এই পোস্টটি 16 বার দেখা হয়েছে

এবারের স্থান: চিত্রকূট
বৃন্দাবন, মায়াপুর, দ্বারকা, মথুরা, বারানসি ইত্যাদি কতিপয় পবিত্র তীর্থ স্থান ভক্তদের জন্য পরিচিত ও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু পূণ্যতীর্থভূমি ভারতবর্ষে অনেক তীর্থস্থান রয়েছে যেগুলো তীর্থযাত্রীদের জন্য একটু অজানা। অথচ এসব স্থানে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ভগবানের অনেক লীলা যা ভক্তদের জানা গুরুত্বপূর্ণ। ইসকন সন্ন্যাসী শ্রীমৎ ভক্তিবিকাশ স্বামী মহারাজের সাথে কিছু ইসকন ভক্তবৃন্দ সেসব দুর্গম তীর্থস্থানসমূহ পরিভ্রমন করেছেন এবং পরে সেসব ভ্রমণ কাহিনী ‘ব্যাক টু গডহেড’ ম্যাগাজিনে প্রকাশ করেন। তাই আমরা আগামী কয়েক সংখ্যায় সেসব পবিত্র স্থানের কাহিনী প্রকাশ করব। এরই ধারাবাহিকতায় এবারের তীর্থস্থান হল “চিত্রকুট- ভগবান রামের বনবাসস্থান”।
ভগবান রামচন্দ্র এই চিত্রকুট নামক বনেই তার সহধর্মিনী সীতা দেবী এবং তার ভ্রাতা লক্ষনকে সঙ্গে নিয়ে ১২ বছর বাস করেছিলেন। যা রামায়নে বিস্তারিত বর্ণিত আছে।
রামকে চৌদ্দ বছর বনবাসে দেয়া হয়েছিল। যখন তিনি লক্ষণ এবং সীতাকে নিয়ে বনে প্রবেশ করেন তখন তিনি ভরদ্বাজ মুনিকে জিজ্ঞেস করেন কোথায় তাদের অবস্থান করা উচিত? মুনি তাদেরকে উপদেশ দেন, চিত্রকুটে যেতে। যেটি তার আশ্রম থেকে প্রায় ১০ মাইল দূরে।
চিত্রকুটের ঋষিগণও প্রার্থনা করছিলেন যাতে করে ভগবান রাম সেখানে আসেন। তারা মনে মনে ভাবছিলেন “এই স্থানে রাক্ষসরা বেশী উৎপাত করে। যদি রাম অযোধ্যায় অবস্থান করেন তবে কিভাবে সমস্ত রাক্ষসদের হত্যা করবেন?” সেসময় রাক্ষসরা ঋষিদের আক্রমনের মাধ্যমে ঐ স্থানের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করছিল। তাই রাম চিত্রকুটে আসেন এবং সেখানে অবস্থানকালে অনেক রাক্ষসদের হত্যা করেছিলেন।
ভগবান রামচন্দ্রের অনুপস্থিতিতে ভরত অত্যন্ত হতাশ হয়। তাই তিনি রামের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য এই চিত্রকুটে আসেন এবং মিলিত হন। এখনও রাম- ভরতের মিলিত হওয়ার সেই স্থান রয়েছে।
ভরত রামকে অযোধ্যায় ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করলে, রাম বলেন। “না, পিতাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি তার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ।” ভরত মহারাজের বার বার অনুরোধের ফলে অবশেষে রাম তার শ্বশুর ‘জনক’ মহারাজের সিদ্ধান্তের উপর ছেড়ে দেন। রাম বলেন “জনক মহারাজ খুবই অভিজ্ঞ, ধার্মিক এবং দক্ষ। তিনিই সিদ্ধান্ত দেবেন, আমি কি চিত্রকুটে অবস্থান করব নাকি অযোধ্যায় গিয়ে রাজত্ব করব।” জনক মহারাজ বলেন রামের চিত্রকুটেই থাকা উচিত। রাম তার চৌদ্দ বছরের বনবাসে ১২ বছরই এই চিত্রকুটে কাটান এবং পরে তিনি দণ্ডকারণ্যে গমন করেন।
সাধুদের স্থান
‘চিত্রকুট’ অর্থ “মনোরম আশ্রম’ এবং তাই এটি সাধুদের জন্য একটি উপযুক্ত তপস্যার স্থান। এখানে পাহাড় এবং বনে অনেক গুহা রয়েছে যেখানে সাধুগন অবস্থান করেন এবং তপস্যা করেন। এই স্থান খুবই সুন্দর এবং পারমার্থিক জীবনধারার জন্য খুবই উপযুক্ত। আমরা সেখানে ভ্রমন করেছিলাম অক্টোবরের শুরুর দিকে।
রাতে এবং সকালে একটু ঠাণ্ডা হলেও দিনজুড়ে খুবই গরম কিন্তু তা অসহনীয় নয়।
চিত্রকুটে অনেক মন্দির রয়েছে। যেগুলোর বেশিরভাগই রামঘাটের নিকটে যেখানে ভগবান রাম মন্দাকিনি গঙ্গায় স্নান করত এবং এ স্থানে চতুর্দিক কমদা নাথজীর পাহাড় (কামনা বাসনা পূর্ণকারী ভগবানের পাহাড়)। এখানে অধিকাংশই সীতা রামের মন্দির রয়েছে। তাছাড়াও এখানে দুটি নৃসিংহ মন্দির ও কয়েকটি কৃষ্ণ মন্দির, একটি জগন্নাথ মন্দির এবং কয়েকটি শিব মন্দির রয়েছে। চিত্রকূটের অনেক মন্দিরের গঠন কাঠামো থেকে বোঝা যায়, এগুলো প্রায় শত বছর আগে মহারাজরা তৈরি করেছিলেন।
জানকীকুণ্ডেও অনেক মন্দির রয়েছে যেখানে সীতাদেবী বা জানকী স্নান করতেন। এখানে দুটি জানকী কুণ্ড রয়েছে। একটি হল গুপ্ত গোদাবরীতে এবং অন্যটি রাম ঘাট থেকে তিন কিলোমিটার দূরে। উল্লেখিত কুণ্ডসমূহে বিরামহীনভাবে রামচন্দ্রের নাম জপ চলে। যেখানে এই প্রথা চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে।
এই জানকী কুণ্ডে একটি আশ্রম রয়েছে যেখানে দশ জন সাধু বাস করেন। আমরা যেতে যেতে এই চিত্রকুট ধামেরই বাসিন্দা একজন স্কুল শিক্ষকের সঙ্গে দেখা হল। তিনি আমাদের এই স্থান পরিদর্শনের মাহাত্ম্য বর্ণনা করছিলেন। তিনি বলছিলেন “যারা শুদ্ধ আত্মা তারা আজও এই পবিত্র চিত্রকুট ধামে ভগবান রামচন্দ্রকে দর্শনে সমর্থ হন। ভগবান রাম হাঁটছেন, স্নান করছেন, নদী থেকে জল পান করছেন ইত্যাদি।”
প্রতিবছর ভারতের এমন সব গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান ভ্রমনের সুযোগ করে দিচ্ছে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন)। তাই আপনিও যদি এসব দুর্লভ ও পবিত্র তীর্থস্থান ভ্রমনের অভিলাষী হোন তবে বাংলাদেশের যেকোন ইসকন মন্দিরে যোগাযোগ করতে পারেন। এতে করে শুধু ভ্রমন নয় সঙ্গে এসব তীর্থস্থানের দিব্য লীলাবিলাসের কাহিনীসমূহও আপনি নিখুঁতভাবে শ্রবণের সুযোগ পারবেন।
হরে কৃষ্ণ।
মাসিক চৈতন্য সন্দেশ, জানুয়ারী – ২০১১ ইং