এই পোস্টটি 45 বার দেখা হয়েছে
পরিবার মানে অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং তার সঙ্গে রয়েছে বিবিধ সমস্যা নিরসনের সংগ্রাম। পারিবারিক জীবনে রকমারি সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে কেউ কেউ হিমশিম খায়, কেউবা জীবনযুদ্ধে পরাজিত সৈনিকের মত ব্যর্থ মনোরথে হাল ছেড়ে দেয়, কেউবা আবার চরম বিষাদে বিষাদগ্রস্ত হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। পরিবারের এমন কিছু সমস্যা ও তার সমাধান নিয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন ইস্কন গৃহস্থ ভিশন টিমের এর অভিজ্ঞ সদস্যবৃন্দ। যারা সারাবিশ্বে বৈদিক ভাবাদর্শের উপর ভিত্তি করে এসব বিষয় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের এই সব পরামর্শ ধারাবাহিকভাবে চৈতন্য সন্দেশ এ প্রকাশ করা হবে। যাতে করে আপনার পরিবার হয়ে উঠে একটি সুখী পরিবার।
এবারের বিষয় : সন্তান যখন যন্ত্রণার কারণ
পরিবারের পিতা-মাতার জন্য তাদের সন্তানকে নিয়ন্ত্রণ করা অনেকটা কঠিন হয়ে পড়ে। সন্তান যখন অবাধ্য ও বিশৃঙ্খল হয় তখন পিতা-মাতার কাছে সন্তান একটি যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাড়ায়। তবে এক্ষেত্রে পিতা-মাতার ভূমিকা কি হতে পারে তা ৫টি টিপস্ বা পরামর্শ দিচ্ছেন-অর্চনা সিদ্ধি দাসী।
১। শাস্তি/মারধর নয় শৃঙ্খলা ব্যবহার করুন:
শৃঙ্খলা শিক্ষা দেয় আর শাস্তি আঘাত করে মাত্র। যখন আমাদের ছেলেমেয়েদের সঠিকভাবে গড়ে তোলার প্রয়োজন পরে তখন তাদের দ্বারা কৃত কর্মের ফলাফল দিয়ে তাদেরকে শিক্ষা দিতে পারেন। মারধর করার মাধ্যমে খুব কমই ছেলেমেয়েরা ইতিবাচক হয়। বরঞ্চ এটি তাদেরকে শেখায় যে যখন তারা যদি কোন ঝামেলার সম্মুখীন হয় তবে প্রতিপক্ষকে আঘাত করাই সমিচীন। এক্ষেত্রে বলছিলাম দু’ধরনের ফলাফলের কথা। এটি একটি কৌশলও বলা যায়। দু’ধরনের কৌশল ১) প্রকৃতিগত ২) যৌক্তিক
ক) প্রকৃতিগত ফলাফল : ছোট ছেলেমেয়েরা অনেক সময় পিতা- মাতার অবাধ্য হয়ে নিজের স্বাধীন মতে কাজ করে। তারা বুঝতে পারে না যে, ঐ কাজটি করলে তাদের জন্য খারাপ ফলাফল ডেকে আনবে। এর কিছু উদাহরণ হল: ১। সন্তানকে অনেক সময় ঠাণ্ডার মুহূর্তে উষ্ণ কাপড় পড়তে বললে সে শুনতে চায় না। সমাধান হল ঠাণ্ডা অনুভব করতে দিলে তখন সে আপনা আপনিই উষ্ণ কাপড় চাইবে। এক্ষেত্রে এটি হল প্রকৃতিগত ফলাফল। অর্থাৎ স্বাভাবিকভাবেই সে নিয়েছে।
অনেক সময় সন্তান শিক্ষকের দেয়া হোম ওয়ার্ক করতে চায় না। এ অবস্থায় পিতা- মাতার কথা না শুনলে তাকে শিক্ষকের হাতেই ছেড়ে দিলে শিক্ষকের কারণে হলেও সে স্বাভাবিকভাবেই হোমওয়ার্ক করবে। (এক্ষেত্রে হোমওয়ার্কের জন্য মা- বাবার চেয়ে শিক্ষকরাই ভাল দেখভাল করতে সক্ষম)। এই অবস্থায় আপনার কিছুই করতে হবে না। এই অবস্থা হল প্রকৃতিগত ফলাফল।
খ) যৌক্তিক ফলাফল: যদি সন্তান গৃহস্থালীর কোন কিছু ভেঙে ফেলে তবে তার বয়স অনুসারে তার মূল্য দেয়ার একটি কৌশল চালু করা যায়। যদি ছেলেমেয়েরা ঘরের দেয়ালে আঁকাআঁকি করে তবে তারা যেন নিজেরাই দেয়াল পরিস্কার করে সেরকম ব্যবস্থা নেয়া যায়। এগুলো হল মারধর করা ছাড়াই কিছু যৌক্তিক ফলাফল বা প্রভাব। এই উপায়ে ছেলেমেয়েরা তাদের আচরণকে এবং তাদের খারাপ পছন্দগুলোকে সংশোধন করার শিক্ষা অর্জন করতে পারে।
২। সন্তানের অনুভূতিগুলোর মূল্য দিন:
মাঝে মাঝে সন্তান নেতিবাচক অনুভূতি প্রকাশ করে এবং এটি করে তার পূর্ব অনুভূতির যথার্থ মূল্য পায় না বলে। যদি ছেলেমেয়েদের থেকে অনুভূতিগুলোকে ক্রমাগতভাবে অগ্রাহ্য করা হয় বা পাত্তা না দেয়া হয় তখন তারা তাদের সামর্থ্যের প্রতি আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। যার কারণে শিশুরা তাদের নিজেদেরকে আবিস্কার করতে পারে না। এটি সন্তানের জন্য সহায়ককারী হবে যদি তাদের অনুভূতিগুলোকে গুরুত্ব সহকারে শ্রবণ করা হয় বা প্রাধান্য দেয়া হয়। আপনি হয় তাদের এসব অনুভূতির পেছনে কোন ভাবনা কাজ করছে তা আবিস্কার করতে পারবেন।
৩। সমালোচনা নয় উৎসাহ ও প্রশংসাঃ
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, অধিকাংশ ছেলেমেয়েদেরকে তাদের পিতা-মাতা উৎসাহ ও প্রশংসার পরিবর্তে তাদেরকে নেতিবাচক শব্দ এবং সমালোচনা করার প্রতিই বেশি মনোযোগী হয়। পিতা-মাতার অনভিজ্ঞতার দরুন এই প্রকার কার্যকলাপের ফলে সন্তান একসময় বিশৃঙ্খল হয়ে উঠে। সেসময় ‘না করো না’ ‘বন্ধ কর’ ইত্যাদি শব্দ তাদের উদ্দেশ্যে প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু তাও অনেক সময় অকার্যকর হয়।এক্ষেত্রে ছেলেমেয়েদের যেকোন ছোট কাজের সাফল্যের জন্য হলেও প্রায়ই তাদের প্রশংসা করতে হবে। এই যেমন সুন্দর খেলেছ, খুব ভাল হয়েছে……. ইত্যাদি। এটি সন্তানদের তাদের সম্পর্কে নিজেদের মধ্যে ইতিবাচক ধারণা জন্ম নেবে এবং তারা একসময় খুবই ইতিবাচক হয়ে উঠে।
৪। সন্তানের সামর্থ্য এবং দুর্বলতা সম্পকে জানুন:
কিছু পিতা-মাতা সন্তানের কোন দুর্বলতাকে বিরাট সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে এবং চিন্তিত হয়ে পড়ে। কিন্তু তাদের কিছু না কিছু সামর্থ্য রয়েছেই। সেগুলো অনুসন্ধান করে তাদেরকে প্রয়োজনীয় সহায়তা বা অবদান দেয়ার চেষ্টা করা উচিত। উদাহরণস্বরূপ: যদি আপনার সন্তান গানের দিকে মেধাবী হয় তবে দেখুন তার মেধার উন্নয়ন ঘটাতে কি কি করা জরুরী। সন্তানের গুন বা সামর্থ্য ভালো করে বিকশিত করলে তা আর দুঃশ্চিন্তা থাকে না। এ ব্যাপারে শিক্ষক এবং বয়স্ক ব্যক্তি তাদের সঙ্গে মিশে তাদের গুন বা সামর্থ্যকে খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে কি সাহায্য করতে পারে।
৪। আপনার সন্তানের শিক্ষক এবং বন্ধুদের জানুন:
পিতা-মাতার চেয়ে শিক্ষকরাই আপনার সন্তানের সঙ্গে বেশি সময় অতিবাহিত করে। তারা আপনার সন্তানের প্রকতি অনুধাবন করে সাহায্যকারী পরামর্শ দান করতে পারে। তাই শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ বা সুসম্পর্ক রাখুন। যেটি শিক্ষকদের দিক থেকেও আপনার সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা জন্মাবে যে আপনি আপনার সন্তানের প্রতি কতটা যত্নশীল। সন্তানের বন্ধুদের সঙ্গেও যোগাযোগ বা সুসম্পর্ক থাকলে তারাও আপনার সন্তান সম্পর্কে ভালো তথ্য দিতে পারে। যাতে করে আপনার সন্তানকে বুঝতে আপনার জন্য আরও সহজ হয়ে উঠবে। এতে করে তার সঙ্গ সম্পর্কেও একট ধারণা পেতে পারেন এবং খারাপ সঙ্গের জন্য কিছুব্যবস্থা নিতে পারেন। যাতে করে আপনার সন্তান সুন্দরভাবে বেড়ে উঠে।
উপরোক্ত টিপসমূহ অনুসরণ করুন।
দেখবেন আপনার প্রিয় সন্তান আপনার জন্য আর যন্ত্রণার কারণ হয়ে উঠবে না। যদি হয় তাহলে তার জন্য আপনিই দায়ী। এ সমস্ত টিপস্তুলোর উপরেও সেই টিপস্টা সবচেয়ে বেশী জরুরী তা হল আপনার সন্তানকে যত বেশি সম্ভব কৃষ্ণভাবনাময় কার্যকলাপে যুক্ত করুন।
হরে কৃষ্ণ।
মাসিক চৈতন্য সন্দেশ, ডিসেম্বর – ২০১০ ইং