বিশ্ব সেবায় ইসকন (পার্ট-২)

প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৮:০১ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৮:০১ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 26 বার দেখা হয়েছে

বিশ্ব সেবায় ইসকন (পার্ট-২)

সারা বিশ্ব বর্তমানে এক মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি। কেননা আগেই বলা হয়েছিল প্রকৃতিতে বেঁচে থাকার জন্য যে সমস্ত উপাদান বিদ্যমান তার সবকটি উপাদানই এখন বিপর্যস্ত। এর কারণ হিসেবে বিশ্বের জনসাধারণ তাদের ইচ্ছেমত বা স্বার্থ সিদ্ধির জন্য প্রকৃতিকে ব্যবহার করছে। যার ফলশ্রুতিতে মানুষ একটু যে সতেজ বায়ু গ্রহণ করবে কিংবা বিশুদ্ধ খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করবে তাও এখন বিরল। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ লোক মারা যাচ্ছে বিপর্যস্ত প্রকৃতির করুণ প্রতিক্রিয়ার জন্য। তাই বিশ্বের এই বিপর্যয়ের মুখে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ ইস্কনের এই নিঃস্বার্থ সেবা সারাবিশ্বে খুব প্রশংসিত হচ্ছে। এবারের সংখ্যায় মাংসাহারের বিরুদ্ধে ইস্কনের মানব সেবার কিছু তথ্য তুলে ধরা হল।

মাংস এবং পরিবেশ: মাংস উৎপাদনকারী কারখানাগুলোর সাথে জড়িত রয়েছে বনায়ন ধ্বংস, পানি দূষণ, বিশ্বদ্ধ পানির ঘাটতি, বায়ু দূষন এবং ভূমিক্ষয়। The phynecians commite for responsible medicine (U.S.A) এর রাষ্ট্রপতি নীল ডি. বার্নার্ড মন্তব্য করেন, “যদি আপনি একজন মাংসাহারী হউন তবে আপনি পরিবেশ ধ্বংসের জন্য অবদান রাখছেন। সেটা আপনি জানেন বা না জানেন। স্পষ্টতই আপনি পৃথিবীর জন্য যে সর্বোত্তম সেবাটি করতে পারেন তা হল প্রাণী হত্যায় সহায়তা না করা।” [৩য় সুত্র: Feinsiber ১৯৯০] এবং জার্মি রিফকিন তার Beyond Beef গ্রন্থে সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছেন। “বর্তমানে লাখ লাখ আমেরিকান, ইউরোপীয়ন এবং জাপানীর যে পরিমাণ পশু মাংস উৎপাদন করছে তা পৃথিবীর উপর ক্ষতিকর প্রভাব রাখবে। এতে কার্বন ডাই অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড এবং লক্ষ লক্ষ টন মিথেন ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর বিরাট ক্ষতিসাধনে অগ্রনী ভূমিকা রাখছে।”

বনায়ন ধ্বংস: ভেজিটেরিয়ান টাইমস্ অনুসারে বিশ্বে বছরে অর্ধেক পরিমাণ রেইন ফরেষ্ট ধ্বংস হয় শুধুমাত্র মাংসাহারী প্রাণীদের চারণ ভূমি তৈরির জন্য। [তথ্য সূত্র: Vegetarian Times 1990] সেন্ট্রাল আমেরিকা অথবা সাউথ আমেরিকাতে তৈরি প্রতি পাউন্ড হাম বার্গারের জন্য যে পরিমাণ মাংস ব্যবহৃত হয় তা প্রায় ৫৫ বর্গ ফুট রেইন ফরেষ্ট ধ্বংসের সমান। [তথ্য সূত্র : Denslow anel padoch 1988, p. 168]

পানি দূষণ: আমেরিকায় ৫৫% পানি দূষণের সঙ্গে জড়িত মাংসাহার। [তথ্য: Durning ১৯৮৬] কেননা মাংসাহারী প্রানীদের খাওয়ানোর জন্য যে পরিমাণ শস্য ফলানো হয় তাতে অনেক কীটনাশক ঔষধ সহ বিভিন্ন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয় যা গিয়ে মিশে বিভিন্ন হৃদ এবং নদীতে। সেগুলো এমনকি মাঠের পানিকেও দূষিত করে।

বায়ু দূষন : আমেরিকাতে পেট্রোলিয়ামের ব্যবহার ৬০% কমে যেত যদি লোকেরা নিরামিশাষী হত। [তথ্য: Vegiterion Times 1990] বিশ্বে প্রতি বছর ক্ষতিকর বিশ্ব উষ্ণায়ন বৃদ্ধিকারী গ্যাস মিথেন প্রায় ৫০০ মিলিয়ন টন প্রকৃতিতে প্রবেশ করে। এই গ্রীন হাউস গ্রাস মিথেনে প্রতি অনুতে ২০ গুন তাপ ধরে রাখার ক্ষমতা রয়েছে। যা কার্বন ডাই অক্সাইডের একটি অনুর চেয়েও বেশি। আর এর জন্য দায়ী অবশ্যই মাংসাহার অর্থাৎ মাংস উৎপাদনকারী কারখানাগুলি, এর অন্যতম কারণ গো হত্যা এর সঙ্গে জড়িত।

এভাবে ভূমিক্ষয়, কৃষি উন্নয়নে বাধা, পানির স্তরের ক্ষতিসাধন সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সারাবিশ্বের মাংস উৎপাদন বা মাংসাহার মারাত্মক ভূমিকা রাখে। যার ফলশ্রুতিতে প্রতি বছর শুধুমাত্র বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণেই লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যাচ্ছে।

তাই মানুষকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে এবং সুস্থ-সুন্দর একটি জীবন উপহার দেওয়ার জন্য ইস্কন সারা বিশ্বে কাজ করে চলেছে। ইস্কনের চারটি আর্দশের মধ্যে একটি হল সকল প্রকার মাংসাহার বর্জন। এই লক্ষ্যে বিশ্বে হাজার হাজার অনুসারীরাও নীতি বা আর্দশ পালন করার মাধ্যমে বিশ্ব রক্ষায় এক অগ্রনী ভূমিকা রয়েছে। ইতোমধ্যে বিশ্বে এর বিপক্ষে অনেক কর্মসূচি পালিত হয়েছে। যেমন এ বছর ভারতে গো হত্যার বিরুদ্ধে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। ভারত সরকারও এর স্বপক্ষে অবস্থান করেছে। ইস্কনের যমুনা দেবী দাসী এ বিষয়ে অনেক অবদান রাখে। তিনি সবাইকে নিরামিষ খাবারে অভ্যস্থ হওয়ার জন্য অনেক গ্রন্থ লিখেন। ১৯৮৮ সালে তার Lord krishna’s cuinine নামক একটি গ্রন্থ the international association of cooking profeinonals (IACP) এর বছরের সেরা রান্না বিষয়ক গ্রন্থ পুরস্কৃত হয়।

এটাই ছিল একমাত্র গ্রন্থ যা পশ্চিমা খাবার নয়। এই গ্রন্থটি এমনকি অনেক দেশেই প্রকাশিত হয়। এ গ্রন্থে একজন কৃষ্ণভাবনা অনুশীলনকারী ও নিরামিশাষী হিসেবে তার ২৫ বছরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তার নিরামিশের উপর ২য় গ্রন্থ Yamuna’s Table সারাবিশ্বে প্রচুর বিক্রি হয়। এমনকি তিনি Washington post এ বিষয়ে নিয়মিত লেখালেখি করতেন। লোকদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের জন্য তিনি অনেক ভূমিকা রাখেন। তার গ্রন্থে তিনি নিরামিশ খাবারের গুরুত্ব ও আমিষ খাদ্য দ্রব্যের ক্ষতিকারক দিকসমূহ তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, “রেইন ফরেষ্ট ধ্বংসের কারণে প্রতি বছর ১০০০ প্রজাতি বিলুপ্ত হয়। “এক পাউন্ড গম উৎপাদনের জন্য ব্যয় হয় ২৫ গ্যালন পানি। কিন্তু ২৫০০০ গ্যালন পানির প্রয়োজন হয় এক পাউন্ড মাংস উৎপাদনের জন্য। “যদি প্রতি ৪ টি পরিবার থেকে ১টি পরিবার সপ্তাহে ২ পাউন্ড মাংস বর্জন করে তবে বছরে ১০৪ গ্যালন গ্যাসোলিন রক্ষা পাবে। “যদি একজন ব্যক্তি মাংসাহার বর্জন করে তবে তিনি এক একর বৃক্ষ রক্ষা করেন।” আমেরিকাতে প্রতি বছর ৪ মিলিয়ন একর ৮৫৬ ভূমিক্ষয় হয় পশুদের খাদ্য উৎপাদনের জন্য।” তিনি বলেন, “পরিবেশগত ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য পারমার্থিকভাবে নিরামিষাশীরা এক গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখছে।” এভাবে তিনি বিশ্বকে নিরামিষ আহারের যৌক্তিকতা তুলে ধরে পরিবেশ রক্ষার জন্য সচেতনতা সৃষ্টি করেছেন। বর্তমানে ‘কূর্ম দাস’ নামে আরেকজন সেবক এ বিষয়ে সুপরিচিত একজন ব্যক্তি। যার নিরামিষ রেসিপিগুলো বিশ্বে খুবই জনপ্রিয়। মানবতার সেবায় ইস্কনের এ বিষয়ক বিভিন্ন কার্যক্রমের সঙ্গে অংশগ্রহণ করে মানব সেবায় অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারেন। কেননা আপনার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাই এই বিশ্বকে পরিবর্তন করতে পারে।
হরে কৃষ্ণ।


মাসিক চৈতন্য সন্দেশ , সেপ্টেম্বর – ২০১০ ইং

পর্ব  – ০১ এর লিংকঃ

বিশ্ব সেবায় ইসকন (পার্ট-১)

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।