শ্রীশ্রী রাধারমন মন্দির

প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১২:৩৭ অপরাহ্ণ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১২:৩৭ অপরাহ্ণ

এই পোস্টটি 345 বার দেখা হয়েছে

শ্রীশ্রী রাধারমন মন্দির
বৈকুণ্ঠপুরসংশ্রয়াদ্বিপিনতোহপি
নিঃশ্রেয়সাৎসহস্রাগুনিতাং
শ্রিয়ং প্রদুহতীরসশ্রেয়সীম।
চতুর্মুখখৈরপিস্পৃহিততার্ণদেহোদ্ভবা
জগদ্গুরভরগ্রিমৈঃ
শরণমস্থ বৃন্দাটবী ॥
বৈকুণ্ঠে পরব্যোমস্থিত মোক্ষ হতেও উৎকৃষ্ট অতএব সহস্র গুণাধিক শ্ৰেয়ম অর্থাৎ দাস্য সখ্য বাৎসল্য মধুর রসাত্মিকা সমত্তি যিনি প্রদান করেন এবং জগদৃগুরু চতুর্মুখ ব্রহ্মাও যে স্থানের তৃণাদি হীনরুপ জন্ম প্রার্থনা করেন, সেই বৃন্দাবন আমার আশ্রয় হন।
বৃন্দাবনের এমনই মাহাত্ম্য যে, ব্রহ্মা, শিব প্রভৃতি দেবগণ এই স্থানের ঘাস হয়ে জন্মগ্রহনের অভিলাষ করেন। আর সেই নিধুবন বৃন্দাবনের দ্বাদশ বনের একটি। এই নিধুবনের সন্নিকটে অবস্থান করেন পরমেশ্বর ভগবান, পরম রসরাজ শ্রীরাধারমনজী। ষড়গোস্বামীদের অন্যতম শ্রীল গোপাল ভট্ট গোস্বামী এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। শ্রী রাধামনের মুখপদ্ম শ্রীগোবিন্দের ন্যায় তার বক্ষস্থল গোপীনাথের ন্যায় এবং চরণপদ্মদ্বয় শ্রীমদনমোহনজীউ এর ন্যায়। অতএব, শুধুমাত্র রাধারমন বিগ্রহ দর্শন করে উপরোক্ত তিনট বিগ্রহের যুগপৎ দর্শন ও কৃপা লাভ হয়।
রাধারমনের আবির্ভাবঃ একবার যখন পতিতপাবন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু দক্ষিণ ভারত শুভাগমন করেন, তখন তিনি চতুর্মাসকাল যাবৎ রঙ্গনাথ মন্দিরের এক পুরোহিত ভেঙ্কটভট্টের বাড়ীতে অবস্থান করেন। তাঁর পুত্র শ্রী গোপাল তখন বাল্যঅবস্থায় মহাপভুর সেবা লাভের সুযোগ লাভ করেন। মহাপ্রভু তখন সন্তুষ্ট হয়ে গোপাল ভট্টকে কৃপা করেন। পিতৃমাতৃ বিয়োগের পর শ্রীগোপাল ভট্ট বৃন্দাবন গমন করেন এবং সেখানে শ্রীরূপ সনাতন গোস্বামীর সাথে ভজন, গ্রন্থ রচনায় প্রবৃত্ত হন। একবার গোপাল ভট্ট মহাপ্রভুর অদর্শনে বিষাদগ্রস্থ হলে মহাপ্রভু স্বয়ং পুরী হতে শ্রীগোপালের জন্য নিজ ব্যবহৃত কৌপিন এবং আসন প্রদান করেন।
যা এখনও এই মন্দিরে রয়েছে এবং বছরে কেবলমাত্র ৬ বার এই দিব্য কৌপিন এবং আসন দর্শন করা যায়। এই ৬ দিনগুলো হচ্ছে, গৌর পূর্ণিমা, রাধারমনের আবির্ভাব দিবস, গোপাল ভট্ট গোস্বামীর তিরোভাব দিবস এবং এর পরদিন, জন্মাষ্টমী ও নন্দোৎসব (জন্মাষ্টমীর পরের দিন)। আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে বিগত ৪৫০ বছর অতিবাহিত হলেও উক্ত আসন ও বস্ত্র একটুও মলিন হয়নি। মহাপ্রভুর অন্তর্ধানে গোপালভট্ট বিরহকাতর হলে একবার মহাপ্রভু স্বপ্নে আবির্ভূত হয়ে বললেন “হে গোপাল, যদি আমার দর্শন পেতে চাও তবে গন্ডকীর তীরে গমন কর।” স্বপ্নাদেশ পেয়ে তৎক্ষণাৎ তিনি নেপালে অবস্থিত গন্ডকী গমন করলেন। গন্ডকীর পবিত্র জলে স্নান করে তিনি তার কমণ্ডলু -জলে ডোবালেন এবং তুলে দেখলেন যে, সেখানে মোট ১২টি শিলা অবস্থান করছে। তিনি এর মাহাত্ম্য বুঝতে না পেরে সেগুলো জলে ফেলে দিয়ে পুনরায় তুললেন। এভাবে পরপর তিনবার তোলা সত্ত্বেও দেখা গেল সেই শালগ্রামসমূহের সেবাপূজা করতে লাগলেন। একবার নৃসিংহ চতুর্দশীর সময় শ্রীগোপাল ভট্ট গোস্বামী শ্রীমদ্ভাগবতের ভগবান নৃসিংহদেবের লীলাসমূহ পাঠ করছিলেন। নৃসিংহদেব পিলার ভেঙ্গে আবির্ভূত হয়ে ভক্ত প্রহ্লাদকে রক্ষা করেছিলেন। তখন গোপাল ভট্ট কৃষ্ণের কাছে প্রার্থনা জানালেন তার শ্রীবিগ্রহের সেবা করার অভিলাষ পূরণ করার জন্য। শ্রী গোপালের কাতর আহ্বানে ও ভালবাসার সেইদিন রাতে শ্রীদামোদর শালগাম থেকে শ্রী রাধারমন স্বয়ং প্রকাশিত হলেন। এখনও রাধারমন বিগ্রহের পেছনে শালগ্রামের অস্থিত্ব বোঝা যায়। ১৫৪২ সনে এই অপাকৃত লীলা সম্পাদিত হয়েছিল ।
বিশেষ দিকঃ এই মন্দিরের আকর্ষনের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছেন স্বয়ং প্রকাশিত অপূর্ব মনোহর শ্রী রাধারমন বিগ্রহ। রাধারমনের দর্শনে হৃদয় প্রেমভক্তিতে আপ্লুত হয়। এছাড়া এখানে রাধারাণীর কোন বিগ্রহ নেই কিন্তু রাধারাণীর নাম খচিত এক স্বর্ণময় গোমতীচক্র রয়েছে । যেহেতু শাস্ত্রে বলা হচ্ছে যে, ভগবানের নাম এবং বিগ্রহ একই গুন বিশিষ্ট। এছাড়া সম্রাট আওরঙ্গজেবের সৈন্যগণ ভুলক্রমে এই মন্দিরকে একটি সাধারণ বাড়ী বলে মনে করে আক্রমন করেছিল। এছাড়া মন্দির নির্মাণের পূর্বে গোস্বামীগণ তাদের সেবিত বিগ্রহসমূহকে গাছের উপর রেখে বা কখনো তাদের ঝোলায় রেখে সেবা করতেন। এখানে প্রায় শতাব্দীকাল যাবৎ রাধারমন বিগ্রহ এক বৃক্ষের মধ্যে ছিল। এছাড়া ভক্তগণ তখন বিগ্রহ পাহাড়া দেওয়ার জন্য তীর ধনুক ব্যবহার করত যা এখনো মন্দিরে দর্শন করা যায়। রাধারমনের আবির্ভাব উৎসবে ৩০০ লিটার দুধ এবং অন্যান্য পবিত্র দ্রব্যাদি দ্বারা অভিষেক করা হয়। এছাড়া ভগবানের সুস্বাধু ভোগ লাগানো হয় এবং মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হয়। এছাড়া মন্দিরের বামে রাধাকৃষ্ণের নিত্য সখা অনঙ্গমঞ্জরী তথা শ্রীগোপালভট্ট গোস্বামীর সমাধি রয়েছে।
শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর ও শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত স্বরস্বতী ঠাকুর এবং শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত প্রভুপাদ সহ বহু গৌড়ীয় বৈষ্ণবভক্তগণ এই মন্দির দর্শন করেছিলেন। অতএব, আপনি কেন এই অপ্রাকৃত দর্শন উপেক্ষা করবেন। এই দুর্লভ জীবনে অন্তত একবার হলেও বৃন্দাবনে শ্রীরাধারমনকে দর্শন করুন এবং পরম আনন্দ লাভ করুন। হরে কৃষ্ণ ॥

মাসিক চৈতন্য সন্দেশ  জুলাই- ২০০৯ ইং
সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।