ভবরোগ নিরাময়ের উপায়

প্রকাশ: ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ১:০৪ অপরাহ্ণ আপডেট: ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ১:০৪ অপরাহ্ণ

এই পোস্টটি 29 বার দেখা হয়েছে

ভবরোগ নিরাময়ের উপায়

কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ

প্রদত্ত শ্রীঈশোপনিষদ মন্ত্র ১৪ এর এর তাৎপর্য থেকে সংকলিত

মানব সভ্যতা তথাকথিত জড় জ্ঞানের উন্নতির দ্বারা মহাকাশযান এবং আণবিক শক্তি সহ বহু জড় দ্রব্য তৈরি করেছে, কিন্তু জন্ম, মৃত্যু, জরা এবং ব্যাধি থেকে মুক্তি প্রদান করতে ব্যর্থ হয়েছে। যখনই কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি তথাকথিত বৈজ্ঞানিকের কাছে এই সমস্ত দুঃখকষ্টের প্রশ্ন উত্থাপন করেন, তখন বৈজ্ঞানিকটি অত্যন্ত চতুরভাবে উত্তর দেন যে, জড় বিজ্ঞান অগ্রগতির পথে অগ্রসর হচ্ছে এবং শেষ পর্যন্ত মানুষকে মৃত্যুহীন ও চিরতরুণ করা সম্ভব হবে। এই ধরণের উত্তর জড়া প্রকৃতি সম্বন্ধে জড় বৈজ্ঞানিকদের চরম অজ্ঞতাই প্রমাণ করে। এই জড় জগতে সব কিছুই জড়া প্রকৃতির কঠোর নিয়মাধীন এবং জন্ম, বৃদ্ধি, স্থিতি, পরিবর্তন, ক্ষয় ও মৃত্যু– এই ছয়টি অবস্থার মধ্য দিয়ে সকল জীবকেই যেতে হয়। জড়া প্রকৃতির সম্পর্কজাত কোন কিছুই এই ছয়টি অবস্থার অতীত নয়; তাই দেবতা, মানুষ, পশু বা বৃক্ষ কেউই চিরকাল এই জড় জগতে বেঁচে থাকতে পারে না।

প্রজাতি অনুসারে জীবনকাল বিভিন্ন। এই জড় ব্রহ্মাণ্ডের প্রধান জীব ব্রহ্মা কোটি কোটি বছর বেঁচে থাকতে পারে, আবার ক্ষুদ্র জীবানু বেঁচে থাকতে পারে সামান্য কয়েক ঘন্টা মাত্র। কিন্তু সেটি গুরুত্বপূর্ণ নয়। কেউই এই জড় জগতে চিরকাল বেঁচে থাকতে পারে না। কোন বিশেষ অবস্থায় কারও জন্ম বা সৃষ্টি হয়, তারা কিছুকাল অবস্থান করে, ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং অবশেষে তার বিনাশ হয় এই নিয়ম অনুসারে এমন কি বিভিন্ন ব্রহ্মাণ্ডের ব্রহ্মাগণও আজই হোক বা কালই হোক সকলেই মৃত্যুর অধীন। এই জন্য সমগ্র জড় জগৎকে মৃত্যুলোক বলা হয় অর্থাৎ যে স্থানে মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। জড়বাদী বৈজ্ঞানিক এবং রাজনীতিবিদদের যেহেতু মৃত্যুহীন চিন্ময় জগতের কোন সংবাদ জানা নেই, তাই তারা এই জড় জগৎকে মৃত্যুহীন করার চেষ্টা করছে। পরিপক্ক অপ্রাকৃত জ্ঞানে পরিপূর্ণ বৈদিক সাহিত্যে অজ্ঞতাই এর কারণ। দুর্ভাগ্যবশত আধুনিক কালের মানুষ বেদ, পুরাণ ও অন্যান্য শাস্ত্র থেকে জ্ঞান লাভের বিরোধী।

বিষ্ণু পুরাণ  থেকে আমরা জানতে পারি যে, ভগবান শ্রীবিষ্ণু পরা (উৎকৃষ্ট) এবং অপরা (নিকৃষ্ট) নামে বিবিধ শক্তি ধারণ করেন। যে জড়া শক্তিতে আমরা বর্তমানে জড়িত, তাকে বলা হয় অবিদ্যা বা নিকৃষ্টা শক্তি। এই শক্তির দ্বারা জড় জগতের সৃষ্টি সম্ভব হয়েছে। কিন্তু উৎকৃষ্ট আর একটি শক্তিকে বলা হয় পরাশক্তি এবং এই পরাশক্তি নিকৃষ্ট জড় শক্তি থেকে ভিন্ন। সেই পরাশক্তি ভগবানের শাশ্বত বা মৃত্যুহীন সৃষ্টি গঠন করে। (ভঃ গীঃ ৮/২০) পরা প্রকৃতিতে বসবাসকারী সর্বশ্রেষ্ঠ প্রভাবশালী পরমপুরুষ হচ্ছেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।

ভগবদ্গীতায় (৮/২২) দৃঢ়ভাবে প্রতিপন্ন হয়েছে যে, একমাত্র অনন্য ভক্তির দ্বারা তাঁকে লাভ করা যায় এবং জ্ঞান, যোগ বা কর্মের পন্থার দ্বারা নয়। সকাম কর্মীরা নিজেদের সূর্য, চন্দ্র সহ স্বর্গ লোকে উন্নীত করতে পারেন। জ্ঞানী এবং যোগীরা আরও উচ্চতর লোকগুলি লাভ করতে পারেন, যেমন ব্রহ্মলোক এবং ভগবদ্বজন দ্বারা যখন তাঁরা আরও যোগ্যতা সম্পন্ন হন, তখন তাঁদের গুণগত যোগ্যতা অনুসারে তাঁরা ভগবানের পরা প্রকৃতিসম্ভূত ব্রহ্মজ্যোতিতে অথবা বৈকুন্ঠলোকে প্রবেশ করতে পারেন। যাই হোক, এটি নিশ্চিত যে, ভগবদ্ভজন অনুশীলন ছাড়া কেউই চিন্ময় বৈকুণ্ঠলোকে প্রবেশ করতে পারেন না।

জড় জগতে ব্রহ্মা থেকে পিপীলিকা পর্যন্ত প্রত্যেকেই জড়া প্রকৃতির ওপর কর্তৃত্ব করার চেষ্টা করছে এবং এটিই হচ্ছে ভবরোগ। যতক্ষণ এই ভবরোগে আক্রান্ত থাকবে, ততক্ষণ জীবকে দৈহিক পরিবর্তনের প্রক্রিয়ার অধীনে থাকতে হয়। সে মানুষ, দেবতা বা পশুর যেই দেহ করুক না কেন, ব্রহ্মার রাত্র ও জীবনাবসান–এই দুই প্রলয় সময়ে তাকে অব্যক্ত অবস্থা লাভ করতে হয়। আমরা যদি পুনঃ পুনঃ জন্ম ও মৃত্যুর এই প্রক্রিয়া এবং জরা ও ব্যাধির আনুষঙ্গিক কারণের পরিসমাপ্তি করতে চাই, তা হলে ‘চিন্ময় গ্রহলোকে প্রবেশ করার জন্য আমাদের অবশ্যই প্রচেষ্টা করতে হবে।

কেউ শ্রীকৃষ্ণের ওপর আধিপত্য করতে পারে না। বদ্ধ জীব জড়া প্রকৃতির ওপর কর্তৃত্ব করতে চেষ্টা করে এবং পরিণামে সে জড়া প্রকৃতির নিয়মের এবং পুনঃ পুনঃ জন্ম ও মৃত্যুর দুঃখকষ্টের অধীন হয়ে পড়ে। ধর্ম পুনঃস্থাপনের জন্য ভগবান এখানে আসেন এবং তাঁর প্রতি শরণাগতির আন্তরিক প্রয়াস বর্ধিত করাই মূল নীতি। ভগবদ্গীতায় (১৮/৬৬) এটি হচ্ছে ভগবানের অন্তিম নির্দেশ। কিন্তু মূর্খ লোকেরা সুকৌশলে এই মূল শিক্ষার ভুল ব্যাখ্যা করে সাধারণ লোকদের বিপথে চালিত করছে। হাসপাতাল খোলার জন্য জনগণকে অনুপ্রেরণা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু ভগবদ্ভজন দ্বারা চিন্ময় জগতে প্রবেশ লাভের শিক্ষা তাঁদের দেওয়া হয়নি। জীবের প্রকৃত সুখ যার মাধ্যমে কোনও দিন হবে না, সেই অনিত্য ত্রাণকার্যে উৎসাহ হওয়ার জন্যই তাদের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। প্রকৃতির বিধ্বংসী শক্তিকে নিয়ন্ত্রণের জন্য তারা নানা জনসেবামূলক ও আধা সরকারী প্রতিষ্ঠান চালু করে। কিন্তু দূরতিক্রম্য প্রকৃতিকে শান্ত • করার উপায় তারা জানে না। বহু মানুষকে ভগবদ্গীতার বিদগ্ধ পণ্ডিত বলে ঘোষনা করা এ হয়, কিন্তু যার দ্বারা জড়া প্রকৃতি শান্ত হতে – পারে গীতার সেই বাণীকে তারা উপেক্ষা এ করে। একমাত্র ভগবদ্ভাবনা জাগ্রত করার ∎ মাধ্যমেই প্রবলা মায়া শান্ত হতে পারে, যা ভগবদ্গীতায় (৭/১৪) স্পষ্টভাবেই উল্লেখ কর হয়েছে।

হরে কৃষ্ণ।

মাসিক চৈতন্য সন্দেশ, ফেব্রুয়ারী-২০১১ ইং


 

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।