এই পোস্টটি 19 বার দেখা হয়েছে
(লাইফ ম্যাগাজিন অবলম্বনে)
১৯৯৪ সালে ১২০ বছর বয়সী জিনি ক্যালমেন্টকে যখন প্রশ্ন করা হয় যে আপনার দীর্ঘায়ু লাভের রহস্য কী? তখন বর্তমান পৃথিবীর অন্যতম দীর্ঘায়ু ব্যক্তির খেতাবধারী বলেন “আমার দীর্ঘায়ু লাভের রহস্য আমার রক্ত ও পাকস্থলীর মধ্যে নিহিত আছে।” অর্থাৎ তিনি বলতে চেয়েছেন যে, তার দীর্ঘায়ু লাভের রহস্য তার জীবনপ্রণালী ও খাদ্যাভ্যাসে নিহিত রয়েছে। পৃথিবীতে এমন কিছু স্থান রয়েছে যেখানের অধিবাসীরা সকলেই স্বভাবতই দীর্ঘায়ু হয়ে থাকেন। গবেষকগণ এই সকল স্থানের আবহাওয়া ও অধিবাসীদের জীবনপ্রণালী পর্যবেক্ষণ করে দীর্ঘায়ু লাভের রহস্য উন্মোচন করেছেন। হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক ডা. ডেভিড সিনক্লেয়ার এর নেতৃত্বে গঠিত এক গবেষণায় গবেষকগণ পৃথিবীর দীর্ঘায়ুসম্পন্ন ব্যক্তিদের ও ঐ সকল অঞ্চলে গবেষনা কার্যক্রম সম্পাদন করেন। গবেষকগণ পরিশেষে মন্তব্য করেন যে “যারা নিরামিষ আহার গ্রহণ করছেন এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করছেন তাদের ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন নেয়ার তেমন প্রয়োজন পড়ে না।” অর্থাৎ দীর্ঘায়ু লাভের মূলমন্ত্র হচ্ছে পুষ্টিকর নিরামিষ আহার গ্রহণ। পৃথিবীর দীর্ঘায়ু অঞ্চলসমূহের কয়েকটির নাম নীচে তুলে ধরা হল।
গ্রীসের ইকরিয়া: পৃথিবীর উত্তরে গ্রীসের ইকরিয়া দ্বীপ, সকল অধিবাসীদের গড় বয়স ৯০ এর উপরে। এছাড়া এই অঞ্চলের মানুষের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় ২০% ক্যান্সার, ৫০% হৃদরোগের আশঙ্কা কম থাকে। এছাড়া পাহাড় সংলগ্ন এলাকা হওয়ায় এখানে মানুষের শরীরচর্চা বেশি হয়। তারা সকলে নিজস্ব বাগান তৈরি করে। এছাড়া তারা কেবল প্রচুর পরিমাণে ফল, শাকসবজি ও অলিভ অয়েল গ্রহণ করে থাকেন।
ক্যালিফোর্নিয়ার লোমা লিন্ডা: আমেরিকার দীর্ঘ আয়ুর শহর লোমা লিন্ডা। এই অঞ্চলের মানুষ শুধুমাত্র স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনই নয় তারা এমনকি তামাক, ক্যাফিন এবং এলকোহলও গ্রহণ করেন না।
কোস্টারিকার নিকোয়া পেনিনসুলা : এই অঞ্চলের অধিকাংশ অধিবাসীই শতবছর আয়ু অতিক্রম করতে পারেন। গবেষকগণ এখানকার অধিবাসীদের দেহের রক্তে ব্লাড প্রেসার ও কোলেস্টেরলের নিয়ন্ত্রিত মাত্রা খুঁজে পেয়েছেন। তার কারণ হিসেবে গবেষকগণ এই অঞ্চলের অধিবাসীদের নিরামিষ খাবার গ্রহণ, শারীরিক কর্ম ও শক্তিশালী সামাজিক যোগাযোগের কথা উল্লেখ করেন। এছাড়া ছোট শহর ওভোডার, সারভিনিয়া, জাপানের ওকিনোয়াসহ পৃথিবীর কয়েকটি অঞ্চলের অধিবাসীগণ স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, পরিশ্রমী ও অটুট সমাজ বন্ধনে জড়িত হওয়ায় দীর্ঘায়ু লাভ করে থাকেন।
কেন পরিমিতি খাদ্যাভাস ?
মানুষের সমগ্র পরিপাক প্রণালী হচ্ছে একটি শিল্পের মত। এটি ফুসফুসে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত বহন করে এবং ধমনীতে ও টিস্যুতে একটি সুনির্দিস্ট চাপে রক্ত পরিবাহিত করে। যখন মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপন করে তখন সমগ্র দেহে নির্দিষ্ট চাপে রক্ত পরিবাহিত হয় এবং শরীর একটি সুস্থ ‘ও স্থিতিশীল পর্যায়ে অবস্থান করে। কিন্তু আমিষের মত অতিরিক্ত ভারী খাবার গ্রহণ, মানসিক দুশ্চিন্তা কিংবা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে শরীরের রক্তের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হয়। রক্তের অস্বাভাবিক গতির কারণে শরীর ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এতে মানব শরীর হৃদরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়। হৃদরোগ হচ্ছে সবচেয়ে মারাত্মক রোগ কেননা এই রোগের কোন পূর্ব উপসর্গ দেখা যায় না। এমনকি ১০ থেকে ১২ বছর ধরেও রোগীর শরীরে এই রোগের প্রাদুর্ভাব হলেও কোন উপসর্গ দেখা যায় না। এজন্যই শুধুমাত্র আমেরিকাতেই ৫০ মিলিয়ন মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত। এই রোগমুক্তির সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে ফলমূল, শাকসবজি গ্রহণ, নিয়মিত শরীর চর্চা ও টেনশনমুক্ত জীবন যাপন। নিরামিষ খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণ ‘ক্যালরী’ থাকে যা দেহের চালিকাশক্তি, এছাড়া মিনারেল ও ভিটামিন, পুষ্টি রয়েছে যা দেহকে যথার্থ কাঠামো দান করে।
গবেষক কর্তৃক সুস্থ জীবন যাপনের টিপস:
টিপস-১: প্রচুর পরিমাণ ফল ও শাকসবজী তথা নিরামিষ খাবার গ্রহণ করুন।
টিপস-২: নিয়মিত শরীরচর্চা করুন।
টিপস-৩ : ধুমপান, মদ্যপান সহ সকল নেশা আসক্তি বর্জন করুন।
টিপস-৪ : চকোলেট, চিপস, বার্গারসহ সকল ফাস্টপুড বর্জন করুন।
টিপস-৫: প্রচুর বিশুদ্ধ জল পান করুন।
টিপস-৬: সামাজিক ও পারমার্থিক কার্যক্রমে অন্তর্ভূক্ত হোন।
টিপস-৭: পরিমিত আহার ও ৭ ঘন্টার বেশি না ঘুমানো।