সরস্বতী, কৃষ্ণ কোথায়?

প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ৬:৪২ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ৬:৪২ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 252 বার দেখা হয়েছে

সরস্বতী, কৃষ্ণ কোথায়?

একবার এক বিচারপতি গভীর শ্রদ্ধা সহকারে শ্রীল প্রভুপাদকে একটি চন্দন কাঠের মালা দিয়েছিলেন এবং শ্রীকৃষ্ণের একটি ছোট্ট মূর্তি দিয়েছিলেন। তারপর শ্রীকৃষ্ণ-বিরহে গোস্বামীরা কিরকম আকুল হয়েছিলেন, তা একটি সুন্দর দৃষ্টান্তের মাধ্যমে শ্রীল প্রভুপাদ সকলকে বুঝিয়েছেন। শ্রীল প্রভুপাদ তাঁর আমেরিকান সেক্রেটারী শ্যামসুন্দরের তিন বছরের মেয়ে সরস্বতীর সামনে শ্রীকৃষ্ণের মূর্তিটি ধরে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “সরস্বতী, ইনি কে?” সরস্বতী সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিয়েছিল “কৃষ্ণ”। শ্রীল প্রভুপাদ কিছুক্ষণ মূর্তিটি সরস্বতীর চোখের সামনে ধরেন এবং তারপর সেটি তাঁর পিছনে লুকিয়ে রাখেন। তখন শ্রীল প্রভুপাদ জিজ্ঞাসা করেন “সরস্বতী, কৃষ্ণ কোথায়?” সরস্বতী বুঝতে পারে যে সে শ্রীকৃষ্ণকে হারিয়ে ফেলেছে। তার চোখে মুখে উৎকন্ঠা ফুটে ওঠে। সে চতুর্দিকে দেখতে থাকে-“কৃষ্ণ কোথায়? কৃষ্ণ কোথায়?” কিন্তু সে কোথাও কৃষ্ণকে খুঁজে পায় না। সে তাকায় এবং তাদের পিছনে এবং সর্বত্র খুঁজতে থাকে। কৃষ্ণকে খুঁজে না পেয়ে সে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। শ্রীল প্রভুপাদের গম্ভীর কন্ঠস্বর ঘরে নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করে। “সরস্বতী, কৃষ্ণ কোথায়?” সরস্বতী আবার ঘরের সর্বত্র খুঁজতে থাকে, কিন্তু তবুও কৃষ্ণকে খুঁজে পায় না। তখন একজন ভক্ত বলে ওঠে, “সরস্বতী, কৃষ্ণ কোথায়?” কার কাছে কৃষ্ণ রয়েছে?’

সরস্বতী সপ্রতিভ হয়ে ওঠে; তার চোখ বড় বড় করে, চোখের ভুরু তুলে উল্লসিতভাবে চিৎকার করে ওঠে, “কৃষ্ণ প্রভুপাদের কাছে রয়েছে।” সে তৎক্ষণাৎ ঘুরে শ্রীল পাদপদ্মের দিকে ধাবিত হয়। “কৃষ্ণ প্রভুপাদের কাছে রয়েছে।” শ্রীল প্রভুপাদ পেছন থেকে খুব সাবধানতার সঙ্গে কৃষ্ণের মূর্তিটি সামনে নিয়ে আসেন এবং সরস্বতীর চোখের সামনে ধরেন। “প্রভুপাদের কাছে কৃষ্ণ রয়েছে।”

তারপর হঠাৎ শ্রীল প্রভুপাদ সেই মূর্তিটি সরস্বতীর চোখের সামনে থেকে সরিয়ে নেন এবং আবার জিজ্ঞাসা করেন-“সরস্বতী, কৃষ্ণ কোথায়?” তারপর তিনি সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করেন। সেই মর্মস্পর্শী ভাব বিনিময় দর্শন করতে করতে আমরা সকলেই স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করেছিলাম যে, শ্রীল প্রভুপাদের কাছে কৃষ্ণ আছে এবং যখন তিনি দেখেন যে, আমরা যথার্থ আন্তরিকভাবে কৃষ্ণকে চাইছি, তখন তিনি আমাদের কৃষ্ণ দিতে পারেন। আমরা বুঝেছিলাম যে, শ্রীল প্রভুপাদ আমাদের অন্তরের ভাব জানেন। তিনি সকলের হৃদয়ের কথা জানেন। সরস্বতী যদিও ছিল তিন বছরের একটি শিশু, শ্রীল প্রভুপাদ তার অন্তরের ভাব জানতেন। তিনি জানতেন কিভাবে তাকে কৃষ্ণভাবনায় নিয়োজিত করা যায়।

আমরা দেখেছিলাম, একজন প্রচারকরূপে কিভাবে শ্রীল প্রভুপাদ সবকিছু এবং সকলকে কৃষ্ণভাবনামৃত প্রসারের কাজে নিয়োগ করেছিলেন। শ্রীল প্রভুপাদ আমাদের দেখাতে চেয়েছিলেন কৃষ্ণ-বিরহের অপ্রাকৃত উৎকন্ঠা কিরকম এবং তা দেখাতে গিয়ে তিনি এমন একটি পরিবেশের সৃষ্টি করেছিলেন যে, তিন বছর বয়সের একটি ছোট মেয়ে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে শিক্ষা দিয়েছিল। শ্রীল পভুপাদের কৃপার প্রভাবে ছোট্ট সরস্বতী থেকে শুরু করে  হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি পর্যন্ত সকলেই এই কৃষ্ণভাবনায় সম্পূর্ণরূপে মগ্ন হয়েছিলেন এবং শ্রীকৃষ্ণের সবচাইতে প্রিয় সেবক শ্রীল প্রভুপাদের চরণারবিন্দের প্রতি সম্পূর্ণরূপে আকৃষ্ট হয়েছিলেন।

সেই ঘটনাটি দর্শন করে আমার শ্রীল নরোত্তম দাস ঠাকুর রচিত একটি গানের কয়েকটি লাইন
মনে পড়ে গিয়েছিল—

“কৃষ্ণ সে তোমার, কৃষ্ণ দিতে পার, তোমার শকতি আছে।
আমি তো কাঙ্গাল, কৃষ্ণ কৃষ্ণ বলি, ধাই তব পাছে পাছে ॥”


চৈতন্য সন্দেশ আগস্ট-২০০৯ প্রকাশিত

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।