হজম সমস্যা সমাধানের আয়ুবৈদিক উপায়

প্রকাশ: ১৬ জুন ২০২০ | ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ১৬ জুন ২০২০ | ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 909 বার দেখা হয়েছে

হজম সমস্যা সমাধানের আয়ুবৈদিক উপায়

গান্ধারী দেবী দাসী: সমগ্র পৃথিবী জুড়ে বহু মানুষের রয়েছে হজমগত সমস্যা। এই আটিকেলে আমি এই সমস্যার প্রতিকারের জন্য বিভিন্ন চিকিৎসার কথা উল্লেখ করব। আমরা শুরুতে অধিক গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধিতিসমূহ নিয়ে বলব এবং পরবর্তী কম গুরুত্বপূর্ণ পূর্ণ বিষয়সমূহ শেষের দিকে আলোচনা করব। আপনারা চাইলে যে কোন ১টি পদ্ধতি কিংবা সব চিকিৎসা পদ্ধতি যাচাই করতে পারেন। যাই হোক যাদের শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর তারা নিমোক্ত পদ্ধতি সমূহ পরীক্ষা করার পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিবের্ন । আপনারা নিমোক্ত পদ্ধতিসমূহ তখনই প্রয়োগ করবেন যদি আপনাদের বুঝতে সক্ষম হন যে আপনাদের স্বাস্থ্যর পক্ষে তা ক্ষতিকারক হবে না।
উপবাস থাকুন
গবেষণা মতে, উপবাস হল বহু রোগ তেকে মুক্ত হওয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ চিকিৎসা। সংস্কৃতি অনুসারে প্রত্যেক মাসে ২টি একাদশী উপবাস বিদ্যমান। একাদশী পালন করা পারমার্থিক ও জাগতিক উভয়ক্ষেত্রেই উপকারী। সমপূর্ণ উপবাস, এমনকী জল গ্রহণ না করে ও, থাকলে আমাদের পরিপাক তন্ত্র সমপূর্ণ বিশ্রাম লাভ করে এবং এটি আয়ুবর্ধক। উপবাসী থাকার মাধ্যমে আমাদের পরিপাকতন্ত্র শাক্তিশালী হয়। মধ্যম স্তরের হজমের সমস্যা শুধুমাত্র সঠিকভাবে একাদশী পালনের মাধ্যমে দূরীভূত হয়, যদি নিজর্লা উপবাস থাকা আপনার পক্ষে সম্ভব না হয় তবে, স্বল্প জল কিংবা ফলো জুস পান করতে পারেন। একাদশী সম্পূর্ণ উপবাস থাকা সবসময় সহজ নয় কারণ প্রায় সব ইস্কন মন্দিরে একাদশী হল মহাভোজের দিন। উদাহারণস্বরুপ একাদশী দিনগুলোতে সম্পূর্ণ উপবাস থাকার পরিবর্তে ভক্তগণ পঞ্চরবিশস্য বর্জন করে তার বিকল্প হিসেবে ভাজা আলাু গ্রহণ করে, এক্ষেত্রে একটি যুক্তি দেওয়া হয় যে, ইস্কন যেহেতু একটি প্রচারমুখি সংগঠন এবং ভক্তগণ খুবই ব্যস্ত থাকেন তাই তাদের যথাযথ খাবার প্রয়োজন হয়। যাই হোক শাস্ত্রমতে একাদশীতে আমাদের অধিক শ্রবণ কীর্তনে মনোযোগী হতে এবং যতটুকু সম্ভব খাওয়া থেকে নিবৃত্ত থাকার কথা বলা হয়েছে।
যদি সম্পূর্ণ উপবাস থাকা সম্ভব না হয় তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপবাস কিংবা একবেলা আহার ও আমাদের সম্পূর্ণ ফলাফলের ৫০% প্রদান করবে এবং আমাদের স্বাস্থ্যর সুরক্ষা প্রদান করবে।
পূর্ণ হজমের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা
খাওয়ার পূর্বে হজমে সহায়তা সৃষ্টিকারী এনজাইম পিল গ্রহণ করা যেতে পারে, এগুলো খাওয়ার পূর্বে গ্রহণ উপযোগী, এগুলো আপনি কোন হেলদ স্টোর কিংবা ঔষধের দোকানে পাবেন।
আদা কুচি কঠে কেটে সেগুলো লেবুর রস, লবণ এবং হলুদ মিশ্রিত জলে মেশাতে হবে। সেখানে যথেষ্ট পরিমাণ জল দিতে হবে যেন আদা কুচিগুলো জলে নিমগ্ন থাকে। এবার প্রত্যেক খাওয়ার পূর্বে সেই মিশ্রন থেকে কিছু আদার টুকরো চুষণ করে খান সতেজ আদা হজম বধর্ক তাই এটি রান্নায় বেশি পরিমাণে ব্যবহার করা উচিত। অন্যান্য খাদ্য গ্রহনের পূর্বে বেশি পরিমাণ অঙ্কুরিত মুগডাল গ্রহণ করুন। ডালগুলো চিবিয়ে খান। এই কাঁচা মুগডাল হজম উপযোগী এনজাইম থাকে।  মেীরি বা শুলফা জাতীয় সুগন্ধী লতার চা খান। ৩ থেকে ৪ কাপ জলে ১ চামচ বীজ রেখে সিদ্ধ করুন। এরপর খাবারের মাঝে অথবা খাবারের শেষে গ্রহণ করুন।
লবযুক্ত লাচ্ছি পান করুন খাবার গ্রহণের সময়। আপনি চাইলে সেই লাচ্ছিতে ১ চিমটি ভাজা জিরা এবং একটু লবণ যোগ করতে পারেন। এটি ভারতের গুজরাটে ও অন্যান্য অনেক স্থানে জনপ্রিয় । প্রত্যেক খাবার গ্রহণের শেষে বিশেষ পানীয় (MUKHAVA)তথা মসলা মিশ্রণ খেতে পারেন। এটি একটি জনপ্রিয় খাবার এবং বিভিন্ন মন্দিরে বিগ্রহকে এটি নিবেদন করা হয়। এটি আমাদের হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে।  আপনি নিচের উপাদানসমূহের মিশ্রনের মাধ্যমে কার্যকর তৈরী করতে পারেন।
তিল বীজ, ধনিয়া বীজ, মেীরি বীজ এবং শুলফা বীজ (যাদের গুরুতর হজমের সমস্যা তারা অল্প পরিমাণ ব্যবহার করবেন) প্রত্যেক বীজকে আলাদাভাবে লবণ ও হলুদ মিশ্রিত জলে রাখতে হবে এবং পরে শুকাতে হবে। এরপর সবগুলো আলা সিদ্ধ করে পরে হবে সব বীজকে।
বদহজমের প্রতিকার
আমাদের বহু বদহজমের সমস্যা সৃষ্টির জন্য আমাদের অনুপযোগী খাদ্যভ্যাস দায়ী। উদাহারণস্বরূপ, বিশেষত রাত ৮ টার পর খাবার গ্রহণ। এতে করে ঘুমানোর পূর্বে খাবার পুরোপুরী হজম না হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেই খাবারগুলো তখন দেহ আম (বিষাক্ত মল) এ পরিণত হয়। যাদের মল নিষ্কাষণ সঠিক ভাবে হয় না। তাদের ক্ষেত্রে, এই আম রক্তের সাথে মিশ্রিত হয়। এটি শরীরে নানাবিধ রোগের উপদ্রব ঘটায়। তাই সবোর্ত্তম স্বাস্থ্য লাভের জন্য রাতে এক গ্লাস দুধ ব্যতীত অন্য কোন খাবার গ্রহণ করা উচিত নয়।
সুষম খাদ্য গ্রহণও অধিক গুরুত্বপূর্ণ। উদাহারণস্বরূপ, রান্না করা খাবারের সাথে সাথে কাঁচা ফলমূল তথা খাবার গ্রহণ উপযোগী নয়। রান্না করা খাবার গ্রহণের পূর্বে কাঁচা খাদ্য যেমন সালাদ গ্রহণ করা উচিত। একটি ভারী খাবার গ্রহণের পর ফলমূল গ্রহণ করা অনুচিত।
ফলমূল অন্যকোন খাবারের সাথে গ্রহণ না করে আলাদা সময়ে গ্রহণ করা ভালো বিশেষত প্রাতরাশে অথবা দুইটি খাবার গ্রহণের মধ্যবর্তী সময়ে। যেকোন খাবার যথেষ্ট সময় দিয়ে চাবানো গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিক দ্রুতগতির জীবনযাত্রায় অনেক মানুষ তাদের খাবারসমূহ ভালোভাবে চর্বন করে না।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্বভাব হল ব্রহ্মমুহুর্তে (সূর্য উদয়ের এক বা দেড় ঘন্টা পূর্বে) কিংবা ব্রহ্মমুহুর্তের পূর্বে শয্যা ত্যাগ। এটি ঠিক ভোর ৪ টা থেকে ৫ টার মধ্যে। পাশ্চাত্য দেশসমূহে বছরের বিভিন্ন সময়ে সূর্য উদয়ের সময়ের পরিবর্তন ঘটে। ঠিক একইভাবে প্রকৃতি সূর্য উদয়ের তারতম্যর সাথে সাথে আমাদের শরীরের বিভিন্ন তন্ত্রের কার্যাবলীর সামঞ্জস্যতা বিধান করে। উদাহারণস্বরূপ, সূর্য উদয়ের পর সময় যত বেশি হতে থাকে আমাদের শরীরের মল তত বেশি শক্ত হতে থাকে। তাই সূর্য উদয়ের পরে ঘুম থেকে জাগ্রত হলে শরীরের রোগের উপদ্রব ঘটে কারণ আমাদের শরীরের মলসমূহ উৎপন্ন হওয়ার পর পুনরায় রক্তে মিশ্রিত হওয়ার যথেষ্ট সময় লাভ করে এবং এই বিষসমূহ আমাদের দেহের সকল অঙ্গে সঞ্চালিত হয় এমনকি আমাদের মতিষ্কেও।
অনেক মানুষ উদাসীন জীবযাত্রায় অভ্যস্ত বলে তার অস্বাস্থ্যবান এবং তারা পরিবেশে হজম সর্ম্পকিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হন। হালকা ব্যায়াম সেই সাথে যোগাভ্যাস, সুস্থ স্বাস্থ্য রক্ষায় উপযোগী। এছাড়াও সকালে ঠান্ডা জলে স্নান করলে দেহ সজীবতা লাভ করে এবং এটি আমাদের স্নায়ুতন্ত্রকে শক্তিশালী করে এবং অনাবশ্যক সকল প্রকারের রোগ থেকে আমাদের দূরে রাখে। 
আমাদের জীবযাত্রার অভ্যাসের উন্নয়ন এবং উপরের করেকটি পরামর্শ নিজেদের জীবনে প্রয়োগের মাধ্যমে আমরা সবর্দাই স্বাস্থ্যবান থাকতে পারব এবং আমাদের জাগতিক ও ভক্তিমূলক নিত্যকর্মসমূহ করার জন্য আমরা সুস্থ থাকতে সক্ষম হব।

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।