শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩, ১০ চৈত্র ১৪২৯

ডিজিটাল যুগে শিশুরা কি নিরাপদ ?

প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১০:৩৯ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১০:৪০ পূর্বাহ্ণ
ডিজিটাল যুগে শিশুরা কি নিরাপদ ?

এখন চলছে তথ্য প্রযুক্তির যুগ। প্রযুক্তির নিত্যনতুন উপস্থাপনার উৎকর্ষতায় সবাই দিশেহারা। প্রযুক্তির কমার্শিয়াল ব্যবহারের কারণে ক্ল্যাসিকাল হারিয়ে যাচ্ছে। ক্ল্যাসিকেলের এখন আর কদর নেই তেমন একটা। তাই এখন রিমিক্স, ডিজিটালের বাজার রমরমা। সবার মুখে ডিজিটাল, ডিজিটাল স্লোগান। সবকিছুই যেন ডিজিটালময়। সরকারও ডিজিটাল। বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু আমাদের ভাবা দরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের ডিজিটাল শিশু কিশোররা কেমন হতে পারে? ইন্টারনে এবং মোবাইল এর আগ্রাসনে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিশু-কিশোররা কতটা নিরাপদ? যদিও আমাদের দেশের শিশুদের টেকনোলজি ব্যবহারের হার পারিপার্শ্বিক দেশের তুলনায় কম কিন্তু তা এক ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির মত। যে কোন সময় সেই আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ ফেটে তপ্ত লাভা বের হতে পারে। এখন টাইম ম্যাগাজিনের মত আর এক বিশ্ববিখ্যাত ম্যাগাজিন “রিডার্স ডাইজেস্ট” অবলম্বনে আমরা জানব যে, উন্নত ডিজিটাল দেশগুলোতে শিশু-কিশোরদের মনে টেকনোলজি কতটা প্রভাব বিস্তার করছে? মনিকা, যুক্তরাষ্ট্রের এক বিখ্যাত স্কুলে লেখাপড়া করে। সে নাচের ক্লাসে পোশাক পাল্টানোর সময় তার অন্যান্য বান্ধবীদের কিছু আপত্তিকর ছবি মোবাইল ফোনে ধারণ করে। পরে সে কৌতুকের ছুলে সেই ছবিগুলো অপর এক সহপাঠীকে পাঠায়। এভাবে সমগ্র স্কুলে সেই ছবিগুলো ছড়িয়ে পড়ে। একসময় একজন অভিভাবক তার ছেলের কম্পিউটারে সেই ছবিগুলো দেখে স্কুল কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ করেন। এরপর স্কুল কর্তৃপক্ষ মনিকাকে বহিস্কার করে। উল্লেখ্য, মনিকা যখন বহিষ্কৃত হচ্ছিল তখন সবেমাত্র তার শিশু দাঁত ঝড়ে পড়তে শুরু করেছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে এক ১৫ বছরের মেয়ে এবং ১৮ বছরের ছেলেকে পুলিশ আটক করে ইন্টারনেটে তাদের অশ্লীল ছবি প্রদর্শনের কারণে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের “ন্যাশনাল ক্যাম্পেইন টু প্রিভেন্ট টিন” নামক রাষ্ট্রীয় সংগঠনের জরিপে দেখা যায় যে, যুক্তরাষ্ট্রে ১১ শতাংশ কিশোরী এবং ১৮ শতাংশ কিশোর তাদের বন্ধুদের কাছে তাদেরই গোপনীয় ছবি আদান প্রদান করে। আবার তাদের মধ্যে ৩৯ শতাংশ কিশোর ই-মেইলের মাধ্যমে নোংরা ছবি, ভিডিও আদান প্রদান করে থাকে। এছাড়া ওয়েভ ক্যামেরা ও ইন্টারনেটের কল্যাণে টিনএজাররা খুব সহজেই ভাবের | আদান প্রদান করতে পারে। এই কারণেই আমেরিকাসহ উন্নত দেশসমূহে কিশোর অপরাধের হার অবিশ্বাস্য দ্রুত গতিতে বেড়ে চলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের “ন্যাশনাল সেন্টার ফর হেলস্ স্টাটিক্‌টিস মতে ২০০৭ সালে ৯ বছর থেকে ১২ বছরের শিশুদের মধ্যে
যৌনতা ছড়ানোর হার ছিল ৪৭.৮ শতাংশ। আমাদের দেশেও বর্তমানে সাইবার  ক্যাফেগুলোতে স্কুল ছাত্রদের দেখা যায়। তাদের বেশিরভাগই স্কুলে যাওয়ার কথা বলে বন্ধুদের সাথে ক্যাফেগুলোতে ভীড় করে। লেখাপড়ার গুরুত্বপূর্ণ স্বর্ণালী সময় অপচয়  করে এসব কোমল মনের শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেটে অবাধ যৌনতা ছড়ানো ওয়েবসাইট কিংবা চ্যাট প্রোগ্রামে ঘুরে বেড়ায়। যদি এভাবে চলতে থাকে তবে অচিরেই ভাইরাসের মত সমগ্ৰ স্কুল শিক্ষার্থীদের মাঝে ইন্টারনেট পর্ণোগ্রাফি ছড়িয়ে যাবে। এছাড়া অনেক কিশোররা তাদের বাসায় সুযোগ না পেয়ে সাইবার ক্যাফেতে এসে সিডি বা ডিভিডি ব্যবহার করে নীল ছবি দেখে। শিশু-কিশোররা যদি এসব উত্তেজক নোংরা মুভি দেখে তাহলে সেটা তাদের কোমল মনে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে তা অভিভাবক মহলের বোধগম্য হওয়া উচিত । অতএব সাবধান, হে আদরের সন্তানের অভিভাবকগণ! আপনাদের জানা উচিত, আপনার সন্তান বাসা থেকে বের হয়ে স্কুলে যাচ্ছে কি? সে কি বাজে বন্ধুদের সাথে মিশে সাইবার ক্যাফ বা আড্ডায় সময় অপচয় করছে? আপনার সন্তানের কম্পিউটারে গোপনীয় কিছু কি আছে? সে মোবাইল কি সঠিক উপায়ে ব্যবহার করছে? নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লরেন্স বালটার বলেন “শিশু-কিশোররা সাধারণত বিচার বিবেচনা করে কোন কাজ করে না। তাই এক্ষেত্রে শিশুর পিতা-মাতাকে সচেতন হওয়া উচিত।” একমাত্র সঠিক পারমার্থিক শিক্ষাই একটি শিশু বা কিশোরকে নৈতিক অবক্ষয় থেকে রক্ষা করতে পারে। তাই পিতা মাতার উচিৎ শিশুদের সাথে বন্ধুভাবাপন্ন হওয়া এবং তাদেরকে ধর্মীয় সদুপদেশ দেওয়া। টিভিতে তথাকথিত নাটক, সিনেমা, মারপিটের দৃশ্য, টেলিফিল্ম, পূর্ণ দৈর্ঘ্য চলচিত্র দেখা থেকে বিরত থাকা তথাকথিত কবি/ সাহিত্যিক/ লেখক/ লেখিকাদের সস্তা উপন্যাস, কবিতা, গল্পবই পড়া থেকে বিরত থাকা। বিজাতীয় সংস্কৃতি বর্জন করে দেশীয় সংস্কৃতি অভ্যাস করা। উত্তেজক খাদ্য খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। মন্দিরে গিয়ে কীর্তন, ধর্মীয় আলোচনা শ্রবণ, হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপকীর্তন করা শিশুদের জন্য খুবই উপযোগী। এতে তার স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি ঘটে এবং নৈতিক অধঃপতন হওয়ার আশংকা থাকে না বললেই চলে। বিশেষত মিডিয়া আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সন্তানদের অধঃপতন রোধে অভিভাবকদের প্রতি কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস :

• সাবধানের মার নেই। তাই প্রতি মুহূর্তে সচেতন থাকুন আপনার সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কেন যাচ্ছে, কি করছে, ঠিকমত লেখাপড়া করছে কিনা?
• তাদের সাথে বন্ধুভাবাপন্ন হয়ে পারমার্থিক সেবায় নিয়োজিত করুন।
● বাসায় ইন্টারনেট থাকলে উরটহমভ উরটষফণর নামক ব্রাউসিং সফটওয়্যার


চৈতন্য সন্দেশ আগস্ট-২০০৯ইং প্রকাশিত,

সম্পর্কিত পোস্ট

About csbtg