এই পোস্টটি 310 বার দেখা হয়েছে
কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ
আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের প্রতিষ্ঠাতা-আচার্য
১৯৭৩ সালের অক্টোবর মাসে আমেরিকার লস এঞ্জেলেসে
শ্রীল প্রভুপাদ ও বিজ্ঞানী গ্রেগরী বেনফোর্ডের সঙ্গে কথোপকথনের অংশবিশেষ।
ড. বেনফোর্ড : আপনি অবশ্যই জানেন যে, এই প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য উভয় সমাজে কিছু চিন্তাশীল ব্যক্তি আছেন যারা ভগবৎ তত্ত্ব জ্ঞান সম্পর্কে ‘এগনেষ্টিক’। অর্থাৎ তারা মনে করে, ভগবান যদি চাইতেন যে, তাঁর সম্বন্ধে আমরা আরও বেশী জানি, তাহলে তিনি তার উপায়টা অত্যন্ত সহজ করে দিতেন।
শ্রীল প্রভুপাদ : তাহলে আপনি ভগবান বিশ্বাস করেন না?
ড. বেনফোর্ড : আমি ভগবান অবিশ্বাস করি না, তবে যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি সে সম্বন্ধে যথাযথ প্রমাণ পাচ্ছি ততক্ষণ পর্যন্ত কোন মতামত পোষণ করছি না।
শ্রীল প্রভুপাদ : কিন্তু ভগবান আছেন কি নেই সেই সম্বন্ধে আপনার কি মত?
ড. বেনফোর্ড : তিনি আছেন বলে আমার একটি সন্দেহ আছে। কিন্তু তা প্রমাণিত হয়নি।
শ্রীল প্রভুপাদ : কিন্তু মাঝে মাঝে আপনার মনে হয় যে ভগবান আছেন, তাই নয় কি?
ড. বেনফোর্ড : হ্যাঁ।
শ্রীল প্রভুপাদ : সুতরাং, আপনার দ্বিধা আছে, সন্দেহ আছে, আপনি নিশ্চিত হতে পারেননি। কিন্তু ভগবান যে আছেন সেটা আপনার বিশ্বাস, তাই নয় কি? যেহেতু আপনার জ্ঞান অসম্পূর্ণ তাই আপনার মনে এই দ্বিধা। সেটাই হচ্ছে আসল কথা। তা না হলে ভগবানকে বিশ্বাস করাটাই আপনার স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। কিন্তু যেহেতু আপনি একজন বৈজ্ঞানিক, বিজ্ঞানের ভিত্তিতে আপনি যতক্ষণ পর্যন্ত না উপলব্ধি করছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি তা গ্রহণ করতে পারছেন না। সেটাই হচ্ছে আপনার অবস্থা। কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে আপনি ভগবানে বিশ্বাস করেন।
ড. বেনফোর্ড : মাঝে মাঝে।
শ্রীল প্রভুপাদ : হ্যাঁ। মাঝে মাঝে অথবা সব সময় তাতে কিছু যায় আসে না। সকলেরই সেই একই অবস্থা। মনুষ্য শরীর প্রাপ্ত হলে, সকলেরই মধ্যে সুপ্ত ভগবদ্ চেতনা থাকে। যথার্থ শিক্ষার মাধ্যমে সেই শিক্ষার উন্মেষ হয়। এটা জীবনের আর সব কিছুরই মতো। যেমন যথার্থ শিক্ষা লাভ করার মাধ্যমে আপনি বৈজ্ঞানিক হয়েছেন। তেমনি সুপ্ত কৃষ্ণভাবনা সকলের মধ্যেই আছে, শুধু তার উন্মেষের জন্য যথার্থ শিক্ষার প্রয়োজন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে এই শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে না। আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার এটাই হচ্ছে গলদ। ভগবৎ-চেতনা লাভ করার প্রবৃত্তি যদিও আছে কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ ভগবান সম্বন্ধে কোন শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে না। তাই মানুষেরা ভগবদ্বিমুখ নাস্তিক হয়ে যাচ্ছে এবং তার ফলে তারা জীবনের যথার্থ আনন্দ ও শান্তি লাভ করতে পারছে না। সান-দিয়েগোতে কিছু ধর্মযাজকেরা একটি সভায় মানুষের ধর্মবিমুখ হয়ে পড়ার কারণ এবং গীর্জায় আজকাল মানুষের না আসার কারণ সম্বন্ধে অনুসন্ধান করেন। তার কারণ যে কি সেটা বোঝা খুবই সহজ। তার কারণ হচ্ছে আপনাদের সরকার জানে না যে জীবন, বিশেষ করে মনুষ্য জীবন ভগবৎ তত্ত্বজ্ঞান লাভের জন্য। তাই নানা রকম সমস্ত জ্ঞান লাভের জন্য অনেক বন্দোবস্ত থাকা সত্ত্বেও আসল জ্ঞান, ভগবৎ-তত্ত্বজ্ঞান সম্বন্ধে তারা কোনই ব্যবস্থা করছে না।
ড. বেনফোর্ড : সুতরাং, অবশ্যই তার কারণ হচ্ছে রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে আলাদা করার জন্য।
শ্রীল প্রভুপাদ : তার কারণ অনেক হতে পারে, কিন্তু তার আসল কারণ হচ্ছে এই কলিযুগ। এটি প্রবঞ্চনা ও কলহের যুগ। জনসাধারণ সাধারণত খুব একটা বুদ্ধিমান নয়। তাই তারা সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞানকে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করছে। পশুরা যে সমস্ত জ্ঞান লাভে উদ্যোগী তারাও সেই জ্ঞান আহরণে ব্যস্ত। অনার আপনারা কেবল চারটি বিষয়ে। জ্ঞানলাভের চেষ্টা করছেন। তা হচ্ছে আহার, নিদ্রা, ভয় ও মৈথুন। যেমন: আপনারা (বৈজ্ঞানিকেরা) যে সমস্ত মারণাস্ত্র আবিষ্কার করছেন রাজনীতিবিদরা তার থেকে আত্মরক্ষা করার জন্য সুযোগ নিচ্ছে। গর্ভনিরোধ করবার জন্য আপনারা কত সমস্ত ঔষধ আবিষ্কার করছেন এবং তার ফলে মানুষ মৈথুনে আরও বেশি লিপ্ত হচ্ছে।
চৈতন্য সন্দেশ অক্টোবর-২০২১ প্রকাশিত