শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩, ১০ চৈত্র ১৪২৯

পৃথিবীর আশ্চর্যময় রান্নাঘর

প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০২২ | ৭:৩৫ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২২ | ৭:৩৫ পূর্বাহ্ণ
পৃথিবীর আশ্চর্যময় রান্নাঘর

রামেশ্বরামে ভগবান শ্রী বিষ্ণু স্নান করেন, বদরিনাথে তিনি ধ্যানে মগ্ন থাকেন, পুরীতে তিনি ভোজন করেন এবং দ্বারকাতে তিনি তার বিশ্রাম কার্য সম্পাদন করেন। তাই এ পুরী ধামের রান্নাঘরটি মহাপ্রসাদের বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। এখানে মহালক্ষ্মী স্বয়ং ভোগ রান্না করে। থাকেন। অন্যরা সকলে তার সেবক হয়ে তাকে সাহায্য করেন। এ ভোগ সমূহ প্রথমে ভগবান শ্রী জগন্নাথদেবকে দেয়া হয় পরে দেবী বিমলাকে এ প্রসাদ নিবেদন করা হয়। কেননা জগন্নাথকে নিবেদনের পর বিমলা দেবীকে দিলেই এটি মহাপ্রসাদ হয় অন্যথা এ প্রসাদ মহাপ্রসাদ বলে স্বীকৃত হয় না। রথযাত্রার পূর্বে যখন ভগবান জগন্নাথদেব অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখন মাতা লক্ষ্মী দেবী প্রসাদ রন্ধনে মনোনিবেশ করেন না, ফলে তখন প্রসাদ অল্প স্বাদের হয়ে থাকে। রথযাত্রার সময় ভগবান জগন্নাথদেব তার মাসির বাড়ী শ্রী গুন্ডিচা মন্দিরে গমন করেন। তখন মাতা লক্ষ্মী দেবীর রন্ধনের কোন আগ্রহই থাকে না। এই কারণে উক্ত দিনগুলোতেও প্রসাদ অল্প স্বাদের হয়। কথিত আছে যে, মাতা লক্ষ্মী দেবী যদি প্রসাদ রন্ধনের প্রস্তুতিতে অসন্তুষ্ট হন, তবে মন্দিরের ময়দানে আশ্বর্যজনকভাবে একটি কুকুর দৃষ্টিগোচর হয়। যদি কুকুরটিকে দেখতে পাওয়া যায় তবে সেই মুহুর্তে সকল খাবার ফেলে দেয়া হয় এবং পুনরায় প্রস্তুতি শুরু করা হয়। এই কুকুরটি হলেন কুটুমচন্ডি। যে ভোগের পবিত্রতা নিশ্চিত করে। শ্রীমন্দিরের রান্নাঘরে ৪ প্রকারের রান্না করা হয়। সেগুলো হল ভিমপাক, নলপাক, নুরীপাক এবং গৌরিপাক । ড্রিমপাকের আইটেম হচ্ছে বদটিয়ানা, গুদাখুর, পকল নদীরস, পুরাপিঠা, বিরিপিঠফা, এবং গুদাকাঞ্জি। নলাপাকা রান্নায় আইটেম হচ্ছে শকর, টিয়ানলপার, অদঙ্গা এবং বিভিন্ন প্রকারের মিষ্টি পানীয়। সুরীপাকে রয়েছে মহুরা, দেশী আলু ভাজা, আদাপাচিদি, খিলবঙ্গ এবং বিভিন্ন প্রকারের পিঠা (কেক), গুরিপাকে রয়েছে মুগটিয়ানা, লিটিয়া, কোসালা, এবং মধুর ললিতা সগা আইটেম। যেখানে ৪ প্রকারের অন্ন রান্না করা হয়। সেগুলো হল সলিঅন্ন, খিড়অন্ন, দধিঅন্ন এবং শীতল অন্ন। সোনাখিলা চাল দিয়ে ঘি সহ অন্যান্য দ্রব্যাদি সহযোগে সলিঅন্ন তৈরি করা হয় । খিড়অন্ন তৈরি করা হয় বাসুমতি চাল, গরুর দুধ, ঘি এবং খিড় লবন মিশ্রিত করে দধি অন্ন প্রস্তুত করা হয় চালের সাথে দধি দিয়ে চালের সাথে খিড় তাড় রস এবং খিড় লবন মিশ্রিত করে শীতল অন্ন তৈরি করা হয়। এখানে রান্নার আর একটি বিশেষত্ব এই যে, মাটির ৫টি পাত্রকে একত্রে একটির উপর অন্যটি সারিবদ্ধভাবে বসানো হয়। কিন্তু তা স্বত্বেও সবার উপরে অবস্থিত পাত্রটির রান্না নিচের পাত্রগুলোর পূর্বেই সমাপ্ত হয়। রান্নাঘরে জল সরবরাহের জন্য মন্দির প্রাঙ্গনে ২টি কূপ রয়েছে। কূপ দুটিকে যথাক্রমে গঙ্গা এবং যমুনা বলা হয় যা রান্নাঘরের নিকটে অবস্থিত। কূপগুলোর প্রস্থ ১০ ফুট এর চেয়ে বেশি। এবং গভীরতা ১০০ ফুট। এখানে প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার লোক প্রসাদ পায় কিন্তু বড় কোন উৎসবে প্রায় ১০ মিলিয়ন লোক প্রসাদ পেতে পারে। ভগবান জগন্নাথদেবের রান্নাঘরকে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ রান্নাঘর যেটি কোন ধরনের পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়ায় মহাপ্রসাদ এত বিপুল সংখ্যক মানুষের মাঝে সরবরাহ করতে সক্ষম। অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় এই যে ভোগ সমূহ যখন চুল্লী থেকে বের করা হয় তখন ঐ পাত্রগুলি থেকে কোনরকম সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ে না কিন্তু যখনই এ ভোগ জগন্নাথকে নিবেদন করা হয় তখন খুব আশ্চর্যজনকভাবেই এর সুগন্ধ পুরীর সমুদ্র সৈকত I পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। জয় জগন্নাথ কি জয়! জগন্নাথ দেবের মহাপ্রসাদ কি জয়!


চৈতন্য সন্দেশ জুলাই ২০০৮ প্রকাশিত
সম্পর্কিত পোস্ট

About csbtg