প্রায় ৮০ বছরের গবেষণায় ‘সুখ’

প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২২ | ৭:১২ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২২ | ৭:১২ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 152 বার দেখা হয়েছে

প্রায় ৮০ বছরের গবেষণায় ‘সুখ’

সর্বাত্মা দাস

রবার্ট ওয়ান্ডিংগার হলেন একজন মনস্তত্ত্ববিদ, মনঃসমীক্ষক বা সাইকোএনালিস্ট যিনি বোস্টনে ম্যাসাচুসেটস্ জেনারেল হাসপাতালে এডাল্ট ডেভেলপমেন্ট এর উপর হার্ভার্ড গবেষণা পরিচালনা করেন এবং হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলে শিক্ষকতা করেন। ২০১৫ সালে “হোয়াট মেকস্ এ্যা গুড লাইফ? লেসনস্ ফ্রম দ্য লংগেস্ট স্টাডি অন হ্যাপিনেস্” শিরোনামে তার এক টেড টকে তিনি সুখের সংজ্ঞা সম্পর্কে আলোকপাত করেন, যেটি সারাবিশ্বের দর্শকরা প্রায় ১ কোটি ৩০ লক্ষ বার দেখেছিল। এ থেকেই বোঝা যায় মানুষ সুখ লাভের প্রকৃত কৌশল কি সে বিষয়ে বেশ কৌতূহল ছিল। কিন্তু তিনি কি বলেছিলেন তা নিন্মে তুলে ধরা হল:

“কোন জিনিসটি আমাদের সারাজীবন সুস্বাস্থ্যবান ও সুখী রাখে? যদি আপনি আপনার ভবিষ্যতকে একটি অবস্থানে রাখতে চান তবে কোথায় আপনি আপনার সময় ও শক্তি প্রয়োগ করবেন? এর অনেক উত্তর হতে পারে। জীবনে সবচেয়ে কি গুরুত্বপূর্ণ সে সম্পর্কে নানা ছবি আমরা কল্পনা করতে পারি। মিডিয়াতে ধনী, বিখ্যাত, সাম্রাজ্যের অধিকারী এরকম কাহিনি দেখা যায়। আমরা সেসমস্ত কাহিনিগুলো বিশ্বাস করি। সাম্প্রতিক এক দীর্ঘ গবেষণা হয়েছে যেখানে অনেক লোককে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য কি? তাদের মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগ লোক বলেছিল তাদের জীবনের প্রধান লক্ষ্য হল ধনী হওয়া। শতকরা ৫০ ভাগ যারা ছিল তরুণ প্রাপ্তবয়স্ক তাদের কাছে জীবনের লক্ষ্য হল জগতে বিখ্যাত হওয়া। আমাদেরকে তারা বলছিল এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য কর্ম করার প্রতি অধিক প্রয়াসী হয়ে আরো আরো অর্জনগুলোর দিকে অগ্রসর হওয়া। আমাদেরকে তারা আরো বলেছিল একটি ভালো জীবন পেতে হলে এই সমস্ত জিনিসগুলোর পেছনে ছুটা প্রয়োজন। আসলেই কি সেটি সত্যি? এটিই কি মানুষকে সমগ্র জীবন ধরে সুখ দিতে পারে? সমগ্র জীবন ধরে লোকেরা সুখের জন্য যেসব কিছু বেছে নেই সেগুলো কতটা কার্যকরী, প্রকৃতপক্ষে অনেকের কাছেই সেগুলো প্রাপ্ত হওয়া প্রায় অসম্ভব। মানবজীবন সম্পর্কে আমরা অধিকাংশই যা কিছু জানি সেগুলো লোকেদেরকে তাদের অতীত সম্পর্কে প্রশ্ন করলেই অবগত হওয়া যায়। আমরা ভুলে যাই জীবনের অনেক ঘটনাপুঞ্জ, মাঝে মাঝে স্মৃতিও কাজ করে না।
মানুষকে সুখী ও স্বাস্থ্যবান করার জন্য সত্যিকার অর্থে কি প্রয়োজন সে বিষয়ে যদি তাদের কৈশোর থেকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত জীবন নিয়ে গবেষণা করা হয় তবে কি দেখতে পাব?
আমরা সেই গবেষণাটিই করেছিলাম। দ্য হার্ভার্ড স্টাডি অব এডাল্ট ডেভেলপমেন্ট বোধহয় প্রাপ্ত বয়স্কদের জীবন নিয়ে সবচেয়ে দীর্ঘতম গবেষণাটি করেছে। প্রায় ৭৫ বছর (এই টেড টকের পরও গবেষণা হয়, অর্থাৎ প্রায় ৮০ বছর) ধরে আমরা ৭২৪ জন লোকের জীবন পর্যবেক্ষণ করেছি। বছরের পর বছর ধরে তাদের কর্মজীবন, গৃহের জীবন-যাপন, স্বাস্থ্য এবং অবশ্যই তাদের জীবনের মোড় কখন ঘুরে যাবে এ বিষয়ে অবগত না হয়ে জীবন নিয়ে নানা প্রশ্ন করা হয়। এরকম গবেষণা সত্যিই বিরল। এই ধরনের অনেক প্রোজেক্টই এক দশকের মধ্যেই থমকে যায়। কারণ অনেক গবেষক এ বিষয়ে হাল ছেড়ে দেয় এবং গবেষণার জন্য যে তহবিল প্রয়োজন সেটিও ফুরিয়ে যায়। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে এবং কয়েক প্রজন্মের গবেষকদের প্রচেষ্টায় এই গবেষণা এখনও বেঁচে আছে এবং এখনও মানুষ গবেষণায় অংশগ্রহণ করছে। তাদের অধিকাংশই নব্বই দশকের লোক। আমরা এখন এই লোকদের ২ হাজারেরও অধিক সন্তানদের নিয়ে গবেষণা করছি। আমি হলাম সেই গবেষণার ৪র্থ পরিচালক ১৯৩৮ থেকে আমরা দুই দল লোকের জীবন পর্যবেক্ষণ করেছি। প্রথম গ্রুপটি গবেষণায় অংশগ্রহণ করেছে যখন তারা হার্ভাড কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে শিক্ষার্থী। তারা সবাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কলেজ জীবন শেষ করেছিল এবং তারপর তাদের অধিকাংশই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য গিয়েছিল। দ্বিতীয় গ্রুপটি ছিল ছেলেদের গ্রুপ যারা বোস্টনের সবচেয়ে দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসে। তাদেরকে গবেষণার জন্য মনোনীত করা হয়েছিল কেননা তারা ১৯৩০ সালের বোস্টনের সবচেয়ে প্রতিকূল ও সুবিধাবঞ্চিত পরিবার থেকে উঠে এসেছিল। তাদের অধিকাংশই বাস করত ভাড়াবাড়িতে যেখানে গরম ও ঠাণ্ডা পানির সরবরাহ ছিল না। যখন তারা গবেষণায় অংশগ্রহণ করল তখন এই কিশোর-কিশোরীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল। তাদের মেডিকেল পরীক্ষা নীরিক্ষা করা হয়েছিল। আমরা তাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম এবং তাদের মা-বাবার সাক্ষাতকার নিয়েছিলাম। তারপর এই কিশোর-কিশোরীরা একসময় প্রাপ্ত বয়স্ক হল যারা জীবন সম্পর্কে কিছু অভিজ্ঞতা লাভ করে। তাদের অনেকেই কলকারখানার শ্রমিক, আইনজীবি, রাজমিস্ত্রি, ডাক্তার হয়েছিল। তাদের কেউ কেউ অবশ্য নেশা আসক্ত হয় আবার কেউ কেউ মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগে। কেউ কেউ সমাজের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যায় আবার কেউ কেউ তার বিপরীত দিকে গমন করে। এই গবেষণার প্রতিষ্ঠাতারা কখনো এরকম দুঃস্বপ্নেও ভাবেনি যে, আমি আজকে ৭৫ বছর পর এই মঞ্চে দাঁড়িয়ে এ বিষয়ে কথা বলব। প্রতি দু’বছর অন্তর অন্তর আমাদের রোগী ও নিবেদিত স্টাফরা আমাদের লোকদের ডাকত আর বলত তাদেরকে ঐ সমস্ত লোকদের জীবন নিয়ে আর কি কি প্রশ্ন জিজ্ঞেস কার জন্য পাঠাতে হবে আমাদেরকে বোস্টনের অনেক লোক বলত “কেন তোমরা আমাকে নিয়ে গবেষণা করছ? আমার জীবন তো তেমন আকর্ষণীয় নয়।” হার্ভাডের লোকেরা কখনো সেই প্রশ্নটি উল্টো জিজ্ঞেস করেনি (হাসি)। তাদের জীবন সম্পর্কে স্বচ্ছ একটি ছবি পাওয়ার জন্য আমরা তাদেরকে শুধু কিছু লিখিত প্রশ্নের উত্তর লেখার জন্য পাঠায়নি বরং তাদের গৃহে আমরা তাদের কাছে সাক্ষাতকারও নিয়েছিলাম। আমরা তাদের ডাক্তারদের কাছ মেডিকেল রেকর্ডও সংগ্রহ করেছিলাম, তাদের রক্ত নিয়েছিলাম, মস্তিষ্কের স্ক্যান নিয়েছিলাম, তাদের সন্তানদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম, তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে আলাপ ও তাদের গভীর উদ্বেগ বিষয়ে ভিডিওটেপ নিয়েছিলাম। যখন এক দশক আগে আমরা অবশেষে তাদের স্ত্রীদের জিজ্ঞেস করলাম তারা কি আমাদের সাথে সদস্য হিসেবে যোগ দিবেন কিনা অনেক মহিলায় বলেছিল “এটি সময়সাপেক্ষ।” (হাসি), তো এই গবেষণা থেকে আমরা কি অর্জন করলাম? হাজার হাজার পৃষ্ঠার তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে আমরা কি কি শিক্ষা অর্জন করেছিলাম? যে শিক্ষা বা তথ্য আমরা অর্জন করেছিলাম তা হল সম্পদ, খ্যাতি কিংবা কঠোর পরিশ্রম কেবল সুখ দিতে পারে না। দীর্ঘ ৭৫ বছরের গবেষণা থেকে আমরা যে পরিষ্কার বার্তাটি লাভ করেছি তা হল: কেবলমাত্র পরস্পর পরস্পরের সাথে সুসম্পর্কই আমাদেরকে অধিকতর সুখ ও সুস্বাস্থ্য প্রদান করতে পারে। আমরা সম্পর্ক নিয়ে তিনটি বড় শিক্ষা প্রাপ্ত হয়েছি। প্রথমটি হল সামাজিক সম্পর্ক আমাদের জন্য সত্যিকার অর্থে ভাল এবং একাকীত্ব আমাদেরকে প্রকৃতপক্ষে মেরে ফেলে। যারা সামাজিকভাবে পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, কমিউনিটির সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে তারা হলেন অধিকতর সুখী, শারীরিকভাবেও অধিকতর স্বাস্থ্যবান ও দীর্ঘজীবি। অপরদিকে যাদের সামাজিক সুসম্পর্ক ঠিক নেই তাদের ক্ষেত্রে এ সবকিছু সম্পূর্ণ বিপরীত। একাকিত্বের অভিজ্ঞতা জীবনের জন্য বিষেরতুল্য। যারা সামাজিক সুসম্পর্ক থেকে পৃথক তারা কম সুখী। মধ্যবয়সে তাদের শরীর ভেঙে পড়ে, মস্তিষ্কের কার্য ক্ষমতা দ্রুত হ্রাস পায়, তাদের আয়ুষ্কালও সংক্ষিপ্ত হয়। দুঃখের বিষয় হল আজকে প্রতি পাঁচজন আমেরিকানদের মধ্যে একজনেরও অধিক লোক একাকিত্বে ভুগছে। আমরা জানি এমনকি কোন জনবহুল স্থানে থাকলেও আমরা একাকিত্ব অনুভব করতে পারি, এমনকি বিবাহিত জীবনেও।
দ্বিতীয় শিক্ষাটি হল, আপনার কত বেশি বন্ধু বান্ধব আছে বা তাদের সাথে কত বেশি সম্পর্ক রয়েছে তার উপর নয় বরং নিবিড় সম্পর্কের গুণগত মানই হল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সম্পর্কের দ্বন্দ্বের মধ্যে জীবন-যাপন করলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। যেখানে কোন স্নেহ ভালোবাসা নেই সেরকম উচ্চ-দ্বন্দ্বের বিবাহিত জীবন আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যেও ক্ষতিকারক যেটি সম্ভবত ডিভোর্সের চেয়েও খারাপ অবস্থা। ভালো সুসম্পর্কের মধ্যে জীবন-যাপন করাটি হল সুরক্ষিত।এই জড় জগতে সবাই সুখ লাভের জন্য কর্ম করছে, কিন্তু সুখ পাচ্ছে না, পরিণামে দুঃখই পাচ্ছে। তাই প্রশ্ন উঠতে পারে, প্রকৃত সুখ পাচ্ছে না, পরিণামে দুঃখই পাচ্ছে। তাই প্রশ্ন উঠতে পারে, প্রকৃত সুখ কি ও প্রকৃত দুঃখ কি? এ ভৌতিক জগতে অবস্থানকারী বন্ধজীব অবিদ্যাগ্রস্ত বদ্ধ জীবের দেহাত্ম বুদ্ধি প্রবল।
তৃতীয় শিক্ষাটি হল, শুধু সুসম্পর্ক আমাদের শরীরের সুরক্ষা প্রদান করে না, বরং আমাদের মস্তিষ্কেরও সুরক্ষা প্রদান করে। আশির দশকে নিরাপদ আসক্তিময় সুসম্পর্ক হল সুরক্ষিত। যারা সুসম্পর্ক বজায় রাখে তারা অপর ব্যক্তির প্রয়োজনগুলোর উপর নজর দেয়। এ সমস্ত লোকদের স্মৃতিও দীর্ঘদীন ধরে তীক্ষ্ণ থাকে। যারা অন্যের ভালো মন্দ তেমন একটা অনুভব করে না সে রকম সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাদের স্মৃতিশক্তি তাড়াতাড়ি হ্রাস পায়। সেরকম সম্পর্ক সবসময় ভালোভাবে যায় না।”
রবাট ওয়াল্ডিন্জারের শেষ উক্তিটি ছিল, “ভালো জীবন গড়ে উঠে কেবলমাত্র সুসম্পর্কের মাধ্যমেই।” এক্ষেত্রে গবেষকরা যদিও ‘সুখ’ লাভের জন্য সুসম্পর্ক গড়ে তোলাকেই প্রধান্য দিয়েছেন, তবে তারা প্রকৃত সুসম্পর্ক ও প্রকৃত সুখ কিভাবে লাভ করা যায় সে বিষয়ে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। নিন্মে উপরোক্ত গবেষণালব্ধ ফল সম্পর্কে শাস্ত্রীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা হল ।
সম্পর্কগুলো কি?
“জড়জগতে আমরা অনেক সম্পর্কের অভিজ্ঞতা লাভ করে থাকি, যেমন তুমি আমার ভাই, অথবা সে আমার বোন প্রভৃতি। এভাবে সমস্ত সম্পর্কগুলোকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। ব্যবহারিকভাবে অবশ্য বার প্রকার সম্পর্ক রয়েছে। এর মধ্যে সাতটি সম্পর্ক হল গৌণ বা বিরুদ্ধপূর্ণ। যেমন তুমি আমার শত্রু। এটিও এক প্রকার সম্পর্ক, তবে বিরুদ্ধপূর্ণ। সেটি অনুকূল সম্পর্ক নয়। এটিকে বলা হয় “বিবর্ত’। আমি আপনার মাঝে এমন কিছু দেখলাম যা আমার মধ্যে হাসির উদ্রেক করে, এটিকে বলে ‘হাস্য’, যেটি আরেক প্রকার সম্পর্ক। এভাবে আমাদের জীবনের প্রতিটি কার্যকলাপের মধ্যে বারটি সম্পর্ক রয়েছে। যাদের মধ্যে পাঁচটি হল অনুকূল।
ধরুন, আমি এই বেদীর উপর বসে আছি । অর্থাৎ এখানে একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। কি সেই সম্পর্ক? এই বেদীটি আমাকে নিরবে সেবা করছে। এই হল সম্পর্ক। আমি এখানে বসে আরাম করছি। আরেকটি সম্পর্ক হল কেউ আমাকে সেবা করতে চাই আর আমি তাকে সেবা করতে চাই। সেই সম্পর্কটি ঘটে প্রীতি বিনিময়ের মাধ্যমে। যেরকম তোমরা অনেকে আমাকে এসে বল, “স্বামীজি, আমি আপনার জন্য কিছু ফল নিয়ে এসেছি।” সেটি হল প্রীতিপূর্ণ। অর্থাৎ তোমরা আমার সেবা করতে চাও। বেদীর সঙ্গে সম্পর্কের চেয়ে কেউ যখন এভাবে প্রীতি সহকারে আমাকে ফল নিবেদন করে তবে সেটি হল উচ্চতর। এই প্রকার সম্পর্ককে বলা হয় ‘দাস্য’। অতএব শান্ত বা নিরব সম্পর্ক, দাস্য বা সেবা সম্পর্ক, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তারপর বাৎসল্য সম্পর্ক, এরপর দম্পতিদ্বয়ের মধ্যে সম্পর্ক। জড় জগতে আমরা এই প্রকার যে সম্পর্কগুলো দেখতে পাই সেগুলো প্রকৃতপক্ষে কৃষ্ণের সঙ্গে আমাদের নিত্য সম্পর্কের প্রতিফলন। কারণ বেদান্ত সূত্র অনুসারে জন্মাদ্য অস্য যতঃ (শ্রীমদ্ভাগবত ১/১/১), “এই জড় জগতে আমরা যা কিছু দর্শন করি, সবকিছুর উৎস হল পরম সত্য। এই পরম সত্যের মধ্যে এ সম্পর্কগুলো রয়েছে যেগুলো আমরা এ জড় জগতে প্রাপ্ত হই। কিন্তু সেগুলো বিকৃত রূপে প্রকাশিত হয়। ধরুন, আমি কাউকে মালিক বা প্রভুরূপে গ্রহণ করলাম এবং সেজন্যে আমি তার সেবা করছি। কিন্তু যেইমাত্র আমরা বেতন বন্ধ হয়ে যাবে, আমার সেবাও বন্ধ হয়ে যাবে। এজন্যেই এটি বিকৃতরূপ। কিংবা, ধরুন আপনি কোন নারী বা পুরুষকে ভালোবাসলেন । কিন্তু যেইমাত্র কোন ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয় সেই সম্পর্ক তখন ভেঙে যায়। এভাবে এ সম্পর্কগুলো হল চিন্ময় জগতের বিকৃতরূপ। (শ্রীল প্রভুপাদ কর্তৃক প্রদত্ত ভগবদ্গীতার প্রবচন, নিউ ইয়র্ক, ১ আগস্ট, ১৯৬৬) সত্যিকারের সম্পর্ক আমরা বিবিধ জড় ভাবনায় আবিষ্ট, কেউ নিজেকে ভারতীয় ও আমেরিকান ভাবছি, অন্য কিছুও ভাবছি। এইভাবে আমরা নিজেদের কত কৃত্রিম, মিথ্যা স্বরূপ সৃষ্টি করছি, অথচ আমাদের যথার্থ স্বরূপ হওয়া উচিত-“আমি কৃষ্ণের।” আমরা যখন এই চিন্তা করি বুঝতে হবে আমরা কৃষ্ণভাবনাময়। এই পন্থায় জীবকুলের মধ্যে সার্বজনীন প্রীতি ও ভালবাসা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। সকলের সঙ্গে কৃষ্ণের সম্বন্ধ আছে, কৃষ্ণ সকলেরই শাশ্বত পিতা, তাই যখন আমরা কৃষ্ণচেতনা-সম্পর্ক গড়ে তুলি, তখন আমরা সকলের সঙ্গেই সম্পর্ক গড়ে তুলি। কেউ বিবাহ করলে, স্বভাবতই তার স্ত্রী পরিবারের সকলের সঙ্গেই তার তখন সম্বন্ধ গড়ে উঠে। ঠিক সেই রকম যখন আমরা নিত্য কৃষ্ণসম্বন্ধ পুনঃস্থাপন করি, তখন অন্যান্য সকলের সাথে সত্যিকার সম্পর্ক স্থাপন করি। অকৃত্রিম বিশ্বজনীন প্রেমের সেইটিই উপযুক্ত কারণ, সেইটি ভিত্তি। যথার্থ কেন্দ্রের সঙ্গে সম্বন্ধহীন বিশ্বজনীন প্রেম যেমন কৃত্রিম, তেমনি তা ক্ষয়িষ্ণু। আমেরিকায় জন্ম গ্রহণ করে একজন আমেরিকান হয়, এইভাবে অন্যান্য আমেরিকানরাও তার সঙ্গে এক গোষ্ঠীভুক্ত হয়, কিন্তু অন্য কোথাও তার জন্ম হলে, তখন তার সঙ্গে এক আমেরিকানদের কোন সম্বন্ধ থাকে না। এইভাবে জড় জাগতিক স্তরে সকল সম্পর্কই আপেক্ষিক। কিন্তু কৃষ্ণের সঙ্গে আমাদের কৃষ্ণসম্বন্ধ নিত্য, শাশ্বত, এই সম্পর্ক স্থান ও কালের ঊর্ধ্বে। আমাদের কৃষ্ণসম্বন্ধ পুনঃস্থাপিত হলে, বিশ্ব-ভ্রাতৃত্ব, ন্যায়, শান্তি, প্রগতি বিষয়ক সকল সমস্যারই তখন সমাধান হয়ে যাবে। কৃষ্ণভাবনামৃতের পুনরুজ্জীবন ছাড়া এইসব উন্নত-ভাবাদশের বাস্তবায়নের কোন সম্ভাবনা নেই। প্রকৃত লক্ষ্য থেকে ভ্রষ্ট হলে, কেন্দ্রচ্যুত হলে কৃষ্ণানুশীলন বিহীন জগতে বিশ্ব-ভ্রাতৃত্ব এবং বিশ্বশান্তি কিভাবে হবে?
প্রকৃত সুখ লাভের পন্থা
এই জড় জগতে সবাই সুখ লাভের জন্য কর্ম করছে, কিন্তু সুখ পাচ্ছে না, পরিণামে দুঃখই পাচ্ছে। তাই প্রশ্ন উঠতে পারে, তাই প্রশ্ন উঠতে পারে, প্রকৃত সুখ কি ও প্রকৃত দুঃখ কি? এ ভৌতিক জগতে অবস্থানকারী বদ্ধজীব অবিদ্যাগ্রস্ত বদ্ধ জীবের দেহাত্ম বুদ্ধি প্রবল। সে দেহটাকে আত্মা বলে ভাবে। তাই দৈহিক সুখ বা ইন্দ্রিয় সুখটাকে সেই প্রকৃত সুখ বলে ভাবে। এটাই তার ভ্রম। সে চেষ্টা করে রমণীর নৃত্য উপভোগ করে একটু আনন্দ পেতে। সে মাদকদ্রব্য সেবনের দ্বারা ইন্দ্রিয় ভোগের কল্পনা করে। জীব মাংস ভক্ষণের দ্বারা জিহ্বা-তৃপ্তি করতে ইচ্ছা করে এবং জীব হিংসা-রূপ কার্যে প্রবৃত্ত হয় । বদ্ধজীব ভুলবশতঃ ভাবে এটাই সুখ। এইজন্য জড় বৈজ্ঞানিকেরা অতি আশ্চর্যজনক বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন বা আবিষ্কার করে এই ভৌতিক জগতটাকে এক সুখময় স্থান করে তোলার জন্য খুব চেষ্টা করছে। সেইজন্য বিদ্যুৎ তরঙ্গ আবিষ্কার করে টেলিকম্যুনিকেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ধূমতত্ত্ব দ্বারা জলযান, ব্যোমযান, স্থলযানের আবিষ্কার ও নির্মাণ করা হয়েছে। এই সুখ পাওয়ার জন্য কিম্বা অপরকে দেওয়ার জন্য যারা অতি ব্যস্ত তারা দৈহিক, মানসিক, সামাজিক উন্নতি-মূলক কার্য করাতে ব্যাপৃত থাকে; কিন্তু পরিণামে আমরা দেখতে পাই যে, এতে কি প্রকৃতপক্ষে এরা সুখ পাচ্ছে? সুখতো মিলছে না বরং দুঃখই অধিক হতে অধিকতর বেড়ে চলেছে। সেইজন্য বিদুরের প্রশ্নে এইকথা ব্যক্ত হয়েছে যে, সুখতো মিলছে না এবং আত্যন্তিক দুঃখ নিবৃত্ত হচ্ছে না, বরং অধিক হতে অধিকতর দুঃখ মিলছে। জীব কেন দুঃখ পাচ্ছে? সুখ পাওয়ার জন্য তো বহু চেষ্টা করছে, কিন্তু সুখ পাওয়ার পরিবর্তে দুঃখ কেন পাচ্ছে? সেইজন্য বৈদিক শাস্ত্রগুলিতে বলা হয়েছে যে, জীব হরিসেবার বিমুখ হলে এই মায়িক জগত বা প্রাকৃত জগতে পতিত হয়। সে কর্মফলের বাধ্য হয়ে স্থুল ও সূক্ষ্ম দেহে অবস্থান করে এই সংসারে প্রবৃত্ত হয় এবং পরিণামে দুঃখই পায়। সেই জন্য বলা হয়েছে- কৃষ্ণকে ভুলে গিয়ে বদ্ধজীব ভোগবাঞ্ছা বশতঃ মায়ার কবলে পতিত হয় ও মায়াসৃষ্ট এই কারাগারে অর্থাৎ এই ভৌতিক জগত দুঃখ পায়। এই ভৌতিক জগত হচ্ছে মায়াসৃষ্ট কারাগার । সেইজন্য গীতাতে ভগবান বলেছেন-এই ভৌতিক জগতটাই হচ্ছে ‘দুঃখালয়ম্ অশাশ্বতম্ । অর্থাৎ এই ভৌতিক জগতটাই হচ্ছে দুঃখের আলয়। এখানে সুখ নেই। এই ভৌতিক জগতে জীবের অবস্থিতি-কালকে দণ্ডকাল বলে বুঝতে হবে। সেই জন্য ভগবদ্গীতার (৫/২২) বলা হয়েছে-“বিবেকবান পুরুষ দুঃখের কারণ যে ইন্দ্ৰিয়জাত বিষয়ভোগ তাতে আসক্ত হন না । হে কৌন্তেয়! এই ধরনের সুখ ভোগ আদি অন্তবিশিষ্ট। তাই জ্ঞানী ব্যক্তিরা তাতে প্রীতি লাভ করেন না।”
জড়েন্দ্রিয়ের সংস্পর্শই ভৌতিক দুঃখের কারণ। অবিদ্যাগ্রস্ত, মায়াবন্ধ জীব এই জড়েন্দ্রিয়ের সুখটাকে সুখ বলে মনে করে কর্ম করার জন্য দুঃখই পাচ্ছে। তাই জড় সুখটাই প্রকৃত সুখ নয়, তা দুঃখের জন্য শ্রীমদ্ভাগবতে (৯/১৯/১৪) বলা হয়েছে—অর্থাৎ “যেমন অগ্নিতে ঘৃতাহুতি দিলে তা নির্বাপিত হয় না, পরন্তু উত্তরোত্তর বর্দ্ধিত হয়, ঠিক সেই রূপ ইন্দ্রিয়গুলিকে অধিক সুখ ভোগ দিয়ে তাদেরকে শান্ত করতে ইচ্ছা করলে, তারা কদাপি শান্ত হবে না। (অর্থাৎ স্বেচ্ছাক্রমে ব্যক্তির তা থেকে নিবৃত্ত হওয়া উচিত)।” আবার ইন্দ্রিয় সুখ ত্যাগ করা খুব কষ্টকর ব্যাপার। যিনি ত্যাগ করতে পারবেন, তিনি প্রকৃতপক্ষে সুখই লাভ করতে পারবেন। সেই কথা শ্রীমদ্ভাগবতে ৯/১৯/১৬ বলা হয়েছে—
“যারা ভৌতিক সুখ সম্ভোগে অত্যন্ত আসক্ত, তাদের পক্ষে ইন্দ্রিয় সুখ ত্যাগ করা অত্যন্ত কষ্টজনক ব্যাপার । এমনকি বৃদ্ধাবস্থা প্রাপ্ত হয়ে অকর্মণ্য হয়ে গেলেও, সে ইন্দ্রিয় সুখ কামনা ত্যাগ করতে পারে না। তাই যে প্রকৃতপক্ষে সুখ চায় তার অতি শীঘ্র অতৃপ্তিপ্রদ ইন্দ্রিয় সুখ (যেটা সমস্ত দুঃখের কারণ) ত্যাগ করা উচিত।”
একথা যারা জানে না, তারা প্রকৃতপক্ষে মূর্খ। তারাই এই ভৌতিক জগতে জাগতিক উন্নতি করার কাজে ব্যস্ত, কারণ তারা মনে করে আমরা নিশ্চয় এ থেকে সুখ বা আনন্দ পাবো। এটাই তাদের ভ্রম। মনে রাখতে হবে এই ব্রহ্মাণ্ডে আমাদের যতদূর প্রাকৃত উন্নতি হয়, আমাদেরকে ততদূর ভববন্ধন বা ভৌতিক বন্ধনের দৃঢ়তা স্বীকার করতে হয়। এই ব্রহ্মাণ্ডে উন্নতিতে আমাদের কিছু সুখ নেই। কৃষ্ণ বহিমূর্খ জীব কৃষ্ণের অধীনত্ব পরিত্যাগ করে যে স্বীয়জ্ঞানের দ্বারা স্বাধীন হয়ে ভক্তিসুখ বজর্ন করছে । যে জড়সুখ পেতে ইচ্ছা করছে, সে প্রকার জীবের মঙ্গল কোথায়? জীব কৃষ্ণদাসত্ব পরিত্যাগ করলে শয়তানের হস্তে বা মায়ার হস্তে পতিত হয়ে এই ব্রহ্মাণ্ডে দুঃখ পাবে। এটাও কোরাণে স্বীকৃত হয়েছে।
পূর্বে আমরা আলোচনা করেছি, গীতার উক্তি-এই ভৌতিক জগতটাই হচ্ছে দুঃখালয়ম্ অশাশ্বতম্। ভৌতিক জগত দুঃখে পরিপূর্ণ, অশাশ্বত বা অস্থায়ী। জীব এই মায়িক জগতের চির নিবাসী নয়। কারণ “জীবের ‘স্বরূপ’ হয়-কৃষ্ণের ‘নিত্যদাস’।” এটা স্বতঃসিদ্ধ। এই ভৌতিক ব্রহ্মাণ্ড যতই উন্নত হোক না কেন, কখনই এ’র থেকে বিমল সুখের আশা করা যেতে পারে না অর্থাৎ বিমল সুখ মিলবে না। এটা স্বতঃসিদ্ধ বিশ্বাস। এই ভৌতিক জগতটাকে যতই সুখময় করার চেষ্টা করলেও তা অভাবই থাকবে। এখানে দুঃখই ভোগ করতে বাধ্য। এ ভৌতিক ব্রহ্মাণ্ড কস্মিনকালে অভাব রহিত হতে পারে না, বিমল সুখের আশা করা যেতে পারে না। যে প্রবৃত্তি মার্গীরা এটাকে সুখকর স্থান করতে ইচ্ছা পোষণ করছে, তারা জানতে পারছে না, তারা যে কি ভুল করছে। হায়! তারা যুক্তি করার সময়ে পরমেশ্বরের অচিন্ত্য শক্তি সম্বন্ধে ধ্যান করে না। ভগবান জগদীশ্বর সর্বমঙ্গলময় । তিনি কেন অকারণে আমাদেরকে এই ক্লেশময় স্থানে নিক্ষেপ করে বিপজ্জনক জালে ফেলবেন? এটা তাঁর স্বভাব নয়। যদি আমাদের এই ব্রহ্মাণ্ডটি আমাদের চির নিবাসস্থল, অর্থাৎ ভোগের জন্য সৃষ্টি হয়ে থাকে, তাহলে তিনি এটাকে নির্মলভাবে সৃষ্টি করতেন, কিন্তু এই জগত যে চিরকাল অসিদ্ধ এরকম হত না; কারণ এ জগত বহির্মুখ জীবদেরকে দণ্ড দেওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে। তাই এখানে তুমি কিরূপে সুখের আশা করবে? তাই এখানে প্রশ্ন হতে পারে, জীব কেন ভগবত বহির্মুখ বা কৃষ্ণ বহির্মুখ হল? শ্ৰীমন্ মহাপ্রভু সনাতনকে শিক্ষা দিয়ে বলেছেন
জীব নিত্য কৃষ্ণদাস, তাহা ভুলি’ গেল।
এই দোষে মায়া গলায় বাঁধিল॥
(চৈঃ চঃ মধ্য 22/28 )
সেইজন্য প্রশ্ন ওঠে—জীব কেন দাসত্ব ভুলে গেল এবং পরমেশ্বর কেন তাকে এরূপ বিস্মৃত হওয়ার ক্ষমতা দিলেন, যার ফলে সে মায়িক জগতে অর্থাৎ এই জড় জগতে পতিত হয়ে দুঃখ পাচ্ছে? এর উত্তরে এটাই বলা যেতে পারে যে, জীব ভগবানের নিত্য, শাশ্বত অণু অংশ। তাই ভগবানের কাছে যেসব গুণ আছে, জীবের কাছে সেসব অণু পরিমাণে আছে ভগবান পরম স্বাধীন হওয়ার জন্য জীবেতে অণু স্বাধীনতা আছে। পরম করুণাময় জগদীশ্বর, জীবকে স্বাধীনতারূপ অপূর্ব রত্ন প্রদান করেছেন। সেই স্বাধীনতার দুই প্রকার ব্যবহার আছে-সৎ ব্যবহার G অপব্যবহার। যে সব জীব স্বাধীনতার সং ব্যবহার করেন, তাঁরা ভগবানের শরণাপন্ন হন বা দাসত্ব স্বীকার করেন, ভগবানের সেবাতে নিযুক্ত হন, পক্ষান্তরে যারা স্বাধীনতার অপব্যবহার করে নিজের সুখভোগ কামনা করে, তারা কৃষ্ণ দাসত্ব পরিত্যাগ করে। মায়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে মায়ার সেবাতে রত হয়, অর্থাৎ প্রাকৃত দেহে প্রাকৃত জগতে প্রবেশ করে ও দুঃখ পায়। তাই গভীরভাবে বিবেচনা করলে আমরা দেখতে পাই যে, জীব যে দুঃখ পাচ্ছে, তার সেই দুঃখের কারণ সে নিজেই। পরমেশ্বর বড় করুণাময়। তিনি আমাদেরকে উদ্ধার করার জন্য এই প্রাকৃত জগতে আবির্ভূত হয়ে অপ্রাকৃত দিব্যলীলা প্রকাশ করেন। তার দ্বারা তিনি আমাদেরকে শিক্ষা দেন। সাধু, গুরু, বৈষ্ণব মহাজনরাও সেই অপ্রাকৃত জগত হতে এখানে অবতরণ করে ভগবানের ব্রজলীলার গভীর তত্ত্ব আমাদেরকে হৃদয়ঙ্গম করান। যখন এটা হৃদয়ঙ্গম হয়, তখন আর জীবের দুঃখ থাকে না।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম যে, জীব তার স্বাধীনতার অপব্যবহার করার জন্যই দুঃখ পাচ্ছে। যখন জীব স্বাধীনতার সদ্ব্যবহার করবে, তখন সে কৃষ্ণের দাসত্ব স্বীকার করবে। “জীবের ‘স্বরূপ’ হয়-কৃষ্ণের তখনই সে প্রকৃত সুখ প্রাপ্ত হবে। পক্ষান্তরে বলা যেতে পারে যে, সে স্বরূপ স্থিতিতে রইলে প্রকৃত সুখ পাবে। স্বরূপ স্থিতি হচ্ছে কৃষ্ণদাস্য। তাই জীব কৃষ্ণের সেবাতে নিযুক্ত হয়ে গেলে প্রকৃত সুখ পাবে। পক্ষান্তরে বলা যায়, কৃষ্ণভক্তি আচরণ করলে সে প্রকৃত সুখ পাবে।

এপ্রিল-জুন ২০১৮ ব্যাক টু গডহেড

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।