিতি : নিকুঞ্জ বিলাসিনী দেবী দাসী শ্রীমৎ গিরিরাজ স্বামী মহারাজের একজন শিষ্যা। তিনি তার স্বামী ও দুই সন্তানসহ দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে থাকেন। তিনি ডারবানে অঞ্চলিক ভাবে প্রচারিত হরেকৃষ্ণ পত্রিকায় নিয়মিত লেখক। তিনি অনেকগুলো বই রচনা করেছেন যা প্রকাশের পথে আছে।