জগন্নাথের নিকট প্রেমপত্র

প্রকাশ: ৪ জুলাই ২০১৯ | ৭:৩৭ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ৪ জুলাই ২০১৯ | ৭:৩৮ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 1004 বার দেখা হয়েছে

জগন্নাথের নিকট প্রেমপত্র

 

একবার পুরীর এক পান্ডা জয়পুরের মহারাজের সঙ্গে দেখা করতে গেল। রাজা ও রানী মহাপ্রসাদ পেয়ে খুব খুশী। এদিকে রাজকন্যা বিষ্ণুপ্রিয়া তার মহলে মহানন্দে জগন্নাথ দেবের জন্য একটি চিঠি লিখলেন ও পান্ডা টি বিদায় নেওয়ার সময় একটি রত্ন পেটিকা দিয়ে বললেন এটি যেন সে পুরী ফিরে গিয়ে জগন্নাথ দেব কে অর্পন করে এবং বিদায়ের সময় কিছু স্বর্নমুদ্রা পারিতোষিক হিসেবে দেওয়া হল।

আনন্দিত মনে পান্ডা পুরী ফেরার পথে ভাবল নিশ্চয়ই ওই পেটিকাতে বেশ কিছু রত্নরাজি আছে যা রাজকুমারী তাকে দিয়েছেন জগন্নাথ দেব কে দেওয়ার জন্য এবং সেই মুহূর্তে তাকে লোভ গ্রাস করল এবং ওর মনে হল যদি ও এই রত্ন নিজের কাছে রেখে দেয় তাহলে কেউ জানতে পারবে না কারন কেউ প্রত্যক্ষ সাক্ষী নেই।

যা ভাবা তাই কাজ। পান্ডা পেটিকা খুলে দেখল সেখানে একটুকরো কাগজ রাখা আছে!
ক্রুদ্ধ পান্ডা তখন ভাবল সে বোকামি করেছে এতদূর পথ এই পেটিকাটিকে শুধু শুধু বয়ে নিয়ে আসতে, তাই কাগজের টুকরোখানা সে ছিঁড়ে ফেলল। সেই রাতেই জগন্নাথদেব দর্শন দিয়ে তাকে বললেন,”মূর্খ,তুই তোর পারিশ্রমিক পেয়েছিলি,তবে যে কাজ করবি বলে স্বীকৃত হয়ে এসেছিল,সে কাজ করিসনি কেন? আমার জন্য যে চিঠি তুই পথের মাঝে ছিঁড়ে ফেলেছিস তার চেয়ে মূল্যবান সম্পদ আমার রত্নভান্ডারে নেই।কাল সকালে মন্দিরে গিয়ে দেখিস আমি সেই পত্র কে কোথায় স্থান দিয়েছি!”

পরেরদিন সকালে পান্ডাটি মন্দিরে গিয়ে দেখল ছেঁড়া চিঠি মোড়া হয়ে জগন্নাথের বুকের হারের পদকের সঙ্গে আটকানো রয়েছে।
উপস্থিত অন্যান্য পান্ডারা কেউই যখন এর রহস্য বুঝতে পারছিল না তখন দোষী পান্ডাটি সব কথা স্বীকার করে ভগবানের কাছে বারংবার ক্ষমা চাইতে লাগল।

সেবকরা চিঠিটি খুলে দেখল রাজকুমারী একটি অপূর্ব শ্লোক লিখেছেন। লেখা আছে-
“রত্নাকরস্তব গৃহং গৃহিনী চ লক্ষ্মী
কিং দেয়মস্তি ভগবতে পুরুষোত্তমায়।
আভীরগোপললনাহৃতমানসায়
দত্তং মনস্তদনু মে কৃপয়া গৃহাণ।”
শ্লোকটির অর্থ হল”শ্রীক্ষেত্রে গিয়ে সকলেই তোমাকে কিছু না কিছু দেয়।আমিও ভেবেছি আমার ভালবাসার নিদর্শন হিসাবে তোমাকে কিছু না কিছু দেওয়া উচিত।কিন্তু তোমাকে কি দেব সেটাই ঠিক করতে পারছিলাম না। তুমি রত্নাকরে শয়ন কর,তাই রত্নের কোন অভাব নেই তোমার।তাই সে জিনিষ তোমায় দেওয়া যাবে না।স্বয়ং লক্ষ্মী তোমার গৃহিনী তাই কোনও ধনের প্রয়োজন তোমার নেই।তাহলে তোমাকে কি দিতে পারি? অনেক ভেবে দেখলাম তুমি যখন বৃন্দাবন থেকে মথুরা চলে গেলে তখন গোপীরা তোমার মনটি চুরি করে নিয়েছিল।ঐ একটি জিনিষের তোমার অভাব আছে। সেই অভাব পূরণ করার জন্য আমার মন আমি তোমায় দিলাম,কৃপা করে গ্রহন করো।
এই ভাবেই সকল ভক্ত হৃদয়ের ঐকান্তিকী কামনা ফুটে উঠেছিল রাজকুমারী বিষ্ণুপ্রিয়ার চিঠিতে আর তিনিও সদা সর্বদা হয়ে রইলেন ভক্তের ভগবান। তাঁর দুটি প্রসারিত বাহু ভক্তকে চির আলিঙ্গনে বাঁধতে চায়। আমরা সাক্ষী হলাম এক অমর প্রেমকাহিনীর।

জয় জয় জগন্নাথ!!!

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।