পরিবার ও রকমারি সমস্যা (পার্ট-২)

প্রকাশ: ৫ জানুয়ারি ২০২৫ | ৯:১৯ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ৫ জানুয়ারি ২০২৫ | ৯:১৯ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 22 বার দেখা হয়েছে

পরিবার ও রকমারি সমস্যা (পার্ট-২)

মাঝে মাঝে মা-বাবারা তাদের সন্তানদের উপর একগাদা বিধি-নিষেধের তালিকা দিয়ে রাখে। এটা করবে, ওটা করবে না ইত্যাদি। কিন্তু মা-বাবাদের তৈরি করা এসব নিষেধাজ্ঞাগুলো সন্তানের বেড়ে উঠার জন্য আদৌ কি সাহায্যকারী নাকি ক্ষতিকর। এ বিষয় নিয়ে লিখেছেন অরুদ্ধ দেবী দাসী।

[অরুদ্ধ দেবী দাসীর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি : শ্রীমৎ গোপাল কৃষ্ণ গোস্বামী মহারাজের একজ শিষ্যা। তিনি ইউ. এস. এ-তে বসবাস করেন। সেখানে তার দুটি স্কুল রয়েছে। শিশুদেরকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে কিভাবে শিক্ষিত ও সুন্দর করে গড়ে তোলা যায় তিনি সে বিষয়ের উপর কাজ করে চলেছেন।]

সন্তানকে শাসনে রাখা কতটা ফলপ্রদ সন্তানকে বিভিন্ন বিধি-নিষেধের মধ্যে রাখা মানে কড়া শাসনে রাখা। এক্ষেত্রে কিছু বিধি-নিষেধ বিষয়ে আমরা সবাই একমত। যেমন অতিরিক্ত বা অসময়ে না খেলা, অপরিচ্ছন্ন হাতে খাদ্য দ্রব্য গ্রহণ না করা, সকালে ঘুম থেকে উঠে দাঁত পরিস্কার করা ইত্যাদি।

শৈশবের প্রশিক্ষণ : মা-বাবারা যেসমস্ত বিধি-নিষেধ শিশুদের জন্য আরোপ করেন তার উদ্দেশ্য হল সন্তানের একটি সুন্দর মন এবং সু-স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য। একইভাবে পারমার্থিক যেসব নিয়মকানুন রয়েছে সেগুলোর উদ্দেশ্য হল আত্মাকে খুশি রাখা। ভগবানের সাথে হারানো সম্পর্ককে পুনর্জাগরনের মধ্যে আমাদের প্রকৃত সুখ নিহিত রয়েছে। জাগতিক কোন চাহিদাই আমাদেরকে সুখী করতে পারে না।

যেসব ছেলেমেয়েরা পারমার্থিক ভাবধারায় প্রশিক্ষিত নয় তারা তাদের জীবনের একটি পর্যায়ে অবৈধ যৌনসঙ্গ এবং নেশাসক্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। সম্প্রতি আমি একজন কিশোরী বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলাম। যিনি বলছিলেন তার এক কাছের বন্ধু অতিরিক্ত ড্রাগস্ গ্রহণ করার কারণে অকাল মৃত্যু ঘটেছে এবং যার পরনায় তিনি খুব হতাশ। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বর্তমানে এটি একটি সাধারণ ব্যাপার হয়ে উঠছে। যুব সমাজ কুসঙ্গের ফলে তাদের জীবনকে কলুষিত করছে। অথচ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আত্মা কি? তাদের জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য কি? এসব বিষয়ে শিক্ষা দেয় না। তার পরিবর্তে তাদেরকে উৎসাহিত করা হচ্ছে যান্ত্রিক ক্যারিয়ার গঠন করা, আর কাড়ি কাড়ি অর্থ উপার্জন করার মাধ্যমে জাগতিক লক্ষ্যগুলি পূরণ করার জন্য। আমাদের বোঝা উচিত, যদি আমরা আমাদের সন্তানদের একটি কৃষ্ণভাবনাময় পরিবেশে বেড়ে উঠতে না দিই, তবে পছন্দের স্বাধীনতার নামে তাদেরকে আমরা জড় জাগতিক জীবনধারায় প্রশিক্ষিত করে তুলছি। ফলে সন্তানদেরকে একটি চরম ক্ষতির দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।

শ্রীল প্রভুপাদ বলেছিলেন, “ছেলেমেয়েরা শিখতে পারে না কেননা তারা তপস্যায় ব্রতী নয়। এই হল তাদের ত্রুটি। কিভাবে তপস্যা করতে হয় সে সম্পর্কে কোন শিক্ষা-ব্যবস্থা বর্তমান সমাজে নেই। তাই, বৈদিক সভ্যতা শিক্ষা দেয় যে, কিভাবে ছোট ছেলেমেয়েদের তপস্যায় ব্রতী হতে হয়। তাই আমরা ব্রহ্মচারী আশ্রম বা ছেলেমেয়েরা তপস্যা অনুশীলন করতে পারে। তখন তাদের জীবন সফল ও স্বার্থক হবে।” (শ্রীল প্রভুপাদ লেকচার, ভাগবত ৭.৯.৩৫).

আরেকটি বিষয় হল যেসব মা-বাবারা তাদের সন্তানদেরকে কোন বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত শাসনের মধ্যে রাখে তখন দেখা যায় তারা বড় হয়ে সেসব কাজই করছে বেশী। যেমন একজন রোগীকে কিছু নির্দিষ্ট খাবার না খাওয়ার জন্য বললে সে সুস্থ হয়ে ঐ খাবার আরো বেশী করে খায়।

শ্রীল প্রভুপাদ এই বিষয়ে উল্লেখ করেন যে, ছেলেমেয়েদেরকে শাসনে রাখতে হবে আবার কৃষ্ণভাবনাময় আনন্দও দিতে হবে। এভাবে তারা নির্মল আনন্দ পেয়ে সুখী হবে। কৃষ্ণভাবনার উচ্চতর স্বাদের ফলে নিম্নতর স্বাদ আপনি আপনিই দূর হয়ে যাবে। তারা বুঝতে সক্ষম হবে যে, এগুলো প্রতিবন্ধকতা নয় বরং খারাপ কিছু প্রতিরোধের জন্য কিছু ভালো অভ্যাস। শ্রীল প্রভুপাদ বলেন, ‘না’ বলো না। কিন্তু ভালোর স্বাদটা দাও তখন এটি আপনা-আপনিই ‘না’ হয়ে যাবে।

যদি তুমি ‘না’ বল তখন তারা বিরোধিতা করবে। চারটি ‘না’, খুবই কঠিন। এখনও তারা ভাঙছে। অবৈধ যৌনসঙ্গ ‘না’, তারা ভাঙছে। কিন্তু যদি তারা কৃষ্ণভাবনার উন্নয়ন ঘটাই তখন সেটি আপনা আপনিই ‘না’ হয়ে যাবে। তাই অনেক অনেক ‘না’ নিয়ে এসো না। পক্ষান্তরে তাদেরকে পজিটিভ জীবনধারা দাও। তখন এটি আপনা-আপনিই ‘না’ হবে। যদি তুমি এমনিই ‘না’ বলো। তখন কিন্তু তা তাদের জন্য রীতিমত সংগ্রামে পরিণত হতে পারে। এটি হল মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার। পজিটিভ জীবনধারা হল ভক্তিপুত সেবায় ব্রতী হওয়া। তাই যদি তারা ভক্তিপুত সেবার প্রতি আকর্ষিত হয় তখন অন্যন্য জিনিসগুলো আপনা-আপনিই ‘না’ হয়ে যাবে। ‘পরম দৃষ্ট নিবর্ততে’। এটি অনেকটা একাদশী দিনের মত। একাদশীর দিনে আমরা উপবাস রাখি এবং হাসপাতালে অনেক রোগী রয়েছে তারাও সময়ে সময়ে ঐদিন ডাক্তারী শর্ত অনুসারে না খেয়ে থাকে। কিন্তু তারা হৃদয় থেকে সেটিকে ‘না’ বলে না। ‘যদি আমি পাই, আমি খাব, আমি খাব’। কিন্তু যারা ভক্ত তারা স্বতস্ফূর্তভাবে ঐ উপবাসের দিনকে ‘না’ বলে। (কথোপকথন, জুলাই ৩১, ১৯৭৬) শ্রীল প্রভুপাদ আরও বলেন, “শিশুরা বিশেষভাবে কৃষ্ণের অতীত লীলাবিলাসসমূহ শ্রবণ করতে খুবই আগ্রহী হয়। তাই শৈশব থেকেই কৃষ্ণ বিষয়ক গ্রন্থ তাদেরকে পড়তে দেয়া হোক। আমাদের জন্য হয়ত মাংসাহার বর্জন খুব কঠিন হতে পারে, কিন্তু একটা শিশুর জন্য এটি একটি খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার কেননা সে পূর্বে কখনো মাংসের স্বাদ পায়নি। অবৈধ যৌনসঙ্গ, জুয়া খেলা এবং নেশা আসক্ততা ইত্যাদির ক্ষেত্রেও একই সত্য প্রযোজ্য।”

যখন আমি (লেখিকা) আমার সন্তানদের নিয়ে ঘরে কৃষ্ণভাবনা শিক্ষা চালু করেছিলাম তখন আমরা কখনো টেলিভিশন দেখতাম না এবং আমার সন্তানরাও কখনো টিভি নিয়ে আগ্রহও দেখাত না। টিভি না দেখাটা তাদের জন্য কোন সমস্যাই নয়। আমরা বাইরের খাবার খেতাম না। কেননা বাইরের আজেবাজে খাবারের চেয়ে প্রসাদে আরও উন্নততর স্বাদ ছিল। শ্রীমদ্ভাগবত অধ্যয়নের মাধ্যমে তারা বুঝেছিল বিপরীত লিঙ্গের সাথে সম্পর্কিত হওয়ার যথাযথ পন্থা কি? এসব ব্যাপারে আমার সন্তানদের উপর কখনও আমি জোড় করে চাপিয়ে দিইনি। কেননা এই অভ্যাসগুলো তাদের সংস্কৃতির একটি অংশ হয়ে পড়েছিল। মাঝে মাঝে আমার অনেক শুভানুধ্যায়ীরা আমাকে বলত যে, আমি সন্তানদেরকে রেস্টুরেন্টে খাওয়া অর্থাৎ বাইরের মজার মজার জিনিস খাওয়া, মুভি দেখতে সিনেমা হল বা থিয়েটারে যাওয়া ইত্যাদি করা থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে তাদেরকে হতাশগ্রস্থ করে তুলছি। কিন্তু যারা একসময় সমালোচনা করত তারাই পরবর্তীতে আমার সন্তানদের হাসিখুশি মুখ দেখে প্রভাবিত হত। তারা জেনেছিল যে, ভক্ত সন্তানরা হল ভিন্ন রকমের। তারা ভিতরে ও বাইরে শুদ্ধ।

মা-বাবাদের জন্য আরেকটি বিষয় হল যখন ছেলেমেয়েরা এসব নিয়ম মানতে চায় না তখন কি করনীয়। স্কুলে আজেবাজে বন্ধুদের সাথে সঙ্গ করার মাধ্যমে অথবা খারাপ প্রতিবেশীদের সঙ্গে সঙ্গ করার মাধ্যমে ছেলেমেয়েরা ভিডিও গেইম খেলতে আগ্রহ প্রকাশ করে। টেলিভিশন দেখতে চায় অথবা বাইরের আজেবাজে খাবার খেতে চায়।

ভাল সঙ্গ পারমার্থিক অগ্রগতি এবং সৎচরিত্র গঠনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ছেলেমেয়েরা খুব সহজেই যেকোন কিছুতে প্রভাবিত হয়। যখন তারা বন্ধুদের সাথে টি.ভি দেখে কিংবা ভিডিও গেইম খেলে তখন তাদের মধ্যে সে বাসনা জন্মে। তথাপিও পবিত্র নাম শ্রবণ এবং কীর্তন এতটাই শক্তিশালী যে এর মাধ্যমে হৃদয়ের কলুষতা দূর করা যায়। তাই যদি আমরা ঘরে কৃষ্ণভাবনা চালিয়ে যায় তবে কৃষ্ণকৃপায় তাদের সব জড় আকর্ষন চলে যাবে এবং উচ্চতর স্বাদের প্রতি উন্নয়ন ঘটবে।
হরে কৃষ্ণ।


মাসিক চৈতন্য সন্দেশ, জানুয়ারী – ২০১১ ইং

পরিবার ও রকমারি সমস্যা (পার্ট-১)

https://csbtg.org/%e0%a6%aa%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%93-%e0%a6%b0%e0%a6%95%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%bf-%e0%a6%b8%e0%a6%ae%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be-%e0%a6%aa%e0%a6%be-5/

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।