এই পোস্টটি 471 বার দেখা হয়েছে
শ্রীল প্রভুপাদের আবির্ভাব তিথি উপলক্ষে ভারতে ₹১২৫ কয়েনের প্রচলন
গত ১ সেপ্টেম্বর ২০২১, নয়াদিল্লিতে ৬০টি দেশের ভক্ত এবং অসংখ্য মন্দিরের উপস্থিতিতে ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ইস্কনের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীল এ.সি. ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদের ১২৫তম জন্মবার্ষিকীর উদ্বোধন করেন। একইসাথে, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ উপলক্ষে ১২৫ রুপির স্মারক মুদ্রা প্রকাশ করেন। ৬০টিরও অধিক দেশ থেকে ৬ শতাধিক ইস্কন মন্দির এবং ভক্তদের উপস্থিতিতে প্রদত্ত বক্তৃতায় শ্রীকৃষ্ণ, ভগবদ্গীতা এবং ভারতীয় সংস্কৃতির শিক্ষা বিশ্বের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে শ্রীল প্রভুপাদের নিরলস প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন নরেন্দ্র মোদী।
শ্রীমৎ গোপাল কৃষ্ণ গোস্বামীর বক্তব্য
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মাননীয় সংস্কৃতিমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই এই শুভ কার্য সম্পাদন করতে তাঁদের মূল্যবান সময় আমাদের দেওয়ার জন্য। আজ শ্রীল প্রভুপাদের ১২৫তম আবির্ভাব তিথি উদ্যাপিত হচ্ছে। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর ভবিষ্যদ্বাণী ছিলো, এই সমগ্র বিশ্বে হরিনাম প্রচার হবে। আর এই ভবিষ্যদ্বাণী সফল করতে প্রভুপাদ এজগতে প্রকটিত হয়। প্রভুপাদ ১৮৯৬ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা তাঁকে (প্রভুপাদকে) ছোটবেলা থেকে বৈদিক সংস্কৃতির শিক্ষা দিয়েছিলেন এবং তিনিও ছোটবেলা থেকে বৈদিক সংস্কৃতিতে পারদর্শী ছিলেন। ১৯২২ সালে এক মহান সাধু শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুরের সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। আবার সেসময় তিনি মহাত্মা গান্ধীর আন্দোলনের সাথেও যুক্ত ছিলেন। প্রভুপাদ ভালো ইংরেজি বলতে পারতেন। শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুরের সাথে দেখা হওয়ার পর তিনি প্রভুপাদকে লক্ষ্য করে বললেন, “তোমরা যুবসমাজরা কেন পাশ্চাত্য দেশে গিয়ে মহাপ্রভুর বাণী প্রচার করছো না?” গুরুদেবের আদেশ পালনের জন্য ১৯৬৫ সালে ৬৯ বছর বয়সে পাশ্চাত্যে মহাপ্রভুর বাণী প্রচার করার জন্য বিশ্বের প্রায় প্রতিটি জায়গায় এই “ফুড ফর লাইফ” প্রোগ্রাম ছড়িয়ে পড়েছে এবং এর মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষ কৃষ্ণপ্রসাদ আস্বাদন করতে পারছে। যেমন: ‘কোভিড-১৯ মহামারী’-তে এ ইস্কন বিভিন্ন ক্যাম্পের আয়োজন করেন মানুষের সেবা প্রদানের জন্য। প্রভুপাদের খুব ইচ্ছা ছিল ভারতীয়রা তাদের সংস্কৃতি কখনো ভুলবে না। এখন অনেক বিদেশী ভারতে এসে এই বৈদিক সংস্কৃতি গ্রহণ করে এবং অনেক বিদেশীই ভারতের এই বৈদিক সংস্কৃতিকে সম্মান করে।
আমি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি কৃতজ্ঞ। কারণ, তিনি প্রভুপাদের ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে স্মারকলিপি হিসেবে ১২৫ রুপি স্মারক মুদ্রা প্রভুপাদের চরণে উৎসর্গ করেছেন। আমি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নিকট প্রার্থনা করি, যেন তিনি নরেন্দ্র মোদিকে শক্তি দেয় এবং দেশ পরিচালনার জন্য পথপ্রদর্শক হয়ে কৃপা বর্ষণ করেন। একইসাথে, সারাবিশ্বে যেন শান্তি বর্ধিত হয় তার জন্য শ্রীকৃষ্ণ সকলের উপর কৃপা বর্ষণ করবেন, এই প্রার্থনা করে আমি এখানেই শেষ করছি।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর বক্তব্য
হরে কৃষ্ণ! এই পূণ্য তিথিতে আমাদের সাথে রয়েছেন, দেশের সংস্কৃতি মন্ত্রী শ্রীমান জি. কিষান রেড্ডি, ইস্কন ব্যুরো প্রেসিডেন্ট শ্রী গোপাল কৃষ্ণ গোস্বামীজি এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আমাদের সাথে যুক্ত কৃষ্ণভক্তগণ। আজকে আমরা শ্রীল প্রভুপাদের ১২৫তম জন্মজয়ন্তী পালন করছি। কৃষ্ণভাবনার ভাবটিই আজ সারা বিশ্বে শ্রীল প্রভুপাদ স্বামী লক্ষ লক্ষ অনুসারী ও কৃষ্ণভক্তগণ স্বাভাবিকভাবেই অনুভব করছেন। উপস্থিত সকলকেই দেখে মনে বোধ হচ্ছে যে, লাখ মন এক ভাবনা ও চেতনার সহিত আবদ্ধ। এটা সেই কৃষ্ণভাবনা যার আলো প্রভুপাদ স্বামীজি সারা বিশ্বের পৌঁছে দিয়েছিলেন। আমরা সকলেই জানি যে, শ্রীল প্রভুপাদ এক অলৌকিক কৃষ্ণ ভক্ত তো ছিলেনই, সেসাথে তিনি এক মহান ভারত ভক্তও ছিলেন। তিনি দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সংঘর্ষ করেছিলেন ও অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে স্কটিশ কলেজ থেকে প্রাপ্ত, নিজের ডিপ্লোমা ডিগ্রী গ্রহণে অস্বীকার করেছিলেন। আজ এটি একটি সুখকর সংযোগ যে, এমন এক মহান ব্যক্তির ১২৫তম জন্মদিন এমন এক সময় অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন ভারত তার স্বাধীনতার পঁচাত্তর সালের এক অমৃত মহোৎসব উদ্যাপন করছে।
শ্রীল প্রভুপাদ স্বামী সর্বদাই বলতেন, তিনি সারা বিশ্বে এজন্যই ভ্রমণ করছেন, কারণ তিনি ভারতের সবচেয়ে অমূল্য রত্ন পৃথিবীর সকলকে প্রদান করতে চান। ভারতের যে জ্ঞান-বিজ্ঞান রয়েছে, আমাদের যে জীবন-সংস্কৃতি আর পরম্পরাসমূহ আছে, তার ভাবনা এটাই ছিল “অথো ভূত্ বয়াম্ প্রতি” অর্থাৎ জীবসমূহের কল্যাণের জন্য জীবমাত্র কল্যাণ হেতু আমাদের অনুষ্ঠানের অন্তিম মন্ত্র এটাই হয়ে থাকে “ইদম্ ন মম” অর্থাৎ ‘এটাই আমার নই।’ এটা অখিল ব্রহ্মাণ্ডের নিমিত্ত হেতু, সমস্ত সৃষ্টির হিতের জন্য। এজন্যই ভারতের চিন্তা আর দর্শনকে বিশ্বজুড়ে পৌঁছে দেন। শ্রীল প্রভুপাদ গুরুদেবের আদেশকে নিজ জীবনের লক্ষ্য করে নিয়েছিলেন। আর উনার সেই তপস্যার পরিণাম আজ সারা বিশ্বে আমরা প্রত্যক্ষ করতে পারছি। অমৃত মহোৎসবে ভারতবাসী ও “সবার সাথে, সবার বিকাশে এবং সবার বিশ্বাসে” এই মন্ত্রের সহিত এই সঙ্কল্পকেই আগে এগিয়ে যাওয়ার যাত্রার আধার স্বরূপ করেছে।
আমাদের এই সংকল্পের কেন্দ্রে আমাদের এই লক্ষ্যের মূলেও বিশ্ব কল্যাণেরই ভাবনা রয়েছে। আর আপনারা প্রত্যেকেই তার সাক্ষী। এই সংকল্প পূর্তির জন্য সকলের প্রচেষ্টাই জরুরী। আপনি কল্পনা করতে পারেন, যদি প্রভুপাদ একা বিশ্ববাসীকে এত কিছু দিয়েছেন তো যখন আমরা, সকলে তাঁর আশীর্বাদে এক সাথে প্রয়াস করবো, তাহলে কেমন পরিণাম আসবে? আমরা নিশ্চয়ই মানবিক চেতনার সেই চরম শিখরে পৌঁছাব যেখানে থেকে আমরা সারা বিশ্বে আরো অনেক বড় ভূমিকা পালন করতে পারি।
আমরা প্রেমের এই বার্তাকে প্রতিটি ব্যক্তির নিকট যেন পৌঁছে দিতে পারি। মানবতার কল্যাণের জন্য ভারত সারা বিশ্বের জন্য কতকিছু করতে পারে আজ তার এক অনন্য উদাহরণ হল, সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা আমাদের যোগের জ্ঞান ও পরম্পরা, ভারতের অপ্রাকৃত জীবন শৈলী আয়ুর্বেদের মত যে বিজ্ঞান রয়েছে আমাদের সংকল্প যে, এর সুবিধা সারা বিশ্ব প্রাপ্ত হোক। আত্ম-নির্ভশীলতার মাঝে এই মন্ত্র শ্রীল প্রভুপাদ প্রায়ই আলোচনা করতেন। আর সেই উদ্দেশ্যে দেশ এগিয়ে চলছে। আমি যখন “আত্মনির্ভর ভারত” আর “Make in India” লক্ষ্যের বিষয়ে কথা বলি তখন আমি আমার সদস্য ও ব্যবসায়ীদের ইস্কনের ‘হরে কৃষ্ণ আন্দোলন’-এর সফলতার উদাহরণ দিয়ে থাকি। আমরা যখনই কোনো দেশে গমন করি আর সেখানে যখন লোক, ‘হরে কৃষ্ণ’ বলে সম্বোধন করে, তখন কত নিজের বলে মনে হয়! কত গৌরবময় অনুভূতি হয়! কল্পনা করুন। এই আপন মনোভাব যখন আমাদের “Make in India” প্রোজেক্টের জন্য পাবো তখন আমাদের কেমন লাগবে? ইস্কনের থেকে শিখে আমরা এই লক্ষ্যও অর্জন করতে পারি। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছিলেন “ন হি জ্ঞানেন সদৃশম্ পবিত্রম্ ইহ বিদ্যতে” অর্থাৎ জ্ঞানের সমান পবিত্র কিছুই নেই, “জ্ঞান” কে সর্বোচ্চ স্থান দেওয়ার পর শ্রীকৃষ্ণ আরো একটি কথা বলেন “মৈব মন অধঃ তত মৈ বুদ্ধিম্ নিবেশহয়েৎ” অর্থাৎ জ্ঞান-বিজ্ঞান অর্জন করার পর নিজের মন ও বুদ্ধিকে, আমাতে নিযুক্ত কর! গীতার দ্বাদশ অধ্যায়কে “ভক্তিযোগ” বলা হয়েছে। এই “ভক্তিযোগ”-এর সামর্থ্য অনেক বড়। ভারতের ইতিহাসও এর সাক্ষী। যখন ভারত গোলামীর গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল, অন্যায়-অত্যাচার-শোষণে পীড়িত, নিজ জ্ঞান ও শক্তিতে মনোনিবেশ করতে পারছিল না, তখন এটি এই ভক্তিই ভারতের চেতনাকে উজ্জীবিত করে রাখে ও ভারতের পরিচয়কে অক্ষুন্ন রাখে। সেই কঠিন সময়েও চৈতন্য মহাপ্রভুর ন্যায় সন্ন্যাসী আমাদের সমাজকে ভক্তি ভাবনার সহিত আবদ্ধ করেছিলেন। তিনি বিশ্বাস থেকে আত্মবিশ্বাসের মন্ত্র প্রদান করেন। আস্থার ভেদাভেদ সামাজিক উঁচু-নীচু, অধিকার-অনধিকার ভক্তি এই সবকিছুকে নিঃশেষ করে ঈশ্বর ও জীবের মধ্যে এক সুন্দর সম্পর্ক তৈরী করে দিয়েছেন। ভারতের ইতিহাস অধ্যয়ন করলে, আপনিও এইটা পাবেন যে ভক্তির এই ধারাকে বজায় রাখার জন্য বিভিন্ন সময়ে ঋষি-মহর্ষি-মনীষী সমাজে প্রকট হচ্ছেন ও অবতার ধারণ করছেন। এক সময় স্বামী বিবেকানন্দের ন্যায় মনীষী আসেন যিনি বেদ-বেদান্তকে পশ্চিমা বিশ্বে পৌঁছে দেন। সেখানে বিশ্ববাসীকে যখন ভক্তিযোগ দেওয়ার দায়িত্ব আসলো তখন শ্রীল প্রভুপাদ ও ইস্কন এই মহান কার্যভার গ্রহণ করে। উনি ভক্তিবেদান্তকে বিশ্বের চেতনার সহিত যুক্ত করার মহান কার্য করেছেন। এটি কোনো সাধারণ কার্য ছিল না।
তিনি ৭০ বছর বয়সে ইস্কনের মতো বৈশ্বিক মিশন শুরু করেছিলেন যখন মানুষ তার জীবনের শক্তি ও ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে থাকে। এটা আমাদের সমাজ ও সকলের জন্য এক বড় প্রেরণা। অনেক সময় আমরা দেখি যে, লোকে বলে আমার তো বয়স হয়ে গেছে নয়তো, অনেক কিছু করতাম। আর নয়তো, আমার তো এখন সঠিক বয়সই হয়নি এই সমস্ত কার্য করার। কিন্তু স্বামী প্রভুপাদ তাঁর জীবনের শৈশব থেকে জীবনের অন্তিম সময় পর্যন্ত নিজ লক্ষ্য পূরণে সক্রিয় ছিলেন। প্রভুপাদ সমুদ্রে জাহাজে করে যখন আমেরিকা গেলেন তখন তিনি প্রায় খালি হাতেই গিয়েছিলেন। উনার নিকট কেবল গীতা আর শ্রীমদ্ভাগবতই ছিল। যাত্রাপথে তাঁর দু’বার হার্ট অ্যাটাক হয়। যখন তিনি নিউইয়র্ক পৌঁছালেন তখন তাঁর নিকট খাবারের কোনো ব্যবস্থা ও থাকার জায়গা ছিল না। কিন্তু, পরবর্তী এগারো বছরের মধ্যে বিশ্ববাসী যা কিছু দেখলেন, অটল বিহারী বাজপেয়ী মহাশয় শ্রীল প্রভুপাদের বিষয়ে বলেছিলেন, “এটি চমৎকারের থেকে কম কিছু নয়,” আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অসংখ্য ইস্কন মন্দির রয়েছে। অসংখ্য গুরুকুল ভারতীয় ধারাকে সচল রেখেছে। ইস্কন বিশ্ববাসীকে জানিয়েছেন, ভারতের কাছে আস্থার অর্থ হল; উদ্যম, উৎসাহ ও উল্লাস এবং মানবতার প্রতি “বিশ্বাস”। আজ প্রায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষকে ভারতীয় বেশ-ভূষায় কীর্তন করতে দেখা যায়। তাদের হাতে মৃদঙ্গ-করতালসহ নানান বাদ্যযন্ত্র থাকে এবং তারা ‘হরে কৃষ্ণ’ বলে বলে অপূর্ব সুন্দর কীর্তন করে।
আর, আমাদের দেশে কীর্তন আয়োজন জীবনের একটা সাধারণ অঙ্গস্বরূপ। আস্থার উল্লাসময় স্বরূপ। যারা নিরন্তন সারা বিশ্বকে আকর্ষণ করতে থাকে। যা সর্বদাই হতাশাগ্রস্ত বিশ্বকে নতুন আশা প্রদান করছে। গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন-
অদ্বেষ্টা সর্বভূতানাং মৈত্রঃ করুণ এব চ।
নির্মমো নিরহঙ্কারঃ সমদুঃখ সুখঃ ক্ষমী ॥
অর্থাৎ যে জীব মাত্রই প্রেম করে, তার প্রতি করুণা আর প্রেম পোষণ করে। কাউকে দ্বেষ করে না, সেই ভগবানের প্রিয়। এই মন্ত্র হাজার বছর ধরে ভারতের চেতনার আধার স্বরূপ ছিল। ইস্কন মন্দির আজ সেবা পরম্পরার আধুনিক কেন্দ্র রূপে প্রকাশিত হচ্ছে। আমার মনে আছে, যখন “কোচিন”-এ ভূমিকম্প হয়েছিল তখন কীভাবে ইস্কন জনসাধারণের সেবায় কার্য করেছিল।
যখনই দেশে কোনো কঠিন পরিস্থিতি আসে, হতে পারে সেটি উত্তরাখণ্ডের সুনামি উড়িষ্যা বা পশ্চিমবঙ্গের উপর সাইক্লোনের ধ্বংসযজ্ঞ ইস্কন সহায়ক হিসেবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। করোনা মহামারীতেও অসংখ্য অসুস্থ রোগী ও তাদের পরিবার, প্রবাসীদের জন্য ভোজন ও অন্যান্য জরুরী প্রয়োজন মেটানোর ব্যবস্থা করে আসছে। মহামারী ছাড়াও লাখো গরীব ব্যক্তিদের ভোজন আর নিরন্তর অভিযান আপনাদের মাধ্যমে চলে আসছে। যেভাবে ইস্কন কোভিড রোগীদের জন্য হাসপাতাল তৈরী করেছে আর এখন, ভ্যাক্সিন অভিযানেও সমান সহযোগিতা পালন করে চলেছেন। তারও খবর আমি পাই। আমি ইস্কনকে ও ইস্কনের সাথে যুক্ত সকল ভক্তকে আপনাদের এই সেবা যজ্ঞের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ দিচ্ছি। আজ আপনারা সত্য-সেবা-সাধনার মন্ত্রের সহিত কেবল কৃষ্ণ সেবাই করছেন তা নয়, বরং সারা বিশ্বে ভারতীয় আদর্শ ও সংস্কারের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর-এর ভূমিকা পালন করছেন। ভারতের শাশ্বত সংস্কার হল “সর্বে সুখিনঃ ভবন্তু, সর্বেসন্তু নিরাময়” ইস্কন এর মাধ্যমে আজ আপনারা সকলের লক্ষ-কোটি মানুষ সংকল্পবদ্ধ হয়েছেন। “ঈশ্বরের প্রতি প্রেম এবং প্রতিটি জীবের মাঝে ঈশ্বর-দর্শন” এটিই সিদ্ধির পথ। গীতার বিভূতি যোগ-এ ভগবান বলেছেন আমাদের বিশ্বাস আছে “বাসুদেব সর্বম“। এই মন্ত্র আমরা নিজেদের জীবনেও প্রয়োগ করবো। সকলের প্রতি সেই একতার অনুভূতি করানোর প্রয়াস করবো।
জি. কিষান রেড্ডির বক্তব্য
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও গোপাল কৃষ্ণ স্বামী মহারাজ ও উপস্থিত সকল ইস্কন বৈষ্ণবগণের সহিত আজকের এই শুভ তিথি, তথা ইস্কনের প্রতিষ্ঠাতা ও আচার্য শ্রীল প্রভুপাদের ১২৫ তম আবির্ভাব তিথিতে উপস্থিত থাকতে পেরে আমি খুব আনন্দিত বোধ করছি। ভারতের জ্ঞানের বীজ হিসেবে অসংখ্য মানুষকে এটি আমাদের সংগ্রামের মাহাত্ম্য সম্পর্কে জানায়। শ্রীল প্রভুপাদ নিজেই হলেন উৎসর্গ, ভক্তি, স্থির সংকল্প ও সাহসিকার এক দৃষ্টান্ত। বর্তমানের এক্ষণে, ইস্কন এই মুহূর্তে ভক্তি ও প্রচারের প্রতি তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বে শ্রীকৃষ্ণের বাণী ও শিক্ষা, ভারতীয় সংস্কৃতি-ঐতিহ্য, জ্ঞান, মানুষের জাগতিক সমস্যার বাস্তবিক সমাধান প্রদান করছে। শ্রীল প্রভুপাদ ও শিষ্যদের আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণে জাতি-ধর্ম-দেশ নির্বিশেষে শাড়ি, ধূতি পড়ে সংস্কৃত মন্ত্র জপ করছে, শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ও অন্যান্য বৈদিক গ্রন্থ অধ্যয়ন করছে তা হলো একপ্রকার সাংস্কৃতিক আমূল বিপ্লব যা সবার সামনেই সুস্পষ্টভাবে প্রতিয়মান। দেখা যাচ্ছে, প্রভুপাদ একদিকে ধর্মীয় দূত, অপর দিকে ভারতীয় সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যের এবং বৈদিক দর্শন প্রচারের দূতও বটে। আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইস্কন) হলো সংস্কৃতির মাধ্যমে ভারত ও পাশ্চাত্যের সংযুক্তির এক যোগসেতু। অনেকবার শ্রীল প্রভুপাদ পাশ্চাত্যে ভারতের বৈদিক জ্ঞান প্রচার করেছেন। সংস্কৃতি-ঐতিহ্য-ধর্ম প্রচারের পাশাপাশি ইস্কন মানুষের কল্যাণের জন্যও কাজ করে যাচ্ছে। আমার সৌভাগ্য হয় দিল্লিতে ইস্কনের সুবিশাল রন্ধনশালা দেখার, যেখানে লক্ষাধিক মানুষের মাঝে খাদ্য রান্না ও বিতরণ করা হয়। সর্বপ্রথম শ্রীল প্রভুপাদই পাশ্চাত্যে শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রার সূচনা করেন, যা তাঁর বিভিন্ন মহতী কীর্তিরই অংশ। এভাবেই শ্রীল প্রভুপাদের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের উচিত সকল ক্ষেত্রেই তা প্রয়োগ করা। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, এই ১২৫ কয়েনের স্মারক উন্মোচন করার জন্য।