এই পোস্টটি 396 বার দেখা হয়েছে
বৈষ্ণব ও ব্রাহ্মণ বিশেষভাবে শিখা রেখে থাকেন। এটি প্রতিষ্ঠিত নিয়ম যে, যিনি বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ করেন তার মুখমণ্ডল ও মস্তকে কেশ রাখা উচিত নয়। অতএব, যাদের বৈদিক সংস্কার করা প্রয়োজন তাদেরকে কেশ অপসারণের উপদেশ দেওয়া হয়। তবে শিখা রাখার অনেক কারণ রয়েছে :
১. যখন কোন ভক্ত দেহত্যাগ করে তখন শিখার নিচে অবস্থিত সর্বোচ্চ চক্র থেকে সেই আত্মাকে টেনে নিয়ে যান।
২. কথিত হয় যে, কর্ম অনুসারে আত্মা মৃত্যুর সময় শরীরের বিভিন্ন স্থান যেমন মুখ, নাক ইত্যাদি অংশ দিয়ে বের হয়। কিন্তু একজন ভক্ত যখন দেহত্যাগ করেন তখন আত্মার চক্র (শিখা) দিয়ে বের হয়ে চিন্ময় জগতের কোন উচ্চতর গ্রহলোকে অধিষ্ঠিত হয়।
৩. চক্রের সুরক্ষা বিধানের জন্য কেশের প্রয়োজন হয়। কিন্তু প্রশ্ন উঠতে পারে তবে নারীরা তো কেশ পরিহার করেন না। এর কারণ হল, তাদের অন্যান্য নিম্ন চক্রগুলো ভালোভাবে সুরক্ষিত নয় তবে যদি তাদের লম্বা কেশ থাকে তবে তারা এর মাধ্যমে সেই চক্রগুলোর সুরক্ষা বিধান করতে পারে। তাই তাদের জন্য লম্বা কেশ রাখা গ্রহণযোগ্য।
৪. বৈষ্ণবগণ একটি পারমার্থিক পথ অনুসরণ করেন অর্থাৎ তারা প্রতি পদক্ষেপে মায়ার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পরমেশ্বর ভগবানের উপর নির্ভরশীল হন। তাই যখন আমরা মায়ার সাগরে হাবুডুবু খাই তখন শুধুমাত্র আমাদের মস্তক জলের বাইরে অবস্থান করে। এমতাবস্থায় গুরু ও গৌরাঙ্গ ভক্তের শিখা ধরেই সেই আত্মাকে অহৈতুকী করুণাবশত সেই পতিত অবস্থা থেকে উদ্ধার করে। এর মাধ্যমে শিখা প্রদর্শন করে। একজন ভক্ত ভগবান শ্রী গৌরাঙ্গের অহৈতুকী করুণার ওপর সর্বদা নির্ভরশীল ও অধস্তন হয়ে থাকে।
৫. মায়াবাদীরা অহঙ্কার বশতঃ তাদের তুচ্ছ সাধন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মায়া-মোহ থেকে বেরিয়ে আসতে চায় এবং ভগবানকে লাভ করতে চায়। তাই তারা শিখা রাখে না কারণ তাদের ভগবানের কৃপার নিষ্প্রয়োজন।
৬. সমস্ত প্রকার যজ্ঞ সম্পাদন করতে হলে শিখা রাখা অত্যাবশ্যক। তাই, ভারতীয় সংস্কৃতিতে ব্রাহ্মণ, বৈষ্ণব ও অন্যান্য ভক্তরা শিখা রেখে থাকে। যদিও শিখার আবার কিরূপ হবে সেই সম্পর্কে শাস্ত্রীয় কোন দিক নিদের্শনা নেই, তবে গৌড়ীয় বৈষ্ণবরা ঐতিহ্যগতভাবে একটি শাবকের পদচিহ্নের আকারে শিখা রেখে থাকে, যা প্রায় দেড় ইঞ্চি (৫-৬ সে.মি) ব্যাসের হয়ে থাকে।
৭. মস্তক মুণ্ডনের গুরুত্ব-এটি বৈরাগ্যের একটি প্রতীক। জড়বাদীরা সর্বদা তাদের কেশের প্রতি গভীরভাবে আসক্ত। কেশ সজ্জা হল দেহাত্মবুদ্ধির একটি নিদর্শন। পারমার্থিক অনুশীলনকারীদের জন্য যা মোটেই ভালো নয়। তাই জাগতিক চেতনার স্তরের ঊর্ধ্বে বৈরাগ্যের নিদর্শন হল মস্তক মুণ্ডিত রাখা।
শিখা রাখার বৈজ্ঞানিক ব্যাখা
১. যিনি শিখা ধারণ করেন তার প্রতি মহাজাগতিক শক্তি আকর্ষণ করে যেটি তাকে আলোকিত করে।
২. মস্তকের পেছন থেকে ঝুলন্ত ছোট্ট কেশ গুচ্ছ আমাদের মস্তিষ্কের ওপর সামান্য চাপ প্রয়োগ করে যেটি মন নিয়ন্ত্রণ, স্মৃতিশক্তি বর্ধনসহ মনোযোগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে ।
আরো কিছু তথ্য
সংস্কৃত শব্দ ‘শিখা’ অর্থ হল মস্তকের শিখরে এক গুচ্ছ কেশ অথবা মাঝে মাঝে এটি মুকুট হিসেবেও অভিহিত করা হয়। শ্রীল প্রভুপাদ শিখাকে একটি ‘পতাকা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ এই শরীরটিকে ভগবানের মন্দির হিসেবে দর্শন করলে সেই মন্দিরের শিখরে রয়েছে একটি পতাকা বা শিখা সেই স্মরণাতীত কাল থেকে কৃষ্ণভক্তরা শিখা ধারণ করে এবং গুরুদেবের প্রতি শরণাগতির নিদর্শন স্বরূপ মস্তক মুণ্ডন করেন। গুরু কৃষ্ণের ভক্ত এভাবে শরণাগত হলে কৃষ্ণভাবনাময় জীবনে প্রবেশ করলে কৃষ্ণ অত্যন্ত প্রসন্ন হন। হরে কৃষ্ণ!
মাসিক চৈতন্য সন্দেশ ডিসেম্বর ২০১৭ খ্রিস্টাব্দ