এই পোস্টটি 1845 বার দেখা হয়েছে
শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুরের একজন শিষ্য ছিলেন। তিনি ১৯৩৩ সালে সরস্বতী ঠাকুরের নিকট দীক্ষা নিয়েছিলেন। তিনি গুয়াহাটি আসামের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি সরস্বতী ঠাকুরের নির্দেশনা অনুসরণপূরর্ব জপমালায় হরিনাম জপ করতেন। সরস্বতী ঠাকুর শ্রীল প্রভুপাদ ১ জানুয়ারী ১৯৩৭ সালে এই জগত ছেড়ে নিত্যধামে গমন করেন।
সরস্বতী ঠাকুরের তিরোধানের পর তার এই শিষ্য ভক্তিযোগের বিবিধ বিধি-নিষেধ পালন করা ত্যাগ করেন। একসময় তিনি ভক্তিযোগ বিরোধী কর্ম যেমন মাংস খাওয়া শুরু করেন। তিনি হরিনাম ত্যাগ করেন। এর কিছু কাল পরে তিনি অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। সনাতন ঐতিহ্য অনুযায়ী তার মৃতদেহ পোাড়ানো জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কিন্তু যখনই তাঁর দেহে অগ্নি প্রজ্জ্বলন করা হবে সেই মুহুর্তে তিনি জেগে ওঠলেন। সকলেই এ ঘটনা স্বচক্ষে দর্শন করে আশ্চর্য হয়ে গেলেন এবং তাকে ভূত ভেবে সেই স্থান পরিত্যাগ করলেন। তিনি তৎক্ষণাৎ গৃহে ফিরে সকলকে জানালেন তিনি জাগতিক জীবন পরিত্যাগ করে বাণপ্রস্থ গ্রহণ করে গুরুদেবের নিদের্শমত জীবন অতিবাহিত করবেন।
মৃত্যুর পর পুনরায় জীবন ফিরে পেয়ে তিনি যেন সম্পূর্ণরূপে নিজের পরিবর্তন ঘটালেন। তিনি তার ঘটনা পরে বর্ণনা করেছেন যা নিম্নে বর্ণিত হল:
যখন তিনি মৃত্যুবরণ করলেন তখন তিনি একটি বিকট দৈত্যাকৃতির ভয়ংকর যমদূত দেখতে পেলেন। যমদূতেরা এসে তাকে এই জগত থেকে ভিন্ন এক জগতে নিয়ে যাচ্ছিল। যমপুরীতে যাওয়ার পথে তার জলের তৃষ্ণা পেল কেননা যমপুরীতে যাওয়ার রাস্তাটি ছিল সম্পূর্ণ মরুভূমি সদৃশ এবং মাথার উপর ছিল সূর্যের প্রখর রৌদ্র। যমদূতদের এই কথা বললে তখন তারা তৃষ্ণা নিবারণের জন্য একটি পুকুরে নিয়ে গেলেন যেদি বমি, রক্ত ও পূঁয দ্বারা পরিপূর্ণ। যখন তিনি এই বিষয়ে অভিযোগ করলেন তখন যমদূতেরা উত্তরে জানালেন তার কর্ম অনুসারে তাকে এই বিশ্রি জল পান করতে হবে। অত্যন্ত হতাশাচ্ছন্ন হয়ে তিনি যমদূতেদের সাথে যমপুরীতে গমন করলেন।
যমপুরীতে পৌছানোর পর তাকে একটি সারিতে দাড় করানো হয় যেখানে যমরাজের সহকারী চিত্রগুপ্ত সকলের কর্মের হিসাব দেখছিলেন। তিনি অনেক ভর্য়াত চোখে দেখলেন তার সারির পূর্বের সবাইকে নরকে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু যখন তার ডাক আসল তখন চিত্রগুপ্ত তার হিসাব দেখে একটি বিশেষ নজির হিসেবে তাকে স্বয়ং যমরাজের কাছে পাঠালেন। তিনি খুবই আশ্চর্য হয়ে গেলেন। যমরাজ তাকে জিজ্ঞেস করলেন তিনি পৃথিবীতে কোন বিশেষ ভাল কাজ করেছিলেন কিনা? তিনি উত্তরে জানালেন, তিনি ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী শ্রীল প্রভুপাদের নিকট দীক্ষা লাভ করেছিলেন। এরপর যমরাজ চোখ বন্ধ করে সরস্বতী ঠাকুরকে স্মরণ করলেন তৎক্ষণাৎ এমন একজন শিষ্যর জন্যও তিনি সেখানে আবির্ভূত হলেন। যমরাজ তখন তাঁর শিষ্যর ব্যাপারে পরবর্তী কি সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় তা জিজ্ঞেস করার মুহুর্তে প্রভুপাদ যমরাজের দিকে না তাকিয়ে সরাসরি তার শিষ্যকে তিরস্কার করলেন। হরিনাম ত্যাগ করা ও অভক্তিমূলক আচরণের জন্য তাকে অনেক তিরস্কার করলেন। সেই ভক্তটি তখন শ্রীল প্রভুপাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা জানালেন। তখন প্রভুপাদ তাঁর শিষ্যর প্রতি কৃপাবশত ক্ষমা করলেন এবং তাকে নির্দেশ দিলেন পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে গিয়ে তার শিষ্য শ্রীল ভক্তিদ্বৈত মাধব গোস্বামীর কাছ থেকে দীক্ষা নেওয়ার জন্য।
যখনই তিনি এই কথা বললেন তৎক্ষণাৎ কি হল তা বুঝে ওঠার আগেই তিনি দেখলেন তিনি সেই অন্তষ্টিক্রিয়ার কাঠের উপর শায়িত আছেন। প্রাণ ফিরে পাবার সাথে সাথে তিনি শ্রীল প্রভুপাদ! শ্রীল প্রভুপাদ! বলে চিৎকার দিলেন। এরপর তিনি সংসার জীবন পরিত্যাগ করে কলকাতায় গিয়ে গুরুর সকল নিদের্শনা পালন করলেন। এরপর দীর্ঘ ৮ বছর তিনি গৌড়িয় মঠে অবস্থান গ্রহণ করে হরিনাম জপ করলেন। এরপর শান্তিপূর্ণভাবে ভগবদধামে গমন করলেন।
আমরা এই পৃথিবীতে অনেক ইন্সুরেন্স পলিসি দেখতে পাই, কিন্তু এমন কোন ইন্সুরেন্স নেই যার মাধ্যমে কেউ নরক থেকে মুক্তি লাভ করতে পারে। এই ঘটনা থেকে আমরা শিক্ষা পেলাম যে কেউ যদি পরম্পরা ধারায় দীক্ষা গ্রহণ করে, হরিনাম জপ করে এবং ভক্তিমূলক সেবায় রত থাকে তবে সে কোন সময় অধঃপতিত হলেও অপরিসীম কৃপার দ্বারা গুরুদেব অবশ্যই তাকে উদ্ধার করবেন।
(সূত্র: প্রবচন, শ্রীচৈতন্য গৌড়িয় মঠ, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৮)হরেকৃষ্ণ।
(মাসিক চৈতন্য সন্দেশ জুন ২০১৮ সালে প্রকাশিত)