জর্জ হ্যারিসনের শেষ মিনিটগুলো

প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ৯:০০ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ৯:০০ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 317 বার দেখা হয়েছে

জর্জ হ্যারিসনের শেষ মিনিটগুলো

একটি খাতা নিজের কোলের উপর রেখে হ্যারিসনের খুব নিকটের বন্ধু ডি বেকার তাঁর শেষ কথাগুলো লিখতে শুরু করলেন। কেননা হ্যারিসন আর মাত্র কয়েক ঘন্টা পরেই চিরসত্য মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে। ডাক্তার ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছিলেন হ্যারিসন আর মাত্র কয়েকমাস বাঁচবে কেননা তিনি মরণব্যাধী ক্যান্সারে আক্রান্ত। এতক্ষণ যেই লোকটির কথা বলা হচ্ছিল তিনি হলেন বিখ্যাত বিটলস ব্যান্ড দলের মূল দলনেতা জর্জ হ্যারিসন। একসময় তার কণ্ঠের সুরমূর্ছনায় গোটা বিশ্ব ভেসে ছিল। বিটলস বলতেই তার ভক্তরা জর্জ হ্যারিসনকে স্মরণ করত। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে লাখো লাখো শহীদের আত্মত্যাগের ঘটনাবলী তার গানের মধ্যে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরার ফলেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে অনেকটাই তরান্বিত করেছিল এই জর্জ হ্যারিসনই সেজন্য আজও বাংলাদেশ তার কাছে কৃতজ্ঞ। জর্জ হ্যারিসন তার প্রিয় বন্ধু ডি বেকারকে হাসপাতালে মুমুর্ষ অবস্থার বেডের উপর শোয়া অবস্থায় মৃত্যু পরবর্তী কার্যাবলীর কথা বলছিলেন। সেদিন ডি বেকারও অশ্রুসিক্ত নয়নে জর্জকে কি কি করা হবে তা একটি খাতায় নোট করছিলেন। তার সেই নোটগুলোর মধ্যে একটি ছিল তার মৃত্যুর পর দেহ পোড়ানো হবে এবং দেহ ভস্মীভূত ছাই ভারতের একটি পবিত্র নদীতে ফেলা হবে। হ্যারিসন খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী হলেও তিনি বরাবরই সনাতন ধর্মের সংস্কৃতিতে আকৃষ্ট ছিলেন। ইস্‌কন প্রতিষ্ঠাতা ও আচার্য্য শ্রীল প্রভুপাদের সান্নিধ্যে এসে তার জীবনটা সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়েছিল। হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ, কীর্তন, মন্দিরে ভক্তদের সঙ্গ করা ইত্যাদি ছিল তার জীবনে প্রতিদিনের অংশ। শ্রীল প্রভুপাদের দর্শন তাকে মুগ্ধ করেছিল। আর সেজন্যই প্রভুপাদেরই আদেশে হ্যারিসন কৃষ্ণভাবনামৃত বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেছিল। তার গানের মধ্য দিয়ে তিনি তুলে ধরেছিলেন কিভাবে এ কৃষ্ণভাবনামৃত একটি সুন্দর জীবন উপহার দিতে পারে। তাই হ্যারিসন চেয়েছিলেন তাকে যেন সনাতন ধর্মের বিভিন্ন নিয়মাবলী অনুসরণের মাধ্যমে শেষকৃত্যটা সম্পন্ন করা হয়। জর্জ ডি বেকারকে বলছিল “আমি কোথায় মরব? অবশ্যই কোন হাসপাতালে না। এমনকি নিউইয়র্কের এই হাসপাতালটিও না।” ডি বেকার তখন হ্যারিসনকে পরামর্শ দিল বেভারলি পাহাড়ের তার নিজের বড় বাড়িটি হলে ভাল হয়। তখন হ্যারিসন তার এ প্রস্তাবে সম্মত হল। তবে এক্ষেত্রে শর্ত ছিল হ্যারিসনকে যেন গোপাল যেখানে আছে সেখানে নেয়া হয়। কেননা ভক্তদের কাছ থেকে আপাতত গোপনেই মৃত্যবরণ করতে চাচ্ছিল। বিগত ১০টি বছর তার বোন লুইসী (৬৩) এর সাথে মাঝে মাঝে কথা হত। পরিবারের বিভিন্ন সমস্যার কারণে লুইসীর নিকট থেকে হ্যারিসন অনেকটা বিচ্ছিন্ন ছিল । লুইসী হ্যারিসনকে অনেক কষ্ট দিয়েছিলেন। কিন্তু হ্যারিসন সেসব ভুলে নিজেই এখন লুইসীকে ফোন করলেন তার আসন্ন মৃত্যুর সংবাদ জানিয়ে। তখন লুইসী ইলিনইলস থেকে তৎক্ষণাৎ উড়ে এসেছিল ভাই হ্যারিসনকে দেখার জন্য। দু’জনই দেখা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কেঁদে ফেললেন। বোনকে জড়িয়ে ধরে বললেন “আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।” এর মাধ্যমে হ্যারিসন যে কি রকম মাপের মানুষ ছিলেন তার সেদিনের মহানুভবতা থেকেই উপস্থিত শুভাকাঙ্ক্ষীরা বুঝতে পেরেছিলেন। অবশেষে একে একে তার আরেক প্রিয় বন্ধু রবী শংকর সহ বিটলস দলের অনেক সদস্যই দূরদেশের ব্যান্ড মে মিস করে হ্যারিসনকে দেখতে এসেছিল। তবে হ্যারিসন বেশী খুশি হয়েছিল দু’জন ঘনিষ্ট বন্ধুকে দেখে তারা হলেন শ্যামসুন্দর এবং মুকুন্দ। হ্যারিসনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক প্রায় ৩০ বছর। এই ৩০ বছর সময়কালীনে হ্যারিসনকে এ কৃষ্ণভাবনামৃত গ্রহনের পর পরবর্তীতে এর প্রচারের ক্ষেত্রে একত্রে কাজ করেছিলেন। মৃত্যুপথযাত্রী হ্যারিসনকে যখন পরিকল্পনা মোতাবেক বেভারলী পাহাড়ের তার নিজের বাড়ীতে নিয়ে যাওয়া হল তখন হ্যারিসন তাদেরকে অনুরোধ করল হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করার জন্য। বৃহস্পতিবার যখন সবাইকে বুঝতে পেরেছিল যে হ্যারিসন আজকেই সবাইকে ছেড়ে চলে যেতে পরে। তখন ভক্তরা হ্যারিসনকে হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র শ্রবণ করাচ্ছিল। অবশেষে শুক্রবার সকালে ৬.৩০ মিনিটের দিকে হ্যারিসন অবশেষে তার দেহ ত্যাগ করে আপন সাধনোচিত ধামে গমন করেন। যথারীতি তখন ভগবদ্‌গীতা যথাযথ থেকে বিভিন্ন শ্লোকও হ্যারিসনকে শুনিয়েছিলেন। এরপর হ্যারিসনকে সনাতন সংস্কৃতি অনুসারে দাহ করানো হল। সেসময় হ্যারিসনের স্ত্রী অলিভার এবং ছেলে ধানিও ছিলেন। তারা নিজের হাতে জর্জের ভস্মীভূত অবশেষে নিয়ে এসেছিলেন। তবে সে ছাই কোথায় বিসর্জন দেবে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে গিয়ে সবাই বিবেচনা করল হ্যারিসন যেহেতু ব্যক্তিগতভাবে পবিত্র যমুনা নদীকেই বেশি ভালোবাসত তাই সেখানেই বিসর্জন দেয়া হোক। এভাবেই মহান সারাজীবনের মত এক ভক্তের শেষে মুহুর্তগুলোও অতিবাহিত হয়েছিল কৃষ্ণভাবনার মধ্য দিয়ে। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, হ্যারিসন যে শুধুই একজন বিখ্যাত গায়কই ছিলেন তা নয় তিনি ছিলেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের একজন বিশেষ দূত। কেননা হ্যারি জানতেন মৃত্যুকালীন চিন্তার উপরেই নির্ভর কর পরবর্তী জীবন। তাই তার মৃত্যুর শেষ মুহুর্তগুলোকে কৃষ্ণভাবনাময় করে তুলতে ভুল করেননি। হরে কৃষ্ণ।।


চৈতন্য সন্দেশ আগস্ট-২০০৯ প্রকাশিত

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।