এই পোস্টটি 1364 বার দেখা হয়েছে
ভদ্র বলরাম দাস: নাসার একজন বিজ্ঞানী রিক ব্রিগস একটি গবেষণা পত্র প্রকাশ করেছেন যেখানে তিনি নিখুঁতভাবে দেখিয়েছেন মহাজাগতিক যোগাযোগের ভাষা হিসেবে সংস্কৃত হল একমাত্র উপযোগী ভাষা। এছাড়া সংস্কৃত হল একমাত্র ভাষা যেটি মহাজাগতিক যোগাযোগের উদ্দেশ্য সংকেত সৃষ্টি করতে পারে। এই অনন্য গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করেছে “অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্যা এডভান্সমেন্ট অব আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স” নামক গবেষণা সংস্থা (সূত্র: aaai.org, 1985 Spring issue)
এবার আসি এই গবেষণাপত্রের নেপত্যর ঘটনায়। নাসা বহুকাল পূর্ব থেকে সংস্কৃত ভাষার গুরুত্ব উপলব্ধি করেছিল। তাই তারা তাদের মহাজাগতিক গবেষণায় সহযোগীতা করার জন্য ভারতের সংস্কৃত ভাষায় পারদর্শি ১ হাজার জন পণ্ডিতকে অনুরোধ জানিয়েছিল। কিন্তু তাদের কেউই আধ্যাত্মিক ভাষা সংস্কৃত ভাষার অন্য কোন ব্যবহারে সম্মত হলেন না।
ইতিপূর্বে নাসা জানিয়েছিল যে, তারা সংস্কৃত মিশন পরিচালনা করবে কেননা সংস্কৃত হল কম্পিউটারের বোধগম্য সর্বেোৎকৃষ্ট ভাষা এই বিষয়ে চৈতন্য সন্দেশে ইতিপূর্বে প্রবন্ধ ছাপা হয়েছিল। তারা গত দুই দশক ধরে এই প্রজেক্টে বহু অর্থ ও সময় ব্যয় করছে।
নাসা এখনো এই ভাষা শিখার জন্য আমেরিকানদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। ২০১২ সালে নাসা ঘোষণা দেয়, তারা মহাশূন্য অভিযানের অংশ হিসেবে সংস্কৃত ভাষা ব্যবহার করবে।
এছাড়াও তারা সর্বাপেক্ষা জটিল কম্পিউটার কোড তৈরিতে সংস্কৃত ভাষার সম্ভাব্যতা কথা ব্যক্ত করেন। অনেকেই ধারণা পোষণ করেন, ইংরেজী হল কম্পিউটার কোডিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জন্য একমাত্র উপযোগী ভাষা। এর কারণ ইংরেজী ভাষা কোন জাতি কিংবা সমাজের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয় এবং সেই কোন সংস্কৃতিতে ভিন্নভাবে ইংরেজী মানানসই। কিন্তু এই পরিবর্তনশীলতার কারণেই ইংরেজী কিংবা অন্যান্য ভাষাসমূহ আন্ত মহাজাগতিক যোগাযোগের ভাষা হিসেবে উপযোগী নয়। কম্পিউটারের কোডিং করতে যেমন একটি ইউনিভার্সেল ভাষা প্রয়োজন এবং তা না হলে যেকোন ত্রুটিতে কম্পিউটার অ্যাপ ক্রাস করতে পারে, তেমনি আন্তগ্রহ যোগাযোগে কেন একটি আদর্শ ভাষা থাকবে না?
সেটি হতে পারে সংস্কৃত। অন্যদিকে তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ নেতাদের সম্পূর্ণ সংস্কৃত ভাষাই রচিত সকল বৈদিক শাস্ত্রে থাকা অসীম জ্ঞানের ব্যাপারে কোন ধারণাই নেই। সুতরাং এটি একটি অত্যন্ত সুসংবাদ এই বৈদিক ভাষাটি পাশ্চাত্ব জগতে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত হচ্ছে।
বেদ শুধুমাত্র ধর্ম ও বিশ্বাসে পরিপূর্ণ কোন গ্রন্থ নয়, এটি হল সম্পূর্ণ বিজ্ঞান। একটি এমন এক পরিপূর্ণ জ্ঞান যা কোনভাবেই ভগবান থেকে আলাদা নয়। কেননা সকল বৈদিক সাহিত্যের সারমর্ম হল ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, পরমেশ্বর ভগবান। তিনিই হলেন সকল সৃষ্টির উৎস এবং তার অধ্যক্ষতায় সমস্ত বিশ্বজগত পরিচালিত হচ্ছে। ভগবদগীতায় তা প্রতিপন্ন হয়েছে (৯/১০), কৃষ্ণ নিজেই বলেছেন:
ময়াধ্যক্ষেণ প্রকৃতিঃ সূয়তে সচরাচরম্।
হেতুনানেন কৌন্তেয় জগদ্ বিপরিবর্ততে ॥
অনুবাদঃ হে কৌন্তেয়! আমার অধ্যক্ষতার দ্বারা জড়া প্রকৃতি এই চরাচর বিশ্ব সৃষ্টি করে। প্রকৃতির নিয়মে এই জগৎ পুনঃ পুনঃ সৃষ্টি হয় এবং ধ্বংস হয়।
শ্রীল প্রভুপাদ ব্যাখ্যা করেছেন: এখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, প্রাকৃত জগতের সমস্ত ক্রিয়াকলাপ থেকে সম্পূর্র্ণ নির্লিপ্ত থাকলেও ভগবান হচ্ছেন পরম নিয়ন্তা। পরমেশ্বরের পরম ইচ্ছা শক্তির প্রভাবে এই জড় জগতের প্রকাশ হয়, কিন্তু তার পরিচালনা করেন জড়া প্রকৃতি।
আধ্যাত্মিক অন্তর্দৃষ্টি না থাকায়, মানুষ উপলব্ধি করতে পারছে না সবকিছুই এমনকি প্রকৃতিও নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এবং মানুষ সেই প্রকৃতির আইনের অধীন। এটি অত্যন্ত সুস্পষ্ট। আমরা অনেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রক মনে করি। কিন্তু প্রকৃতি যদি তার নিয়ন্ত্রনের নমুনা যেমন, ঝড়, বন্যা, ভূমিকম্প, খড়া এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের সম্মুখে প্রদর্শন করে তবে আমরা অসহায় হয়ে পরি। মানুষের পক্ষে প্রকৃতির এই প্রকারের দুর্যোগ কোন প্রকারেই থামানো সম্ভব নয়।
যখন আমাদের দেহ আর কাজ করে না তখন মৃত্যুরূপে প্রকৃতি থেকে আমাদের সংযোগ ছিপি বন্ধ করে দেন বিভিন্ন দেব-দেবীগণ। কিন্তু সর্বাবস্থায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হলেন প্রকৃতির পরম নিয়ন্ত্রক।
শ্রীল প্রভুপাদ আরো বলেছেন যে, বিভিন্ন যোনি থেকে উদ্ভূত সমস্ত জীব-প্রজাতির করেন, তিনিই হচ্ছেন পিতা্ এবং তিনি মাতার গর্ভে বীজ প্রদান উৎপাদন করেন, তেমনই পরমেশ্বর ভগবান তাঁর দৃষ্টিপাতের মাধ্যমে জড়া প্রকৃতি গর্ভে সমস্ত জীব তাদের পূর্ব কর্মবাসনা অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন রূপ ও যোনি প্রাপ্ত হয়ে প্রকাশিত হয়। এই সসম্ত জীবেরা যদিও ভগবানের দৃষ্টিপাতের ফলে জন্মগ্রহণ করে, কিন্তু তাদের পূর্ব কর্মবাসনা অনুসারে তারা ভিন্ন ভিন্ন দেহ প্রাপ্ত হয়। সুতরাং, ভগবান স্বয়ং এই প্রাকৃত সৃষ্টির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত নন। শুধুমাত্র তাঁর দৃষ্টিপাতের ফলেই জড়া ্প্রকৃতি ক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে এবং তার ফলে তৎক্ষণাৎ সম্পূর্ণ সৃষ্টি অভিব্যক্তি হয়। যেহেতু ভগবান মায়ার প্রতি দৃষ্টিপাত করেন, তখন নিঃসন্দেহে সেটিও তাঁর একটি কার্যকলাপ, কিন্তু জড় জগতের সৃষ্টির অভিব্যক্তির সঙ্গে তাঁর কোন প্রত্যক্ষ সম্বন্ধ নেই। স্মৃতি শাস্ত্রে এই সম্বন্ধে একটি দৃষ্টান্ত দিয়ে বলা হয়েছে-কারও সামনে যখন একটি সুবাসিত ফুল থাকে, তখন সেই ফুলের সৌরভ ও তার ঘ্রাণেন্দ্রিয়ে ও সংযোগ ঘটে; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ঘ্রানেন্দ্রিয়ের ও সেই ফুলটি পরস্পর থেকে পৃথক। জড় জগৎ এবং ভগবানের মধ্যেও এই রকমেরই সম্বন্ধ রয়েছে। এই জড় জগতে তাঁর কিছু করার নেই, কিন্তু তাঁর দৃষ্টিপাত ও আদেশের মাধ্যমে তিনি এই জগৎ সৃষ্টি করেন। এর মর্মার্থ হচ্ছে, ভগবানের পরিচালনা ব্যতীত জড়া প্রকৃতি কিছুই করতে পারে না, তবুও সমস্ত জড়-জাগতিক কার্যকলাপ থেকে পরমেশ্বর ভগবান অনাসক্ত। (চলবে……)
(মাসিক চৈতন্য সন্দেশ আগষ্টে ২০১৮ সালে প্রকাশিত)